ঢাকা ০৯:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা? Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু আজ Logo বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার সরকারি ছুটি Logo আগামী বছর থেকে আবারও মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন শুরু

স্বতন্ত্র প্রার্থী : আওয়ামী লীগে কি কোন্দল বাড়াবে ?

সারাবেলার সংবাদ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:২৭:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৪২ বার পঠিত

সারা দেশে অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন দলটির ৩ হাজার ৩৬২ জন নেতা। এদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ২৯৮ জন, ফলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনেকেই এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ফলে ভোটের লড়াইটা মূলত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০শে নভেম্বর মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু ইতিমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং
এখনও অনেকে দিচ্ছেন। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য দল থেকেও তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
তবে স্বতন্ত্র এসব প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। অন্য দিকে, নির্বাচনের মাঠে একই দলের একাধিক প্রার্থীর উপস্থিতি বিশৃঙ্খলা এবং দলীয় কোন্দল বাড়াতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
যদিও আওয়ামী লীগ মনে করছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার কৌশল হিসেবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেষ বিচারে সেটি ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে তাদেরকে সাহায্য করবে।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সবাইকে আপাতত অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলেও প্রয়োজন হলে নির্বাচনের আগে তাদের লাগাম টানারও পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিশৃঙ্খলা, ফ্রি স্টাইলে হবে না। আমরা দেখি কারা কারা চাইছেন। সেটার ওপরে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। কাজেই এর মধ্যে আমরা এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, সংশোধন, অ্যাকোমোডেশন- সব কিছুই করতে পারি।”
রোববার ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ

অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী

একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন এমন অন্তত ৭২ জন নেতা এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় জায়গা পাননি। তাদের অনেকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তেমনি এলাকায় যারা নিজেদেরকে জনপ্রিয় বলে মনে করছেন, তারাও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন।
বিগত দু’টি নির্বাচনে প্রায় একচেটিয়া বিজয় লাভ করলেও দেশে-বিদেশে সমালোচনা হওয়ায় নির্বাচনগুলো নিয়ে বেশ অস্বস্তি আছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলটির মনোনীত প্রার্থীরা।

এবারও নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে থাকা বিএনপি। পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য বিদেশি চাপও রয়েছে।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ চাইছে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে। আর এ জন্য প্রয়োজনে ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির সভাপতি এবং দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ না-করতে দলের প্রার্থীদেরকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। আর এতেই দলটির মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে শুরু করেছেন।

ইতিমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন।

বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
আর ফরিদপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।
একই ভাবে, ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ’র বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)।
এদিকে, সিলেট-৬ বিয়ানীবাজার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে।
অন্যদিকে, রংপুর-৬ আসনে আবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। নৌকা না পেয়ে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি

আওয়ামী লীগের লাভ, নাকি ক্ষতি?

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করার জন্য দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রাখার যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, সেটিতে দলটি কতটা লাভবান হবে?
“এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ লাভবানই হবে। কারণ দলটির তৃণমূলের অনেক জনপ্রিয় নেতা, যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি, তারা
নিজেদেরকে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন”, বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
তিনি আরও বলেন, “তারপরও এটি একটি সাজানো নির্বাচনই হবে। কারণ বিএনপি ছাড়া নির্বাচন সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে না।”
অন্যদিকে, আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন অবশ্য মনে করছেন, নিজ দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সুবিধার পাশাপাশি কিছু ক্ষতির মুখেও পড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।
“আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট করার সুযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা আসলে দলটির ছায়াপ্রার্থী।”
“তবে আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নিরীহ মনে হলেও ভোটের মাঠের চিত্র ভিন্ন রকম হতে পারে। এতে তৃণমূলে দলের কোন্দল আরও বাড়বে এবং সহিংসতা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।”

তবে আওয়ামী লীগ অবশ্য তেমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে না।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ঐহিত্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময়ই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেন, চেইন অব কমান্ড ফলো করেন। যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তারপরও নেতাকর্মীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।”
তাছাড়া নির্বাচনের ফলাফল যেটাই হোক, আওয়ামী লীগ তা মেনে নিবে বলে জানানো হচ্ছে।
“জনগণ যাকে ভোট দিবে, সে-ই নির্বাচিত হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতলো, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতলো, সেটা বড় বিষয় নয়। জনগণ যা রায় দিবে, আমরা তাই মেনে নিবো। এক্ষেত্রে মনোনীত প্রার্থীরা হারলে আওয়ামী লীগ পরাজিত বোধ করবে না।”
এর আগে, চলতি বছরের ২৫শে মে তারিখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন।
তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন মেয়রকে ‘ঘরের লোক’ অভিহিত করে অভিনন্দন জানানো হয়। এবার জাতীয় নির্বাচনও ‘গাজীপুর স্টাইলে’ হতে যাচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে।  বিবিসি
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

স্বতন্ত্র প্রার্থী : আওয়ামী লীগে কি কোন্দল বাড়াবে ?

আপডেট সময় : ১১:২৭:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন দলটির ৩ হাজার ৩৬২ জন নেতা। এদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ২৯৮ জন, ফলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনেকেই এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ফলে ভোটের লড়াইটা মূলত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০শে নভেম্বর মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু ইতিমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং
এখনও অনেকে দিচ্ছেন। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য দল থেকেও তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
তবে স্বতন্ত্র এসব প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। অন্য দিকে, নির্বাচনের মাঠে একই দলের একাধিক প্রার্থীর উপস্থিতি বিশৃঙ্খলা এবং দলীয় কোন্দল বাড়াতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
যদিও আওয়ামী লীগ মনে করছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার কৌশল হিসেবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেষ বিচারে সেটি ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে তাদেরকে সাহায্য করবে।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সবাইকে আপাতত অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলেও প্রয়োজন হলে নির্বাচনের আগে তাদের লাগাম টানারও পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিশৃঙ্খলা, ফ্রি স্টাইলে হবে না। আমরা দেখি কারা কারা চাইছেন। সেটার ওপরে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। কাজেই এর মধ্যে আমরা এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, সংশোধন, অ্যাকোমোডেশন- সব কিছুই করতে পারি।”
রোববার ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ

অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী

একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন এমন অন্তত ৭২ জন নেতা এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় জায়গা পাননি। তাদের অনেকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তেমনি এলাকায় যারা নিজেদেরকে জনপ্রিয় বলে মনে করছেন, তারাও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন।
বিগত দু’টি নির্বাচনে প্রায় একচেটিয়া বিজয় লাভ করলেও দেশে-বিদেশে সমালোচনা হওয়ায় নির্বাচনগুলো নিয়ে বেশ অস্বস্তি আছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলটির মনোনীত প্রার্থীরা।

এবারও নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে থাকা বিএনপি। পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য বিদেশি চাপও রয়েছে।

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ চাইছে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে। আর এ জন্য প্রয়োজনে ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির সভাপতি এবং দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ না-করতে দলের প্রার্থীদেরকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। আর এতেই দলটির মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে শুরু করেছেন।

ইতিমধ্যেই সারা দেশের অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন।

বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
আর ফরিদপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।
একই ভাবে, ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ’র বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)।
এদিকে, সিলেট-৬ বিয়ানীবাজার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে।
অন্যদিকে, রংপুর-৬ আসনে আবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। নৌকা না পেয়ে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি

আওয়ামী লীগের লাভ, নাকি ক্ষতি?

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করার জন্য দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রাখার যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, সেটিতে দলটি কতটা লাভবান হবে?
“এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ লাভবানই হবে। কারণ দলটির তৃণমূলের অনেক জনপ্রিয় নেতা, যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি, তারা
নিজেদেরকে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন”, বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
তিনি আরও বলেন, “তারপরও এটি একটি সাজানো নির্বাচনই হবে। কারণ বিএনপি ছাড়া নির্বাচন সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে না।”
অন্যদিকে, আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন অবশ্য মনে করছেন, নিজ দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সুবিধার পাশাপাশি কিছু ক্ষতির মুখেও পড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।
“আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট করার সুযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা আসলে দলটির ছায়াপ্রার্থী।”
“তবে আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নিরীহ মনে হলেও ভোটের মাঠের চিত্র ভিন্ন রকম হতে পারে। এতে তৃণমূলে দলের কোন্দল আরও বাড়বে এবং সহিংসতা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।”

তবে আওয়ামী লীগ অবশ্য তেমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে না।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ঐহিত্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময়ই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেন, চেইন অব কমান্ড ফলো করেন। যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তারপরও নেতাকর্মীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।”
তাছাড়া নির্বাচনের ফলাফল যেটাই হোক, আওয়ামী লীগ তা মেনে নিবে বলে জানানো হচ্ছে।
“জনগণ যাকে ভোট দিবে, সে-ই নির্বাচিত হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতলো, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতলো, সেটা বড় বিষয় নয়। জনগণ যা রায় দিবে, আমরা তাই মেনে নিবো। এক্ষেত্রে মনোনীত প্রার্থীরা হারলে আওয়ামী লীগ পরাজিত বোধ করবে না।”
এর আগে, চলতি বছরের ২৫শে মে তারিখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন।
তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন মেয়রকে ‘ঘরের লোক’ অভিহিত করে অভিনন্দন জানানো হয়। এবার জাতীয় নির্বাচনও ‘গাজীপুর স্টাইলে’ হতে যাচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে।  বিবিসি
Facebook Comments Box