ককটেল-হামলায় আতঙ্ক বিএনপিতে, ‘কারা করছে-কেন করছে’ উত্তর নেই
- আপডেট সময় : ১২:৫১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৬৭ বার পঠিত
বিরোধী দল বিএনপি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলছেন যে ‘বিএনপি বিহীন নির্বাচন’ নিষ্কণ্টক করতেই এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটছে।
তবে আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে ‘দেশজুড়ে বিএনপি চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতা করছে এবং এখন জনগণের কাছে ভালো সাজার জন্য নিজেদের নেতাদের বাড়িতেও একই কায়দায় হামলা করার সাজানো নাটক করছে’।
অন্যদিকে ঢাকায় মীর্জা আব্বাস ও সিলেটে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেতাদের বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনাগুলোতে কেউ অভিযোগ না করায় কোন মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ।
গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় আটক হওয়া অনেকের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আবার কোথাও কোথাও বিরোধী নেতাকর্মীরা নিজেরাও চোরাগোপ্তা হামলার শিকার হচ্ছেন বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে।মানবাধিকার সংগঠক ও বিশ্লেষক নূর খান লিটন অবশ্য মনে করছেন নির্বাচনকে সামনে রেখেই এসব ঘটনা ঘটছে।
“এটা পরিষ্কার যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির জন্যই এসব করা হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এই নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশে বিভিন্ন ধরনের সহিংস ঘটনাও ঘটছে।
বাড়িঘরে ও ব্যক্তির ওপর চোরাগোপ্তা হামলা
ঢাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসের বাড়িতে মঙ্গলবার ককটেল নিক্ষেপের পর তার স্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে হামলাকারীরা পুলিশের সহায়তাতেই সটকে পড়েছে। আবার সিলেটে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে। যশোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলামের যশোরের বাড়িতেও একই কায়দায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সিলেটের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বিবিসিকে বলেছেন মি. চৌধুরীর বাড়ির ঘটনায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি এবং মামলাও হয়নি। ফলে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা বা ঘটনার তদন্ত করার সুযোগও তাদের হয়নি। আবার নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় বুধবার বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোঃ শহীদুল ইসলাম বলছেন এসব বিষয়ে তাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি এবং সে কারণে এসব বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। “আমাদের কাছে তো কেউ কোন অভিযোগই করেনি। অভিযোগ না করলে কীভাবে জানবো আমরা,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
ঢাকায় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন যে নারায়ণগঞ্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলার হয়েছে গত কিছু দিনে। যেসব নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছে তাদের অনেকেই বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে। আর জেলে থাকা এবং মামলার কারণে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বাড়িতে এসব হামলার ঘটনায় দলের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। দলটির কয়েকটি জেলার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
এমন হামলার কারণ কী
বিএনপি নেতাদের দাবি আগামী সাতই জানুয়ারির নির্বাচনের দিনকে সামনে রেখেই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, যার মুল লক্ষ্য হলো ‘কোন ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই যেন নির্বিঘ্নে নির্বাচনের দিনটি পার করা যায়’। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলছেন যে তারা মনে করেন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের এটি আরেকটি প্রক্রিয়া মাত্র।
“আমাদের আর আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এটি নতুন ধরনের নিপীড়ন, যার মূল উদ্দেশ্য হলো বিরোধী দল বিহীন নির্বাচনকে নিষ্কণ্টক করা,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। অর্থাৎ বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে নির্বাচনের কোন দৃশ্যমান বিরোধিতা যেন না দেখা যায় সেটি নিশ্চিত করার জন্যই তাদের আটক ও আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বাড়িঘরে হামলা বা ককটেল নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটছে।
সেলিমা রহমানের মতে তাদের জেলে থাকা সিনিয়র নেতাদের বাড়িঘরও টার্গেট করা হচ্ছে তাদের দলকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য, যাতে করে কেউ আটক হলে অন্য কেউ নেতৃত্ব গ্রহণে এগিয়ে না এসে। তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনাগুলোর জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
“এ ধরনের চোরাগোপ্তা হামলা তো অনেকদিন ধরে বিএনপি জামায়াত করে আসছে। এখন এগুলো ঘটিয়ে তারা তাদের বিদেশী প্রভুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পাশাপাশি দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। সবই তাদের সাজানো নাটক,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
তাঁর দাবি হরতাল অবরোধ করে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পেরে এখন চোরাগোপ্তা হামলার পথ বেছে নিয়েছে বিরোধীরা, যার মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে সামনে রেখে ভীতির পরিবেশ তৈরি করা।
“কিন্তু এতে কোন লাভ হবে না। পুলিশ প্রশাসন দুষ্কৃতিকারীদের ধরছে। দল হিসেবে আমরাও সতর্ক আছি। বিএনপি কোনভাবেই একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও উৎসবমূখর নির্বাচনের পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার সুযোগ পাবে না,” বলছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম।
তবে মানবাধিকার সংগঠক ও বিশ্লেষক নূর খান লিটন বলছেন ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে তার কাছে মনে হয়েছে যে যারাই করছে- এর মূল উদ্দেশ্যই হলো ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা।
“এক সাথে অনেক ধরনের ঘটনা দেখছি আমরা। সামনে নির্বাচন। বিরোধী দল রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে আটক ও পালিয়ে থাকা নেতাদের বাড়ি টার্গেট করে হামলা হচ্ছে। অনেককে আটক করে মারধর করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে বিষয়টি নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ২৮শে অক্টোবরের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, হঠাৎ করে বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ককটেল নিক্ষেপ কিংবা তাদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলাগুলোর সঙ্গে এর কোনরকম যোগসূত্র থাকতে পারে। বিবিসি