ঢাকা ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটি (বিএসসি) যাত্রা শুরু Logo দাম নিয়ন্ত্রণে ট্রেনে সবজি পরিবহন Logo আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি কর্নেল অলির Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা?

বিএনপির অবরোধের প্রথম দিনে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, দুজন নিহত

সারাবেলা ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০২৩ ৭০ বার পঠিত

নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি সমর্থকরা রা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়

প্রায় আট বছর পর বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবারে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে দু’জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে, সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম লক্ষ্য করা গেছে। দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি গাবতলী থেকে।

ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায়নি, ছিল না যানজটও।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে দু’জন নিহত:
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

এই সংঘর্ষে বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

তিনি দাবি করেন, মঙ্গলবার সকালে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

তাঁর ভাষায়, এসময় “আত্মরক্ষার্থে” বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ।

নিহত বিল্লালকে নিজেদের একজন নেতা দাবি করেছে বিএনপি। বিল্লাল ছাড়াও এই সংঘর্ষে বিএনপি’র আরো এক নেতা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে দল।নিহত বিল্লাল হোসেনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ
ঢাকার মিরপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এবং বগুড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে পুলিশ।

বগুড়ার বনানী, গোকুলসহ বেশ কয়েকটি জায়গায়ও পুলিশের সাথে বিএনপি-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করার পর পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।

এসময় ইট-পাটকেলের পাশাপাশি বিএনপিকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল ছুঁড়ে মারে বলে দাবি করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মোঃ ফারুক হোসেন দুপুরের দিকে বলেছেন, অবরোধের সমর্থনে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি।

বেলা ১২টার দিকের এই মিছিল থেকে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টার ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে।

এরপর পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুই জন সদস্য আহত হন বলে জানান ডিএমপি মুখপাত্র।

বিজয়নগরে গাড়ি ভাংচুর:
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছেন বিবিসি সংবাদদাতা। তারা বলছেন, দুপুরে বিএনপি’র দলীয় স্লোগান দিতে দিতে একদল লোক মিছিল নিয়ে বিজয়নগরে আসে।
এরপর হঠাৎ-ই একটি প্রাইভেট গাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বিএনপি অফিসে তালা, সামনে পুলিশ:
গত কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবারেও বিএনপি’র নয়াপল্টন কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখেছেন বিবিসি সংবাদদাতা।

সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাউকেই দেখতে পাননি তিনি। কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে পুলিশের সদস্যদের।

তবে মঙ্গলবার সকালে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে ‘ক্রাইম সিন’ বেষ্টনী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত শনিবার বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে সংঘর্ষের পর কার্যালয়ের সামনের অংশকে ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে বেষ্টনী দিয়ে রেখেছিলো পুলিশ।

ফাঁকা গাবতলী টার্মিনাল

যান চলাচল কম:
সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ঢাকার মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গ্রিন রোড, তেজগাঁও, বিজয় সরণী, ফার্মগেট, নাবিস্কো, পান্থপথ, কলাবাগান, লালমাটিয়া, ধানমণ্ডি, সংসদভবনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সীমিত সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

তুলনামূলকভাবে মিরপুরসহ যেসব এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে, সেসব এলাকায় রাস্তায় মানুষজন এবং যানবাহনের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। যদিও পুরো শহরেই ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল লক্ষ্যনীয়ভাবে কম। রাস্তায় রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ছিলো স্বাভাবিক দিনের মতোই। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

এছাড়া অবরোধের মধ্যে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। যদিও স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম লক্ষ্য করা গেছে।

ফাঁকা রেল স্টেশন

দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ:
মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।

তবে টার্মিনালে বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো খোলা ছিলো।

গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলায় প্রতিদিন অন্তত ১২০০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাসের টিকেট বিক্রেতারা।

সায়েদাবাদের অবস্থাও একই রকম বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং কর্মীরা।

সদরঘাটে অধিকাংশ লঞ্চ নোঙর করা:
নৌ-পরিবহনের ক্ষেত্রেও কিছুটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে।

বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে অধিকাংশই লঞ্চই ছিল নোঙর করা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবরোধের প্রথমদিন সকালে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অধিকাংশ লঞ্চই ঢাকা ছেড়ে যায়নি।

যাত্রী না থাকায় লঞ্চ ছাড়া হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে ভোরের দিকে অল্প কয়েকটি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সদরঘাট ছেড়েছে বলে জানানো হয়েছে।

র‍্যাব-পুলিশের সতর্ক অবস্থান:
সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে গুলশান চেকপোস্টে মোটর সাইকেল, গাড়ি এবং সাধারণ মানুষের ব্যাগে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।

এছাড়া প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র‍্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলের টহল চোখে পড়েছে।

গাবতলীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল, বিএনপির অনুপস্থিতি:
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সরকারি দল আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিল করেছে। মিছিলে নেতাকর্মীদের বিএনপি এবং হরতাল-অবরোধ বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার গাবতলীতে শান্তি মিছিল করেছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।

সকাল ১০টার দিকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে গাবতলী মোড়ে আসতে থাকে দলটির নেতা কর্মীরা। এসময় তাদের কারো কারো হাতে লাঠি-সোটা এবং রড দেখা গেছে।

তবে এখনো পর্যন্ত বিএনপির কোন ঝটিকা মিছিল বা এ ধরণের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

এদিকে, বিএনপির সাথে অবরোধ ডাকা জামায়াত ঢাকার মহাখালি এবং উত্তরায় ঝটিকা মিছিল করেছে এমন দাবি করে নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট দিয়েছে।

গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে বাসে আগুন:
অবরোধের আগের রাতে অর্থাৎ সোমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং শ্রীপুর উপজেলায় দু’টি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারো হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এছাড়া মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার সল্টগুলা ক্রসিং এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে, সোমবার রাতে নগরীর দামপাড়া ও বালুচরা ট্যানারি বটতলা এলাকায় আরো দু’টি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

অবরোধ কেন ডাকা হলো:
শনিবার বিএনপি’র সমাবেশে “হামলা, হত্যা, গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে” এবং সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে ৩১ অক্টোবর, ১লা ও ২রা নভেম্বর তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

গত রবিবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ টানা তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিএনপি বলছে, গত পাঁচ দিনে সারা দেশে বিএনপি’র দুই হাজার ছয়শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৪৫টি।

আর গেলো ২৮শে জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৪২টি। যেখানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।

বিএনপি বলছে, তাদের ভাষায় এসব গ্রেপ্তার, নির্যাতনের অবসান এবং সরকার পতনের দাবি আদায়ের জন্যই তাদের অবরোধের নতুন কর্মসূচি।

সদরঘাটে নোঙর করা লঞ্চ

অবরোধের অতীত অভিজ্ঞতা যা বলছে:
বিএনপি’র জন্য অবরোধ কর্মসূচি নতুন নয়। এর আগেও দলটি একটানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তবে সেটি এখন থেকে আট বছরেরও বেশি আগে।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে দলটি৷

সে সময় মূলত অবরোধের ঘোষণা দেয়ার পর এক পর্যায়ে এর সঙ্গে হরতালকেও যুক্ত করে দলটি।

ওই হরতাল-অবরোধ এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। একের পর এক বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

সরকার এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করলেও তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উল্টো সরকারকেই এর জন্য দায়ী করে আসছে।

তখন একটানা হরতাল অবরোধ চলতে থাকলে এক পর্যায়ে এটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। রাজপথেও অবরোধের সমর্থনে বিএনপি কিংবা বিশ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের আর দেখা যায়নি। বিবিসি

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বিএনপির অবরোধের প্রথম দিনে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, দুজন নিহত

আপডেট সময় : ০১:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০২৩

প্রায় আট বছর পর বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবারে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে দু’জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে, সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম লক্ষ্য করা গেছে। দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি গাবতলী থেকে।

ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায়নি, ছিল না যানজটও।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে দু’জন নিহত:
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

এই সংঘর্ষে বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

তিনি দাবি করেন, মঙ্গলবার সকালে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

তাঁর ভাষায়, এসময় “আত্মরক্ষার্থে” বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ।

নিহত বিল্লালকে নিজেদের একজন নেতা দাবি করেছে বিএনপি। বিল্লাল ছাড়াও এই সংঘর্ষে বিএনপি’র আরো এক নেতা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে দল।নিহত বিল্লাল হোসেনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বগুড়ায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ
ঢাকার মিরপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এবং বগুড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে পুলিশ।

বগুড়ার বনানী, গোকুলসহ বেশ কয়েকটি জায়গায়ও পুলিশের সাথে বিএনপি-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করার পর পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।

এসময় ইট-পাটকেলের পাশাপাশি বিএনপিকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল ছুঁড়ে মারে বলে দাবি করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মোঃ ফারুক হোসেন দুপুরের দিকে বলেছেন, অবরোধের সমর্থনে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি।

বেলা ১২টার দিকের এই মিছিল থেকে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টার ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে।

এরপর পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুই জন সদস্য আহত হন বলে জানান ডিএমপি মুখপাত্র।

বিজয়নগরে গাড়ি ভাংচুর:
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছেন বিবিসি সংবাদদাতা। তারা বলছেন, দুপুরে বিএনপি’র দলীয় স্লোগান দিতে দিতে একদল লোক মিছিল নিয়ে বিজয়নগরে আসে।
এরপর হঠাৎ-ই একটি প্রাইভেট গাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বিএনপি অফিসে তালা, সামনে পুলিশ:
গত কয়েকদিনের মতো মঙ্গলবারেও বিএনপি’র নয়াপল্টন কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখেছেন বিবিসি সংবাদদাতা।

সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাউকেই দেখতে পাননি তিনি। কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে পুলিশের সদস্যদের।

তবে মঙ্গলবার সকালে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে ‘ক্রাইম সিন’ বেষ্টনী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত শনিবার বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে সংঘর্ষের পর কার্যালয়ের সামনের অংশকে ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে বেষ্টনী দিয়ে রেখেছিলো পুলিশ।

ফাঁকা গাবতলী টার্মিনাল

যান চলাচল কম:
সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ঢাকার মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গ্রিন রোড, তেজগাঁও, বিজয় সরণী, ফার্মগেট, নাবিস্কো, পান্থপথ, কলাবাগান, লালমাটিয়া, ধানমণ্ডি, সংসদভবনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সীমিত সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

তুলনামূলকভাবে মিরপুরসহ যেসব এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে, সেসব এলাকায় রাস্তায় মানুষজন এবং যানবাহনের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। যদিও পুরো শহরেই ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল লক্ষ্যনীয়ভাবে কম। রাস্তায় রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ছিলো স্বাভাবিক দিনের মতোই। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

এছাড়া অবরোধের মধ্যে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। যদিও স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম লক্ষ্য করা গেছে।

ফাঁকা রেল স্টেশন

দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ:
মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।

তবে টার্মিনালে বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো খোলা ছিলো।

গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলায় প্রতিদিন অন্তত ১২০০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাসের টিকেট বিক্রেতারা।

সায়েদাবাদের অবস্থাও একই রকম বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং কর্মীরা।

সদরঘাটে অধিকাংশ লঞ্চ নোঙর করা:
নৌ-পরিবহনের ক্ষেত্রেও কিছুটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে।

বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে অধিকাংশই লঞ্চই ছিল নোঙর করা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবরোধের প্রথমদিন সকালে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অধিকাংশ লঞ্চই ঢাকা ছেড়ে যায়নি।

যাত্রী না থাকায় লঞ্চ ছাড়া হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন তারা।

তবে ভোরের দিকে অল্প কয়েকটি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সদরঘাট ছেড়েছে বলে জানানো হয়েছে।

র‍্যাব-পুলিশের সতর্ক অবস্থান:
সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে গুলশান চেকপোস্টে মোটর সাইকেল, গাড়ি এবং সাধারণ মানুষের ব্যাগে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।

এছাড়া প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র‍্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলের টহল চোখে পড়েছে।

গাবতলীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল, বিএনপির অনুপস্থিতি:
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সরকারি দল আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিল করেছে। মিছিলে নেতাকর্মীদের বিএনপি এবং হরতাল-অবরোধ বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার গাবতলীতে শান্তি মিছিল করেছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।

সকাল ১০টার দিকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে গাবতলী মোড়ে আসতে থাকে দলটির নেতা কর্মীরা। এসময় তাদের কারো কারো হাতে লাঠি-সোটা এবং রড দেখা গেছে।

তবে এখনো পর্যন্ত বিএনপির কোন ঝটিকা মিছিল বা এ ধরণের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

এদিকে, বিএনপির সাথে অবরোধ ডাকা জামায়াত ঢাকার মহাখালি এবং উত্তরায় ঝটিকা মিছিল করেছে এমন দাবি করে নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট দিয়েছে।

গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে বাসে আগুন:
অবরোধের আগের রাতে অর্থাৎ সোমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং শ্রীপুর উপজেলায় দু’টি বাসে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারো হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এছাড়া মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার সল্টগুলা ক্রসিং এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে, সোমবার রাতে নগরীর দামপাড়া ও বালুচরা ট্যানারি বটতলা এলাকায় আরো দু’টি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

অবরোধ কেন ডাকা হলো:
শনিবার বিএনপি’র সমাবেশে “হামলা, হত্যা, গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে” এবং সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে ৩১ অক্টোবর, ১লা ও ২রা নভেম্বর তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

গত রবিবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ টানা তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিএনপি বলছে, গত পাঁচ দিনে সারা দেশে বিএনপি’র দুই হাজার ছয়শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৪৫টি।

আর গেলো ২৮শে জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৪২টি। যেখানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে।

বিএনপি বলছে, তাদের ভাষায় এসব গ্রেপ্তার, নির্যাতনের অবসান এবং সরকার পতনের দাবি আদায়ের জন্যই তাদের অবরোধের নতুন কর্মসূচি।

সদরঘাটে নোঙর করা লঞ্চ

অবরোধের অতীত অভিজ্ঞতা যা বলছে:
বিএনপি’র জন্য অবরোধ কর্মসূচি নতুন নয়। এর আগেও দলটি একটানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তবে সেটি এখন থেকে আট বছরেরও বেশি আগে।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে দলটি৷

সে সময় মূলত অবরোধের ঘোষণা দেয়ার পর এক পর্যায়ে এর সঙ্গে হরতালকেও যুক্ত করে দলটি।

ওই হরতাল-অবরোধ এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। একের পর এক বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

সরকার এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করলেও তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উল্টো সরকারকেই এর জন্য দায়ী করে আসছে।

তখন একটানা হরতাল অবরোধ চলতে থাকলে এক পর্যায়ে এটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। রাজপথেও অবরোধের সমর্থনে বিএনপি কিংবা বিশ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের আর দেখা যায়নি। বিবিসি

Facebook Comments Box