ঢাকা ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের লজ্জা বাংলাদেশের

ক্রীড়াঙ্গন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৫২:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ২২ বার পঠিত

নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে হেরে পাহাড়সমান লজ্জা মাথায় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা । ডাচদের সঙ্গে এর আগে দুবার ওয়ানডেতে জিতেছিল বাংলাদেশ৷ তৃতীয়বার হার জুটল৷ গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খুব কাছেও গিয়েও জিততে ব্যর্থ হয়েছিল ডাচরা৷ সেই প্রতিশোধ যেন নিল এবার৷

যে ম্যাচটি নিয়ে বিশ্বকাপের আগে থেকেই জয়ের চিন্তা ছিল, সেই ম্যাচেই কি লেজে গোবড়ে ব্যাপার! নেদারল্যান্ডসকে জয়ের পুঁজি এনে দেয়া ৬৮ রান করা অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস দুবার জীবন পান ০ রানে৷

লিটন-সাকিব-মুশফিকরা বড় নাম হয়েও হতাশার সমার্থক থেকে যান ওই ব্যাটিং ব্যর্থতার গেরোয়৷ এর যেন শেষ নেই৷ ভুলের দিনে ক্ষীণ আশা দিতে থাকা মাহমুদউল্লাহ-শেখ মেহেদীর ৩৮ রানের জুটিও থামে ওই ভুলে-ই৷ ওই রান আউটটি না হলে কিছু কি হতে পারত! এই আশা তো সবসময়ের৷ এমন আশা-নিরাশার দোলাচলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট হেঁটেছে সবসময় ‘আহহহ’ আক্ষেপ নিয়েই৷ তাই আবারও ভুলের পর আক্ষেপ৷ নিজের ভুল কলে ১৭ রান করা মেহেদী অহেতুক রান আউট হলেন৷ বাংলাদেশের জয়ের শেষ স্বপ্নটাও সেখানে শেষ হয়৷ এরপর মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন ২০ রানে তিন ওভার পর৷

তাই নিজেদের সেরা ফরম্যাটে প্রথম বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন ওই স্বপ্নই থেকে যায়৷ কলকাতায় মিরপুরের আবহ তুলেও সমর্থকেরা ক্রিকেটারদের জাগাতে ব্যর্থ হয়৷ চেনা পরিবেশ বা পরিচিত কন্ডিশনের মাঠও এদিন সাকিব-মুশফিকদের নয়, তাদেরই ভুলে হাত বাড়িয়ে দেয় নেদারল্যান্ডসকে৷ তাই মিরপুরে খেলে ব্যাটিং-বোলিংয়ের যে পরিকল্পনা সাকিবদের মুখস্থ সেই পরিকল্পনায় তাদেরই বধ করে ডাচরা৷ কমলারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবুজ দেয়ালে এঁকে দিয়ে যায় বেদনার নীল রং৷

এ ম্যাচের আগে তাসকিনরা বলেছিলেন শেষ চারটি ম্যাচ জিততেও পারেন৷ এই হারের পর বাকি তিন ম্যাচ নিয়ে কি একই স্বপ্ন দেখবেন? ব্যাটিং ব্যার্থতা বাংলাদেশের পুরোনো রোগ৷ এ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই৷ এই ব্যর্থতাতে প্রতি বড় ইভেন্টে হৃদয়ে হাহাকার জায়গা নেয়৷ খেলা সরে গিয়ে নানা বিষয়ে সরব হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট৷ নানা সিরিজেও এই ব্যাটিং ব্যর্থতাই থাকে হতাশার মূল কারণ৷

অতীত নিয়ম মেনে এবারও সেই চিত্র ফিরে এলো৷ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বাদে আর একটি ম্যাচেও বাংলাদেশ ব্যাটাররা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেনি৷ তাই ক্রিকেটের বাইরের চিত্র হয়ে ওঠে বড়৷ এই হতাশা কাঁধে নিয়ে বিশ্বকাপ চলাকালীন দলের অধিনায়ক সাকিব চলে আসেন দেশে৷ তিনদিনের একান্ত অনুশীলন করেন শৈশবের গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছে৷ এ নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে৷ ভাল খারাপ যুক্তি-তর্ক আপাতত তুলে রাখা যাক, কাজের কাজটা কি কিছু হয়েছে?

উত্তরটা খুব সোজা, একদমই না৷ তাই সাকিবকে দিয়েই নেদারল্যান্ডস ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস শুরু করা যাক৷ সাকিব সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে আউট হয়েছেন প্রায় সেই ভঙ্গিতেই আউট হলেন৷ বাড়তি বাউন্সে মানিয়ে নিতে না পেরে৷ মিরপুরের ইনডোরে দুই দিনে তিন ঘন্টার একক চেষ্টায়ও নিজের দুর্বলতা কাটাতে পারেননি৷ তাকে নিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় ঠিক জায়গায় ডেলেভারি করে সফলতা পল ফন মিকেরেন৷

১৪ বলে মাত্র ৫ করে ফেরেন তিনি, দল তখন ১৬ ওভারে ৬৩ রানে ৪ উইকেট৷ অথচ এই সাকিব প্রতিপক্ষ অধিনায়ককেই অনুসরণ করতে পারতেন৷ কলকাতার এই উইকেটে ব্যাট করা কঠিন ছিল৷ কিন্তু সেট হওয়া কঠিন না৷ এডওয়ার্ডস সময় নিয়ে উইকেটে থেকেছেন৷ স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল করা সাকিবের ওভারে ডট দিয়েছেন৷ সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট সাকিবের বল খেলতেই পারছিলেন না৷ তবুও ডট এর পর ডট দিয়েছেন, জুটি গড়েছেন মূল্যবান ৭৮ রানের৷ অথচ সাকিব টিকতেই পারলেন না৷ তার সঙ্গে উইকেটে পড়ে থেকে সঙ্গ দেয়ার মতোও কেউ তাই দাঁড়ালেন না৷

২৩০ রানের লক্ষ্যে নেমে সাকিবের আগেই ভুল পথে চলতে শুরু করে বাংলাদেশ৷ লিটন দাস ধীর ও নিচু উইকেটে সোজা ব্যাটে না খেলে রিভার্স সুইপ করতে চাইলেন৷ যা লিটন সাধারণত করেন না৷ সেই ভুলে আরিয়ান দত্তকে উইকেট বিলিয়ে দিলেন৷ ১২ বলে ৩ রানে থাকা লিটনের গ্লাভসে লেগে বল উপরে উঠে যায়৷ বল লুফে নিয়ে ক্যাচ আউট করেন এডওয়ার্ডস৷ তিন চারে শুরু করা তরুণ তানজিদ তামিম আরও একবার শুরুর ঝলক ছাড়া কিছু দেখাতে পারলেন না৷ ১৬ বলে ১৫ রানে লোগান ফন বিকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন৷ এখন পর্যন্ত ভারত ম্যাচে ভাল ব্যাট করা বাদে এই তরুণের ঝুলিতে কিছু নেই৷

ডাচদের মতো শুরুতে জোড়া উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশও কিছু রানের পিছু ছুটছিল৷ মিরাজ পাল্টা আক্রমণ করেন আরিয়ানের এক ওভারে ১৪ রান নিয়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশের মতো দারুণ বোলিং পরিকল্পনা করে দুই ওভার পরেই উইকেট আদায় করে নেয় ডাচরা৷

বিশ্বকাপে রং হারানো শান্ত আরও একবার বিবর্ণ৷ পল ফন মিকারেনকে দারুন পুলে এক চার মারার পর ১৮ বলে ৯ রানে স্লিপে আউট হন৷ থামে ২৬ রানের ছোট জুটি৷ চতুর্থ উইকেটে সাকিব-মিরাজ জুটি ভরসার জায়গা ছিল৷ কিন্তু সাকিবের আগের ম্যাচের মতো একই রকম আউটে ১৮ রানের বেশি এগোয়নি জুটিটি৷ সাকিব বিদায়ের পরের ওভারেই ফেরেন মিরাজ৷ ৪০ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ রান করে ওই সময় পর্যন্ত সাহস দিচ্ছিলেন এই ব্যাটার৷ অথচ বাস ডি লিডির বলে মিরাজও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন৷

একের পর উইকেট হারানোর ভিড়ে চোখেমুখে ধোঁয়া দেখছিল বাংলাদেশ। মাঝে মুশফিকুর রহিমও বিদায় নিলেন। এরপর উইকেটে গিয়ে লেজের ব্যাটারদের নিয়ে আর কতটুকুই বা করার ছিল মাহমুদউল্লাহর। তিনি চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আগের ম্যাচের মতো পারেননি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে। দলীয় ১১৩ রানে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। ২০ রান করে তার বিদায়ের পর শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব আশা। বাংলাদেশকে থামিয়ে ইডেনে জয়ের রূপকথা লিখল স্কট এডওয়ার্ডসের দল। আর হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশকে।

অথচ আজ বোলিংটা ঠিকঠাকই হয়েছিল বাংলাদেশের। নেদারল্যান্ডসকে থামিয়ে দিয়েছিল মাত্র ২২৯ রানে। ইডেনের মাঠভর্তি দর্শকদের সামনে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ। চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন বিক্রাম সিং। মিডঅফে সেই ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি সাকিব আল হাসান। দলীয় ৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় ডাচরা, বিক্রামও করেন ৩ রান।

পরের ওভারেই দ্বিতীয় ধাক্কাটি দেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম ওভারে ৩ রান দেওয়া শরিফুল নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ফেরান ম্যাক্স ও’ডাউডকে। তরুণ এই পেসারের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মোকাবিলায় ক্যাচ তুলে দেন। স্লিপে থাকা তানজিদ তা লুফে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন।

মাত্র ৪ রানে জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পরও নুয়ে যায়নি নেদারল্যান্ডস। তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। দলীয় ৬৩ রানে সেই জুটি ভাঙে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে এসে মুস্তাফিজুর রহমান এসে ভাঙেন ওয়েসলি বারেসির প্রতিরোধ। মুস্তাফিজের বলে পিচের উপরেই বল তুলে দেন বারেসি। ছুটে এসে ক্যাচ নেন সাকিব আল হাসান। ৪১ বলে ৪১ রান করে থামেন তিনি।

পরের ওভারে সাকিবই পান উইকেটের দেখা। কোলিনকে থামিয়ে নিজের প্রথম শিকার তুলে নেন সাকিব। ৬৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে ডাচরা। তবে সেই চাপ সামলে আরেকটি জুটি পেয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। উইকেটে এসে জুটি বাধেন ডে লেডে ও স্কট এডওয়ার্ডস। এই জুটিতে দুজন যোগ করেন ৪৪ রান। ২৭তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩২ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন ডে লেডে।

পরের জুটিতেও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে নেদারল্যান্ডস। এবার স্কটের সঙ্গে জুটি বাধেন সাইব্রেন্ড। এই জুটিতে রানের গতি বাড়িয়ে নেয় ডাচরা। দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৭৮ রান। জমে যাওয়া এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস। ৬৮ রান করে থামেন ডাচ অধিনায়ক। ৮৯ বলে তার ইনিংস সাজানো ছিল ৬ বাউন্ডারিতে।

এরপর সাইব্রান্ডের প্রতিরোধ থামান মিরাজ। থিতু হওয়া জুটি ভাঙার পরও শেষ দিকে লেজের ব্যাটিংয়ে ভর করে ২২৯ রানে গিয়ে থামে নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৪৩ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদ। ৩৬ রান খরচায় মুস্তাফিজের শিকার দুটি। মেহেদী ও শরিফুলও নেন দুটি উইকেট। সাকিব এক উইকেট নিতে দিয়েছেন ৩৭ রান।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৯ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের লজ্জা বাংলাদেশের

আপডেট সময় : ০৮:৫২:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩

নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে হেরে পাহাড়সমান লজ্জা মাথায় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা । ডাচদের সঙ্গে এর আগে দুবার ওয়ানডেতে জিতেছিল বাংলাদেশ৷ তৃতীয়বার হার জুটল৷ গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খুব কাছেও গিয়েও জিততে ব্যর্থ হয়েছিল ডাচরা৷ সেই প্রতিশোধ যেন নিল এবার৷

যে ম্যাচটি নিয়ে বিশ্বকাপের আগে থেকেই জয়ের চিন্তা ছিল, সেই ম্যাচেই কি লেজে গোবড়ে ব্যাপার! নেদারল্যান্ডসকে জয়ের পুঁজি এনে দেয়া ৬৮ রান করা অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস দুবার জীবন পান ০ রানে৷

লিটন-সাকিব-মুশফিকরা বড় নাম হয়েও হতাশার সমার্থক থেকে যান ওই ব্যাটিং ব্যর্থতার গেরোয়৷ এর যেন শেষ নেই৷ ভুলের দিনে ক্ষীণ আশা দিতে থাকা মাহমুদউল্লাহ-শেখ মেহেদীর ৩৮ রানের জুটিও থামে ওই ভুলে-ই৷ ওই রান আউটটি না হলে কিছু কি হতে পারত! এই আশা তো সবসময়ের৷ এমন আশা-নিরাশার দোলাচলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট হেঁটেছে সবসময় ‘আহহহ’ আক্ষেপ নিয়েই৷ তাই আবারও ভুলের পর আক্ষেপ৷ নিজের ভুল কলে ১৭ রান করা মেহেদী অহেতুক রান আউট হলেন৷ বাংলাদেশের জয়ের শেষ স্বপ্নটাও সেখানে শেষ হয়৷ এরপর মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন ২০ রানে তিন ওভার পর৷

তাই নিজেদের সেরা ফরম্যাটে প্রথম বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন ওই স্বপ্নই থেকে যায়৷ কলকাতায় মিরপুরের আবহ তুলেও সমর্থকেরা ক্রিকেটারদের জাগাতে ব্যর্থ হয়৷ চেনা পরিবেশ বা পরিচিত কন্ডিশনের মাঠও এদিন সাকিব-মুশফিকদের নয়, তাদেরই ভুলে হাত বাড়িয়ে দেয় নেদারল্যান্ডসকে৷ তাই মিরপুরে খেলে ব্যাটিং-বোলিংয়ের যে পরিকল্পনা সাকিবদের মুখস্থ সেই পরিকল্পনায় তাদেরই বধ করে ডাচরা৷ কমলারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবুজ দেয়ালে এঁকে দিয়ে যায় বেদনার নীল রং৷

এ ম্যাচের আগে তাসকিনরা বলেছিলেন শেষ চারটি ম্যাচ জিততেও পারেন৷ এই হারের পর বাকি তিন ম্যাচ নিয়ে কি একই স্বপ্ন দেখবেন? ব্যাটিং ব্যার্থতা বাংলাদেশের পুরোনো রোগ৷ এ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই৷ এই ব্যর্থতাতে প্রতি বড় ইভেন্টে হৃদয়ে হাহাকার জায়গা নেয়৷ খেলা সরে গিয়ে নানা বিষয়ে সরব হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট৷ নানা সিরিজেও এই ব্যাটিং ব্যর্থতাই থাকে হতাশার মূল কারণ৷

অতীত নিয়ম মেনে এবারও সেই চিত্র ফিরে এলো৷ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বাদে আর একটি ম্যাচেও বাংলাদেশ ব্যাটাররা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারেনি৷ তাই ক্রিকেটের বাইরের চিত্র হয়ে ওঠে বড়৷ এই হতাশা কাঁধে নিয়ে বিশ্বকাপ চলাকালীন দলের অধিনায়ক সাকিব চলে আসেন দেশে৷ তিনদিনের একান্ত অনুশীলন করেন শৈশবের গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছে৷ এ নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে৷ ভাল খারাপ যুক্তি-তর্ক আপাতত তুলে রাখা যাক, কাজের কাজটা কি কিছু হয়েছে?

উত্তরটা খুব সোজা, একদমই না৷ তাই সাকিবকে দিয়েই নেদারল্যান্ডস ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস শুরু করা যাক৷ সাকিব সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে আউট হয়েছেন প্রায় সেই ভঙ্গিতেই আউট হলেন৷ বাড়তি বাউন্সে মানিয়ে নিতে না পেরে৷ মিরপুরের ইনডোরে দুই দিনে তিন ঘন্টার একক চেষ্টায়ও নিজের দুর্বলতা কাটাতে পারেননি৷ তাকে নিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় ঠিক জায়গায় ডেলেভারি করে সফলতা পল ফন মিকেরেন৷

১৪ বলে মাত্র ৫ করে ফেরেন তিনি, দল তখন ১৬ ওভারে ৬৩ রানে ৪ উইকেট৷ অথচ এই সাকিব প্রতিপক্ষ অধিনায়ককেই অনুসরণ করতে পারতেন৷ কলকাতার এই উইকেটে ব্যাট করা কঠিন ছিল৷ কিন্তু সেট হওয়া কঠিন না৷ এডওয়ার্ডস সময় নিয়ে উইকেটে থেকেছেন৷ স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল করা সাকিবের ওভারে ডট দিয়েছেন৷ সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট সাকিবের বল খেলতেই পারছিলেন না৷ তবুও ডট এর পর ডট দিয়েছেন, জুটি গড়েছেন মূল্যবান ৭৮ রানের৷ অথচ সাকিব টিকতেই পারলেন না৷ তার সঙ্গে উইকেটে পড়ে থেকে সঙ্গ দেয়ার মতোও কেউ তাই দাঁড়ালেন না৷

২৩০ রানের লক্ষ্যে নেমে সাকিবের আগেই ভুল পথে চলতে শুরু করে বাংলাদেশ৷ লিটন দাস ধীর ও নিচু উইকেটে সোজা ব্যাটে না খেলে রিভার্স সুইপ করতে চাইলেন৷ যা লিটন সাধারণত করেন না৷ সেই ভুলে আরিয়ান দত্তকে উইকেট বিলিয়ে দিলেন৷ ১২ বলে ৩ রানে থাকা লিটনের গ্লাভসে লেগে বল উপরে উঠে যায়৷ বল লুফে নিয়ে ক্যাচ আউট করেন এডওয়ার্ডস৷ তিন চারে শুরু করা তরুণ তানজিদ তামিম আরও একবার শুরুর ঝলক ছাড়া কিছু দেখাতে পারলেন না৷ ১৬ বলে ১৫ রানে লোগান ফন বিকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন৷ এখন পর্যন্ত ভারত ম্যাচে ভাল ব্যাট করা বাদে এই তরুণের ঝুলিতে কিছু নেই৷

ডাচদের মতো শুরুতে জোড়া উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশও কিছু রানের পিছু ছুটছিল৷ মিরাজ পাল্টা আক্রমণ করেন আরিয়ানের এক ওভারে ১৪ রান নিয়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশের মতো দারুণ বোলিং পরিকল্পনা করে দুই ওভার পরেই উইকেট আদায় করে নেয় ডাচরা৷

বিশ্বকাপে রং হারানো শান্ত আরও একবার বিবর্ণ৷ পল ফন মিকারেনকে দারুন পুলে এক চার মারার পর ১৮ বলে ৯ রানে স্লিপে আউট হন৷ থামে ২৬ রানের ছোট জুটি৷ চতুর্থ উইকেটে সাকিব-মিরাজ জুটি ভরসার জায়গা ছিল৷ কিন্তু সাকিবের আগের ম্যাচের মতো একই রকম আউটে ১৮ রানের বেশি এগোয়নি জুটিটি৷ সাকিব বিদায়ের পরের ওভারেই ফেরেন মিরাজ৷ ৪০ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ রান করে ওই সময় পর্যন্ত সাহস দিচ্ছিলেন এই ব্যাটার৷ অথচ বাস ডি লিডির বলে মিরাজও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন৷

একের পর উইকেট হারানোর ভিড়ে চোখেমুখে ধোঁয়া দেখছিল বাংলাদেশ। মাঝে মুশফিকুর রহিমও বিদায় নিলেন। এরপর উইকেটে গিয়ে লেজের ব্যাটারদের নিয়ে আর কতটুকুই বা করার ছিল মাহমুদউল্লাহর। তিনি চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আগের ম্যাচের মতো পারেননি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে। দলীয় ১১৩ রানে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। ২০ রান করে তার বিদায়ের পর শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব আশা। বাংলাদেশকে থামিয়ে ইডেনে জয়ের রূপকথা লিখল স্কট এডওয়ার্ডসের দল। আর হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশকে।

অথচ আজ বোলিংটা ঠিকঠাকই হয়েছিল বাংলাদেশের। নেদারল্যান্ডসকে থামিয়ে দিয়েছিল মাত্র ২২৯ রানে। ইডেনের মাঠভর্তি দর্শকদের সামনে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ। চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন বিক্রাম সিং। মিডঅফে সেই ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি সাকিব আল হাসান। দলীয় ৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় ডাচরা, বিক্রামও করেন ৩ রান।

পরের ওভারেই দ্বিতীয় ধাক্কাটি দেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম ওভারে ৩ রান দেওয়া শরিফুল নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ফেরান ম্যাক্স ও’ডাউডকে। তরুণ এই পেসারের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মোকাবিলায় ক্যাচ তুলে দেন। স্লিপে থাকা তানজিদ তা লুফে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন।

মাত্র ৪ রানে জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পরও নুয়ে যায়নি নেদারল্যান্ডস। তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। দলীয় ৬৩ রানে সেই জুটি ভাঙে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে এসে মুস্তাফিজুর রহমান এসে ভাঙেন ওয়েসলি বারেসির প্রতিরোধ। মুস্তাফিজের বলে পিচের উপরেই বল তুলে দেন বারেসি। ছুটে এসে ক্যাচ নেন সাকিব আল হাসান। ৪১ বলে ৪১ রান করে থামেন তিনি।

পরের ওভারে সাকিবই পান উইকেটের দেখা। কোলিনকে থামিয়ে নিজের প্রথম শিকার তুলে নেন সাকিব। ৬৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে ডাচরা। তবে সেই চাপ সামলে আরেকটি জুটি পেয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। উইকেটে এসে জুটি বাধেন ডে লেডে ও স্কট এডওয়ার্ডস। এই জুটিতে দুজন যোগ করেন ৪৪ রান। ২৭তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩২ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন ডে লেডে।

পরের জুটিতেও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে নেদারল্যান্ডস। এবার স্কটের সঙ্গে জুটি বাধেন সাইব্রেন্ড। এই জুটিতে রানের গতি বাড়িয়ে নেয় ডাচরা। দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৭৮ রান। জমে যাওয়া এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস। ৬৮ রান করে থামেন ডাচ অধিনায়ক। ৮৯ বলে তার ইনিংস সাজানো ছিল ৬ বাউন্ডারিতে।

এরপর সাইব্রান্ডের প্রতিরোধ থামান মিরাজ। থিতু হওয়া জুটি ভাঙার পরও শেষ দিকে লেজের ব্যাটিংয়ে ভর করে ২২৯ রানে গিয়ে থামে নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৪৩ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদ। ৩৬ রান খরচায় মুস্তাফিজের শিকার দুটি। মেহেদী ও শরিফুলও নেন দুটি উইকেট। সাকিব এক উইকেট নিতে দিয়েছেন ৩৭ রান।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৯ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box