ঢাকা ০১:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বাড়িতে হামলা ভাংচুর প্রভাবশালীদের নাম থাকায় মামলা নেননি ওসি, এসপির কাছে অভিযোগ

পাবনা প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:৩১:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩ ২৯৪ বার পঠিত

হামলায় আহত বৃদ্ধা শাহাতন

পাবনার বেড়ায় এজাহারে প্রভাবশালীদের নাম থাকায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে। এমনকি প্রভাবশালীদের নাম বাদ দিতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে থানায় ডেকে জোর করে নতুন একটি এজাহারে সাক্ষরও নিয়েছেন তিনি।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম শেখ। এর আগে জমি নিয়ে বিরোধে ১ অক্টোবর বাড়িতে করা হামলার ঘটনায় পরের দিন থানায় মামলা করতে গিয়ে এই বিড়ম্বনায় পড়েন আমিনপুর থানাধীন ভাটিকয়া গ্রামের সালাম শেখ। এখন প্রভাবশালীদের নামে মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় তাকে এলাকাছাড়া করার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষ।

জানতে চেয়ে আমিনপুর থানার ওসি আনিসুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। হামলার ঘটনা সম্পর্কে আব্দুস সালাম শেখ জানান, আমিনপুর থানার ভাটিকয়া গ্রামে জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে ১ অক্টোবর সকালে প্রতিবেশী বাদশা শেখ, আইয়ুব প্রামাণিক, ইউসুফ, ইদ্রিস, আব্দুল কাদের মাস্টার, সালমাসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র (চাপাতি, বটি, চাইনিজ কুড়াল), রড ও লাঠি নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। এতে বাধা দিলে তার মেয়ে সোনিয়া, স্ত্রী রোকেয়া খাতুন ও শাশুড়ি শাহাতন বেগমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তারা।
হামলাকারীরা সোনিয়ার মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দেয়। স্ত্রী ও শাশুড়ির চোখ এবং মাথায় আঘাত করে মারাত্মকভাবে আহত করে। গুরুত্বর অবস্থায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে অবস্থার অবনতি হলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও বৃদ্ধা শাহাতন এখন চোখে প্রায় দেখেন না। মেয়ে ও স্ত্রীসহ আহত অন্যরাও এখনো সুস্থ হয়নি।

সালাম বলেন, ‘ঘটনার পরদিন (২ অক্টোবর) আমিনপুর থানায় এজাহার জমা দিতে গিলে ওসি আনিসুর রহমান আমাকে অভিযোগ থেকে কাদের মাস্টার ও তার স্ত্রী সালমার নাম বাদ দিতে বলেন। আমি রাজি না হলে তিনি মামলা না নিয়ে কোর্টে গিয়ে অভিযোগ করতে বলেন। এরপর রবিবার (৮ তারিখ) থানায় ঘুরলেও তাদের নাম বাদ না দিলে মামলা নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।’

সালাম আরো বলেন, ‘মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) রাতে তিনি আমাকে থানায় ডেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দেন। একপর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাদের ও সালমার নাম বাদ দিয়ে তার নিজের লেখা এজাহারে জোরপূর্বক সাক্ষর নেন।’

সালাম আরো বলেন, ‘প্রভাবশালীদের নাম মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় এবং ওসি পক্ষে আছে জেনে প্রকাশ্যে ঘুরছে হামলাকারীরা। তারা আমাকে এলাকাছাড়া করার হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ। নির্যাতিত হয়েও বিচার পাচ্ছি না। আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়ে তাদের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছি।’

জানতে চাইলে আমিনপুর থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, ‘সালাম থানায় এসেছিলেন, অভিযোগ করেছেন।’ সালামের দেওয়া এজাহারে আগে মামলা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে গত জুনে জাতীয় দৈনিক প্রভাত-এর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা সালাহউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি আমিনপুরে চুরি ঘটনা ঘটে। মিঞা সালাহউদ্দিন ওই ঘটনায় আমিনপুর থানায় গেলেও ওসি মামলা নিতে গড়িমসি করেন।

মিঞা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আনিসুর রহমান ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে এখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি বলেন, অর্থ-ধন-দৌলত আপনার। এগুলো দেখে রাখার দায়িত্বও আপনারই। আমরা কি আপনার বাড়ি পাহারা দিয়ে রাখব?’

জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, ‘মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী কার নাম রাখবে বা বাদ দেবে, সে বিষয়ে পুলিশের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। ওসি আনিসুর রহমান কেন মামলা নেননি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ১১ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বাড়িতে হামলা ভাংচুর প্রভাবশালীদের নাম থাকায় মামলা নেননি ওসি, এসপির কাছে অভিযোগ

আপডেট সময় : ১২:৩১:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩

পাবনার বেড়ায় এজাহারে প্রভাবশালীদের নাম থাকায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে। এমনকি প্রভাবশালীদের নাম বাদ দিতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে থানায় ডেকে জোর করে নতুন একটি এজাহারে সাক্ষরও নিয়েছেন তিনি।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম শেখ। এর আগে জমি নিয়ে বিরোধে ১ অক্টোবর বাড়িতে করা হামলার ঘটনায় পরের দিন থানায় মামলা করতে গিয়ে এই বিড়ম্বনায় পড়েন আমিনপুর থানাধীন ভাটিকয়া গ্রামের সালাম শেখ। এখন প্রভাবশালীদের নামে মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় তাকে এলাকাছাড়া করার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষ।

জানতে চেয়ে আমিনপুর থানার ওসি আনিসুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। হামলার ঘটনা সম্পর্কে আব্দুস সালাম শেখ জানান, আমিনপুর থানার ভাটিকয়া গ্রামে জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে ১ অক্টোবর সকালে প্রতিবেশী বাদশা শেখ, আইয়ুব প্রামাণিক, ইউসুফ, ইদ্রিস, আব্দুল কাদের মাস্টার, সালমাসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র (চাপাতি, বটি, চাইনিজ কুড়াল), রড ও লাঠি নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। এতে বাধা দিলে তার মেয়ে সোনিয়া, স্ত্রী রোকেয়া খাতুন ও শাশুড়ি শাহাতন বেগমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তারা।
হামলাকারীরা সোনিয়ার মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দেয়। স্ত্রী ও শাশুড়ির চোখ এবং মাথায় আঘাত করে মারাত্মকভাবে আহত করে। গুরুত্বর অবস্থায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে অবস্থার অবনতি হলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও বৃদ্ধা শাহাতন এখন চোখে প্রায় দেখেন না। মেয়ে ও স্ত্রীসহ আহত অন্যরাও এখনো সুস্থ হয়নি।

সালাম বলেন, ‘ঘটনার পরদিন (২ অক্টোবর) আমিনপুর থানায় এজাহার জমা দিতে গিলে ওসি আনিসুর রহমান আমাকে অভিযোগ থেকে কাদের মাস্টার ও তার স্ত্রী সালমার নাম বাদ দিতে বলেন। আমি রাজি না হলে তিনি মামলা না নিয়ে কোর্টে গিয়ে অভিযোগ করতে বলেন। এরপর রবিবার (৮ তারিখ) থানায় ঘুরলেও তাদের নাম বাদ না দিলে মামলা নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।’

সালাম আরো বলেন, ‘মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) রাতে তিনি আমাকে থানায় ডেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দেন। একপর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাদের ও সালমার নাম বাদ দিয়ে তার নিজের লেখা এজাহারে জোরপূর্বক সাক্ষর নেন।’

সালাম আরো বলেন, ‘প্রভাবশালীদের নাম মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় এবং ওসি পক্ষে আছে জেনে প্রকাশ্যে ঘুরছে হামলাকারীরা। তারা আমাকে এলাকাছাড়া করার হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ। নির্যাতিত হয়েও বিচার পাচ্ছি না। আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়ে তাদের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছি।’

জানতে চাইলে আমিনপুর থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, ‘সালাম থানায় এসেছিলেন, অভিযোগ করেছেন।’ সালামের দেওয়া এজাহারে আগে মামলা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে গত জুনে জাতীয় দৈনিক প্রভাত-এর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা সালাহউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি আমিনপুরে চুরি ঘটনা ঘটে। মিঞা সালাহউদ্দিন ওই ঘটনায় আমিনপুর থানায় গেলেও ওসি মামলা নিতে গড়িমসি করেন।

মিঞা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আনিসুর রহমান ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে এখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি বলেন, অর্থ-ধন-দৌলত আপনার। এগুলো দেখে রাখার দায়িত্বও আপনারই। আমরা কি আপনার বাড়ি পাহারা দিয়ে রাখব?’

জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, ‘মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী কার নাম রাখবে বা বাদ দেবে, সে বিষয়ে পুলিশের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। ওসি আনিসুর রহমান কেন মামলা নেননি, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ১১ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box