ঢাকা ০১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বাড়ছে কোটিপতি বাড়ছে বৈষম্য

সারাবেলা ডেক্স
  • আপডেট সময় : ১২:০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৪০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) পাঁচ হাজার বেড়েছে। এরমধ্যে তিন হাজারেরও বেশি ব্যাংক হিসাব বেড়েছে মাত্র তিন মাসের মধ্যে। তবে যে হারে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে, সে তুলনায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানত বাড়েনি।
এই ভারসাম্যহীনতা দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কোনও দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়া মানে সেখানকার ধনীরা আরও ধনী হয়। অন্য দিকে গরিবরা আরও গরিব হয়। যা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কোটিপতি কারা : কোনও ব্যক্তি তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা রাখলেন কিংবা লটারিতে এক কোটি টাকা জিতলেন, এতে কিন্তু ওই ব্যক্তিকে কোটিপতি বলা যাবে না।
অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে যদি টাকার প্রবাহ কোটি টাকা বা এর বেশি থাকে তখন তাকে কোটিপতি বলা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর জুনে কোটি টাকার হিসাব ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি। যা ২০২৩ সালের জুনে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টিতে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭টি। এর মধ্যে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছে তিন হাজারের বেশি।
তবে প্রকৃত কোটিপতির সংখ্যা এই ব্যাংক হিসাবের চাইতে আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যান কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে না। অর্থাৎ ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তি নয়। এটি শুধুমাত্র ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত অর্থের হিসাব। কিন্তু এমন অনেক কোটিপতি রয়েছেন যাদের ব্যাংকে হয়তো জমানো অর্থ নেই কিন্তু দেশে ও দেশের বাইরে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।
যার পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি। আবার ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও প্রতিষ্ঠান বা একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। আবার একজনের একাধিক কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব থাকতে পারে। সে হিসেবে দেশে এখন কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত, সে বিষয়ে ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কোন চিত্র পাওয়া যায় না।
এ নিয়ে কোনও পরিসংখ্যানও নেই। কোটিপতি হিসাবধারীদের বেশিরভাগই হয় ঋণখেলাপি, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, নাহলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ লুটেরা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশে যেভাবে গুটিকয়েক মানুষ এমন দ্রুত কোটি টাকার হিসেব খুলে বসেছেন, তাতে তাদের অর্থের উৎস বা উপার্জনের উপায় নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরণি বারাকাত।
তার মতে এসব কোটিপতি হিসাবধারীদের বেশিরভাগই হয় ঋণখেলাপি, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, নাহলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ লুটেরা। যেমন: ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা তুলে তারা পরিশোধ করছে না, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ চুরি করছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করছে, ঠিকাদাররা এক টাকা পণ্যের খরচ ১০০ টাকা দেখিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে অবৈধভাবে উপার্জিত কোটিপতিদের অধিকাংশই দুর্নীতির টাকা ব্যাংকে রাখেন না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তার মতে, অবৈধভাবে অর্জিত টাকা হয় বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়, না হলে সরকারকে না জানিয়ে নামে বেনামে সম্পদ কেনা হয়। কেননা ব্যাংকে টাকা রাখলে এর কর ও টাকার উৎসের প্রমাণ দিতে হয়। তাই দেখা যায় অবৈধভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার বেশিরভাগ প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার না হলে কোটিপতির সংখ্যা আরও বাড়ত বলে তার ধারণা।
কোটিপতি বেড়ে যাওয়া কী ইঙ্গিত দেয় : কোটিপতির সংখ্যা বাড়া সমাজের জন্য ইতিবাচক কিনা সেটা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরণি বারাকাত। প্রথমত, এখানে কোটি টাকার প্রকৃত মূল্য কতো অর্থাৎ এক কোটি টাকার ক্রয়ক্ষমতা কতো। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ““আগে লাখপতি মানেই বিশাল কিছু ছিল। এখন লাখ টাকায় কিছুই হয় না।
তেমনটি কোটিপতি বাড়ার সাথে সাথে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যদি অর্থের মূল্য কমে যায়, তাহলে এই কোটিপতি বাড়লে অর্থনীতিতে কোন লাভ নেই।” দ্বিতীয়ত, এই কোটি টাকার ব্যাংক হিসেবের উৎস কী। অর্থাৎ কোন উৎস থেকে এই পরিমাণ আয় হয়েছে। অরণি বারাকাত জানান, বাংলাদেশের যেসব মানুষ কোটি টাকার হিসাব খুলছে, এই টাকা কি তারা উপার্জন করেছেন নাকি অবৈধভাবে অর্জন করেছে সেটার ওপর অর্থনীতির লাভ ক্ষতি নির্ভর করে।
যদি কারও বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ শিল্পে বিনিয়োগ হতো তাহলে গরিব মানুষদের কর্মসংস্থান হতো এবং সেই অর্থের সুফল সব স্তরে পৌঁছাত। কিন্তু অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীরা কর দেয় না, ঋণ শোধ করে না, দুর্নীতি করে অর্জিত সম্পদের হিসাব দেয় না সিন্ডিকেট ।
সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২০ সেপ্টম্বর ২০২৩
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বাড়ছে কোটিপতি বাড়ছে বৈষম্য

আপডেট সময় : ১২:০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) পাঁচ হাজার বেড়েছে। এরমধ্যে তিন হাজারেরও বেশি ব্যাংক হিসাব বেড়েছে মাত্র তিন মাসের মধ্যে। তবে যে হারে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে, সে তুলনায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানত বাড়েনি।
এই ভারসাম্যহীনতা দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কোনও দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়া মানে সেখানকার ধনীরা আরও ধনী হয়। অন্য দিকে গরিবরা আরও গরিব হয়। যা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কোটিপতি কারা : কোনও ব্যক্তি তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা রাখলেন কিংবা লটারিতে এক কোটি টাকা জিতলেন, এতে কিন্তু ওই ব্যক্তিকে কোটিপতি বলা যাবে না।
অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে যদি টাকার প্রবাহ কোটি টাকা বা এর বেশি থাকে তখন তাকে কোটিপতি বলা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর জুনে কোটি টাকার হিসাব ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি। যা ২০২৩ সালের জুনে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টিতে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭টি। এর মধ্যে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছে তিন হাজারের বেশি।
তবে প্রকৃত কোটিপতির সংখ্যা এই ব্যাংক হিসাবের চাইতে আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যান কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে না। অর্থাৎ ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তি নয়। এটি শুধুমাত্র ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত অর্থের হিসাব। কিন্তু এমন অনেক কোটিপতি রয়েছেন যাদের ব্যাংকে হয়তো জমানো অর্থ নেই কিন্তু দেশে ও দেশের বাইরে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।
যার পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি। আবার ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও প্রতিষ্ঠান বা একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। আবার একজনের একাধিক কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব থাকতে পারে। সে হিসেবে দেশে এখন কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত, সে বিষয়ে ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কোন চিত্র পাওয়া যায় না।
এ নিয়ে কোনও পরিসংখ্যানও নেই। কোটিপতি হিসাবধারীদের বেশিরভাগই হয় ঋণখেলাপি, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, নাহলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ লুটেরা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশে যেভাবে গুটিকয়েক মানুষ এমন দ্রুত কোটি টাকার হিসেব খুলে বসেছেন, তাতে তাদের অর্থের উৎস বা উপার্জনের উপায় নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরণি বারাকাত।
তার মতে এসব কোটিপতি হিসাবধারীদের বেশিরভাগই হয় ঋণখেলাপি, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, নাহলে বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ লুটেরা। যেমন: ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা তুলে তারা পরিশোধ করছে না, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ চুরি করছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করছে, ঠিকাদাররা এক টাকা পণ্যের খরচ ১০০ টাকা দেখিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে অবৈধভাবে উপার্জিত কোটিপতিদের অধিকাংশই দুর্নীতির টাকা ব্যাংকে রাখেন না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তার মতে, অবৈধভাবে অর্জিত টাকা হয় বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়, না হলে সরকারকে না জানিয়ে নামে বেনামে সম্পদ কেনা হয়। কেননা ব্যাংকে টাকা রাখলে এর কর ও টাকার উৎসের প্রমাণ দিতে হয়। তাই দেখা যায় অবৈধভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার বেশিরভাগ প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার না হলে কোটিপতির সংখ্যা আরও বাড়ত বলে তার ধারণা।
কোটিপতি বেড়ে যাওয়া কী ইঙ্গিত দেয় : কোটিপতির সংখ্যা বাড়া সমাজের জন্য ইতিবাচক কিনা সেটা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরণি বারাকাত। প্রথমত, এখানে কোটি টাকার প্রকৃত মূল্য কতো অর্থাৎ এক কোটি টাকার ক্রয়ক্ষমতা কতো। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ““আগে লাখপতি মানেই বিশাল কিছু ছিল। এখন লাখ টাকায় কিছুই হয় না।
তেমনটি কোটিপতি বাড়ার সাথে সাথে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যদি অর্থের মূল্য কমে যায়, তাহলে এই কোটিপতি বাড়লে অর্থনীতিতে কোন লাভ নেই।” দ্বিতীয়ত, এই কোটি টাকার ব্যাংক হিসেবের উৎস কী। অর্থাৎ কোন উৎস থেকে এই পরিমাণ আয় হয়েছে। অরণি বারাকাত জানান, বাংলাদেশের যেসব মানুষ কোটি টাকার হিসাব খুলছে, এই টাকা কি তারা উপার্জন করেছেন নাকি অবৈধভাবে অর্জন করেছে সেটার ওপর অর্থনীতির লাভ ক্ষতি নির্ভর করে।
যদি কারও বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ শিল্পে বিনিয়োগ হতো তাহলে গরিব মানুষদের কর্মসংস্থান হতো এবং সেই অর্থের সুফল সব স্তরে পৌঁছাত। কিন্তু অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীরা কর দেয় না, ঋণ শোধ করে না, দুর্নীতি করে অর্জিত সম্পদের হিসাব দেয় না সিন্ডিকেট ।
সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২০ সেপ্টম্বর ২০২৩
Facebook Comments Box