ঢাকা ০৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

কুমিল্লায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা, ফেনী-চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪ ১৩ বার পঠিত

কুমিল্লা জেলায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুধবার (২১ অগাস্ট) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এ ছাড়াও, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও নিচু এলাকাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও গোমতী নদীর পানির স্তর নামার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদীর পানি কমলেও পদ্মার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর পানি আরও কমতে পারে। তবে বাড়ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি।

কুমিল্লায় প্রবল বর্ষণে বেড়েছে গোমতী নদীর পানি, শত শত মানুষ পানিবন্দী

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গোমতী নদীর উৎপত্তিস্থলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর পানি বেড়ে গিয়ে কুমিল্লায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে নদীর পানি।

কুমিল্লা নগরীর অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও, চর এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

নষ্ট হয়ে গেছে ৪ হাজার একর ফসলি জমির সবজি খেত।

কুমিল্লা সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার গোমতী বাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

গোমতী নদীর দুই তীরের ভঙ্গুর স্থানগুলো মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান।

তিনি আরও জানান, গোমতীতে গত ১৫ বছরে উজান থেকে আসা এত পানি দেখা যায়নি।

এদিকে কুমিল্লায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৬ মিলিমিটার। গত তিনদিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৭৪ মিলিমিটার।

ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনী, হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত, ১ জন নিহত

এদিকে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বন্যাদুর্গতরা। এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু ও একজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর মিলেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৪০০ জনকে।

ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট ও আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

অন্যদিকে পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ও পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

এ ছাড়াও, ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। এরমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল পর্যন্ত ছুয়েছে বন্যার পানি। আশ্রয়ের খোঁজে স্থানীয়রা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব স্বপন বলেন, আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। এখন কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। এছাড়া সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। খাবার ও পানি নেই।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, পরশুরাম উপজেলার পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী অসংখ্য মানুষ। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইউএনও আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০ টন চাল মজুদ রয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির উচ্চতা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে।

এখন পর্যন্ত একজন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানান তিনি।

ফেনীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুসাম্মত শাহীনা আক্তার বলেন, ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

জুলাই মাসের মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা যায়। সেসময় মেরামত করা হলেও চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরও ১২ জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়।

দেড়মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যায় বাঁধ ভেঙে অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ১৫ দিনের মাথায় আবারও দেখা দিল বন্যা।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মুনীর হোসেন।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

কুমিল্লায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা, ফেনী-চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

আপডেট সময় : ১২:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

কুমিল্লা জেলায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুধবার (২১ অগাস্ট) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এ ছাড়াও, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও নিচু এলাকাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও গোমতী নদীর পানির স্তর নামার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদীর পানি কমলেও পদ্মার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর পানি আরও কমতে পারে। তবে বাড়ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি।

কুমিল্লায় প্রবল বর্ষণে বেড়েছে গোমতী নদীর পানি, শত শত মানুষ পানিবন্দী

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গোমতী নদীর উৎপত্তিস্থলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর পানি বেড়ে গিয়ে কুমিল্লায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে নদীর পানি।

কুমিল্লা নগরীর অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও, চর এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

নষ্ট হয়ে গেছে ৪ হাজার একর ফসলি জমির সবজি খেত।

কুমিল্লা সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার গোমতী বাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

গোমতী নদীর দুই তীরের ভঙ্গুর স্থানগুলো মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান।

তিনি আরও জানান, গোমতীতে গত ১৫ বছরে উজান থেকে আসা এত পানি দেখা যায়নি।

এদিকে কুমিল্লায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৬ মিলিমিটার। গত তিনদিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৭৪ মিলিমিটার।

ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনী, হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত, ১ জন নিহত

এদিকে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বন্যাদুর্গতরা। এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু ও একজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর মিলেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৪০০ জনকে।

ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট ও আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

অন্যদিকে পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ও পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

এ ছাড়াও, ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। এরমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল পর্যন্ত ছুয়েছে বন্যার পানি। আশ্রয়ের খোঁজে স্থানীয়রা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব স্বপন বলেন, আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। এখন কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। এছাড়া সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। খাবার ও পানি নেই।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, পরশুরাম উপজেলার পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী অসংখ্য মানুষ। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইউএনও আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০ টন চাল মজুদ রয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির উচ্চতা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে।

এখন পর্যন্ত একজন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানান তিনি।

ফেনীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুসাম্মত শাহীনা আক্তার বলেন, ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

জুলাই মাসের মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা যায়। সেসময় মেরামত করা হলেও চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরও ১২ জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়।

দেড়মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যায় বাঁধ ভেঙে অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ১৫ দিনের মাথায় আবারও দেখা দিল বন্যা।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মুনীর হোসেন।

Facebook Comments Box