ঢাকা ০৯:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

পাবনায় সংঘর্ষ গুলি, শহর রণক্ষেত্র, নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক

পাবনা প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:০৫:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪ ১২ বার পঠিত

ছবি সংগৃহিত

পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।নিহতরা হলেন- চর বলরামপুরের বাসিন্দা পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২১), হাজিরহাট ব্রজনাথপুরের বাসিন্দা যুবলীগকর্মী মাহবুবুর রহমান (২২) ও অ্যাডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৭)। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল হাসান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষার্থীরা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পেছন থেকে অতর্কিত গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (১৯), মাহবুুবুল হোসেন (১৬) ও ফাহিম (১৭) গৃলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের হাপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

এ দিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে কিছু সময়ের জন্য সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মৃত্যুর খবর শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও স্লোগানে দিতে থাকেন। দফায় দফায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভকারী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন,হাসপাতালে তিনজন মারা গেছেন। আমাদের গুলি বিদ্ধসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২জনের অবস্থা আশংকাজনক । তাদের আমরা দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

তারা আরও জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছিল। এ সময় যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক ও তার লোকজন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেয়। তারা পিছু হটলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যুবলীগের ওই নেতার অফিস ভাঙচুর করে। এছাড়া তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালায়।

এ ঘটনার পর দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ চেয়ারম্যান ও তার লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় হামলা চালায়। পরে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাঈদ চেয়ারম্যানের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আগুন পাশের একটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে তৃতীয় দফায় বেলা ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা আবার শহরের আব্দুল হামিদ রোডে ফিরে এসে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগুতে থাকলে পুলিশ যেতে নিষেধ করে। পরে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গেলে বিপরিত দিক থেকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এসময়ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। একজন শিক্ষার্থীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় পুলিশ নিরুপায় হয়ে পাশেই এআর মার্কেটে ঢুকে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা পিছু হটলে এ আর মার্কেট থেকে বের হয়ে পুলিশ আ’লীগ নেতা কর্মীদের পিছু হটতে বাধ্য করে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে বলে জেনেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

পাবনায় সংঘর্ষ গুলি, শহর রণক্ষেত্র, নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক

আপডেট সময় : ০৮:০৫:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।নিহতরা হলেন- চর বলরামপুরের বাসিন্দা পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২১), হাজিরহাট ব্রজনাথপুরের বাসিন্দা যুবলীগকর্মী মাহবুবুর রহমান (২২) ও অ্যাডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৭)। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল হাসান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষার্থীরা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পেছন থেকে অতর্কিত গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (১৯), মাহবুুবুল হোসেন (১৬) ও ফাহিম (১৭) গৃলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের হাপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

এ দিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে কিছু সময়ের জন্য সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মৃত্যুর খবর শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও স্লোগানে দিতে থাকেন। দফায় দফায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভকারী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন,হাসপাতালে তিনজন মারা গেছেন। আমাদের গুলি বিদ্ধসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২জনের অবস্থা আশংকাজনক । তাদের আমরা দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

তারা আরও জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছিল। এ সময় যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক ও তার লোকজন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেয়। তারা পিছু হটলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যুবলীগের ওই নেতার অফিস ভাঙচুর করে। এছাড়া তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালায়।

এ ঘটনার পর দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ চেয়ারম্যান ও তার লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় হামলা চালায়। পরে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাঈদ চেয়ারম্যানের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আগুন পাশের একটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে তৃতীয় দফায় বেলা ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা আবার শহরের আব্দুল হামিদ রোডে ফিরে এসে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগুতে থাকলে পুলিশ যেতে নিষেধ করে। পরে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গেলে বিপরিত দিক থেকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এসময়ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। একজন শিক্ষার্থীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় পুলিশ নিরুপায় হয়ে পাশেই এআর মার্কেটে ঢুকে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা পিছু হটলে এ আর মার্কেট থেকে বের হয়ে পুলিশ আ’লীগ নেতা কর্মীদের পিছু হটতে বাধ্য করে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে বলে জেনেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

Facebook Comments Box