ঢাকা ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দাম নিয়ন্ত্রণে ট্রেনে সবজি পরিবহন Logo আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি কর্নেল অলির Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা? Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু আজ

৮ ডিবি সদস্য প্রসঙ্গে হাইকোর্ট

নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো অমানবিক ও দুঃখজনক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:৩৬:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪ ১১ বার পঠিত

আট ডিবি সদস্য কর্তৃক দুজন নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনা অমানবিক ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কাজ করা উচিৎ হয়নি।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এস এম কুদ্দুছ জামান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। অভিযুক্ত আট ডিবি সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন আদালত।

ডিবির ওই ৮ সদস্য হলেন- পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জল হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান, সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মমিনুল হক ও নাজমুল হক প্রধান এবং কনস্টেবল গোলাম সরোয়ার।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। নিরীহ দুই ব্যক্তির পক্ষে ছিলেন, ব্যারিস্টার সৈয়দ ছায়েদুল হক সুমন, আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম লিটন আহমেদ, অ্যাডভোকেট বিভূতিভূষণ সরকার।

আইনজীবী বিভূতিভূষণ সরকার বলেন, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকার একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক হাসান মজুমদার এবং একই হোটেলের শেফ সোহেল রানাকে জাল ব্যাংক নোট রাখার মামলা থেকে খালাস দেন আদালত। ছয় বছর ধরে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা চালিয়ে হাসান ও সোহেল জয়ী হন। আদালতের নথি অনুযায়ী, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারক তাহসিন ইফতেখারের আদালত তাদের দুজনকে খালাস দেন। রায়ে দুজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় গোয়েন্দা পুলিশের ওই (ডিবি) ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেন আদালত।

অ্যাডভোকেট এম লিটন আহমেদ বলেন, বিচারিক আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের ওই (ডিবি) ৮ সদস্য। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রায়ের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই রুল শুনানির জন্য ওঠে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী  জানান, শুনানিতে আদালত ৮ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য প্রসঙ্গে বলেছেন, কর্তৃক দুই নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনা অমানবিক ও দুঃখজনক। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কাজ করা উচিৎ হয়নি। টাকার জন্য মানুষ এত নীচে নামতে পারে? নিরীহ মানুষের জীবন থেকে কয়েকটি বছর হারিয়ে গেল, এর দায়িত্ব কে নিবে। ভবিষ্যতে আর কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেন এমন মিথ্যা মামলা না করতে পারে।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রাজধানীর পল্টনে হোটেল বন্ধুতে অভিযান চালিয়ে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা হাসান ও সোহেলকে আটক করে। ঘটনাটি হোটেলের সিকিউরিটি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়। পরে তাদের নামে মতিঝিল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন ডিবির একজন উপপরিদর্শক।

পুলিশের এফআইআরে এ ঘটনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন বিবরণ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২৫ লাখ টাকার জাল নোট নিয়ে পালানোর সময় ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফকিরাপুল এলাকা থেকে ডিবি দুজনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৭ সালে হোটেলে অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের একজন এবং এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জল হোসেন অভিযোগ গঠন করেন হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে।

হাসানের অভিযোগ, অভিযানের সময় ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তিন লাখ টাকা দাবি করেন এবং এ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা এফআইআর লেখা হয়েছে। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী হাসান ও তার ভাই হোসেন মজুমদারও প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই ৮ ডিবি সদস্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

৮ ডিবি সদস্য প্রসঙ্গে হাইকোর্ট

নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো অমানবিক ও দুঃখজনক

আপডেট সময় : ১০:৩৬:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

আট ডিবি সদস্য কর্তৃক দুজন নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনা অমানবিক ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কাজ করা উচিৎ হয়নি।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এস এম কুদ্দুছ জামান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। অভিযুক্ত আট ডিবি সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন আদালত।

ডিবির ওই ৮ সদস্য হলেন- পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জল হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান, সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মমিনুল হক ও নাজমুল হক প্রধান এবং কনস্টেবল গোলাম সরোয়ার।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। নিরীহ দুই ব্যক্তির পক্ষে ছিলেন, ব্যারিস্টার সৈয়দ ছায়েদুল হক সুমন, আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম লিটন আহমেদ, অ্যাডভোকেট বিভূতিভূষণ সরকার।

আইনজীবী বিভূতিভূষণ সরকার বলেন, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকার একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক হাসান মজুমদার এবং একই হোটেলের শেফ সোহেল রানাকে জাল ব্যাংক নোট রাখার মামলা থেকে খালাস দেন আদালত। ছয় বছর ধরে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা চালিয়ে হাসান ও সোহেল জয়ী হন। আদালতের নথি অনুযায়ী, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারক তাহসিন ইফতেখারের আদালত তাদের দুজনকে খালাস দেন। রায়ে দুজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় গোয়েন্দা পুলিশের ওই (ডিবি) ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেন আদালত।

অ্যাডভোকেট এম লিটন আহমেদ বলেন, বিচারিক আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের ওই (ডিবি) ৮ সদস্য। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রায়ের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই রুল শুনানির জন্য ওঠে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী  জানান, শুনানিতে আদালত ৮ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য প্রসঙ্গে বলেছেন, কর্তৃক দুই নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনা অমানবিক ও দুঃখজনক। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কাজ করা উচিৎ হয়নি। টাকার জন্য মানুষ এত নীচে নামতে পারে? নিরীহ মানুষের জীবন থেকে কয়েকটি বছর হারিয়ে গেল, এর দায়িত্ব কে নিবে। ভবিষ্যতে আর কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেন এমন মিথ্যা মামলা না করতে পারে।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রাজধানীর পল্টনে হোটেল বন্ধুতে অভিযান চালিয়ে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা হাসান ও সোহেলকে আটক করে। ঘটনাটি হোটেলের সিকিউরিটি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়। পরে তাদের নামে মতিঝিল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন ডিবির একজন উপপরিদর্শক।

পুলিশের এফআইআরে এ ঘটনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন বিবরণ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২৫ লাখ টাকার জাল নোট নিয়ে পালানোর সময় ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফকিরাপুল এলাকা থেকে ডিবি দুজনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৭ সালে হোটেলে অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের একজন এবং এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জল হোসেন অভিযোগ গঠন করেন হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে।

হাসানের অভিযোগ, অভিযানের সময় ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তিন লাখ টাকা দাবি করেন এবং এ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা এফআইআর লেখা হয়েছে। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী হাসান ও তার ভাই হোসেন মজুমদারও প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই ৮ ডিবি সদস্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন।

Facebook Comments Box