ঢাকা ০২:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কথায় ‘সংযত’ হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

কোটা ইস্যুতে ব্যর্থ চার মন্ত্রী, দল ও শরিকদের সমালোচনা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৮:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪ ১৭ বার পঠিত

ঢাকা : শুরুর দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন অহিংস ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধাও দেয়া হচ্ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর শেষে করা সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে আন্দোলনের মোড় ঘুরতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর মুখে ‘রাজাকার’ শব্দের অপব্যাখায় ফুঁসে উঠে কোটা আন্দোলনকারীরা।

এরই মধ্যে আন্দোলনে ঢুকে পড়ে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত বাহিনী। যানবাহন ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। শুরু হয় সহিংসতা। টানা দুই দিনে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আর এসবের পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বেফাঁস কথাবার্তা।

কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনটি সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পেছনে সরকারের দায়িত্বশীল কারও কারও বক্তব্যকে উসকানি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি এখন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি কঠোরভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নতুন করে চাঙ্গা হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। এই সঙ্কটে তাদের পাশে ডেকে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এতে ১৪ দলের নেতারাও সন্তুষ্ট। তারা অনেকটা চাঙা অনুভব করছেন।

কোটা আন্দোলন যেদিন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে সেই ১৯ জুলাই ১৪ দলের নেতাদের সাথে রাতে গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করলেন। এর মধ্যে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দরা অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন।

আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ১৪ দলের একাধিক বৈঠক হয়েছে। ১৪ দলের নেতারা বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আহতদের চিকিৎসা, চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগ অনেকদিন পর একাকিত্বের অবস্থান থেকে একটি জোটবদ্ধ অবস্থানে গেছে।

তবে এ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং ১৪ দলের শরিকরা বর্তমান সরকারের পরিচালন পদ্ধতি এবং কিছু মন্ত্রীকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। বিষয়টি তারা প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করেছেন। পুরো আন্দোলনের ক্ষেত্রে কয়েকজনের ব্যর্থতা-অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ১৪ দলের নেতারা। আর এদের সমালোচনার বিষয়গুলো এবং ত্রুটিগুলো তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও উপস্থাপন করেছেন।

১. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
আসাদুজ্জামান খান কামাল এবার তৃতীয় মেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। একজন সজ্জন ভদ্রলোক হিসেবে তিনি প্রশংসিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এতদিন ধরে একেবারেই বিতর্কহীনভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার বিভিন্ন রকম ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন পদায়নের ক্ষেত্রে সঠিক এবং যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হয়নি- এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার বিষয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায় এড়াতে পারেন না বলেও অনেকে মনে করছেন। অতিরিক্ত পুলিশ নির্ভরতা এবং যোগ্যতা ও পেশাদারিত্ব রক্ষায় পুলিশকে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যর্থতার কথাটিই বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে।

২. আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। যখন ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়, সেই সময়েও আইনমন্ত্রী ভূমিকাহীন ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে কোনো নির্দেশনা দেননি। এমনকি এরকম একটি স্পর্শকাতর মামলা, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেওয়া একটি পরিপত্র চ্যালেঞ্জ হয়েছে, সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল নিজে কেন কোর্টে উপস্থিত হননি সেটি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এর ফলে আইনমন্ত্রীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে এখন সমালোচনা হচ্ছে। এখন তার ব্যপারে ১৪ দলের অনেক নেতার নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া গেছে।

৩. জুনাইদ আহমেদ পলক
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে নিয়ে আওয়ামী লীগের ঘরে-বাইরে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার স্ববিরোধী বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাই রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি আবার বলেছেন যে, তাণ্ডব ও নাশকতার কারণে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তার এ ধরনের স্ববিরোধী বক্তব্য বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। এটি আওয়ামী লীগকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ ধরনের মন্ত্রীদের উপর সরকার কিভাবে কতদিন নির্ভর করবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন।

৪. শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মহিবুল হাসান চৌধুরী বয়সে তরুণ ও সম্ভাবনাময়। কিন্তু এই অল্প বয়সে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে কতটুকু সক্ষম, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে এই সঙ্কটে তার সক্ষমতা নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতা করার মতো পরিপক্ক্বতা তার নেই।

এই সমস্ত মন্ত্রীরা শুধু আওয়ামী লীগের ভেতরেই নয়, ১৪ দলের ভেতরেও সমালোচনার মুখে রয়েছেন। এদিকে গণমাধ্যম কিংবা সভা-সমাবেশে কথাবার্তা বলার সময় সংযত হতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সংযত ভাষায় কথা বলে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে। নানা ইস্যুতে মানুষ সরকারের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত। ফলে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের কথা বলার ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হতে হবে। এ ছাড়া তাদের সামনের দিনগুলোতে নিরাপদে চলাফেরার কথা বলেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

প্রায় এক মাস পর সোমবার (২৯ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ করে দেশব্যাপী সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারের হিসাবে এ সংখ্যা দেড়শ।

বৈঠকে আলোচ্যসূচির বাইরে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া আন্দোলন ও সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনার সময় সচিবরা উপস্থিত ছিলেন না। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন। তাদের অভয় দিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে-এমন বার্তাও তাদের কাছে পাঠান।

আন্দোলনকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবসহ সরকারি কর্মচারীদের নিরাপদে চলার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সামনে আরও বড় আঘাত আসতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। বিএনপি-জামায়াতকে সহিংস ঘটনার জন্য দায়ী করেছে মন্ত্রিসভা।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে সরকার। সে কারফিউ এখনো চলছে। তবে দিন দিন কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানা গেছে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

কথায় ‘সংযত’ হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

কোটা ইস্যুতে ব্যর্থ চার মন্ত্রী, দল ও শরিকদের সমালোচনা

আপডেট সময় : ০৩:৪৮:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

ঢাকা : শুরুর দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন অহিংস ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধাও দেয়া হচ্ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর শেষে করা সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে আন্দোলনের মোড় ঘুরতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর মুখে ‘রাজাকার’ শব্দের অপব্যাখায় ফুঁসে উঠে কোটা আন্দোলনকারীরা।

এরই মধ্যে আন্দোলনে ঢুকে পড়ে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত বাহিনী। যানবাহন ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। শুরু হয় সহিংসতা। টানা দুই দিনে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আর এসবের পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বেফাঁস কথাবার্তা।

কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনটি সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পেছনে সরকারের দায়িত্বশীল কারও কারও বক্তব্যকে উসকানি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি এখন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি কঠোরভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নতুন করে চাঙ্গা হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। এই সঙ্কটে তাদের পাশে ডেকে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এতে ১৪ দলের নেতারাও সন্তুষ্ট। তারা অনেকটা চাঙা অনুভব করছেন।

কোটা আন্দোলন যেদিন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে সেই ১৯ জুলাই ১৪ দলের নেতাদের সাথে রাতে গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করলেন। এর মধ্যে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দরা অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন।

আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ১৪ দলের একাধিক বৈঠক হয়েছে। ১৪ দলের নেতারা বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আহতদের চিকিৎসা, চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগ অনেকদিন পর একাকিত্বের অবস্থান থেকে একটি জোটবদ্ধ অবস্থানে গেছে।

তবে এ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং ১৪ দলের শরিকরা বর্তমান সরকারের পরিচালন পদ্ধতি এবং কিছু মন্ত্রীকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। বিষয়টি তারা প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করেছেন। পুরো আন্দোলনের ক্ষেত্রে কয়েকজনের ব্যর্থতা-অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ১৪ দলের নেতারা। আর এদের সমালোচনার বিষয়গুলো এবং ত্রুটিগুলো তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও উপস্থাপন করেছেন।

১. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
আসাদুজ্জামান খান কামাল এবার তৃতীয় মেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। একজন সজ্জন ভদ্রলোক হিসেবে তিনি প্রশংসিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এতদিন ধরে একেবারেই বিতর্কহীনভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার বিভিন্ন রকম ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন পদায়নের ক্ষেত্রে সঠিক এবং যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হয়নি- এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার বিষয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায় এড়াতে পারেন না বলেও অনেকে মনে করছেন। অতিরিক্ত পুলিশ নির্ভরতা এবং যোগ্যতা ও পেশাদারিত্ব রক্ষায় পুলিশকে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যর্থতার কথাটিই বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে।

২. আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। যখন ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়, সেই সময়েও আইনমন্ত্রী ভূমিকাহীন ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে কোনো নির্দেশনা দেননি। এমনকি এরকম একটি স্পর্শকাতর মামলা, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেওয়া একটি পরিপত্র চ্যালেঞ্জ হয়েছে, সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল নিজে কেন কোর্টে উপস্থিত হননি সেটি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এর ফলে আইনমন্ত্রীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে এখন সমালোচনা হচ্ছে। এখন তার ব্যপারে ১৪ দলের অনেক নেতার নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া গেছে।

৩. জুনাইদ আহমেদ পলক
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে নিয়ে আওয়ামী লীগের ঘরে-বাইরে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার স্ববিরোধী বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাই রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি আবার বলেছেন যে, তাণ্ডব ও নাশকতার কারণে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তার এ ধরনের স্ববিরোধী বক্তব্য বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। এটি আওয়ামী লীগকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ ধরনের মন্ত্রীদের উপর সরকার কিভাবে কতদিন নির্ভর করবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন।

৪. শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মহিবুল হাসান চৌধুরী বয়সে তরুণ ও সম্ভাবনাময়। কিন্তু এই অল্প বয়সে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে কতটুকু সক্ষম, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে এই সঙ্কটে তার সক্ষমতা নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতা করার মতো পরিপক্ক্বতা তার নেই।

এই সমস্ত মন্ত্রীরা শুধু আওয়ামী লীগের ভেতরেই নয়, ১৪ দলের ভেতরেও সমালোচনার মুখে রয়েছেন। এদিকে গণমাধ্যম কিংবা সভা-সমাবেশে কথাবার্তা বলার সময় সংযত হতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সংযত ভাষায় কথা বলে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে। নানা ইস্যুতে মানুষ সরকারের ওপর ত্যক্ত-বিরক্ত। ফলে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের কথা বলার ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হতে হবে। এ ছাড়া তাদের সামনের দিনগুলোতে নিরাপদে চলাফেরার কথা বলেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

প্রায় এক মাস পর সোমবার (২৯ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ করে দেশব্যাপী সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারের হিসাবে এ সংখ্যা দেড়শ।

বৈঠকে আলোচ্যসূচির বাইরে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া আন্দোলন ও সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনার সময় সচিবরা উপস্থিত ছিলেন না। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন। তাদের অভয় দিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে-এমন বার্তাও তাদের কাছে পাঠান।

আন্দোলনকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবসহ সরকারি কর্মচারীদের নিরাপদে চলার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সামনে আরও বড় আঘাত আসতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। বিএনপি-জামায়াতকে সহিংস ঘটনার জন্য দায়ী করেছে মন্ত্রিসভা।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে সরকার। সে কারফিউ এখনো চলছে। তবে দিন দিন কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানা গেছে।

Facebook Comments Box