ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

নকল ও ভেজাল পণ্যের শহর সৈয়দপুর

মোঃ জহুরুল ইসলাম খোকন সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১১:২৪:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪ ২০ বার পঠিত

oppo_2

সৈয়দপুর শহর নকল ও ভেজাল পণ্য উৎপাদনের শহরে পরিনত হতে চলেছে। মশার কয়েল, খাদ্য সামগ্রী,শিশু খাদ্য, সাবান, কসমেটিক্স, পলিথিন, জৈব সার সহ অনেক কিছুই নকল হচ্ছে এ শহরে। নামীদামি কোম্পানির মোড়কে নকল বা নিম্নমানের ভেজাল পণ্য বাজারজাত করে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করা হলেও আইন প্রয়োগকারি সংস্থা নিরব থাকার অভিযোগ অনেকের।

জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শাসন আমলে সৈয়দপুরের নকল সার কারখানা, সাবান তৈরির কারখানা, নকল চিপস ও চানাচুর তৈরির কারখানা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, পলিথিন ও সাইকেল তৈরির কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছিল।ওই অভিযানে নকল পণ্য তৈরির অপরাধে উৎপাদককে গ্রেফতার করে জরিমানাসহ জেল হাজতে পাঠানোও হয়েছিল। ওই সময় অনেকেই জানতেন না সৈয়দপুর ভেজাল ও নকল পণ্য তৈরি ও বিক্রি করা হয় ।

২০০৯ সালে নীলফামারি ও সৈয়দপুর পুলিশের বিশেষ একটি গোয়েন্দা শাখা শহরের টিআর সড়কের একটি গোডাউনে নকল সার কারখানা, বিসিক শিল্প নগরী সংলগ্ন এলাকায় নকল রোলার তৈরির কারখানাসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন হুবহু চায়না ফনিক্স ও ভারতীয় হিরো সাইকেলের যন্ত্রাংশ। ওই সময় অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের সুসম্পর্ক না থাকায় ফকরুদ্দিন সরকার অবৈধ ব্যবসায়ীদের গোডাউনে লাগিয়েছিল তালা। ওই সময় প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল নকল পণ্য ও যন্ত্র উৎপাদন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে যায় পূর্বের অবস্থা। পাল্লা দিয়ে তৈরি হতে থাকে নকল পণ্য, খাদ্য সামগ্রী ও জৈব সার । এতে করে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হয়ে অবৈধ উৎপাদকরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও দেখার যেন কেউ নেই।

একটি সূত্র জানায়, সৈয়দপুরের এক আমদানিকারক ওই সময় ভারত ও চায়না থেকে সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানি করে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশেই সরবরাহ করছিলেন। দেশে সাইকেলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অসাধু অপর কয়েকজন ব্যবসায়ী সৈয়দপুর শহরের অলিগলিতে প্রায় ৩০/৩৫টির মত নকল সাইকেল তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। তারা ওইসব কারখানায় উৎপাদিত সাইকেল যন্ত্রাংশ বাংলাদেশী বলে তৈরির পর সাইকেলে মোড়ক লাগিয়েছিলেন মেড ইন ইন্ডিয়া অথবা মেড ইন চায়না। অনেক দক্ষরাও ওই সময় দেখলে বুঝতেই পারতেন না কোনটা আসল বা কোনটা নকল।

প্রায় এক যুগের ও বেশি সময় হয় সৈয়দপু শহরে কঠোর কোনো অভিযান পরিচালনা না হওয়ায় এ শহরের অনেক ব্যবসায়ি হুবহু নকল,ভেজাল পন্য শিশু খাদ্য, ভেজাল সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি নেই বলেই সৈয়দপুর শহর নকলের শহরে পরিণত করে চলেছেন তারা। ফলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কৃষক সহ পুলিশও ছাড় পাচ্ছেন না তাদের প্রতারনা থেকে । আর অল্প দিনেই নকল পণ্য তৈরি কারকরা বনে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার মালিক আর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার। এসব বন্ধে উপর মহলের নির্দেশনার পর অভিযান চালালে এ শহর থেকে শত কোটি টাকারও বেশি নকল ও ভেজাল পণ্যের কারখানার সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।

বৈধ ব্যবসায়িরা বলেন, বিগত তত্বাবধায়ক শাসনামলের মত অভিযান চালানো হলে সৈয়দপুর শহরের ৮/১০ জন ছাড়া অনেকেরই অবৈধ ব্যবসার সন্ধান পাবেন। এতে করে যেমন নকল ও ভেজাল পন্য উৎপাদন বন্ধ হবে, তেমনি সরকারের কোষাগারে জমা হবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

শহরের পড়া মহল্লার অলিগলিতে কাগজ বিহিন শিশু খাদ্য তৈরির পর সেগুলি শহরের কারি হাটি সড়কের প্রায় প্রতিটি দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন ব্যবসায়িরা। নকল ও ভেজাল এসব শিশু খাদ্য খেয়ে শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হলেও প্রস্তুতকারকরা রাতারাতি বনে যাচ্ছেন কোটি টাকার মালিক। এসব ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা সব জানেন কিন্তু মাসিক চুক্তি থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য অনেকের।

ব্যবসায়িরা আরো বলেন, সারা শহর অভিযানের দরকার নেই, শুধু শহরের কাড়ি হাটির বেশ কয়েকটি শিশু খাদ্য ব্যবসায়ির দোকান পাটে অভিযান চালালেই জানতে পারবেন নকল ও ভেজাল পন্যের প্রস্তুতকারক কে ? ওই সব ব্যবসায়িরা অল্প দিনেই কি ভাবে কোটি টাকার মালিক ও গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন তাও জানতে পাবেন।

সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, সৈয়দপুর শহরকে যারা নকল ও ভেজালের শহরে পরিনত করতে চাইছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেয়া উচিত।কারন তারা দেশের মানুষের শত্রু।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

নকল ও ভেজাল পণ্যের শহর সৈয়দপুর

আপডেট সময় : ১১:২৪:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

সৈয়দপুর শহর নকল ও ভেজাল পণ্য উৎপাদনের শহরে পরিনত হতে চলেছে। মশার কয়েল, খাদ্য সামগ্রী,শিশু খাদ্য, সাবান, কসমেটিক্স, পলিথিন, জৈব সার সহ অনেক কিছুই নকল হচ্ছে এ শহরে। নামীদামি কোম্পানির মোড়কে নকল বা নিম্নমানের ভেজাল পণ্য বাজারজাত করে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করা হলেও আইন প্রয়োগকারি সংস্থা নিরব থাকার অভিযোগ অনেকের।

জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শাসন আমলে সৈয়দপুরের নকল সার কারখানা, সাবান তৈরির কারখানা, নকল চিপস ও চানাচুর তৈরির কারখানা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, পলিথিন ও সাইকেল তৈরির কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছিল।ওই অভিযানে নকল পণ্য তৈরির অপরাধে উৎপাদককে গ্রেফতার করে জরিমানাসহ জেল হাজতে পাঠানোও হয়েছিল। ওই সময় অনেকেই জানতেন না সৈয়দপুর ভেজাল ও নকল পণ্য তৈরি ও বিক্রি করা হয় ।

২০০৯ সালে নীলফামারি ও সৈয়দপুর পুলিশের বিশেষ একটি গোয়েন্দা শাখা শহরের টিআর সড়কের একটি গোডাউনে নকল সার কারখানা, বিসিক শিল্প নগরী সংলগ্ন এলাকায় নকল রোলার তৈরির কারখানাসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেন হুবহু চায়না ফনিক্স ও ভারতীয় হিরো সাইকেলের যন্ত্রাংশ। ওই সময় অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের সুসম্পর্ক না থাকায় ফকরুদ্দিন সরকার অবৈধ ব্যবসায়ীদের গোডাউনে লাগিয়েছিল তালা। ওই সময় প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল নকল পণ্য ও যন্ত্র উৎপাদন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে যায় পূর্বের অবস্থা। পাল্লা দিয়ে তৈরি হতে থাকে নকল পণ্য, খাদ্য সামগ্রী ও জৈব সার । এতে করে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হয়ে অবৈধ উৎপাদকরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও দেখার যেন কেউ নেই।

একটি সূত্র জানায়, সৈয়দপুরের এক আমদানিকারক ওই সময় ভারত ও চায়না থেকে সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানি করে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশেই সরবরাহ করছিলেন। দেশে সাইকেলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অসাধু অপর কয়েকজন ব্যবসায়ী সৈয়দপুর শহরের অলিগলিতে প্রায় ৩০/৩৫টির মত নকল সাইকেল তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। তারা ওইসব কারখানায় উৎপাদিত সাইকেল যন্ত্রাংশ বাংলাদেশী বলে তৈরির পর সাইকেলে মোড়ক লাগিয়েছিলেন মেড ইন ইন্ডিয়া অথবা মেড ইন চায়না। অনেক দক্ষরাও ওই সময় দেখলে বুঝতেই পারতেন না কোনটা আসল বা কোনটা নকল।

প্রায় এক যুগের ও বেশি সময় হয় সৈয়দপু শহরে কঠোর কোনো অভিযান পরিচালনা না হওয়ায় এ শহরের অনেক ব্যবসায়ি হুবহু নকল,ভেজাল পন্য শিশু খাদ্য, ভেজাল সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি নেই বলেই সৈয়দপুর শহর নকলের শহরে পরিণত করে চলেছেন তারা। ফলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কৃষক সহ পুলিশও ছাড় পাচ্ছেন না তাদের প্রতারনা থেকে । আর অল্প দিনেই নকল পণ্য তৈরি কারকরা বনে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার মালিক আর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার। এসব বন্ধে উপর মহলের নির্দেশনার পর অভিযান চালালে এ শহর থেকে শত কোটি টাকারও বেশি নকল ও ভেজাল পণ্যের কারখানার সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।

বৈধ ব্যবসায়িরা বলেন, বিগত তত্বাবধায়ক শাসনামলের মত অভিযান চালানো হলে সৈয়দপুর শহরের ৮/১০ জন ছাড়া অনেকেরই অবৈধ ব্যবসার সন্ধান পাবেন। এতে করে যেমন নকল ও ভেজাল পন্য উৎপাদন বন্ধ হবে, তেমনি সরকারের কোষাগারে জমা হবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

শহরের পড়া মহল্লার অলিগলিতে কাগজ বিহিন শিশু খাদ্য তৈরির পর সেগুলি শহরের কারি হাটি সড়কের প্রায় প্রতিটি দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন ব্যবসায়িরা। নকল ও ভেজাল এসব শিশু খাদ্য খেয়ে শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হলেও প্রস্তুতকারকরা রাতারাতি বনে যাচ্ছেন কোটি টাকার মালিক। এসব ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা সব জানেন কিন্তু মাসিক চুক্তি থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য অনেকের।

ব্যবসায়িরা আরো বলেন, সারা শহর অভিযানের দরকার নেই, শুধু শহরের কাড়ি হাটির বেশ কয়েকটি শিশু খাদ্য ব্যবসায়ির দোকান পাটে অভিযান চালালেই জানতে পারবেন নকল ও ভেজাল পন্যের প্রস্তুতকারক কে ? ওই সব ব্যবসায়িরা অল্প দিনেই কি ভাবে কোটি টাকার মালিক ও গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন তাও জানতে পাবেন।

সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, সৈয়দপুর শহরকে যারা নকল ও ভেজালের শহরে পরিনত করতে চাইছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেয়া উচিত।কারন তারা দেশের মানুষের শত্রু।

Facebook Comments Box