ঢাকা ০৭:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

না.গঞ্জের আলোচিত ৭ খুন: বিচারের অপেক্ষায় দশক পার

নিজস্ব প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
  • আপডেট সময় : ০১:২৬:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৯ বার পঠিত

নারায়ণগঞ্জ : এখন আর কাঁদতে পারি না। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলে শুকিয়ে যাচ্ছে। আর কত অপেক্ষা করব আমরা। এভাবেই নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের অন্যতম নিহত তাজুলের বাবা আবুল খায়ের তার মনের আকুতি প্রকাশ করেন।

আবুল খায়ের বলেন, বিচার পাব কিনা তা আদৌ জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন বছর দ্রুত গতিতে মামলার বিচারকাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কেন মামলাটি ঝুলে আছে, তা বুঝতে পারছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছরেও নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় কার্যকর হয়নি। ২০১৪ সালের আজকের দিন ২৭ এপ্রিল সাত জনকে অপহরণ করে খুন করা হয়। এর তিন দিন পর একে একে তাদের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে।

এই ঘটনায় নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডসহ আরও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনেরা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ঝুলে আছে। অথচ নিম্ন আদালত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই খুনের সঙ্গে বিপথগামী র‌্যাব কর্মকর্তাসহ প্রভাশালী কাউন্সিলর জড়িত। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে না হয় ওই গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরে সেই চেষ্টা-তদবির চালিয়ে আসছে। আমরা চাই মামলার রায় বহাল রেখে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক। পাশাপাশি মামলার রায় কার্যকর করা হোক।

জানা যায়, সাত খুনের মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন।

পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত। গত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সন্তোষজনক হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তবে আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন নিহতের স্বজনেরা। সেই সঙ্গে সাজার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তারা।

বিচার দাবি করে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছি। আসামিপক্ষের লোকজন এখনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। উপার্জনক্ষম সাত জন মানুষকে হারিয়ে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন সরকারের কাছে শুধু ন্যায়বিচার দাবি করছি।

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু বিচারের তো পাচ্ছি না। বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, সাত খুন মামলা সারা দেশে বহুল আলোচিত। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলমান রয়েছে। প্রত্যাশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাত জন অপহৃত হন।

অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তির চর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দু’টি মামলা করেন।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

না.গঞ্জের আলোচিত ৭ খুন: বিচারের অপেক্ষায় দশক পার

আপডেট সময় : ০১:২৬:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ : এখন আর কাঁদতে পারি না। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলে শুকিয়ে যাচ্ছে। আর কত অপেক্ষা করব আমরা। এভাবেই নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের অন্যতম নিহত তাজুলের বাবা আবুল খায়ের তার মনের আকুতি প্রকাশ করেন।

আবুল খায়ের বলেন, বিচার পাব কিনা তা আদৌ জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন বছর দ্রুত গতিতে মামলার বিচারকাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কেন মামলাটি ঝুলে আছে, তা বুঝতে পারছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছরেও নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় কার্যকর হয়নি। ২০১৪ সালের আজকের দিন ২৭ এপ্রিল সাত জনকে অপহরণ করে খুন করা হয়। এর তিন দিন পর একে একে তাদের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে।

এই ঘটনায় নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডসহ আরও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনেরা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ঝুলে আছে। অথচ নিম্ন আদালত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই খুনের সঙ্গে বিপথগামী র‌্যাব কর্মকর্তাসহ প্রভাশালী কাউন্সিলর জড়িত। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে না হয় ওই গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরে সেই চেষ্টা-তদবির চালিয়ে আসছে। আমরা চাই মামলার রায় বহাল রেখে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক। পাশাপাশি মামলার রায় কার্যকর করা হোক।

জানা যায়, সাত খুনের মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন।

পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত। গত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সন্তোষজনক হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তবে আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন নিহতের স্বজনেরা। সেই সঙ্গে সাজার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তারা।

বিচার দাবি করে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছি। আসামিপক্ষের লোকজন এখনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। উপার্জনক্ষম সাত জন মানুষকে হারিয়ে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন সরকারের কাছে শুধু ন্যায়বিচার দাবি করছি।

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু বিচারের তো পাচ্ছি না। বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, সাত খুন মামলা সারা দেশে বহুল আলোচিত। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলমান রয়েছে। প্রত্যাশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাত জন অপহৃত হন।

অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তির চর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দু’টি মামলা করেন।

Facebook Comments Box