ঢাকা ১২:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা? Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু আজ Logo বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার সরকারি ছুটি Logo আগামী বছর থেকে আবারও মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন শুরু

হিযুবত তাহরীরের নামে মেইল, ক্ষুব্ধ বুয়েট শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, বুয়েট
  • আপডেট সময় : ০৩:২৫:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৯ বার পঠিত

ঢাকা : নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নামে মেইল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অনেক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই ইমেইলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরার হত্যার পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সুবল দাস নামে আসা ই-মেইলটি আসলেই হিজবুত তাহরীরের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগ সমমনা বুয়েটের পাঁচ শিক্ষার্থী সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে কথার পর থেকে তাদের নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বুয়েটের উপাচার্যের কাছে তারা আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করেন।

গত ৩১ মার্চ এই পাঁচ শিক্ষার্থী এক সংবাদ সম্মেলেন বলেছিলেন, বুয়েটে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হয়ে যিনিই কথা বলছেন, তাকেই ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে বারবার অত্যাচার করা হচ্ছে।

এরপর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে হিযবুত তাহরীরের নামে ই-মেইল পাওয়ার কথা জানালেন ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি বুয়েটে আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অনেকে। ওই ইমেইলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত ছিল।

‘ছাত্রলীগের আগ্রাসন থেকে আমাদের মেধাবী সন্তানদের কে নিরাপত্তা দেবে?’ শিরোনামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা এবং এর প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

সেই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে। আর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষেধাজ্ঞার সেই আদেশও সম্প্রতি হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে।

আবরার হত্যার প্রায় সাড়ে চার বছর পর সম্প্রতি গভীর রাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশ ঘিরে আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনাও করা হয়।

বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে তাদের খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে বুয়েটের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর অফিসিয়াল ই-মেইলে হিযবুত তাহরীরের নামে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সংবলিত ই-মেইলটি আসে বলে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজ ‘ইন্টারভাল ‘১৮’-এর এক পোস্টে জানানো হয়।

হিযবুত তাহরীরের নামে আসা মেইলটিকে ‘সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রবণ’ উল্লেখ করে রাত ১টার দিকে দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়, “আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই মেইলটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।”

এছাড়া মেইল পাওয়া সবাই অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়ে এই মেইল পাঠানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায় বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

পোস্টে আরও বলা হয়, “আমরা এই সকল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে কোনোদিন বরদাশত করিনি, করি না এবং করব না এবং আমরা আমাদের ভিসি স্যারকে আহ্বান জানাচ্ছি এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে।”

একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইসিটি সেলকে তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, “নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কোনও স্থান এই বুয়েটে হবে না এবং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থেকে প্রতিহত করব।”

শুক্রবার ৯৫ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, “আমি জেনেছি বিষয়টা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। আমি সবার সাথে কথা বলছি। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করার কথা জানায়। এছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন, মিশরসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশেও সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

হিযুবত তাহরীরের নামে মেইল, ক্ষুব্ধ বুয়েট শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ০৩:২৫:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা : নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নামে মেইল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অনেক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই ইমেইলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরার হত্যার পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও হিযবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সুবল দাস নামে আসা ই-মেইলটি আসলেই হিজবুত তাহরীরের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগ সমমনা বুয়েটের পাঁচ শিক্ষার্থী সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে কথার পর থেকে তাদের নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বুয়েটের উপাচার্যের কাছে তারা আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করেন।

গত ৩১ মার্চ এই পাঁচ শিক্ষার্থী এক সংবাদ সম্মেলেন বলেছিলেন, বুয়েটে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হয়ে যিনিই কথা বলছেন, তাকেই ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে বারবার অত্যাচার করা হচ্ছে।

এরপর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে হিযবুত তাহরীরের নামে ই-মেইল পাওয়ার কথা জানালেন ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি বুয়েটে আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অনেকে। ওই ইমেইলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত ছিল।

‘ছাত্রলীগের আগ্রাসন থেকে আমাদের মেধাবী সন্তানদের কে নিরাপত্তা দেবে?’ শিরোনামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা এবং এর প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

সেই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে। আর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষেধাজ্ঞার সেই আদেশও সম্প্রতি হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে।

আবরার হত্যার প্রায় সাড়ে চার বছর পর সম্প্রতি গভীর রাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশ ঘিরে আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনাও করা হয়।

বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে তাদের খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে বুয়েটের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর অফিসিয়াল ই-মেইলে হিযবুত তাহরীরের নামে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সংবলিত ই-মেইলটি আসে বলে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজ ‘ইন্টারভাল ‘১৮’-এর এক পোস্টে জানানো হয়।

হিযবুত তাহরীরের নামে আসা মেইলটিকে ‘সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রবণ’ উল্লেখ করে রাত ১টার দিকে দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়, “আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই মেইলটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।”

এছাড়া মেইল পাওয়া সবাই অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়ে এই মেইল পাঠানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায় বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

পোস্টে আরও বলা হয়, “আমরা এই সকল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে কোনোদিন বরদাশত করিনি, করি না এবং করব না এবং আমরা আমাদের ভিসি স্যারকে আহ্বান জানাচ্ছি এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে।”

একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইসিটি সেলকে তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, “নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কোনও স্থান এই বুয়েটে হবে না এবং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থেকে প্রতিহত করব।”

শুক্রবার ৯৫ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, “আমি জেনেছি বিষয়টা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। আমি সবার সাথে কথা বলছি। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করার কথা জানায়। এছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন, মিশরসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশেও সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Facebook Comments Box