ঢাকা ০৯:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

তনু হত্যা : আট বছর পরও চলছে ‘প্রকাশ্য ও গোপন’ তদন্ত

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০৯:৫২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪ ১২০ বার পঠিত

কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু হত্যার আট বছর পর তার বাবা ইয়ার হোসেন সন্তান হত্যার বিচার প্রাপ্তির আশা প্রায় ছেড়ে দেয়ার অবস্থায়৷ কারণ তদন্ত কর্মকর্তার মুখে এখনো সেই কথা, ‘‘আমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি৷”

তনু হত্যার সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান৷ আজ তিনি বললেন, “শুরুতেই এই মামলার সব আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে৷ এই মামলার কোনো বিচার হবে বলে আমি মনে করি না৷”
২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনুর মরদেহ কুমিল্লা সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়৷ তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ৷ তনু সেনানিবানের ভিতরে একটি বাসায় ওই দিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়েছিলেন৷ রাতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়৷ তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তখন সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন৷

এই মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, তারপর ডিবি ও সিআইডি তদন্ত করে৷ গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)৷

তনুর মরদেহের দুই দফা ময়না তদন্ত করা হয়৷ কিন্তু ফরেনসিক রিপোর্টে হত্যার কোনো সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি৷ ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিন জন পুরুষের শুক্রাণু পায়৷ ঢাকা সেনানিবাসে গিয়ে সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে সিআইডি৷ কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ ওই শুক্রাণুর সঙ্গে কারো ডিএনএ মেলানো হয়েছে কিনা, মিলেছে কিনা তা-ও কখনো প্রকাশ করা হয়নি৷ এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরে মামলাটির দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে ৷

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, “আমি সার্জেন্ট জাহিদের নাম শুরুতেই বলেছি৷ তার বাসায় আমার মেয়ে পড়াতে গিয়েছিল৷ এরপর তার লাশ পাওয়া গেল৷ সার্জেন্ট জাহিদকে আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হলো না৷ তাকে ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কারা জড়িত সব জানা যেতো৷”
তার কথা, “মামলাটি ফেলে রাখা হয়েছে৷ এটার কোনো আসলে তদন্ত হচ্ছে না৷ আট বছরে কাউকে চিহ্নিত করা হলো না, গ্রেপ্তার করা হলো না৷ শুধু মামলার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা করা হয়েছে৷ এখন পিবিআই তদন্তের নামে হয়রানি করছে৷”

তিনি বলেন, “পিবিআই এখন নতুন করে আমার কাছে সাক্ষী চায়৷ আমি সাক্ষী দেবো কোথা থেকে? আমি নিজেই তো সাক্ষী৷ আমি আমার মেয়ের লাশ তুলেছি ক্যান্টনমেন্টের ভিতর থেকে৷ আমাকে কি এখন বলতে হবে যে বাইরে লাশ পেয়েছি? পিবিআই আমাদের কুমিল্লা অফিসে নিয়ে বসিয়ে রাখে, তদন্ত কর্মকর্তা আসে না৷ সবাইকে আবার নতুন করে ডাকে৷ কত আর সাক্ষী নেবে! আসামি কই?”

“আমি আর বিচারের আশা করি না৷ যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারি তাহলে তার কাছে বিচারের সর্বশেষ আবেদন জানাবো,” বলেন তিনি৷
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুল হক বলেন, “এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার কাজ এখনো চলছে৷ এখনো কাউকে চিহ্নিত বা গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ আমরা এখনো সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি৷ এ পর্যন্ত ২৫ জন সাক্ষীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি৷”
তনুর পরিবারের সদস্যদের হয়রানির অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন,” মামলাটি আগে যারা তদন্ত করেছে, তারা যে সাক্ষ্য নিয়েছে সেগুলো আমাদের আবার দেখতে হচ্ছে৷ আবার অনেককে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হচ্ছে৷ আর আমরা তো সব কিছু তনুর পরিবারকে জানাবো না৷ জানানো ঠিক না৷ আমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি৷”

তনু হত্যার সময় মানবাধিকার কমিশনের তখনকার প্রধান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান কুমিল্লায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন৷ তনুর বাসায় গিয়ে তারা মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন৷ তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পর আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়, যেখানে লাশ পাওয়া যায় সেখানকার মাটি তুলে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়৷ ফলে এই মামলার তদন্ত শেষ হবে না, বিচারও হবে না৷ আমি যখন কুমিল্লায় গিয়ে তনুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘটনার পর কথা বলি তখন কোনো সাংবাদিককে সেখানে যেতে দেয়া হয়ানি৷ চারপাশ ঘিরে রাখা হয়েছিল৷ হত্যাকাণ্ডটি ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে হওয়ায় শুরু থেকেই মামলা নিয়ে অস্বাভাবিক সব কাজ করা হয়৷ নয়তো এই মামলার আসামিদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা খুবই সহজ ছিল৷” তার কথা, “শুরু থেকেই এই মামলাটির তদন্ত স্বাধীনভাবে করতে দেয়া হয়নি৷ এখনো স্বাধীনভাবে তদন্ত হচ্ছে না৷”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মজিবুল হক অবশ্য বলেন, “আমরা যে আলামত আগের তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে পেয়েছি তা আমাদের সংরক্ষণে আছে৷”
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অপরাধে প্রচলিক আইনের পাশপাশি আলাদা আইন আছে- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন৷ হত্যা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন তো আছেই৷ তারপরও কেন বিচার হচ্ছে না? এর জবাবে ড. মিজানুর রহমান বলেন, “আইনকে হতে হয় জীবন্ত৷ আইন প্রয়োগ না হলে, আইনে বিচার না হলে সেই আইন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে৷ আমরা দেখছি নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার তেমন হয় না৷ এর কারণ হতে পারে কোনো গোষ্ঠীর কারণে আইন সঠিক পথে চলছে না৷”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, “আমাদের আবেদনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০২২ সালে তনু হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে বলেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে৷ কিন্তু মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো জবাবই দেয়নি৷ ফলে এই মামলটি নিয়ে অনীহার জায়গা বোঝা যায়৷”

তার কথা, “পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর এটা স্পষ্ট যে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা যেখানেই ঘটুক না কেন তার তদন্ত এবং বিচার দেশের প্রচলিত আইনেই প্রকাশ্যে হতে হবে৷”

তিনি বলেন, “সাগর-রুনি হত্যারও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ তনু হত্যারও একই অবস্থা৷ তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এত আইন থেকে কী লাভ? আসলে আইনকে স্বাধীনভাবে চলতে না দিলে এই পরিস্থিতি হয়৷ আইন থাকে, কিন্তু বিচার হয় না৷”

তনু ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে কুমিল্লায় যারা মাঠে ছিলেন, তাদের একজন কুমিল্লার সম্মিলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহমিদা জেবিন বলেন,” আসলে এই মামলাটির বিচার হওয়ার আমি কোনো আশা দেখছি না৷ তদন্তের নামে সময় কাটিয়ে মামলাটিকে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে৷ এর পিছনে বড় কারণ হলো ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তার লাশ পাওয়া গেছে৷”
তিনি মনে করেন, “শুধু এই ঘটনা নয়, নারীরা আরো অনেক ঘটনায় বিচার পান না৷ এখানকার বিচার ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক৷ আর পদে পদে নারীদের মামলাগুলো কৌশলে দুর্বল করা হয়৷”ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

তনু হত্যা : আট বছর পরও চলছে ‘প্রকাশ্য ও গোপন’ তদন্ত

আপডেট সময় : ০৯:৫২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু হত্যার আট বছর পর তার বাবা ইয়ার হোসেন সন্তান হত্যার বিচার প্রাপ্তির আশা প্রায় ছেড়ে দেয়ার অবস্থায়৷ কারণ তদন্ত কর্মকর্তার মুখে এখনো সেই কথা, ‘‘আমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি৷”

তনু হত্যার সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান৷ আজ তিনি বললেন, “শুরুতেই এই মামলার সব আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে৷ এই মামলার কোনো বিচার হবে বলে আমি মনে করি না৷”
২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী তনুর মরদেহ কুমিল্লা সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়৷ তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ৷ তনু সেনানিবানের ভিতরে একটি বাসায় ওই দিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়েছিলেন৷ রাতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়৷ তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তখন সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন৷

এই মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, তারপর ডিবি ও সিআইডি তদন্ত করে৷ গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)৷

তনুর মরদেহের দুই দফা ময়না তদন্ত করা হয়৷ কিন্তু ফরেনসিক রিপোর্টে হত্যার কোনো সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি৷ ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিন জন পুরুষের শুক্রাণু পায়৷ ঢাকা সেনানিবাসে গিয়ে সন্দেহভাজন তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে সিআইডি৷ কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ ওই শুক্রাণুর সঙ্গে কারো ডিএনএ মেলানো হয়েছে কিনা, মিলেছে কিনা তা-ও কখনো প্রকাশ করা হয়নি৷ এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরে মামলাটির দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে ৷

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, “আমি সার্জেন্ট জাহিদের নাম শুরুতেই বলেছি৷ তার বাসায় আমার মেয়ে পড়াতে গিয়েছিল৷ এরপর তার লাশ পাওয়া গেল৷ সার্জেন্ট জাহিদকে আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হলো না৷ তাকে ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কারা জড়িত সব জানা যেতো৷”
তার কথা, “মামলাটি ফেলে রাখা হয়েছে৷ এটার কোনো আসলে তদন্ত হচ্ছে না৷ আট বছরে কাউকে চিহ্নিত করা হলো না, গ্রেপ্তার করা হলো না৷ শুধু মামলার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা করা হয়েছে৷ এখন পিবিআই তদন্তের নামে হয়রানি করছে৷”

তিনি বলেন, “পিবিআই এখন নতুন করে আমার কাছে সাক্ষী চায়৷ আমি সাক্ষী দেবো কোথা থেকে? আমি নিজেই তো সাক্ষী৷ আমি আমার মেয়ের লাশ তুলেছি ক্যান্টনমেন্টের ভিতর থেকে৷ আমাকে কি এখন বলতে হবে যে বাইরে লাশ পেয়েছি? পিবিআই আমাদের কুমিল্লা অফিসে নিয়ে বসিয়ে রাখে, তদন্ত কর্মকর্তা আসে না৷ সবাইকে আবার নতুন করে ডাকে৷ কত আর সাক্ষী নেবে! আসামি কই?”

“আমি আর বিচারের আশা করি না৷ যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারি তাহলে তার কাছে বিচারের সর্বশেষ আবেদন জানাবো,” বলেন তিনি৷
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুল হক বলেন, “এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার কাজ এখনো চলছে৷ এখনো কাউকে চিহ্নিত বা গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ আমরা এখনো সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি৷ এ পর্যন্ত ২৫ জন সাক্ষীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি৷”
তনুর পরিবারের সদস্যদের হয়রানির অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন,” মামলাটি আগে যারা তদন্ত করেছে, তারা যে সাক্ষ্য নিয়েছে সেগুলো আমাদের আবার দেখতে হচ্ছে৷ আবার অনেককে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হচ্ছে৷ আর আমরা তো সব কিছু তনুর পরিবারকে জানাবো না৷ জানানো ঠিক না৷ আমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি৷”

তনু হত্যার সময় মানবাধিকার কমিশনের তখনকার প্রধান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান কুমিল্লায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন৷ তনুর বাসায় গিয়ে তারা মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন৷ তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পর আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়, যেখানে লাশ পাওয়া যায় সেখানকার মাটি তুলে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়৷ ফলে এই মামলার তদন্ত শেষ হবে না, বিচারও হবে না৷ আমি যখন কুমিল্লায় গিয়ে তনুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘটনার পর কথা বলি তখন কোনো সাংবাদিককে সেখানে যেতে দেয়া হয়ানি৷ চারপাশ ঘিরে রাখা হয়েছিল৷ হত্যাকাণ্ডটি ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে হওয়ায় শুরু থেকেই মামলা নিয়ে অস্বাভাবিক সব কাজ করা হয়৷ নয়তো এই মামলার আসামিদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা খুবই সহজ ছিল৷” তার কথা, “শুরু থেকেই এই মামলাটির তদন্ত স্বাধীনভাবে করতে দেয়া হয়নি৷ এখনো স্বাধীনভাবে তদন্ত হচ্ছে না৷”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মজিবুল হক অবশ্য বলেন, “আমরা যে আলামত আগের তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে পেয়েছি তা আমাদের সংরক্ষণে আছে৷”
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অপরাধে প্রচলিক আইনের পাশপাশি আলাদা আইন আছে- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন৷ হত্যা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন তো আছেই৷ তারপরও কেন বিচার হচ্ছে না? এর জবাবে ড. মিজানুর রহমান বলেন, “আইনকে হতে হয় জীবন্ত৷ আইন প্রয়োগ না হলে, আইনে বিচার না হলে সেই আইন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে৷ আমরা দেখছি নারীর প্রতি সহিংসতার বিচার তেমন হয় না৷ এর কারণ হতে পারে কোনো গোষ্ঠীর কারণে আইন সঠিক পথে চলছে না৷”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, “আমাদের আবেদনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০২২ সালে তনু হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে বলেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে৷ কিন্তু মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো জবাবই দেয়নি৷ ফলে এই মামলটি নিয়ে অনীহার জায়গা বোঝা যায়৷”

তার কথা, “পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর এটা স্পষ্ট যে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা যেখানেই ঘটুক না কেন তার তদন্ত এবং বিচার দেশের প্রচলিত আইনেই প্রকাশ্যে হতে হবে৷”

তিনি বলেন, “সাগর-রুনি হত্যারও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ তনু হত্যারও একই অবস্থা৷ তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এত আইন থেকে কী লাভ? আসলে আইনকে স্বাধীনভাবে চলতে না দিলে এই পরিস্থিতি হয়৷ আইন থাকে, কিন্তু বিচার হয় না৷”

তনু ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে কুমিল্লায় যারা মাঠে ছিলেন, তাদের একজন কুমিল্লার সম্মিলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহমিদা জেবিন বলেন,” আসলে এই মামলাটির বিচার হওয়ার আমি কোনো আশা দেখছি না৷ তদন্তের নামে সময় কাটিয়ে মামলাটিকে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে৷ এর পিছনে বড় কারণ হলো ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তার লাশ পাওয়া গেছে৷”
তিনি মনে করেন, “শুধু এই ঘটনা নয়, নারীরা আরো অনেক ঘটনায় বিচার পান না৷ এখানকার বিচার ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক৷ আর পদে পদে নারীদের মামলাগুলো কৌশলে দুর্বল করা হয়৷”ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box