ঢাকা ০১:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান নাই কেন?

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০২:৩৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪ ১০৯ বার পঠিত

বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর ‘‘জেগে উঠেছে” রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক), সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)৷

রোববার রাত থেকে বহুতল ভবনের রেষ্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা৷

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ এই অপরিকল্পিত অভিযান কোনো কাজে আসবে কী না৷ আরো যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেখানে অভিযান হচ্ছে না কেন? এসব ভবনের সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীরা কি রেহাই পেয়ে যাবে? আর এই অভিযান কতদিন চলবে?

প্রথমে শুরু করে ডিএমপি৷ রোববার বিকাল থেকে তারা ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও বসুন্ধরা এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ অনেককে আবার সতর্ক করে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশের এই অভিযানে আগুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আছে কী না তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান৷

অন্যদিকে সোমবার অভিযান শুরু করেছে রাজউক৷ তারা ধানমন্ডি সাত মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘গাউছিয়া টুইন পিক’ ভবনের ১২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে৷ আর ওই ভবনের ছাদের খাবার জায়গা ভেঙে ফেলেছে৷ ১৫ তলা ভবনটিতে অফিসের অনুমোদন থাকলেও সেখানে রেস্তোরাঁ, কাপড় এবং ওষুধের দোকান দেয়া হয়েছে৷ আর ছাদ খোলা রাখার কথা থাকলেও সেখানে রুফটপ রেস্তোরাঁ করা হয়েছে৷

রাজউক ধানমন্ডি সাত মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘গাউছিয়া টুইন পিক’ ভবনের ১২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে ৷ আর ওই ভবনের ছাদের খাবার জায়গা ভেঙে ফেলেছে

সাত মসজিদ রোড এলাকায় কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনও সিলগালা করে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে৷ ওই ভবনে অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন৷ তবে সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের আগেই খবর পেয়ে ওই ভবনের হোটেলগুলো বন্ধ করে দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ৷

অবশ্য শুধু এই হোটেল রেস্তোরাঁ কেন্দ্রিক অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান৷ তিনি বলেন,‘‘আমাদের সিটি কর্পোরেশন লাইসেন্স দিয়েছে৷ আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছি৷ ভবন মালিক রাজউকের অনুমোদন নিয়ে ভবন তুলেছে৷ রাজউক এত দিন কিছু বলেনি৷ আমরা তো মাত্র ভাড়া নিয়েছি৷ আমাদের রেস্তোরাঁর সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব আমাদের৷ কিন্তু ভবনের সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব তো মালিকের৷ আমাদের কোনো নোটিশ না দিয়েই কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? এই সব হোটেল রেস্তোরাঁকে কারা অনুমোদন দিলো? আমরা তো বহুবার বলেছি আমাদের সঙ্গে কথা বলে অনুমোদন দেন৷ কিন্ত তারা তা না করে নানা সুবিধা নিয়ে অনুমোদন দিয়েছে৷” রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য ঢাকায়এক হাজার এবং সারাদেশে ৬০ হাজার বলে জানান তিনি৷

ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ পরিদর্শনে রাজধানী ঢাকায় দুই হাজার ৬০৩টি ভবন আগুনের অতি ঝুঁকিতে আছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান৷ অতি ঝুঁকির তাালিকায় ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল ও ৩২৫টি আবাসিক ভবন আছে৷

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘‘আমরা যে অভিযান শুরু করেছি তা পুলিশ পাওয়া সাপেক্ষে অব্যাহত থাকবে৷ আমাদের ১২ জন ম্যাজিষ্ট্রেট আছে৷ তারা সবাই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন৷ তবে অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের পুলিশ পেতে হবে৷”

ঢাকার রেস্তোরাঁই কি শুধু ঝঁকিপূর্ণ ভবনে, না আরো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘না আরো ঝঁকিপূর্ণ ভবন আছে৷ সেই সব ভবনেও আমরা অভিযান চালাবো৷ আমরা নিরপত্তা ব্যবস্থা দেখব৷”

সাত মসজিদ রোড এলাকায় কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবন সিলগালা করে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে

তবে তালিকায় এরকম কতগুলো ভবন আছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে মোটামুটি একটা তালিকা আছে৷ তবে আমরা তো তালিকা আগে প্রকাশ করব না৷ এটা গোপনীয় তথ্য৷”

ড্যাপের সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে ঢাকার ভবনগুলোর মধ্যে ৮৮ ভাগ ভবন অবৈধ৷ আর বাকি ১২ ভাগ কোনো না কোনো ভাবে ব্যত্যয় করেছে৷ রাজউক এলাকায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট আছে৷

এদিকে ডিএমপির অভিযানও চলবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক থানার ওসিরা তৎপর হয়েছেন৷ প্রত্যেক এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ হোটেল রেস্তোরাঁকে আমরা চিঠি দিচ্ছি, সতর্ক করছি৷ তারপর অভিযান চালাচ্ছি”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা শুধু হোটেল রেস্তোরাঁ না, আমরা মূলত কোনো স্থাপনায় ঝঁকিপূর্ণ কোনো বস্তুও উপস্থিতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি৷ যা মানুষের প্রাণ হানির মত কারণ হতে পারে৷ আইনে আমরা যেটুকু পারছি সেটুকু করছি৷ আরো অনেক অনিয়ম আছে৷ তা দেখার জন্য আরো সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে৷ সবাই দেখলে আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷”

তবে এই ধরনের যে যার মতো অভিযানের সমালোচনা করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান৷ তিনি বলেন,‘‘ত্রুটিপূর্ণ ভবনের তালিকা আছে৷ সেটা ধরে সরকারের ছয়-সাতটি সংস্থা যারা এর দায়িত্বে আছে তাদের সমন্বিত অভিযান দরকার৷ তা না হলে এই অভিযান তেমন কাজে আসবে না৷”

তার কথা,‘‘এখন শুধু রেস্তোরাঁয় অভিযান শুরু হয়েছে৷ কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ তো আরো অনেক ভবন আছে৷ সেখানে অভিযান নেই কেন? আর রেষ্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে কর্মচারীদের আটক করা হচ্ছে৷ এটা অন্যায়৷ কারণ তারা তো কাজ করতে এসেছেন৷ওই ভবনের মালিক রেস্তোরাঁ মালিক তাদের তো আটক করা হচ্ছেনা৷ বেইলি রোডের ভবনের মালিককে তো এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি৷”

তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা অনেক বড়৷ সেখানে হাত দিতে হবে৷ এইসব ভবন, হোটেলের পারমিশন কারা দিয়েছে? এখানে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তরা জড়িত৷ তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছেনা কেন? তাদের বিরুদ্ধে অভিযান কবে হবে? কে চালাবে?”

ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, তারাও সোমবার থেকে ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন৷ তিান বলেন,‘‘আমরা প্রথমে হোটেল-রেস্তোরাঁ, এরপর হাসপাতাল, ক্লিনিকে অভিযান চালাবো৷ পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনায়ই তালিকা ধরে অভিযান হবে৷”

রাজউকের কাছে সর্বশেষ ঢাকায় কত ভবন তার হিসাব নেই৷ তবে রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) আওতায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট ভবনের সংখ্যা ছিলো ২১ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৪টি৷

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান নাই কেন?

আপডেট সময় : ০২:৩৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর ‘‘জেগে উঠেছে” রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক), সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)৷

রোববার রাত থেকে বহুতল ভবনের রেষ্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা৷

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ এই অপরিকল্পিত অভিযান কোনো কাজে আসবে কী না৷ আরো যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেখানে অভিযান হচ্ছে না কেন? এসব ভবনের সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীরা কি রেহাই পেয়ে যাবে? আর এই অভিযান কতদিন চলবে?

প্রথমে শুরু করে ডিএমপি৷ রোববার বিকাল থেকে তারা ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও বসুন্ধরা এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ অনেককে আবার সতর্ক করে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশের এই অভিযানে আগুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আছে কী না তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান৷

অন্যদিকে সোমবার অভিযান শুরু করেছে রাজউক৷ তারা ধানমন্ডি সাত মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘গাউছিয়া টুইন পিক’ ভবনের ১২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে৷ আর ওই ভবনের ছাদের খাবার জায়গা ভেঙে ফেলেছে৷ ১৫ তলা ভবনটিতে অফিসের অনুমোদন থাকলেও সেখানে রেস্তোরাঁ, কাপড় এবং ওষুধের দোকান দেয়া হয়েছে৷ আর ছাদ খোলা রাখার কথা থাকলেও সেখানে রুফটপ রেস্তোরাঁ করা হয়েছে৷

রাজউক ধানমন্ডি সাত মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘গাউছিয়া টুইন পিক’ ভবনের ১২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে ৷ আর ওই ভবনের ছাদের খাবার জায়গা ভেঙে ফেলেছে

সাত মসজিদ রোড এলাকায় কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনও সিলগালা করে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে৷ ওই ভবনে অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন৷ তবে সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের আগেই খবর পেয়ে ওই ভবনের হোটেলগুলো বন্ধ করে দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ৷

অবশ্য শুধু এই হোটেল রেস্তোরাঁ কেন্দ্রিক অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান৷ তিনি বলেন,‘‘আমাদের সিটি কর্পোরেশন লাইসেন্স দিয়েছে৷ আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছি৷ ভবন মালিক রাজউকের অনুমোদন নিয়ে ভবন তুলেছে৷ রাজউক এত দিন কিছু বলেনি৷ আমরা তো মাত্র ভাড়া নিয়েছি৷ আমাদের রেস্তোরাঁর সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব আমাদের৷ কিন্তু ভবনের সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব তো মালিকের৷ আমাদের কোনো নোটিশ না দিয়েই কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? এই সব হোটেল রেস্তোরাঁকে কারা অনুমোদন দিলো? আমরা তো বহুবার বলেছি আমাদের সঙ্গে কথা বলে অনুমোদন দেন৷ কিন্ত তারা তা না করে নানা সুবিধা নিয়ে অনুমোদন দিয়েছে৷” রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য ঢাকায়এক হাজার এবং সারাদেশে ৬০ হাজার বলে জানান তিনি৷

ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ পরিদর্শনে রাজধানী ঢাকায় দুই হাজার ৬০৩টি ভবন আগুনের অতি ঝুঁকিতে আছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান৷ অতি ঝুঁকির তাালিকায় ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল ও ৩২৫টি আবাসিক ভবন আছে৷

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘‘আমরা যে অভিযান শুরু করেছি তা পুলিশ পাওয়া সাপেক্ষে অব্যাহত থাকবে৷ আমাদের ১২ জন ম্যাজিষ্ট্রেট আছে৷ তারা সবাই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন৷ তবে অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের পুলিশ পেতে হবে৷”

ঢাকার রেস্তোরাঁই কি শুধু ঝঁকিপূর্ণ ভবনে, না আরো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘না আরো ঝঁকিপূর্ণ ভবন আছে৷ সেই সব ভবনেও আমরা অভিযান চালাবো৷ আমরা নিরপত্তা ব্যবস্থা দেখব৷”

সাত মসজিদ রোড এলাকায় কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবন সিলগালা করে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে

তবে তালিকায় এরকম কতগুলো ভবন আছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে মোটামুটি একটা তালিকা আছে৷ তবে আমরা তো তালিকা আগে প্রকাশ করব না৷ এটা গোপনীয় তথ্য৷”

ড্যাপের সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে ঢাকার ভবনগুলোর মধ্যে ৮৮ ভাগ ভবন অবৈধ৷ আর বাকি ১২ ভাগ কোনো না কোনো ভাবে ব্যত্যয় করেছে৷ রাজউক এলাকায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট আছে৷

এদিকে ডিএমপির অভিযানও চলবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক থানার ওসিরা তৎপর হয়েছেন৷ প্রত্যেক এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ হোটেল রেস্তোরাঁকে আমরা চিঠি দিচ্ছি, সতর্ক করছি৷ তারপর অভিযান চালাচ্ছি”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা শুধু হোটেল রেস্তোরাঁ না, আমরা মূলত কোনো স্থাপনায় ঝঁকিপূর্ণ কোনো বস্তুও উপস্থিতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি৷ যা মানুষের প্রাণ হানির মত কারণ হতে পারে৷ আইনে আমরা যেটুকু পারছি সেটুকু করছি৷ আরো অনেক অনিয়ম আছে৷ তা দেখার জন্য আরো সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে৷ সবাই দেখলে আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷”

তবে এই ধরনের যে যার মতো অভিযানের সমালোচনা করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান৷ তিনি বলেন,‘‘ত্রুটিপূর্ণ ভবনের তালিকা আছে৷ সেটা ধরে সরকারের ছয়-সাতটি সংস্থা যারা এর দায়িত্বে আছে তাদের সমন্বিত অভিযান দরকার৷ তা না হলে এই অভিযান তেমন কাজে আসবে না৷”

তার কথা,‘‘এখন শুধু রেস্তোরাঁয় অভিযান শুরু হয়েছে৷ কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ তো আরো অনেক ভবন আছে৷ সেখানে অভিযান নেই কেন? আর রেষ্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে কর্মচারীদের আটক করা হচ্ছে৷ এটা অন্যায়৷ কারণ তারা তো কাজ করতে এসেছেন৷ওই ভবনের মালিক রেস্তোরাঁ মালিক তাদের তো আটক করা হচ্ছেনা৷ বেইলি রোডের ভবনের মালিককে তো এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি৷”

তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা অনেক বড়৷ সেখানে হাত দিতে হবে৷ এইসব ভবন, হোটেলের পারমিশন কারা দিয়েছে? এখানে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তরা জড়িত৷ তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছেনা কেন? তাদের বিরুদ্ধে অভিযান কবে হবে? কে চালাবে?”

ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, তারাও সোমবার থেকে ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন৷ তিান বলেন,‘‘আমরা প্রথমে হোটেল-রেস্তোরাঁ, এরপর হাসপাতাল, ক্লিনিকে অভিযান চালাবো৷ পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনায়ই তালিকা ধরে অভিযান হবে৷”

রাজউকের কাছে সর্বশেষ ঢাকায় কত ভবন তার হিসাব নেই৷ তবে রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) আওতায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট ভবনের সংখ্যা ছিলো ২১ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৪টি৷

Facebook Comments Box