অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক কি এবার বন্ধ হবে?
- আপডেট সময় : ০৮:৩০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১০২ বার পঠিত
হাইকোর্টে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্যসেবা) পক্ষে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি জানে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা, তাহলে সেগুলো বন্ধ করতে বাধা কোথায়? কেন এতদিনেও এগুলো বন্ধ করা হয়নি৷ উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর এবার কি এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের যে সংখ্যা বলেছে বাস্তব চিত্র তার চেয়ে অনেক বেশি৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উচ্চ আদালতে যে তালিকা দিয়েছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে৷ জনবল বা তথ্য ঘাটতির কারণে হয়ত তাদের রিপোর্টে বাস্তব চিত্রটা উঠে আসেনি৷ তারপরও সংখ্যাটা যাই হোক না কেন, অনুমোদন ছাড়া শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের একটি প্রতিষ্ঠানও চলতে পারে না৷ দ্রুত এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এখানে রাজনৈতিক বা অর্থের যতই দাপট থাকুক না কেন এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া উচিৎ নয়৷”
‘লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরল না আয়ান : খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে গত ৮ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক৷ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ৷ আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর গত ১৫ জানুয়ারি রুলসহ আদেশ দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ৷ আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ সেই সঙ্গে সারা দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বা অনুমোদনহীন কতগুলো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, সে বিষয়েও একটি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট৷ রোববার সেই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে৷
কিছুদিন পরপর অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ এতে কিছু হাসপাতাল বন্ধও হয়৷ কিছুদিন পর আবারও চালু হয়৷ এভাবেই চলছে স্বাস্থ্য বিভাগের বেসরকারি খাত৷ এমন পরিস্থিতিতে জনগণকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরাও৷ আগের অভিযানে যেগুলো বন্ধ করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পরের অভিযানে চালু অবস্থায় পাওয়া গেছে? গত বছর দুই দফায় অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ প্রথম দফায় সাড়ে ১৬শ’ অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় দফায় বন্ধ করা হয় ৮৬০টি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক৷
বন্ধ করার পর আবার কীভাবে সেগুলো চালু হয়? জানতে চাইলে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক দেখার জন্য আমাদের আলাদা কোন জনবল নেই৷ একেক সময় একেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে এটা করা হয়৷ আর আমাদের মোবাইল কোর্ট চালাতে হলে ডিসির কাছ থেকে নিতে হয়৷ ফলে আমরা চাইলেই সবসময় অভিযান চালাতে পারি না৷ আমার কোন কর্মকর্তা যদি কোথাও গিয়ে অবৈধ এমন প্রতিষ্ঠান দেখেন তিনি বন্ধ করতে বললেও তারা অনেক সময় করেন না৷ কারণ তারা জানেন আমাদের হাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই৷ আমার ঢাকা জেলা একটা বিশাল এলাকা৷ এখানে কোন গলির মধ্যে একটা রুমে ক্লিনিক খুলে ব্যবসা শুরু করলে সেটা দেখারও কোন সুযোগ আমাদের নেই৷ কারণ আমার হাতে তো স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) নেই৷ কোন দুর্ঘটনা যদি ঘটে বা সাংবাদিকরা যদি লেখেন তাহলে আমরা জানতে পারি৷ ফলে আমাদের এগুলো দেখার জন্য নির্দিষ্ট লোকবল ও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে৷ তাহলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে৷”
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে হয়, বাকি ৬৫ শতাংশ হয় বেসরকারি হাসপাতালে৷ ফলে বেসরকারি খাতের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷ বিশেষ করে কোভিডের সময় আমাদের এখানে যে চিকিৎসা হয়েছে, সেটা তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না৷ উন্নত দেশগুলো যেখানে হিশশিম খেয়েছে সেখানে আমরা কত চমৎকারভাবে সামাল দিয়েছি৷ এগুলো মাথায় নিয়েই অভিযান চালাতে হবে৷ অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের আপত্তি নেই৷ কিন্তু বৈধ যারা তাদের যেন কোনভাবেই হয়রানি করা না হয়, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে৷”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতাল৷ ফলে অধিকাংশ হাসপাতালে প্রতিদিনই ঘটছে নানা অঘটন৷ ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে প্রায়ই৷ অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে৷ দেশজুড়ে এমন অবৈধ, নিবন্ধনহীন হাসপাতালের সংখ্যা হাজার হাজার৷ যেগুলোর বেশির ভাগেরই নাম ও অবস্থান জানে না অধিদপ্তর৷ অনলাইনে আবেদনের পর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টোকেন, সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন ক্লিনিক মালিকেরা৷ এসব অবৈধ, নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে নানা সময়ে অভিযান পরিচালিত হলেও আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ বরং এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে৷”