ঢাকা ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

গ্যাস সংকট: ৪ সার কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ৭৪ বার পঠিত

চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট এখনো কাটেনি

চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট এখনো কাটেনি। গত ৯ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ না থাকায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) সহ চারটি সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকছে অথবা ব্যাহত হচ্ছে।

অন্য তিনটি সার কারখানা হলো; কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), সিইউএফএল এর ডিএপি-১ ও ডিএপি-২ ইউনিট।

গ্যাস বিপণন সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন (কেজিডিসিএল) সূত্র বলছে, শনিবার (২৭ জানুয়ারি) কাফকো সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু করেছে; তবে অন্য তিনটির উৎপাদন শুরু হয়নি।

গ্যাস সংকটের পাশাপাশি কারখানাগুলোয় চলমান কারিগরি সমস্যাকে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।

জানা গেছে, গত ১৯ জানুয়ারি সকাল থেকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়।

এ কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দুই দিন পর আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। তবে, শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট থেকেই যায়।

গ্যাসের চাপ পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভারী শিল্প কারখানাগুলোকে বন্ধ রাখতে বলা হয়। ফলে, গত ৯ দিন ধরে চট্টগ্রামের বড় বড় শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলে আবার কারখানা চালু হবে বলে জানান, সিইউএফএলের কর্মকর্তারা। সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে গত ১৯ জানুয়ারি রাত থেকেই সিইউএফএল কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে।

বন্ধের আগ পর্যন্ত সিইউএফএল থেকে প্রতিদিন ১২০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হতো। বাংলাদেশে সার উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে কাফকো ও সিইউএফএল।

কেবলমাত্র কাফকো থেকেই বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন সার বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গুদামে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে মোট ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে।

এই চাহিদার ১০ লাখ টন দেশীয় কারখানাগুলো উৎপাদন করে। বাকি ১৭ লাখ টন কাফকো থেকে নেয়া হয় ও বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

গ্যাস বিপণনকারী সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন (কেজিডিসিএল) সূত্র বলছে, প্রথমে কারিগরি সমস্যার কারণে চট্টগ্রামের কাফকো ও সিইউএফএল এর কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়, পরে গ্যাস সংকটে ব্যাহত হয় উৎপাদন। গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ার পর, আবার কারিগরি সমস্যায় বন্ধ হয় উৎপাদন।

চট্টগ্রামে মোট গ্যাসের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে শিল্প কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৮ থেকে ১০ কোটি ঘনফুট। চাহিদার দুই–তৃতীয়াংশ পরিমাণ গ্যাসও পাচ্ছে না কারখানাগুলো।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিরামিকস ছাড়া চট্টগ্রামে নিবন্ধন করা কারখানা আছে ৪ হাজার ৯৪৯টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪টি পোশাক কারখানা, বাকি ৩ হাজার ৯২৫টি নন-আরএমজি কারখানা।

আর ছোট-বড় মিলিয়ে চট্টগ্রামে ইস্পাত কারখানা রয়েছে ২৯টি। অন্যদিকে সিমেন্ট কারখানা আছে ৮টি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায়, এসব কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলে দেশের গ্যাসকূপ থেকে সরবরাহ দেয়া হয়। ফলে সেসব অঞ্চলে গ্যাসের সংকট খুব বেশি নেই।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা হয় এলএনজি টার্মিনাল থেকে । তাই এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হলেই চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ২০০ এর বেশি শিল্পগ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএম, জিপিএইচ ইস্পাতসহ বড় বড় কারখানা আছে ১৫ থেকে ২০টি।

এর বাইরে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি সার কারখানা ও রাউজান ও শিকলবাহায় দুইটি করে চারটি পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে।

সরকারি এই সাতটি প্রতিষ্ঠানসহ সবগুলো শিল্প কারখনা ও আবাসিক গ্রাহককের গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

এ ছাড়া বেসরকারি শিল্প কারখানা ও আবাসিক গ্রাহকদের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।

মহেশখালীতে স্থাপন করা দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকেই গ্রাহকদের এই গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

ইতোমধ্যে শনিবার ভোর থেকে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা। বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠানের সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

বিপণনকারী সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, গ্যাসের প্রেশারের এখন কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সাধারণ যেসব গ্রাহক রয়েছে; শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও বাসাবাড়ি, তাদের স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

“তবে, যারা বাল্ক গ্রাহক, যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা, সেগুলোর মধ্যে কাফকোকে স্বল্প পরিমাণ করে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। কারণ উপর থেকে নির্দেশনা এসেছে;” জানান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

গ্যাস সংকট: ৪ সার কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

আপডেট সময় : ০৯:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট এখনো কাটেনি। গত ৯ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ না থাকায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) সহ চারটি সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকছে অথবা ব্যাহত হচ্ছে।

অন্য তিনটি সার কারখানা হলো; কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), সিইউএফএল এর ডিএপি-১ ও ডিএপি-২ ইউনিট।

গ্যাস বিপণন সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন (কেজিডিসিএল) সূত্র বলছে, শনিবার (২৭ জানুয়ারি) কাফকো সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু করেছে; তবে অন্য তিনটির উৎপাদন শুরু হয়নি।

গ্যাস সংকটের পাশাপাশি কারখানাগুলোয় চলমান কারিগরি সমস্যাকে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।

জানা গেছে, গত ১৯ জানুয়ারি সকাল থেকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়।

এ কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দুই দিন পর আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। তবে, শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট থেকেই যায়।

গ্যাসের চাপ পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভারী শিল্প কারখানাগুলোকে বন্ধ রাখতে বলা হয়। ফলে, গত ৯ দিন ধরে চট্টগ্রামের বড় বড় শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলে আবার কারখানা চালু হবে বলে জানান, সিইউএফএলের কর্মকর্তারা। সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে গত ১৯ জানুয়ারি রাত থেকেই সিইউএফএল কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে।

বন্ধের আগ পর্যন্ত সিইউএফএল থেকে প্রতিদিন ১২০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হতো। বাংলাদেশে সার উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে কাফকো ও সিইউএফএল।

কেবলমাত্র কাফকো থেকেই বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন সার বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গুদামে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে মোট ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে।

এই চাহিদার ১০ লাখ টন দেশীয় কারখানাগুলো উৎপাদন করে। বাকি ১৭ লাখ টন কাফকো থেকে নেয়া হয় ও বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

গ্যাস বিপণনকারী সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন (কেজিডিসিএল) সূত্র বলছে, প্রথমে কারিগরি সমস্যার কারণে চট্টগ্রামের কাফকো ও সিইউএফএল এর কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়, পরে গ্যাস সংকটে ব্যাহত হয় উৎপাদন। গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ার পর, আবার কারিগরি সমস্যায় বন্ধ হয় উৎপাদন।

চট্টগ্রামে মোট গ্যাসের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে শিল্প কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৮ থেকে ১০ কোটি ঘনফুট। চাহিদার দুই–তৃতীয়াংশ পরিমাণ গ্যাসও পাচ্ছে না কারখানাগুলো।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিরামিকস ছাড়া চট্টগ্রামে নিবন্ধন করা কারখানা আছে ৪ হাজার ৯৪৯টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪টি পোশাক কারখানা, বাকি ৩ হাজার ৯২৫টি নন-আরএমজি কারখানা।

আর ছোট-বড় মিলিয়ে চট্টগ্রামে ইস্পাত কারখানা রয়েছে ২৯টি। অন্যদিকে সিমেন্ট কারখানা আছে ৮টি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায়, এসব কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলে দেশের গ্যাসকূপ থেকে সরবরাহ দেয়া হয়। ফলে সেসব অঞ্চলে গ্যাসের সংকট খুব বেশি নেই।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা হয় এলএনজি টার্মিনাল থেকে । তাই এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হলেই চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ২০০ এর বেশি শিল্পগ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএম, জিপিএইচ ইস্পাতসহ বড় বড় কারখানা আছে ১৫ থেকে ২০টি।

এর বাইরে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি সার কারখানা ও রাউজান ও শিকলবাহায় দুইটি করে চারটি পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে।

সরকারি এই সাতটি প্রতিষ্ঠানসহ সবগুলো শিল্প কারখনা ও আবাসিক গ্রাহককের গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

এ ছাড়া বেসরকারি শিল্প কারখানা ও আবাসিক গ্রাহকদের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।

মহেশখালীতে স্থাপন করা দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকেই গ্রাহকদের এই গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

ইতোমধ্যে শনিবার ভোর থেকে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা। বাকি ৩টি প্রতিষ্ঠানের সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

বিপণনকারী সংস্থা কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, গ্যাসের প্রেশারের এখন কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সাধারণ যেসব গ্রাহক রয়েছে; শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও বাসাবাড়ি, তাদের স্বাভাবিকভাবেই গ্যাসের সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

“তবে, যারা বাল্ক গ্রাহক, যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা, সেগুলোর মধ্যে কাফকোকে স্বল্প পরিমাণ করে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। কারণ উপর থেকে নির্দেশনা এসেছে;” জানান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান।

Facebook Comments Box