নেতা-কর্মীদের আবারো মাঠে ফেরানো সম্ভব?
মুন্সীগঞ্জ বিএনপির স্থানীয় নেতা রিপন মল্লিক বলছেন, তিনিসহ নেতা-কর্মীরা সকলেই এলাকায় ফিরবেন। কয়েকটা মামলায় জামিনের চেষ্টা চলছে। সেটা হলেই এলাকায় ফিরে দলের কার্যক্রম, দল গোছানো এবং যে কর্মসূচি আসবে সেটা পালনে মাঠে নামবেন তারা।
তিনি বলছেন, “আমাদের তো সক্রিয় থাকতেই হবে। এ ছাড়া উপায় নাই। আমরা কর্মসূচি চাই। আমাদের কর্মীরাও বলে কর্মসূচি দেন।”
কিন্তু কবে জামিন হবে, আর কর্মীরা কবে এলাকায় ফিরবেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে, বাংলাদেশের সবখানেই যখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা বহু সংখ্যক মামলার মোকাবেলা করছেন।
বিএনপি’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে দলটির ৪০ লাখেরও বেশি নেতা-কর্মী এখন মামলার আসামি হয়ে আছেন। আর এ পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন বিভিন্ন স্তরের প্রায় ১৩শ নেতা।
বিএনপির এসব দাবি আলাদা করে যাচাই করা না গেলেও মামলা, গ্রেপ্তার এবং সাজার কারণে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে এক ধরনের বিপর্যস্ত অবস্থা এবং বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে সেটা স্পষ্ট।
যদিও এর মধ্যেই আবার কোন কোন জেলায় বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয় খুলে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করতেও দেখা গেছে বিএনপিকে।
কিন্তু বিএনপি’র পক্ষে কি আবারো নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব?
বিএনপি’র নেতারা অবশ্য দাবি করছেন দল চাঙা আছে।
বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন, আন্দোলন নিয়ে হতাশা নেই দলের ভেতরে।
“বিএনপি কর্মী এবং সমর্থক নির্ভর দল। নেতারা জেলে আছে, আমরাও জেলে যেতে পারি। কিন্তু সরকারের যে অপকৌশল যে নেতা ধরলেই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা ব্যর্থ হয়েছে।”
“আমাদের নেতারা জেলে ছিলো, কিন্তু ভোট বর্জনের আন্দোলন হয়েছে। জনগণ ভোট বর্জন করেছে। যেখানে জনগণ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটে যায় নাই, সেখানে আমরা কেন হতাশ হবো?” প্রশ্ন মাহবুব উদ্দিন খোকনের।
তিনি বলছেন, এখন নেতা-কর্মীদের জামিন এবং কারামুক্তির উপর আলাদা করে জোর দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মসূচিও আসবে। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দল নির্বাচনের আগে ২৮ অক্টোবরের আগে যেমন অবস্থায় ছিলো, সে অবস্থায় চলে আসবে।
কর্মসূচি কেমন হবে?
বিএনপি নির্বাচনের পরে নতুন কোন কর্মসূচি দেয়নি। জোর দিচ্ছে, কর্মসূচিতে যাওয়ার আগেই যত বেশি সম্ভব নেতা-কর্মীদের জামিনে মুক্ত করার উপর।
এর আগে নির্বাচনের বছরে দলটি ধারাবাহিকভাবে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, রোডমার্চ করেছে। শেষ পর্যায়ে এসে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিও পালন করেছে। সেই সময় বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হলেও বিএনপি সেটা অস্বীকার করে।
কিন্তু ঘটনা যেটাই হোক, বিএনপির এসব কর্মসূচিতে দাবি আদায় হয়নি, সরকারেরও পতন ঘটেনি। এমনকি নির্বাচনও হয়ে, নতুন সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে।
কিন্তু এখন বিএনপি কোন ধরনের কর্মসূচিতে যাবে তা নিয়ে দলের ভেতরে এবং সমমনা দলগুলোর মধ্যে নানা আলাপ আছে।
যেহেতু হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দাবি অর্জন সম্ভব হয়নি, সেহেতু এমন কর্মসূচিতে গিয়ে আবারো নতুন মামলা এবং ‘দমন-পীড়নের’ পরিস্থিতিতে না যাওয়ার আলোচনাও আছে দলটির ভেতরে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবার দলটির কৌশল কী হবে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে যে কৌশলই থাক সেখানে বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলন থাকবে বলেই জানাচ্ছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
“মানুষ হয়তো প্রত্যাশা করেছিলো এই সরকার বিদায় নেবে। কিন্তু বিদায় তো নেয়নি। কিন্তু এটাও ঠিক একটা স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় দেয়া এটা তো সহজ কোন সংগ্রাম নয়। এটা কঠিন। এবং অনেক সময় দীর্ঘ সময় লাগে।
বিএনপি সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলনের একটা পর্যায় ছিলো। এখন আমরা একটা নতুন পর্যায়ে যাবো।”
“আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা-বিশ্লেষণ করছি। অবাস্তব বা কল্পিত চিন্তার মাধ্যমে আন্দোলনকে পরিচালিত না করে এখনকার বাস্তবতাকে নিয়েই আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা হবে।”
বিএনপি বলছে, এই মুহূর্তে দল এবং নেতা-কর্মীদের জন্যই আন্দোলন ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই। এবং সে আন্দোলনেরই প্রস্তুতি চলছে।
কিন্তু যাদের নিয়ে বিএনপি’র আন্দোলন, মামলায় বিপর্যস্ত সেসব নেতা-কর্মীদের কতটা চাঙা করা যাবে তার উপরই নির্ভর করবে বিএনপির আন্দোলন কতটা এগোবে। বিবিসি