নির্বাচনে যেসব অনিয়ম দেখেছে নৌকার প্রার্থীরা
সাতই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীদেরই নানা অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্র দখল, ফলাফল জালিয়াতি, অস্তিত্বহীন ভোটারদের ভোট দেওয়া, কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের যেতে বাঁধা দেয়ার মতো অভিযোগ তুলেছেন খোদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই।
এ নিয়ে কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
বরগুনার আলোচিত নেতা ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘নির্বাচনের দিন তিনটা কেন্দ্রে নৌকাকে ডিস্টার্ব করা হয়েছে। এরপরও ভোটাররা যে ভোট দিয়েছে ঠিক সেই ফল রিটার্নিং অফিসের কন্ট্রোল রুমে আসেনি। ভোটের ফলাফলে জালিয়াতি হয়েছে’।
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘ভোটের দিন ১৬-১৭টি কেন্দ্রে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের প্রহার করা হয়েছে’।
তিনি অভিযোগ করেন, ”এজেন্টদের একবার বের করে দেয়া হয়েছে, আবার নতুন সেট পাঠিয়েছি। যে সেট একবার রক্তাক্ত হয়েছে, তাদের আর দ্বিতীয়বার ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি”।
‘দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত দলের সদস্য হিসেবে এরচেয়ে বেশি বলতে পারবো না আমি। তবে অবশ্যই সুযোগ পেলে লিখবো, কি হয়েছিলো আমার নির্বাচনী এলাকায়। গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে তা আমি তুলে ধরবো,বলছিলেন মৃণাল কান্তি দাস।
মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ”এবার দেশের মানুষ আশা করেছে তারা অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। আমার ধারণা অধিকাংশ আসনেই তারা পেরেছে কিছু আসনে পারেনি, তারমধ্যে আমার আসনটি অন্যতম”।
এই অভিযোগ বিষয়ে জানতে বিবিসি যোগাযোগ করে বিজয়ী প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের সাথে। তবে তিনি ফোন ধরেন নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদের মনে করেন, অতীতের নির্বাচনে এমন প্রক্রিয়ায় ভোট করে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা’।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ”আগের নির্বাচনে বিএনপিকে ছয়টা সিট দেয়া হয়েছিলো। বিএনপি কী ছয়টা সিটের পার্টি? তাতো না। এবার যারা হেরে গেছে তারা নানা কারচুপির কথা বলছে। গতবার তারা একই পদ্ধতি অবলম্বন করে জিতেছিলো। এবার হেরে যাওয়ায় আহাজারি করছে”।
সংকট নিয়ে যা বলছে আওয়ামী লীগ
এবারের নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এই লড়াই হয়েছে সারাদেশের প্রায় ১৩০টি আসনে। কোথাও নৌকার প্রার্থীর দাপটের কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে যে সব আসনে নৌকার প্রার্থীরা হেরেছে সেখানে সংকট বেশি দেখা যাচ্ছে।
মানিকগঞ্জের পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বলেন, ‘এক সময় মানিকগঞ্জ ছিলো বিএনপির ঘাটি। এখানে নৌকার জোয়ার তৈরি করেছিলাম আমি’।
‘এই নির্বাচনের শুরু থেকে মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য বড় ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো জাতীয় পর্যায়ের একটা প্রক্রিয়া থেকে। আওয়ামী লীগকে যেভাবে গড়ে তুলছিলাম তা এখন ধ্বংস হয়ে যাবে’ আশঙ্কার কথা জানান মমতাজ বেগম।
১৯৯১ থেকে ২০১৮। বরগুনা ১ আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এই নির্বাচনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হারের বিষয়টি তিনি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না।
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘অন্য দলের বা বাইরের কেউ নয়, এই নির্বাচনে নৌকাকে আঘাত করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। সুযোগ পেলে কারা আওয়ামী লীগের মাথায় আঘাত করবে এই নির্বাচনে তার একটা প্রমাণ পাওয়া গেলো’।
পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস বলছিলেন, এবার দেশের মানুষ আশা করেছে তারা এবার অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু আমার আসনের ভোটারদের অনেকেই সেই সুযোগ পায়নি’।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম জানান, ‘কোন ধরনের উস্কানিমূলক বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা যাবে না বলে দলীয় নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। যারা নির্বাচিত হয়েছে জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছে’।
এই নির্বাচনের পর তৃণমূলের কোন্দলের প্রভাব দলে পড়বে কী না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকারের চাইতে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে দেশের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে। এই ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি। আগামীতেও হবে না’।
বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদের মত, ‘আগে দলের কেউ বিদ্রোহী হলে তাকে বহিষ্কার করা হতো। এবার তা হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যক্তি-গোষ্ঠী পর্যায়ে মারামারি হলেও দলের ওপর প্রভাব পড়বে না’। বিবিসি