ঢাকা ১১:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

গম সংকটে ৪ আটা,ময়দা মিল বন্ধ বাকি গুলো ও বন্ধের উপক্রম

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৩:০৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২৮ বার পঠিত

সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর বন্ধ হওয়া আটা ময়দা মিল)

দেশে গমের উৎপাদন কমে যাওয়া আর ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৈয়দপুরে ১০ টি আটা ময়দা মিলের মধ্যে ৪ টি আটা ময়দা মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আর বাকিগুলো ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিসিক শিল্পনগরীর ময়দা মিল মালিক মোস্তফা জানান, সৈয়দপুর শহরে মোট ময়দা মিল ছিল ১০ টি। এর মধ্যে ৪ টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে শুধুমাত্র ময়দা সংকটের কারনে। বাকিগুলোর অবস্থা ও ভালো না। তিনি বলেন, ৫/৭ বছর আগেও দেশে প্রচুর গমের ফলন হতো, অন্য দিকে ভারত থেকে ও গম আমদানি হতো পর্যাপ্ত ।

কিন্তু সেই গমের উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটা ও ময়দার উৎপাদন এসেছে শুন্যের কোটায়। একই সাথে প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী বেকার হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ইনপোর্টাররা,শুধু মাত্র রাশিয়া থেকে গম আমদানি করছেন, তাও সেগুলি তিনবার হাত বদল হয়ে সৈয়দপুরে আসছে।

যার কারনে ওই গম দিয়ে ময়দা বা আটা উৎপাদন করেও লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। নগদ টাকায় গম কিনে বাকিতে আটা ময়দা সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। দেশে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে আটা ময়দা উৎপাদন বন্ধই হয়ে যাবে। আর উৎপাদন করতে না পারলে বাকি দেয়া টাকাটাও উঠবে না।

তিনি বলেন, সৈয়দপুরে আটা ময়দা উৎপাদনে প্রতিদিন দরকার ৩০০ থেকে ৪০০ টন গম। সেখানে একদিকে ভারত গম আমদানি করা বন্ধ করেছে আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে আমদানি কারকদের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে ও মিলছে না চাহিদা মতো গম। এককেজি গম ৪৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে, এর সাথে পরিবহন খরচ,বিদ্যুৎ খরচ সহ শ্রমিক মজুরি খরচ পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৫৫/৫৬ টাকা। শুধুমাত্র গম সংকটের কারনেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।

সাত্তার পাটোয়ারী নামের এক ব্যাক্তি জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমার শরীর ভালো না, ডাক্তার বলেছেন ৩ বেলা রুটি খেতে।কিন্তু বাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০/৬০ টাকা কেজি দরে। আমি একজন বয়স্ক ও বেকার মানুষ, এত দামে যে কি করে আটা ক্রয় করবো ভেবে পাচ্ছি না। একই সাথে চিনি তেল সহ অন্যান্য জিনিসেরও দাম আকাশ ছোয়া। তিন বেলা কেন, একবেলা খাওয়ার ও ক্রয় করার সামর্থ হচ্ছে না। শুধু আমারই নয়,আমার মতো অনেকেই তাদের খাদ্য তালিকা থেকে অনেক কিছুই বাদ দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমি একসময় গমের ব্যবসা করতাম। মদিনা ফ্লাওয়ার মিলের মালিককে প্রায় ১৩ লাখ টাকার গম বাকিতে দিয়েছি। গম সংকটের কারনে তিনি তার ফ্লাওয়ার মিল বন্ধ করে দেয়ায় আমার টাকাটাও দিচ্ছেন না, যার ফলে পথের ভিখারির ন্যায় হয়ে গেছি।

শুধু মদিনা ফ্লাওয়ারের মালিকই নন,তার মতো অনেকেই পথে বসেছেন ভারতের গম আমদানি বন্ধ হওয়ায়। আগামী ২/৪ মাসের মধ্যে ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে সৈয়দপুর শহরের বাকি আটা ময়দা মিল গুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর মিল মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিটি মিলেই প্রতিদিন ৩০/৩৫ টন গম দরকার।কিন্তু তা মিলছে না। শুধু মাত্র শ্রমিকদের ধরে রেখে ব্যবসা ধরে রাখতেই মিল চালু রাখা হয়েছে। ২/৩ মাসের মধ্যে গমের আমদানি বাড়ানো না হলে সৈয়দপুরের প্রায় সব আটা ময়দা মিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

গম সংকটে ৪ আটা,ময়দা মিল বন্ধ বাকি গুলো ও বন্ধের উপক্রম

আপডেট সময় : ০৩:০৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩

দেশে গমের উৎপাদন কমে যাওয়া আর ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৈয়দপুরে ১০ টি আটা ময়দা মিলের মধ্যে ৪ টি আটা ময়দা মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আর বাকিগুলো ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিসিক শিল্পনগরীর ময়দা মিল মালিক মোস্তফা জানান, সৈয়দপুর শহরে মোট ময়দা মিল ছিল ১০ টি। এর মধ্যে ৪ টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে শুধুমাত্র ময়দা সংকটের কারনে। বাকিগুলোর অবস্থা ও ভালো না। তিনি বলেন, ৫/৭ বছর আগেও দেশে প্রচুর গমের ফলন হতো, অন্য দিকে ভারত থেকে ও গম আমদানি হতো পর্যাপ্ত ।

কিন্তু সেই গমের উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটা ও ময়দার উৎপাদন এসেছে শুন্যের কোটায়। একই সাথে প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী বেকার হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ইনপোর্টাররা,শুধু মাত্র রাশিয়া থেকে গম আমদানি করছেন, তাও সেগুলি তিনবার হাত বদল হয়ে সৈয়দপুরে আসছে।

যার কারনে ওই গম দিয়ে ময়দা বা আটা উৎপাদন করেও লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। নগদ টাকায় গম কিনে বাকিতে আটা ময়দা সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। দেশে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে আটা ময়দা উৎপাদন বন্ধই হয়ে যাবে। আর উৎপাদন করতে না পারলে বাকি দেয়া টাকাটাও উঠবে না।

তিনি বলেন, সৈয়দপুরে আটা ময়দা উৎপাদনে প্রতিদিন দরকার ৩০০ থেকে ৪০০ টন গম। সেখানে একদিকে ভারত গম আমদানি করা বন্ধ করেছে আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে আমদানি কারকদের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে ও মিলছে না চাহিদা মতো গম। এককেজি গম ৪৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে, এর সাথে পরিবহন খরচ,বিদ্যুৎ খরচ সহ শ্রমিক মজুরি খরচ পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৫৫/৫৬ টাকা। শুধুমাত্র গম সংকটের কারনেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।

সাত্তার পাটোয়ারী নামের এক ব্যাক্তি জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমার শরীর ভালো না, ডাক্তার বলেছেন ৩ বেলা রুটি খেতে।কিন্তু বাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০/৬০ টাকা কেজি দরে। আমি একজন বয়স্ক ও বেকার মানুষ, এত দামে যে কি করে আটা ক্রয় করবো ভেবে পাচ্ছি না। একই সাথে চিনি তেল সহ অন্যান্য জিনিসেরও দাম আকাশ ছোয়া। তিন বেলা কেন, একবেলা খাওয়ার ও ক্রয় করার সামর্থ হচ্ছে না। শুধু আমারই নয়,আমার মতো অনেকেই তাদের খাদ্য তালিকা থেকে অনেক কিছুই বাদ দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমি একসময় গমের ব্যবসা করতাম। মদিনা ফ্লাওয়ার মিলের মালিককে প্রায় ১৩ লাখ টাকার গম বাকিতে দিয়েছি। গম সংকটের কারনে তিনি তার ফ্লাওয়ার মিল বন্ধ করে দেয়ায় আমার টাকাটাও দিচ্ছেন না, যার ফলে পথের ভিখারির ন্যায় হয়ে গেছি।

শুধু মদিনা ফ্লাওয়ারের মালিকই নন,তার মতো অনেকেই পথে বসেছেন ভারতের গম আমদানি বন্ধ হওয়ায়। আগামী ২/৪ মাসের মধ্যে ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে সৈয়দপুর শহরের বাকি আটা ময়দা মিল গুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর মিল মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিটি মিলেই প্রতিদিন ৩০/৩৫ টন গম দরকার।কিন্তু তা মিলছে না। শুধু মাত্র শ্রমিকদের ধরে রেখে ব্যবসা ধরে রাখতেই মিল চালু রাখা হয়েছে। ২/৩ মাসের মধ্যে গমের আমদানি বাড়ানো না হলে সৈয়দপুরের প্রায় সব আটা ময়দা মিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

Facebook Comments Box