ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সোনারগাঁয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০ Logo সোনারগাঁয়ে ২৫কেজি গাঁজা ও পিকআপ ভ্যানসহ আটক-৩ Logo চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান মহারণের সূচি প্রকাশ Logo শেষ দুই টেস্টও খেলা হচ্ছে না শামির Logo বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন Logo বিয়ের পরিকল্পনা নেই! তবে বাবা হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে! সন্তান প্রসঙ্গে কী মত সলমনের? Logo মস্কোয় অতিষ্ঠ! সিরিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্টের থেকে ‘মুক্তি’ চাইছেন স্ত্রী, ফিরে যেতে চান ব্রিটেনে Logo ‘বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২০০ কোটি রুপি পাওনা রয়েছে ত্রিপুরা’ Logo নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মত Logo শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের তদন্ত নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

পাবনায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রকৌশলী আটক: পালিয়ে গেল ঠিকাদার

পাবনা প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ৭২ বার পঠিত

ছবি সংগৃহিত

পাবনায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে দুই প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঠিকাদারের সাথে অবৈধ টাকা লেনদেনের অভিযোগে তাদের কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজিব ও কনকসহ কয়েকজন। এ দিকে দিনভর নানা তথ্য—উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাদেরকে পাউবো কার্যালয় থেকে পাবনা সদর থানায় নেওয়া হয়। আটককৃতরা হলেন, পাউবোর উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা (২৯)। সে দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের মিনহাজুল ইসলামের ছেলে এবং কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগরের আনোয়ার হোসেনের ছেলে ও পাউবোর উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন (৪২)।

অভিযোগে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডর ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিল ভাউচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা কার্যালয়ে যান সংবাদকর্মীরা। এসময় তথ্য ও বক্তব্যের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পান। কয়েকবার নক দেবার পর মাসুদ রানা দরজা খুললে ঠিকাদার আরিফুজ্জামান রাজিব কমিশনার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখতে পান সংবাদকর্মীরা।
এসময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখা যায় এবং এরপরই আরেক ঠিকাদার কনক সেখানে হাজির হন।সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কিসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। বিষয়টি সন্দেজনক মনে হওয়ায় পুলিশকে জানান ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ এসে পৌঁছানোর আগেই দুই ঠিকাদার পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) খবর দেয়। সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য—উপাত্ত সংগ্রহ করেন দুদক ও পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
জানা গেছে, রাফি কন্সট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারি ঠিকাদার আরিফুজ্জামান রাজিব কমিশনার এবং ঠিকাদার কনকের প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। এসব তদন্তে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তানভীর আহমেদ দীপ নামে পাউবোর এক ঠিকাদার বলেন, আটক দুইজন হয়তো ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। কারণ তারা মাত্র কয়েকমাস এখানে আসছেন। এতো দ্রুত এসব টাকা লেনদেন করবে এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধা মতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়েছে।
আনিছুর রহমান মারুফ নামে আরেক ঠিকাদার বলেন, প্রত্যেক কাজে অফিসের কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেওয়া হলে কাজের বিল আটকে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছেন। কোথাকার টাকা, কিভাবে লেনদেন হলো সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাবনার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ ভাই আমাদের ফোন করে জানান যে সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাসহ মোশারফ হোসেন ও মাসুদ রানা নামে দুই কর্মকর্তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। জব্দকৃত টাকা দুদকের কর্মকর্তারা গণনা করেছেন। টাকার উৎস অনুসন্ধান ও আটককৃত দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

 

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

পাবনায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রকৌশলী আটক: পালিয়ে গেল ঠিকাদার

আপডেট সময় : ০৯:৫৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

পাবনায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে দুই প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঠিকাদারের সাথে অবৈধ টাকা লেনদেনের অভিযোগে তাদের কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজিব ও কনকসহ কয়েকজন। এ দিকে দিনভর নানা তথ্য—উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাদেরকে পাউবো কার্যালয় থেকে পাবনা সদর থানায় নেওয়া হয়। আটককৃতরা হলেন, পাউবোর উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা (২৯)। সে দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের মিনহাজুল ইসলামের ছেলে এবং কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগরের আনোয়ার হোসেনের ছেলে ও পাউবোর উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন (৪২)।

অভিযোগে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডর ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিল ভাউচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা কার্যালয়ে যান সংবাদকর্মীরা। এসময় তথ্য ও বক্তব্যের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পান। কয়েকবার নক দেবার পর মাসুদ রানা দরজা খুললে ঠিকাদার আরিফুজ্জামান রাজিব কমিশনার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখতে পান সংবাদকর্মীরা।
এসময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখা যায় এবং এরপরই আরেক ঠিকাদার কনক সেখানে হাজির হন।সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কিসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। বিষয়টি সন্দেজনক মনে হওয়ায় পুলিশকে জানান ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ এসে পৌঁছানোর আগেই দুই ঠিকাদার পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) খবর দেয়। সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য—উপাত্ত সংগ্রহ করেন দুদক ও পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
জানা গেছে, রাফি কন্সট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারি ঠিকাদার আরিফুজ্জামান রাজিব কমিশনার এবং ঠিকাদার কনকের প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। এসব তদন্তে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তানভীর আহমেদ দীপ নামে পাউবোর এক ঠিকাদার বলেন, আটক দুইজন হয়তো ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। কারণ তারা মাত্র কয়েকমাস এখানে আসছেন। এতো দ্রুত এসব টাকা লেনদেন করবে এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধা মতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়েছে।
আনিছুর রহমান মারুফ নামে আরেক ঠিকাদার বলেন, প্রত্যেক কাজে অফিসের কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেওয়া হলে কাজের বিল আটকে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছেন। কোথাকার টাকা, কিভাবে লেনদেন হলো সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাবনার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ ভাই আমাদের ফোন করে জানান যে সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাসহ মোশারফ হোসেন ও মাসুদ রানা নামে দুই কর্মকর্তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। জব্দকৃত টাকা দুদকের কর্মকর্তারা গণনা করেছেন। টাকার উৎস অনুসন্ধান ও আটককৃত দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

 

Facebook Comments Box