ঢাকা ০৭:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

সৈয়দপুরে রেলওেয়ের জমি বেদখল, থেমে নেই কারখানার যন্ত্রাংশ চুরি

মোঃ জহুরুল ইসলাম খোকন সৈয়দপুর  (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:৩৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪ ৭৫ বার পঠিত
সৈয়দপুর রেলবিভাগের দায়িত্বশীল কঠোর কোন অভিভাবক না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাতে রেলকারখানার যন্ত্রাংশ চুরি ও কোয়ার্টারসহ প্রায় সাড়ে ৪ শত একর ভুসম্পতি বেদখল হয়ে গেছে। রেলবিভাগের সম্পদ রক্ষার্থে একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী,সহ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকলেও কারখানার যন্ত্রাংশ চোর সহ ভুমিদস্যুদের সাথে যোগসাজশ থাকায় অভিযোগ দিয়ে ও প্রতিকার নেই বলে অভিযোগ একাধিক মহলের।
রেল সুত্র মতে, ১৮৭০ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের বিশাল কারখানা গড়ে উঠে সৈয়দপুরে। কারখানাটি প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রায় ১২ হাজার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। গোড়ার দিকে জনবলে ভরপুর কারখানাটিতে ট্রেনের ইঞ্জিন ছাড়া ট্রেনের বগি, নাটবল্টু সহ প্রায় সবই তৈরি করা হতো। এর ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে কারখানার সুনাম সহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে দেশের। ১৯৮৬ সাল থেকে শ্রমিক ছাটাইয়ের ফলে বর্তমানে জনবল দাড়িয়েছে প্রায় ২ হাজারের মতো।
সুত্রটি জানান, রেলওয়ে কারখানাটিতে তৎকালীন সরকার এই বৃহৎ কারখানার সার্বিক দায়িত্বে নিযুক্ত করেন বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) কে। ওই সময় শ্রমিকদের জন্য সারে ৮ শত একর সম্পত্তিতে প্রায় ৩ হাজার কোয়ার্টার, আবাসিক ভবন সহ পতিত জমিতে রোপনকৃত গাছ রক্ষার্থে দায়িত্ব দেয়া হয় উপসহকারী প্রকৌশলী( আবাসিক) ও সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলীকে। তৎকালীন সরকার এর আইন মোতাবেক ১৮৭০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওইসকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে আসছিলেন।কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর শ্রমিক ছাটাইয়ের ফলে শুরু হয় কারখানার দামী দামী যন্ত্রাংশ চুরি। একই সাথে বেদখল হতে থাকে কোয়ার্টার সহ ভুসম্পত্তি।
সৈয়দপুর শহরের ভজে পাড়া সংলগ্ন রেলওয়ের জমিতে সদ্য বহুতল ভবন নির্মাণকারি মিন্টু বলেন, আমার জানা মতে রেলওয়ের জমির বরাদ্দ দেয়া আপাতত বন্ধ রয়েছে। আর তাই সকলে যেভাবে রেলের জায়গায় ঘরবাড়ি বানাচ্ছে, আমি ও সেভাবেই নির্মাণ করছি। রেল বিভাগ বরাদ্দ দিলে কেউই অবৈধ ভাবে রেলের জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ করতো না।
রেলওয়ে কারিগরি পরিষদের কেন্দ্রিয় নেতা ও সৈয়দপুর কারখানা শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন,কারখানার দায়িত্বে নিয়োজিত  কঠোর কোন অভিভাবক না থাকার দরুন এযাবৎ ১২৩৯ টি কোয়ার্টার বেদখল হয়ে গেছে। একই সাথে বেদখল হয়েছে  ৪২৭ একর ভুসম্পত্তি।
জনবল সংকটে কারখানায় তেমন একটা কাজকর্ম না থাকায়, দামী দামী অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয় । কিন্তু এরপরেও ওইসব যন্ত্রাংশের মুল্য নির্ধারন করা হয়েছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। একই সাথে বেদখল হয়ে যাওয়া ১২৩৮ কোয়ার্টার ও বেদখল হয়ে যাওয়া ভুসম্পত্তির বেসরকারি ভাবে মুল্য নির্ধারন হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু শুধুমাত্র রেল বিভাগের কঠোর কোন অভিভাবক না থাকায় চোর চক্র ও ভূমিদস্যুদের কারনে মুল্যবান ওইসব রেলসম্পদ বেহাত হয়ে যায়। দেশের সম্পদ রক্ষার্থে স্হানীয়রা রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বারবার অভিযোগ করলেও সম্পদ রক্ষার্থে কঠোর কোন পদক্ষেপই নেননি তারা। উল্টো অভিযোগ কারীকে মামলা করার হুমকি দেয়া হয়েছে। এর ফলে চোর চক্রটি প্রায় প্রতিরাতেই কারখানার দেয়াল ডিংগিয়ে পাচার করছে দামী দামী যন্ত্রাংশ।
সেই সাথে কোয়ার্টার দখল বিক্রয় ও পতিত জমি দখল করে সেখানে নির্মান হচ্ছে পাকা ঘরবাড়ি ও বহুতল ভবন।  এতে চোর চক্র ও ভূমিদস্যুরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও সরকার বঞ্চিত হয়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ থেকে। বেদখল হয়ে যাওয়া ভুসম্পত্তি ও কোয়ার্টার উদ্ধার করে অপ্রয়োনীয় সম্পত্তি ও কোয়ার্টার বিক্রি করে দিলে ওই টাকায় দেশের অনেক উন্নয়ন সম্ভব বলে জানান তিনি ।
পার্বতীপুর ৭ নং রেলওয়ে কাচারির ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদ হোসেন দখলের সত্যতা স্বিকার করে বলেন,রেলওয়ের যেসব সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের  নামে খতিয়ান ভুক্ত হয়েছে, সেসব জমির রেকর্ড সংশোধনী মামলা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (আবাসিক) শরিফুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের জমি অবৈধ ভাবে দখলকারিদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া চলমান।  উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ছাড়া কঠোর কোন পদক্ষেপই নেয়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, একদিকে জনবল সংকট, অন্য দিকে নির্দেশনা নেই। যার ফলে ২/১ জন দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে চুপ করে থাকতে হয়।
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

সৈয়দপুরে রেলওেয়ের জমি বেদখল, থেমে নেই কারখানার যন্ত্রাংশ চুরি

আপডেট সময় : ১০:৩৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
সৈয়দপুর রেলবিভাগের দায়িত্বশীল কঠোর কোন অভিভাবক না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাতে রেলকারখানার যন্ত্রাংশ চুরি ও কোয়ার্টারসহ প্রায় সাড়ে ৪ শত একর ভুসম্পতি বেদখল হয়ে গেছে। রেলবিভাগের সম্পদ রক্ষার্থে একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী,সহ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকলেও কারখানার যন্ত্রাংশ চোর সহ ভুমিদস্যুদের সাথে যোগসাজশ থাকায় অভিযোগ দিয়ে ও প্রতিকার নেই বলে অভিযোগ একাধিক মহলের।
রেল সুত্র মতে, ১৮৭০ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের বিশাল কারখানা গড়ে উঠে সৈয়দপুরে। কারখানাটি প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রায় ১২ হাজার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। গোড়ার দিকে জনবলে ভরপুর কারখানাটিতে ট্রেনের ইঞ্জিন ছাড়া ট্রেনের বগি, নাটবল্টু সহ প্রায় সবই তৈরি করা হতো। এর ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে কারখানার সুনাম সহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে দেশের। ১৯৮৬ সাল থেকে শ্রমিক ছাটাইয়ের ফলে বর্তমানে জনবল দাড়িয়েছে প্রায় ২ হাজারের মতো।
সুত্রটি জানান, রেলওয়ে কারখানাটিতে তৎকালীন সরকার এই বৃহৎ কারখানার সার্বিক দায়িত্বে নিযুক্ত করেন বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) কে। ওই সময় শ্রমিকদের জন্য সারে ৮ শত একর সম্পত্তিতে প্রায় ৩ হাজার কোয়ার্টার, আবাসিক ভবন সহ পতিত জমিতে রোপনকৃত গাছ রক্ষার্থে দায়িত্ব দেয়া হয় উপসহকারী প্রকৌশলী( আবাসিক) ও সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলীকে। তৎকালীন সরকার এর আইন মোতাবেক ১৮৭০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওইসকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে আসছিলেন।কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর শ্রমিক ছাটাইয়ের ফলে শুরু হয় কারখানার দামী দামী যন্ত্রাংশ চুরি। একই সাথে বেদখল হতে থাকে কোয়ার্টার সহ ভুসম্পত্তি।
সৈয়দপুর শহরের ভজে পাড়া সংলগ্ন রেলওয়ের জমিতে সদ্য বহুতল ভবন নির্মাণকারি মিন্টু বলেন, আমার জানা মতে রেলওয়ের জমির বরাদ্দ দেয়া আপাতত বন্ধ রয়েছে। আর তাই সকলে যেভাবে রেলের জায়গায় ঘরবাড়ি বানাচ্ছে, আমি ও সেভাবেই নির্মাণ করছি। রেল বিভাগ বরাদ্দ দিলে কেউই অবৈধ ভাবে রেলের জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ করতো না।
রেলওয়ে কারিগরি পরিষদের কেন্দ্রিয় নেতা ও সৈয়দপুর কারখানা শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন,কারখানার দায়িত্বে নিয়োজিত  কঠোর কোন অভিভাবক না থাকার দরুন এযাবৎ ১২৩৯ টি কোয়ার্টার বেদখল হয়ে গেছে। একই সাথে বেদখল হয়েছে  ৪২৭ একর ভুসম্পত্তি।
জনবল সংকটে কারখানায় তেমন একটা কাজকর্ম না থাকায়, দামী দামী অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয় । কিন্তু এরপরেও ওইসব যন্ত্রাংশের মুল্য নির্ধারন করা হয়েছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। একই সাথে বেদখল হয়ে যাওয়া ১২৩৮ কোয়ার্টার ও বেদখল হয়ে যাওয়া ভুসম্পত্তির বেসরকারি ভাবে মুল্য নির্ধারন হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু শুধুমাত্র রেল বিভাগের কঠোর কোন অভিভাবক না থাকায় চোর চক্র ও ভূমিদস্যুদের কারনে মুল্যবান ওইসব রেলসম্পদ বেহাত হয়ে যায়। দেশের সম্পদ রক্ষার্থে স্হানীয়রা রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বারবার অভিযোগ করলেও সম্পদ রক্ষার্থে কঠোর কোন পদক্ষেপই নেননি তারা। উল্টো অভিযোগ কারীকে মামলা করার হুমকি দেয়া হয়েছে। এর ফলে চোর চক্রটি প্রায় প্রতিরাতেই কারখানার দেয়াল ডিংগিয়ে পাচার করছে দামী দামী যন্ত্রাংশ।
সেই সাথে কোয়ার্টার দখল বিক্রয় ও পতিত জমি দখল করে সেখানে নির্মান হচ্ছে পাকা ঘরবাড়ি ও বহুতল ভবন।  এতে চোর চক্র ও ভূমিদস্যুরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও সরকার বঞ্চিত হয়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ থেকে। বেদখল হয়ে যাওয়া ভুসম্পত্তি ও কোয়ার্টার উদ্ধার করে অপ্রয়োনীয় সম্পত্তি ও কোয়ার্টার বিক্রি করে দিলে ওই টাকায় দেশের অনেক উন্নয়ন সম্ভব বলে জানান তিনি ।
পার্বতীপুর ৭ নং রেলওয়ে কাচারির ফিল্ড কানুনগো সাজ্জাদ হোসেন দখলের সত্যতা স্বিকার করে বলেন,রেলওয়ের যেসব সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের  নামে খতিয়ান ভুক্ত হয়েছে, সেসব জমির রেকর্ড সংশোধনী মামলা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (আবাসিক) শরিফুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের জমি অবৈধ ভাবে দখলকারিদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া চলমান।  উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ছাড়া কঠোর কোন পদক্ষেপই নেয়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, একদিকে জনবল সংকট, অন্য দিকে নির্দেশনা নেই। যার ফলে ২/১ জন দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে চুপ করে থাকতে হয়।
Facebook Comments Box