সাতই মার্চ ঢাকাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
- আপডেট সময় : ০৭:২১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০২৪ ৫২ বার পঠিত
১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল পাকিস্তান বনাম আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে। তখন পাকিস্তান একাদশের পক্ষে একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার ছিলেন রকিবুল হাসান, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন।
পরিস্থিতি তখন আর পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনি যা বলছিলেন, সেটাই ছিল শিরোধার্য।
ভাষণ নিয়ে নানা জল্পনা
তখন ঢাকা শহরের পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন জাহানারা ইমাম, যিনি ১৯৯০’র দশকে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
জাহানারা ইমাম লিখেছেন, সাতই মার্চ রেসকোর্সে গণজমায়েতে শেখ কী বলবেন, তা নিয়েও লোকজনের জল্পনা-কল্পনার অবধি নেই। এক তারিখে হোটেল পূর্বানীতে তিনি বলেছিলেন, বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের কর্মসূচীর ঘোষণা তিনি সাত তারিখে দেবেন।
মুজিবের ওপর চাপ
সাতই মার্চের আগে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসভবনে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। সে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল, রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে শেখ মুজিব কোন পথ অনুসরণ করবেন।
সামরিক সরকারের প্রস্তুতি
সাতই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে ঘিরে পাকিস্তান সরকারের মধ্যেও নানা চিন্তা ও উদ্বেগ কাজ করছিল। তাদের ধারণা ছিল, সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বসতে পারেন।
সিদ্দিক সালিকের বর্ণনা মতে ৭ই মার্চ যতই এগিয়ে আসতে থাকে, গুজব, ভয়, আতঙ্ক ও উদ্বেগ ততই জোরালো হতে থাকে।
এই বার্তাটি সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার ব্যক্তিগতভাবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে গিয়ে তার কাছে হস্তান্তর করেছিলেন বলে সিদ্দিক সালিক উল্লেখ উল্লেখ করেন।
জেনারেল রাজা দাবি করেন, সেই ব্যক্তিদের তিনি বলেছিলেন, ক্যান্টনমেন্টে সৈন্যরা অস্ত্র ও ট্যাঙ্ক নিয়ে তৈরি আছে। রেসকোর্স ময়দান থেকে তিনি সরাসরি শেখ মুজিবের ভাষণ শোনার ব্যবস্থাও রেখেছেন। শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে আক্রমণ করে এবং একতরফাভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় তাহলে সৈন্যরা সাথে সাথে জনসভার দিকে অগ্রসর হবে এবং সেখানে হামলা চালাবে।
৭ই মার্চ পরিস্থিতি
এরপর এই চার-দফার একটি খসড়া প্রস্তুত করে ড. কামাল হোসেন শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদন নেন। তার অনুমোদনের পর সেটি টাইপ করা হয়।
সেদিন রেসকোর্স ময়দানে নৌকা আকৃতির মতো করে জনসভার মঞ্চ করা হয়েছিল। সকাল থেকেই লাখো মানুষ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের দিকে যেতে থাকে। পুরো রেসকোর্স ময়দান ও তার আশপাশের এলাকা একবারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিকেল চারটার পর শেখ মুজিবুর রহমান সভাস্থলে আসেন। সে ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান অহিংস এবং অসহযোগ আন্দোলন আরও জোরদার করার আহবান জানান।
২. জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে
৩. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে
তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, “সামরিক শাসন তুলে নেয়া এবং সৈন্যদের ব্যারাকে ফেরত নেয়াসহ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি চারটি শর্তের ব্যাপারেই শুধু বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করেছিলেন।”
রেসকোর্সে ৭ই মার্চের বহু প্রত্যাশিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ঘোষণা করলেন – “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”