ঢাকা ১২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা? Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু আজ Logo বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার সরকারি ছুটি Logo আগামী বছর থেকে আবারও মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন শুরু

সরে দাঁড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির বহু প্রার্থী

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ১১:৫৮:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪ ১২৯ বার পঠিত
আগামী সাতই জানুয়ারির নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্যতম দল জাতীয় পার্টির বেশ কয়েক জন নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এদের অনেকেই বলেছেন, শুরু থেকেই জাতীয় পার্টির ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন তারা।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির অন্তত ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার ও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে এসব প্রার্থীদের আসনে তাদের সব ধরণের প্রচারণাও বন্ধ রয়েছে।
তারা বলছেন, সারা দেশে ৩০০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা থাকার পরও কেন্দ্রীয়ভাবে ২৬টি আসনের সমঝোতা করে নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির জন্য ‘ভুল’ ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৬টি আসনে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তের কারণে বাকি আসনগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে ‘অবহেলিত’ মনোভাব তৈরি হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রের সাথে তৃণমূলের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং এই দূরত্ব নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
গত ২২শে নভেম্বর আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। পরে ১৭ই ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সাথে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়। এসব আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এ পর্যন্ত যে প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তারা সবাই জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া ওই ২৬টি আসনের বাইরের আসনগুলোর প্রার্থী। কিন্তু ওই ‘ছেড়ে দেয়া’ আসনগুলো থেকে এখনো কেউ সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেননি।

যারা সরে দাঁড়ালেন

গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জাতীয় পার্টির নেতাদের দু-এক জনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের খবর আসতে থাকে। এরমধ্যে গত ১৭ই ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছালাউদ্দিন খোকা মোল্লা মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
এদিন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ঢাকা-১৩ ও ১৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টু-ও।
গত ২২শে ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী জাকির হোসেন নির্বাচনে না লড়ার ঘোষণা দেন।
গত ৩১শে ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশালের দুটি আসনের প্রার্থী এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি বরিশাল-২ ও বরিশাল-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়ছিলেন।
ডিসেম্বরের শেষ দিনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন গাজীপুর-১ ও ৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন। তিনিও এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরে দাঁড়ানোর এই ঘোষণা দেন।

বরগুনা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী খলিলুর রহমান গত ৩১শে ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন নাটোর-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের জেলা সভাপতি আলাউদ্দিন মৃধা।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোহরাব হোসেনও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর হবিগঞ্জ-২ আসনের জাপা প্রার্থী শংকর পালও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সবশেষ দোসরা জানুয়ারি গাজীপুর-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সামসুদ্দিন খানও সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এরআগে পহেলা জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত তিনি থাকবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তখন তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী যদি নির্বাচন করতে না চায় তাহলে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা ওই প্রার্থীর রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কয়েক জন প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত পুরো দলের সিদ্ধান্ত নয়।
তিনি বলেন, “আমাদের সাথে জাতীয় পার্টির খুব ভাল ভাবে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা পরস্পরের সহযোগী হবো। আমার মনে হয় না দলগতভাবে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে, এমন কোনও সিদ্ধান্ত তাদের দলের নেই।”
জাপার তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের পাত্তা দিচ্ছেন না

যা বলছেন সরে দাঁড়ানো প্রার্থীরা

বরিশাল-২ ও ৫ আসন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টি ও দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস। নিজের সরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মি. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, একজন তৃণমূল নেতা হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক এবং জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনে নির্বাচন করুন।
কিন্তু ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিপক্ষে ছিলেন তিনি।

“১৭ তারিখের (ডিসেম্বর) শেষ বিকেলে যখন দেখলাম যে, নাটকীয়ভাবে জাতীয় পার্টি ২৬টি সিটে সমঝোতার নির্বাচনে গেলো, সেই মুহূর্তে নির্বাচন থেকে বের হয়ে আসার বা প্রত্যাহার করার কোনও সুযোগ ছিল না।”

উল্লেখ্য নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনও ছিল ১৭ই ডিসেম্বর।
 ইকবাল হোসেন বলেন, তারা এলাকায় গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, যে সব আসনে সমঝোতা হয়েছে, সে সব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা তাদের পোস্টারে নিজেদের মহাজোটের প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বলে উল্লেখ করেছেন।
“কোনও কোনও প্রার্থী জয় বাংলার স্লোগান এবং শেখ হাসিনার ছবিও পোস্টারে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই নির্বাচনটা যে পুরোপুরিই একটা প্রহসন এবং একটি পাতানো নির্বাচন, সেই উপলব্ধি থেকে এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আমি চিন্তা করে দেখলাম যে এই নির্বাচনে থাকার আর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।”এ কারণেই তিনি এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের এই উপদেষ্টা বলেন, তিনি দলের চেয়ারম্যানের সাথে এ নিয়ে কথা বললেও জি এম  কাদের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি বলেছেন, “নির্বাচন করতে চাওয়া কিংবা না চাওয়ার অধিকার তোমার আছে। তোমার স্বাধীনতায় আমি হস্তক্ষেপ করবো না।”
‘সমঝোতা’র বাইরে থাকা আসনে নির্বাচন করে জয় পাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে ইকবাল  হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তবেই জয়-পরাজয়ের প্রকৃত সিদ্ধান্ত আসে।
“নির্ধারিত তো হয়েই গেছে যে, আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী যারা, তারাই মাঠে সুবিধা পাবেন এবং মাঠ পর্যায়ের সকল প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করছে। সুতরাং সেই জায়গায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সেটা আশা করা খুব মুশকিল।”
“সেই বিবেচনা থেকেই এই অসম একটা প্রতিযোগিতায় থাকাটা নিজের জন্য সমীচীন মনে করিনি।”

চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন মো. সোহরাব হোসেন। তিনিও সম্প্রতি এই নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওই আসনে তার যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা রয়েছেন, তাদের তুলনায় একটি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছেন তিনি।

ওই প্রার্থীরা নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে উল্লেখ করে সোহরাব হোসেন বলেন, একে তো নির্বাচন করা তার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার উপর তার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের সহায়তাও পাননি।
“আমরা যে ২৫৭ জন প্রার্থী আছি, আমাদের সাথে কোনও রকমের যোগাযোগ করছে না, কোন ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট নাই, আমরা রিং দিলেও আমাদের ফোন ধরে না। নানাবিধ কারণে মাঠ পর্যায়ে আমাদের দাঁড়ায়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে”, বলছিলেন ইকবাল  হোসেন।
এরকম সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।

“দলীয় নেতা যদি অন্তত পক্ষে উৎসাহ, সাহস না দেয়, তাহলে টিকে থাকা যায় না। এজন্য আমি মাঠ থেকে পিছিয়ে আসলাম।”

তিনি আরও বলেন, “যদি নিজের আত্মসম্মান রক্ষা করতে হয়, নিজেদের যে পজিশন-পরিস্থিতি নির্বাচনে, এই সাত তারিখের নির্বাচন থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও ওখান থেকে ফিরে আসা উচিত।”

সাতই জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন হবিগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শংকর পাল। তিনি  বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কথার পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বন্ধ করে দিয়েছেন সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলে, কৌশল আছে, কৌশল আছে। তারা কী কৌশল যে করে!, ২৬টা আসন লইয়া তারা কৌশল করতেছে, আর আমরারে সাগরে ভাসায় দিসে।”

মি. পাল বলেন, এনিয়ে টানা তিন বার নির্বাচন করছেন তিনি। এর আগের নির্বাচনগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকেই নির্বাচনী নানা সরঞ্জাম ও সহায়তা পাঠানো হতো। এবার তার কিছুই হয়নি।

“কুনো খোঁজ-খবর কেউ নেয় নাই। আমরা কি নির্বাচনে আছি নাকি মরছি, কুনো খোঁজ খবর কেউ নেয় নাই।”

এছাড়া ছাড় দেয়া আসনগুলোর প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। মি. পাল বলেন, “তাহলে আমরা কী লিখবো?”
“এটার উপর ভিত্তি করে আমরা জানি যে নিশ্চিত আমাদের পরাজয়। এই আমরা শুধু শুধু ট্যাকা-পয়সা খরচ করতে রাজি না। নিজের কোনও কর্মীদের নিয়ে বেকায়দায় ফালাইতে রাজি না।”
এই প্রার্থী বলেন, নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সন্তুষ্ট নন তিনি। মি পাল বলছিলেন, “আমাদেরকে নমিনেশন দেয়ার পরও তারা বলতেসে আমরা ২৮৩ আসনে নির্বাচন করবো। অথচ ২৬টি আসন লইয়া নাম ঘোষণা কইরা তারা দিয়ে দিছে অলরেডি, এইটা কেমন কথা? এইটা কেমন সিদ্ধান্ত?”
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো নির্বাচন করছে

ভিত্তি দুর্বল হবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, জাতীয় পার্টির ২৬টি আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে যে সমঝোতা করেছে তা অনেক নেতাকর্মীই একাত্মবোধ করতে পারেনি। কারণ এসব আসনের বাইরে যেসব আসন রয়েছে সেগুলো নিয়ে জাতীয় পার্টির আসলে কোনও মাথাব্যথা নেই।
এই অবস্থা থেকে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতারা যে বার্তাটি পাচ্ছে তা হচ্ছে, “মূল নেতৃত্বের কাছে আসলে নেতাকর্মীদের কোন দাম নেই। তাদের কাছে দাম হচ্ছে যে চুক্তি বা সমঝোতা আওয়ামী লীগের সাথে হয়েছে, সেটির।”
সুতরাং এর মধ্যে দিয়ে যারা সমঝোতা হওয়া আসনের বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, সেসব নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরণের ‘নেগলেকটেড বা অবহেলিত’ বোধ তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
জোবাইদা নাসরীন বলেন, নির্বাচনের পরবর্তী সময়েও এই অবস্থার জের থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
“এর কারণে জাতীয় পার্টির ভিত্তি এবং জনগণের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্কের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হতে পারে”, মন্তব্য করছেন তিনি।

একই সাথে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও আরো বেশি দূরত্ব বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আসলে তৃণমূল নেতারা তেমন কোন গুরুত্ব পায়নি। কারণ আসন সমঝোতার দিকেই তাদের মনোযোগ ছিল।”

“নেতাকর্মীদের সমর্থনের জায়গা যদি জাতীয় পার্টি হারিয়ে ফেলে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি অনেকটাই দুর্বল হয়ে যেতে পারে”, অভিমত জোবাইদা নাসরীনের। বিবিসি
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

সরে দাঁড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির বহু প্রার্থী

আপডেট সময় : ১১:৫৮:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪
আগামী সাতই জানুয়ারির নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্যতম দল জাতীয় পার্টির বেশ কয়েক জন নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এদের অনেকেই বলেছেন, শুরু থেকেই জাতীয় পার্টির ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন তারা।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির অন্তত ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার ও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে এসব প্রার্থীদের আসনে তাদের সব ধরণের প্রচারণাও বন্ধ রয়েছে।
তারা বলছেন, সারা দেশে ৩০০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা থাকার পরও কেন্দ্রীয়ভাবে ২৬টি আসনের সমঝোতা করে নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির জন্য ‘ভুল’ ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৬টি আসনে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তের কারণে বাকি আসনগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে ‘অবহেলিত’ মনোভাব তৈরি হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রের সাথে তৃণমূলের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং এই দূরত্ব নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
গত ২২শে নভেম্বর আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতীয় পার্টি। পরে ১৭ই ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সাথে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়। এসব আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এ পর্যন্ত যে প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তারা সবাই জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া ওই ২৬টি আসনের বাইরের আসনগুলোর প্রার্থী। কিন্তু ওই ‘ছেড়ে দেয়া’ আসনগুলো থেকে এখনো কেউ সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেননি।

যারা সরে দাঁড়ালেন

গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জাতীয় পার্টির নেতাদের দু-এক জনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের খবর আসতে থাকে। এরমধ্যে গত ১৭ই ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছালাউদ্দিন খোকা মোল্লা মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
এদিন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ঢাকা-১৩ ও ১৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টু-ও।
গত ২২শে ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী জাকির হোসেন নির্বাচনে না লড়ার ঘোষণা দেন।
গত ৩১শে ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশালের দুটি আসনের প্রার্থী এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি বরিশাল-২ ও বরিশাল-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়ছিলেন।
ডিসেম্বরের শেষ দিনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন গাজীপুর-১ ও ৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন। তিনিও এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরে দাঁড়ানোর এই ঘোষণা দেন।

বরগুনা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী খলিলুর রহমান গত ৩১শে ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন নাটোর-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের জেলা সভাপতি আলাউদ্দিন মৃধা।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোহরাব হোসেনও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর হবিগঞ্জ-২ আসনের জাপা প্রার্থী শংকর পালও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সবশেষ দোসরা জানুয়ারি গাজীপুর-৪ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সামসুদ্দিন খানও সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এরআগে পহেলা জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত তিনি থাকবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তখন তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী যদি নির্বাচন করতে না চায় তাহলে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা ওই প্রার্থীর রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কয়েক জন প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত পুরো দলের সিদ্ধান্ত নয়।
তিনি বলেন, “আমাদের সাথে জাতীয় পার্টির খুব ভাল ভাবে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা পরস্পরের সহযোগী হবো। আমার মনে হয় না দলগতভাবে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে, এমন কোনও সিদ্ধান্ত তাদের দলের নেই।”
জাপার তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের পাত্তা দিচ্ছেন না

যা বলছেন সরে দাঁড়ানো প্রার্থীরা

বরিশাল-২ ও ৫ আসন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টি ও দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস। নিজের সরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মি. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, একজন তৃণমূল নেতা হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক এবং জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনে নির্বাচন করুন।
কিন্তু ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিপক্ষে ছিলেন তিনি।

“১৭ তারিখের (ডিসেম্বর) শেষ বিকেলে যখন দেখলাম যে, নাটকীয়ভাবে জাতীয় পার্টি ২৬টি সিটে সমঝোতার নির্বাচনে গেলো, সেই মুহূর্তে নির্বাচন থেকে বের হয়ে আসার বা প্রত্যাহার করার কোনও সুযোগ ছিল না।”

উল্লেখ্য নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনও ছিল ১৭ই ডিসেম্বর।
 ইকবাল হোসেন বলেন, তারা এলাকায় গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, যে সব আসনে সমঝোতা হয়েছে, সে সব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা তাদের পোস্টারে নিজেদের মহাজোটের প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বলে উল্লেখ করেছেন।
“কোনও কোনও প্রার্থী জয় বাংলার স্লোগান এবং শেখ হাসিনার ছবিও পোস্টারে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই নির্বাচনটা যে পুরোপুরিই একটা প্রহসন এবং একটি পাতানো নির্বাচন, সেই উপলব্ধি থেকে এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আমি চিন্তা করে দেখলাম যে এই নির্বাচনে থাকার আর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।”এ কারণেই তিনি এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের এই উপদেষ্টা বলেন, তিনি দলের চেয়ারম্যানের সাথে এ নিয়ে কথা বললেও জি এম  কাদের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি বলেছেন, “নির্বাচন করতে চাওয়া কিংবা না চাওয়ার অধিকার তোমার আছে। তোমার স্বাধীনতায় আমি হস্তক্ষেপ করবো না।”
‘সমঝোতা’র বাইরে থাকা আসনে নির্বাচন করে জয় পাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে ইকবাল  হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তবেই জয়-পরাজয়ের প্রকৃত সিদ্ধান্ত আসে।
“নির্ধারিত তো হয়েই গেছে যে, আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী যারা, তারাই মাঠে সুবিধা পাবেন এবং মাঠ পর্যায়ের সকল প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করছে। সুতরাং সেই জায়গায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সেটা আশা করা খুব মুশকিল।”
“সেই বিবেচনা থেকেই এই অসম একটা প্রতিযোগিতায় থাকাটা নিজের জন্য সমীচীন মনে করিনি।”

চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন মো. সোহরাব হোসেন। তিনিও সম্প্রতি এই নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওই আসনে তার যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা রয়েছেন, তাদের তুলনায় একটি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছেন তিনি।

ওই প্রার্থীরা নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে উল্লেখ করে সোহরাব হোসেন বলেন, একে তো নির্বাচন করা তার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার উপর তার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের সহায়তাও পাননি।
“আমরা যে ২৫৭ জন প্রার্থী আছি, আমাদের সাথে কোনও রকমের যোগাযোগ করছে না, কোন ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট নাই, আমরা রিং দিলেও আমাদের ফোন ধরে না। নানাবিধ কারণে মাঠ পর্যায়ে আমাদের দাঁড়ায়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে”, বলছিলেন ইকবাল  হোসেন।
এরকম সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।

“দলীয় নেতা যদি অন্তত পক্ষে উৎসাহ, সাহস না দেয়, তাহলে টিকে থাকা যায় না। এজন্য আমি মাঠ থেকে পিছিয়ে আসলাম।”

তিনি আরও বলেন, “যদি নিজের আত্মসম্মান রক্ষা করতে হয়, নিজেদের যে পজিশন-পরিস্থিতি নির্বাচনে, এই সাত তারিখের নির্বাচন থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও ওখান থেকে ফিরে আসা উচিত।”

সাতই জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন হবিগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শংকর পাল। তিনি  বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কথার পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বন্ধ করে দিয়েছেন সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলে, কৌশল আছে, কৌশল আছে। তারা কী কৌশল যে করে!, ২৬টা আসন লইয়া তারা কৌশল করতেছে, আর আমরারে সাগরে ভাসায় দিসে।”

মি. পাল বলেন, এনিয়ে টানা তিন বার নির্বাচন করছেন তিনি। এর আগের নির্বাচনগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকেই নির্বাচনী নানা সরঞ্জাম ও সহায়তা পাঠানো হতো। এবার তার কিছুই হয়নি।

“কুনো খোঁজ-খবর কেউ নেয় নাই। আমরা কি নির্বাচনে আছি নাকি মরছি, কুনো খোঁজ খবর কেউ নেয় নাই।”

এছাড়া ছাড় দেয়া আসনগুলোর প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। মি. পাল বলেন, “তাহলে আমরা কী লিখবো?”
“এটার উপর ভিত্তি করে আমরা জানি যে নিশ্চিত আমাদের পরাজয়। এই আমরা শুধু শুধু ট্যাকা-পয়সা খরচ করতে রাজি না। নিজের কোনও কর্মীদের নিয়ে বেকায়দায় ফালাইতে রাজি না।”
এই প্রার্থী বলেন, নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সন্তুষ্ট নন তিনি। মি পাল বলছিলেন, “আমাদেরকে নমিনেশন দেয়ার পরও তারা বলতেসে আমরা ২৮৩ আসনে নির্বাচন করবো। অথচ ২৬টি আসন লইয়া নাম ঘোষণা কইরা তারা দিয়ে দিছে অলরেডি, এইটা কেমন কথা? এইটা কেমন সিদ্ধান্ত?”
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো নির্বাচন করছে

ভিত্তি দুর্বল হবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, জাতীয় পার্টির ২৬টি আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে যে সমঝোতা করেছে তা অনেক নেতাকর্মীই একাত্মবোধ করতে পারেনি। কারণ এসব আসনের বাইরে যেসব আসন রয়েছে সেগুলো নিয়ে জাতীয় পার্টির আসলে কোনও মাথাব্যথা নেই।
এই অবস্থা থেকে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতারা যে বার্তাটি পাচ্ছে তা হচ্ছে, “মূল নেতৃত্বের কাছে আসলে নেতাকর্মীদের কোন দাম নেই। তাদের কাছে দাম হচ্ছে যে চুক্তি বা সমঝোতা আওয়ামী লীগের সাথে হয়েছে, সেটির।”
সুতরাং এর মধ্যে দিয়ে যারা সমঝোতা হওয়া আসনের বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, সেসব নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরণের ‘নেগলেকটেড বা অবহেলিত’ বোধ তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
জোবাইদা নাসরীন বলেন, নির্বাচনের পরবর্তী সময়েও এই অবস্থার জের থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
“এর কারণে জাতীয় পার্টির ভিত্তি এবং জনগণের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্কের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হতে পারে”, মন্তব্য করছেন তিনি।

একই সাথে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও আরো বেশি দূরত্ব বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আসলে তৃণমূল নেতারা তেমন কোন গুরুত্ব পায়নি। কারণ আসন সমঝোতার দিকেই তাদের মনোযোগ ছিল।”

“নেতাকর্মীদের সমর্থনের জায়গা যদি জাতীয় পার্টি হারিয়ে ফেলে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি অনেকটাই দুর্বল হয়ে যেতে পারে”, অভিমত জোবাইদা নাসরীনের। বিবিসি
Facebook Comments Box