ঢাকা ১২:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা?

সারাবেলা প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৭:৫১:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১ বার পঠিত

শপথ নেয়ার পর দুই মাসের কিছু বেশি সময় পার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে ছয়টি সংস্কার কমিশন। প্রজ্ঞাপন জারির পর কাজও শুরু করেছেন এসব কমিশনের প্রধানরা।

তবে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে, বেড়েছে নিত্যপণ্যের দামও।

দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।

এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

তবে যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে তাতে ‘ধীর গতি বললে অন্যায় হবে’ বলেই মত সরকারের উপদেষ্টার।

আর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘গুরুত্ব’ নির্ধারণ করে কাজ এগিয়ে নেয়ার কথাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১১ই সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সেই ভাষণে বিচার বিভাগ, ব্যাংক খাত, প্রশাসনসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারসহ নিজেদের কর্ম পরিকল্পনার ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

সেই মোতাবেক এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।

তবে এখনো শৃঙ্খলা আসেনি প্রশাসনে। স্বস্তি ফেরেনি গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক ক্ষেত্রে, যার একটি নিত্যপণ্যের বাজার।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাজার করতে আসেন মিজ তানিয়া। জানান, নতুন সরকার আসার পর ‘চলাফেরা করে, কথাবার্তা বলে ভালো লাগলেও কমেনি নিত্যপণ্যের দাম।

“১০০’র নিচেতো কিছু নাই-ই”, বলেন তিনি।

বাজারে আসা আরেক ক্রেতা শাহাদাত হোসেন বলেন, “সরকার যতটুকু সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করছে। তারপরও কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে, পুলিশ বাহিনী ঠিকমতো কাজ করছে না।”

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে গণপিটুনিতে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শেষ দুই মাসেই মারা গেছেন ৪৯ জন।

এছাড়া চাঁদাবাজি আর দখলের খবরেও সয়লাব গণমাধ্যম।

দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা কিংবা রদবদল করেও প্রশাসনে গতি ফেরাতে না পারার মতো বিষয়গুলো নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দুই মাস অনেক সময় না, আবার যা যা এস্টাব্লিশ (প্রতিষ্ঠা) করার প্রয়োজন ছিল, সেদিক থেকে কম সময়ও না।”

তার মতে, জনসাধারণ সরকারের থেকে চায় জীবনের নিরাপত্তা এবং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের ক্ষমতা।

“বাজারের অবস্থা আর বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার অবস্থা দেখে আমরা খুব পরিস্কার বুঝতে পারছি যে এই দুইটা প্রাথমিক কাজই আমাদের সরকার যথেষ্ট করতে পারেনি এখনো,” বলেন এই বিশ্লেষক।

সেক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ না দিয়ে সরকার ‘সমালোচনার বাইরে থাকতে পারবে না’ বলেও মনে করেন তিনি।

আরও যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অবশ্য সরকারের কাজের গতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বিশেষ করে অসময়ের বন্যার মতো কারণে এই সরকার ‘পরিস্থিতির শিকার হয়েছে’ বলেও মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “বন্যাজনিত কারণেও সরকারের জন্য যে সময় যে উদ্যোগগুলো নেয়ার কথা সে উদ্যোগগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পিছিয়ে যেতে হয়েছে,” যার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতেও।

এছাড়াও পাহাড় ও গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতাসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে এই সরকারকে।

সেক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের মধ্যে “নিজস্ব কাজের পরিমণ্ডলের মধ্যে যারা কাজ করছেন তাদের আত্মস্থ করতে কম সময় লাগলেও” নতুনদের জন্য বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে সময় লাগার কারণেও কিছুটা ধীর গতি থাকতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

এছাড়া, বিভিন্ন পক্ষের নানা দাবি-দাওয়া উত্থাপন সরকারের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কারেও বাধা সৃষ্টি করছে। এতে অনেকক্ষেত্রেই স্বাভাবিক কাজ এগিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একসঙ্গে অনেকগুলো সংস্কার কাজ হাতে নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন মি. মোয়াজ্জেম।

“একদিকে দুর্নীতি, আরেকদিকে রাজনীতি, সংবিধান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশ, আইন- এই যে বিভিন্নমুখী সংস্কারগুলো সাইমুলটেনাসলি একই সময়ে চাওয়া মানে হচ্ছে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একইসঙ্গে চাপের ভেতরে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছেন”, বলেন তিনি।

“ফলে এর সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট লোকেরা চাইবেই গতিকে শ্লথ করে দেয়া, এখান থেকে যেন খুব বেশি লাভ না হয়।”

সেক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেটিও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে মনে করেন মি. মোয়াজ্জেম।

এছাড়া, বিভিন্ন পক্ষের নানা দাবি-দাওয়া উত্থাপন সরকারের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কারেও বাধা সৃষ্টি করছে। এতে অনেকক্ষেত্রেই স্বাভাবিক কাজ এগিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একসঙ্গে অনেকগুলো সংস্কার কাজ হাতে নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন মি. মোয়াজ্জেম।

“একদিকে দুর্নীতি, আরেকদিকে রাজনীতি, সংবিধান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশ, আইন- এই যে বিভিন্নমুখী সংস্কারগুলো সাইমুলটেনাসলি একই সময়ে চাওয়া

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

ধীরগতি নিয়ে যা বলছেন উপদেষ্টারা-

রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের’ মধ্য দিয়ে গঠন হওয়া এই সরকারকে অন্যান্যদের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বলেই মনে করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

“অনেক চ্যালঞ্জ ছিল। পুলিশ প্রশাসন এখনও পুরোদমে কাজ করছে না। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অত ভালো ছিল না। এগুলো দেখতে হচ্ছে। এগুলো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু কাজগুলো করতে হয়।”

সেক্ষেত্রে কিছু কাজকে ‘প্রায়োরিটি’ দিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি। ফলে ‘ধীর গতি বললে অন্যায় হবে’ বলে মন্তব্য করেন এই উপদেষ্টা।

১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করা সোজা কথা না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সিন্ডিকেট আছে। তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া- এটা অনেক বড় কাজ।”

অনেকটা একই কথা বলছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

দায়িত্ব নেয়ার পর প্রশাসনের অবিন্যস্ত অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শৃঙ্খলায় আনা এবং শিক্ষা ও আর্থিক খাতসহ সবক্ষেত্রে ‘অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থার’ মধ্যে দায়িত্ব নিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“বহু বহু হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে গেছে আগের সরকার- সেটার প্রভাব এখন পড়ছে বাজারে। এটাতো তাৎক্ষণিক সমাধান হবে না, একটু সময় লাগবে।”

এছাড়াও প্রতিদিন নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আসা এবং তাৎক্ষণিক সেটির সমাধান চাওয়ার প্রবণতার কারণেও মূল কাজ এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান মি. মাহমুদ।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা?

আপডেট সময় : ০৭:৫১:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

শপথ নেয়ার পর দুই মাসের কিছু বেশি সময় পার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে ছয়টি সংস্কার কমিশন। প্রজ্ঞাপন জারির পর কাজও শুরু করেছেন এসব কমিশনের প্রধানরা।

তবে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে, বেড়েছে নিত্যপণ্যের দামও।

দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।

এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

তবে যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে তাতে ‘ধীর গতি বললে অন্যায় হবে’ বলেই মত সরকারের উপদেষ্টার।

আর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘গুরুত্ব’ নির্ধারণ করে কাজ এগিয়ে নেয়ার কথাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১১ই সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সেই ভাষণে বিচার বিভাগ, ব্যাংক খাত, প্রশাসনসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারসহ নিজেদের কর্ম পরিকল্পনার ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

সেই মোতাবেক এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।

তবে এখনো শৃঙ্খলা আসেনি প্রশাসনে। স্বস্তি ফেরেনি গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক ক্ষেত্রে, যার একটি নিত্যপণ্যের বাজার।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাজার করতে আসেন মিজ তানিয়া। জানান, নতুন সরকার আসার পর ‘চলাফেরা করে, কথাবার্তা বলে ভালো লাগলেও কমেনি নিত্যপণ্যের দাম।

“১০০’র নিচেতো কিছু নাই-ই”, বলেন তিনি।

বাজারে আসা আরেক ক্রেতা শাহাদাত হোসেন বলেন, “সরকার যতটুকু সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করছে। তারপরও কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে, পুলিশ বাহিনী ঠিকমতো কাজ করছে না।”

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে গণপিটুনিতে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শেষ দুই মাসেই মারা গেছেন ৪৯ জন।

এছাড়া চাঁদাবাজি আর দখলের খবরেও সয়লাব গণমাধ্যম।

দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা কিংবা রদবদল করেও প্রশাসনে গতি ফেরাতে না পারার মতো বিষয়গুলো নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দুই মাস অনেক সময় না, আবার যা যা এস্টাব্লিশ (প্রতিষ্ঠা) করার প্রয়োজন ছিল, সেদিক থেকে কম সময়ও না।”

তার মতে, জনসাধারণ সরকারের থেকে চায় জীবনের নিরাপত্তা এবং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের ক্ষমতা।

“বাজারের অবস্থা আর বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার অবস্থা দেখে আমরা খুব পরিস্কার বুঝতে পারছি যে এই দুইটা প্রাথমিক কাজই আমাদের সরকার যথেষ্ট করতে পারেনি এখনো,” বলেন এই বিশ্লেষক।

সেক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ না দিয়ে সরকার ‘সমালোচনার বাইরে থাকতে পারবে না’ বলেও মনে করেন তিনি।

আরও যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অবশ্য সরকারের কাজের গতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বিশেষ করে অসময়ের বন্যার মতো কারণে এই সরকার ‘পরিস্থিতির শিকার হয়েছে’ বলেও মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “বন্যাজনিত কারণেও সরকারের জন্য যে সময় যে উদ্যোগগুলো নেয়ার কথা সে উদ্যোগগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পিছিয়ে যেতে হয়েছে,” যার প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতেও।

এছাড়াও পাহাড় ও গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতাসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে এই সরকারকে।

সেক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের মধ্যে “নিজস্ব কাজের পরিমণ্ডলের মধ্যে যারা কাজ করছেন তাদের আত্মস্থ করতে কম সময় লাগলেও” নতুনদের জন্য বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে সময় লাগার কারণেও কিছুটা ধীর গতি থাকতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

এছাড়া, বিভিন্ন পক্ষের নানা দাবি-দাওয়া উত্থাপন সরকারের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কারেও বাধা সৃষ্টি করছে। এতে অনেকক্ষেত্রেই স্বাভাবিক কাজ এগিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একসঙ্গে অনেকগুলো সংস্কার কাজ হাতে নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন মি. মোয়াজ্জেম।

“একদিকে দুর্নীতি, আরেকদিকে রাজনীতি, সংবিধান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশ, আইন- এই যে বিভিন্নমুখী সংস্কারগুলো সাইমুলটেনাসলি একই সময়ে চাওয়া মানে হচ্ছে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একইসঙ্গে চাপের ভেতরে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছেন”, বলেন তিনি।

“ফলে এর সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট লোকেরা চাইবেই গতিকে শ্লথ করে দেয়া, এখান থেকে যেন খুব বেশি লাভ না হয়।”

সেক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেটিও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে মনে করেন মি. মোয়াজ্জেম।

এছাড়া, বিভিন্ন পক্ষের নানা দাবি-দাওয়া উত্থাপন সরকারের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কারেও বাধা সৃষ্টি করছে। এতে অনেকক্ষেত্রেই স্বাভাবিক কাজ এগিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একসঙ্গে অনেকগুলো সংস্কার কাজ হাতে নেয়াটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন মি. মোয়াজ্জেম।

“একদিকে দুর্নীতি, আরেকদিকে রাজনীতি, সংবিধান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশ, আইন- এই যে বিভিন্নমুখী সংস্কারগুলো সাইমুলটেনাসলি একই সময়ে চাওয়া

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

ধীরগতি নিয়ে যা বলছেন উপদেষ্টারা-

রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের’ মধ্য দিয়ে গঠন হওয়া এই সরকারকে অন্যান্যদের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বলেই মনে করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

“অনেক চ্যালঞ্জ ছিল। পুলিশ প্রশাসন এখনও পুরোদমে কাজ করছে না। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অত ভালো ছিল না। এগুলো দেখতে হচ্ছে। এগুলো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু কাজগুলো করতে হয়।”

সেক্ষেত্রে কিছু কাজকে ‘প্রায়োরিটি’ দিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি। ফলে ‘ধীর গতি বললে অন্যায় হবে’ বলে মন্তব্য করেন এই উপদেষ্টা।

১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করা সোজা কথা না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সিন্ডিকেট আছে। তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া- এটা অনেক বড় কাজ।”

অনেকটা একই কথা বলছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

দায়িত্ব নেয়ার পর প্রশাসনের অবিন্যস্ত অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শৃঙ্খলায় আনা এবং শিক্ষা ও আর্থিক খাতসহ সবক্ষেত্রে ‘অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থার’ মধ্যে দায়িত্ব নিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“বহু বহু হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে গেছে আগের সরকার- সেটার প্রভাব এখন পড়ছে বাজারে। এটাতো তাৎক্ষণিক সমাধান হবে না, একটু সময় লাগবে।”

এছাড়াও প্রতিদিন নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আসা এবং তাৎক্ষণিক সেটির সমাধান চাওয়ার প্রবণতার কারণেও মূল কাজ এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান মি. মাহমুদ।

Facebook Comments Box