সাধারণত নির্বাচন এলে কিংবা অনেক সময় বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের একটি প্রবণতা কাজ করে, যার মূল উদ্দেশ্যই থাকে সমমনা দলগুলোকে এক জায়গায় এনে নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করা।

আবার অনেক সময় বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও দলগুলোর মধ্যে জোট হয় অভিন্ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে। নব্বইয়ের দশকে যেমন জেনারেল এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনের দলীয় জোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোট।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন পাকিস্তান আমল থেকে বিশেষ করে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সময় থেকেই জোট গঠনের সংস্কৃতি শুরু হয় এবং তা এখনো বেশ ভালোভাবেই চলছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।

“মূলত একক শক্তিতে রাজনীতি ও নির্বাচন করলে সুবিধা হয় না বলেই জোট গঠনের চেষ্টা করে দলগুলো। নির্বাচনের সময় ছোট দলগুলো নিজেরা সুবিধা করতে পারেনা বলে সমমনা বড় দলগুলোর সঙ্গে মিলে সিট পাওয়ার চেষ্টা করে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. আহমেদ।

তবে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী জোট ১৪ দলকে ধরে রাখলেও বিএনপি তাদের নির্বাচনী জোট চার দলীয় জোট ও বিশ দলীয় ঐক্য জোট থেকে বেরিয়ে আসায় এসব জোটগুলো এখন কার্যকর নেই।

বাংলাদেশে নির্বাচনকে ঘিরে জোটের রাজনীতি কখন, কীভাবে কাজ করেছে- সেটিই ফিরে দেখা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

[caption id="attachment_8964" align="alignnone" width="811"] ২০০২ সালে ঢাকায় চার দলীয় জোটের সমাবেশে খালেদা জিয়ার সাথে জামায়াতের তখনকার আমীর মতিউর রহমান নিজামী এবং বিজেপির তখনকার চেয়ারম্যান নাজিউর রহমান মঞ্জুরকে দেখা যাচ্ছে[/caption]

বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ সালে যে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়েছিলো সেখান থেকেই নির্বাচনী জোটবদ্ধ রাজনীতির সূচনা হয়েছিলো এই ভূখণ্ডে এবং এটিই এ ভূখণ্ডের বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর প্রথম নির্বাচনী জোট।

মূলত পাকিস্তান হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে প্রচণ্ড অজনপ্রিয় হয়ে পড়া মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে এ জোট গঠন করা হয়েছিলো যার নেতৃত্বে ছিলেন তখনকার আওয়ামী লীগের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং কৃষক প্রজা পার্টির এ কে ফজলুল হক।

এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তফ্রন্ট যে ইশতেহার দিয়েছিলো তাতেই মূলত গুরুত্ব পেয়েছিলো বাঙ্গালীদের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো।

পরে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিপুল জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিলো যুক্তফ্রন্ট এবং সেই সরকারের মন্ত্রী ছিলেন পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানও। তবে এর পর আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে এককভাবে নির্বাচন করেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলো।

[caption id="attachment_8965" align="aligncenter" width="660"] ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়ের পর শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথ নিচ্ছেন। তাঁকে শপথ পড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক[/caption]

মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করা আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করে। তবে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে।

এর আগেই আওয়ামী লীগ বিরোধী কয়েকটি দলের সমন্বয়ে মি. ভাসানীকে সামনে রেখে একটি জোট হয় বায়াত্তর সালের শেষ দিকে। এরপর নির্বাচনের আগেও ভাসানীকে সামনে রেখেই আরেকটি নির্বাচনী জোটও হয়েছিলো তখন।

এসব জোটের দাবি ছিলো শেখ মুজিব সরকারের বদলে একটি জাতীয় সরকার গঠন। কিন্তু পরে বিরোধী দল হিসেবে জাসদ সক্রিয় হয়ে উঠলে এসব জোট ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

কিন্তু এর মধ্যে আওয়ামী লীগও ন্যাপ-মোজাফফর ও কমিউনিস্ট পার্টিকে নিয়ে একটি জোট করে।

পরবর্তীতে এক পর্যায়ে সব দলকে এক ছাতার নীচে আনা হয় বাকশাল গঠন করে, কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরই অগাস্টে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

[caption id="attachment_8966" align="aligncenter" width="838"] ১৯৭৮ সালের ১ মে তখনকার সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে আনুষ্ঠানিকভাবে 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট' ঘোষণা করা হয়[/caption]