ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ আর নেই

আনন্দলোক প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪ ২৪ বার পঠিত

দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ মারা গেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন।

সাদি মহম্মদের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখা যায় তার ঘরের দরজা বন্ধ। কিছুক্ষণ পর দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ৮ জুলাই মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এর পর থেকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি।

রাত সাড়ে ৯ টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

পারিবারিক বন্ধু নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা একাত্তরকে বলেন, তার মা চলে যাওয়ার পর থেকে বিষণ্নতায় ভুগছিলো। একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিলো। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছি।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক সাগতিক লোহানি জানিয়েছেন, দেশবরেণ্য এই শিল্পী আত্মহত্যা করেছেন।

ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রসংগীতে পড়াশোনা করা সাদি মহম্মদের বাবা শহীদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।

একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদ তকিউল্লাহর আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিম উল্লাহকে।

গত বছরের জুলাই মাসে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান।

সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। রবীন্দ্রসংগীতে তার মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও তিনি সমান দেশব্যাপী পরিচিত ছিলেন। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও। এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

২০০৭ সালে আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ আর নেই

আপডেট সময় : ১১:৩৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ মারা গেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন।

সাদি মহম্মদের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ সাংবাদিকদের জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখা যায় তার ঘরের দরজা বন্ধ। কিছুক্ষণ পর দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ৮ জুলাই মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এর পর থেকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি।

রাত সাড়ে ৯ টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

পারিবারিক বন্ধু নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা একাত্তরকে বলেন, তার মা চলে যাওয়ার পর থেকে বিষণ্নতায় ভুগছিলো। একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিলো। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছি।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক সাগতিক লোহানি জানিয়েছেন, দেশবরেণ্য এই শিল্পী আত্মহত্যা করেছেন।

ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রসংগীতে পড়াশোনা করা সাদি মহম্মদের বাবা শহীদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।

একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদ তকিউল্লাহর আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিম উল্লাহকে।

গত বছরের জুলাই মাসে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান।

সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। রবীন্দ্রসংগীতে তার মূল পরিচিতি গড়ে উঠলেও আধুনিক গানেও তিনি সমান দেশব্যাপী পরিচিত ছিলেন। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও। এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

২০০৭ সালে আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।

Facebook Comments Box