ঢাকা ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে সংশয়ে কমিশন

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৫:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৪ ৬৮ বার পঠিত

বিএনপিসহ বেশকিছু দল অংশ না নেয়ায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে

ভোটের আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ফলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশকিছু দল অংশ না নেয়ায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ এখন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। ৭ জানুয়ারির এ নির্বাচন তারা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখছে। তারা দেখতে চায়, বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচন কেমন হয়।

তারা অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে জোর দিলেও বিএনপি ও তাদের সমমনারা নির্বাচন বর্জনের অবস্থানে থেকে ৬ ও ৭ জানুয়ারি ৪৮ ঘন্টার হরতালও ডেকেছে।

আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না: সিইসি

রোববার ভোট৷ কিন্ত তার আগেরদিনই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট আয়োজন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উঠিয়ে আনা কঠিন হবে৷

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোটের আগের দিন নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে এমন সংশয় প্রকাশ করেন তিনি৷

যাত্রীবাহী ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘ট্রেনে আগুন দিয়েছে৷ ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ যারা হরতাল দিয়েছে, তারাও বলেছিল তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে৷ আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে৷ আগুন দেখে আমরা দু:খ ভারাক্রান্ত৷ কোনো দল যদি এটি করে থাকে, এটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি৷’’

তারপরেও তিনি বলেন, ‘‘সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে৷ তবে কোনো একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে৷ এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনতে কঠিন হবে৷ আশাকরি, ভোটাররা আসবেন৷’’

অ্যামেরিকার ভিসানীতি নিয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে পড়েন সিইসি৷ বলেন, ‘‘এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে৷ কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য৷ নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য৷ তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে৷ যারা এক্ষেত্রে বাধা দেবে, তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবেন৷’’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না৷ আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে৷ আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি৷ আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই৷ কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়৷ ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী তা আমি বুঝি না৷ এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর৷’’

এবারের ভোটে ‘সিলেকশন’ হয়ে গেছে বলে যে সমালোচনা রয়েছে, তার জবাও দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে সিলেকশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয়, আরো কিছু বলছেন৷ আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না৷ এ সংকট রাজনৈতিক৷’’

ভোটের গ্রহণযোগ্যতার সুস্পষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই বলেও মনে করেন সিইসি৷ তিনি বলেন, ‘‘কেউ বলবেন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি৷ আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করবেন৷ এতে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে৷ গণমাধ্যমে প্রকৃত চিত্র ওঠে আসলে, মানুষ প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবেন৷’’

নির্বাচনের আগেই এবার কারা সরকারে আসছেন, আর কারা বিরোধী দলে থাকবেন, সেটা সহজেই অনুমেয়৷ এমন পরিস্থিতিতে কমিশন বিব্রত কিনা জানতে চাওয়া হয় সিইসির কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের বিষয় নয়৷ নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই৷’’
অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত ছিলেন৷ অংশ নিয়েছেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকেরা৷
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে সংশয়ে কমিশন

আপডেট সময় : ০৭:৪৫:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৪
ভোটের আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ফলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশকিছু দল অংশ না নেয়ায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ এখন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। ৭ জানুয়ারির এ নির্বাচন তারা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখছে। তারা দেখতে চায়, বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচন কেমন হয়।

তারা অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে জোর দিলেও বিএনপি ও তাদের সমমনারা নির্বাচন বর্জনের অবস্থানে থেকে ৬ ও ৭ জানুয়ারি ৪৮ ঘন্টার হরতালও ডেকেছে।

আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না: সিইসি

রোববার ভোট৷ কিন্ত তার আগেরদিনই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট আয়োজন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উঠিয়ে আনা কঠিন হবে৷

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোটের আগের দিন নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে এমন সংশয় প্রকাশ করেন তিনি৷

যাত্রীবাহী ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘ট্রেনে আগুন দিয়েছে৷ ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ যারা হরতাল দিয়েছে, তারাও বলেছিল তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে৷ আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে৷ আগুন দেখে আমরা দু:খ ভারাক্রান্ত৷ কোনো দল যদি এটি করে থাকে, এটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি৷’’

তারপরেও তিনি বলেন, ‘‘সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে৷ তবে কোনো একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে৷ এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনতে কঠিন হবে৷ আশাকরি, ভোটাররা আসবেন৷’’

অ্যামেরিকার ভিসানীতি নিয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে পড়েন সিইসি৷ বলেন, ‘‘এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে৷ কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য৷ নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য৷ তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে৷ যারা এক্ষেত্রে বাধা দেবে, তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবেন৷’’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না৷ আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে৷ আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি৷ আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই৷ কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়৷ ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী তা আমি বুঝি না৷ এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর৷’’

এবারের ভোটে ‘সিলেকশন’ হয়ে গেছে বলে যে সমালোচনা রয়েছে, তার জবাও দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে সিলেকশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয়, আরো কিছু বলছেন৷ আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না৷ এ সংকট রাজনৈতিক৷’’

ভোটের গ্রহণযোগ্যতার সুস্পষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই বলেও মনে করেন সিইসি৷ তিনি বলেন, ‘‘কেউ বলবেন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি৷ আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করবেন৷ এতে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে৷ গণমাধ্যমে প্রকৃত চিত্র ওঠে আসলে, মানুষ প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবেন৷’’

নির্বাচনের আগেই এবার কারা সরকারে আসছেন, আর কারা বিরোধী দলে থাকবেন, সেটা সহজেই অনুমেয়৷ এমন পরিস্থিতিতে কমিশন বিব্রত কিনা জানতে চাওয়া হয় সিইসির কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের বিষয় নয়৷ নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই৷’’
অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত ছিলেন৷ অংশ নিয়েছেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকেরা৷
Facebook Comments Box