রাশিয়ার ‘বন্ধু’ হিসেবে স্বীকৃতি কি লাভ হবে বাংলাদেশের
- আপডেট সময় : ১২:৩৩:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৮ বার পঠিত
রাশিয়া তাদের ৩০টিরও বেশি ‘বন্ধু ও নিরপেক্ষ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও এর কূটনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শনিবার ( ২৩ সেপ্টেম্বর ) ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস তাদের ভেরিফাইড ফেসবুকে পেইজ এবং এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একটি পোস্ট দেয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ-সহ তালিকায় থাকা দেশগুলোকে রাশিয়ান মুদ্রাবাজার এবং ডেরিভেটিভস বাজারে বাণিজ্য করার অনুমতি দেবে মস্কো। অর্থাৎ ওই তালিকাভুক্ত দেশগুলোর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রুশ মুদ্রা রুবলে লেনদেন করতে পারবে।
রুবলে লেনদেনের সুযোগ কতোটা আছে: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশে রুবলের রিজার্ভ খুব সীমিত। রুবল, কনভার্টেবল বা বিনিময়যোগ্য মুদ্রা হিসেবে জনপ্রিয় না হওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে এখনো এই মুদ্রা তেমন ব্যাপক হারে ব্যবহার হয় না। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোও রুবল রাখে না।
ফলে সরাসরি রুবলে লেনদেন তেমন হয় না। তৃতীয় কোন মুদ্রায় কনভার্ট করে তারপর লেনদেন করতে হয়। এক্ষেত্রে চীনের ইউয়ান তৃতীয় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার হলেও সেটার পরিধিও বেশ সীমিত। এমন অবস্থায় রাশিয়ার বন্ধু তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থনৈতিক বা প্রায়োগিক তাৎপর্য বিশেষ নেই বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তার মতে, রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য খুবই সীমিত। কোভিডের পরে বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে তা আরও অনেক কমে গিয়েছে। রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের লেনদেনে এই মুহূর্তে যে সমস্যা রয়েছে সেটি সমাধানে, সর্বোপরি দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের তালিকাভুক্তি খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না বলেই দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যর অভিমত। তিনি বলেন, “নতুন বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে পেমেন্টের জন্য আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণের রুবল এবং তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকতে হবে।
কিন্তু বাণিজ্যের জন্য যতোটা রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন সেটা নেই।” হাতে থাকা ইউয়ান দিয়ে কতোটা পাওনা পরিশোধ করা যাবে এবং যতো ইউয়ান আসবে সেটা আন্তর্জাতিক বাজারে কতোটা ব্যবহার করা যাবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই ঢাকা-মস্কোর মধ্যে তৃতীয় মুদ্রায় লেনদেন কোন চটজলদি সমাধান নয় বলে ভট্টাচার্য মনে করেন। সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট সের্গেই ল্যাভরভের সফরের সময় দুই দেশের নিজেদের মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে নানা আলোচনা হয়েছে।
রাশিয়ার যেসব ব্যাংক ও জাহাজ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই, সেগুলোর মাধ্যমে লেনদেন করা যায় কিনা সেই সমস্ত বিকল্প খোঁজা হয়েছে। ল্যাভরভের সফরের প্রাক্কালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দেশের একক মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, তাদের কারেন্সিতে (রুবল) লেনদেন নিয়ে ভাসা ভাসা আলোচনা হতে পারে। কেননা বাংলাদেশের হাতে তো রুবল নেই।
তবে এই বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার বিষয়টি যতোটা না অর্থনৈতিক তার চাইতে বেশি রাজনৈতিক বলে সাথে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সামিয়া জামান। তার মতে, এই সুযোগে বাংলাদেশের অনেক লাভ হবে কিনা বা বাণিজ্যের পরিধি বাড়বে কিনা সেটা জরুরি না।
বরং পশ্চিমাদের চাপের মুখে থাকা বাংলাদেশকে রাশিয়া যে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের সুযোগ খুলে দিয়েছে, সেই বার্তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্যের সুযোগ সীমিত বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানির লেনদেন মূলত মার্কিন ডলারে হয়ে থাকে। এছাড়া ইউরো, পাউন্ড, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও কানাডিয়ান ডলারে কিছু লেনদেন হয়। এর বাইরে ভারতের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা-রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
সেক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ বেশ কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই দেশের লেনদেন ডলার কিংবা ইউরোতে হয়েছে। সেই ঋণপত্রও খোলা হয়েছে মার্কিন ডলার এবং ইউরোতে। এর বাইরে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দুই দেশের মধ্যে আর্থিক লেনদেনও রুবলে হয় না। এই প্রকল্পের ঋণ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও রাশিয়া সম্মত হয়েছে বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো বলছে।
বর্তমানে রাশিয়ার বাজারে সরাসরি বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সুযোগ তেমন নেই বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মূল কারণ রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন হয় না। এছাড়া বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক জটিলতার কারণে রাশিয়ার বাজারে বাণিজ্য আশা অনুযায়ী বাড়ছে না।
রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি করতে হয় তৃতীয় দেশের মাধ্যমে এবং মান্ধাতার আমলের টেলিগ্রাফিক লেনদেন (টিটি) পদ্ধতিতে। এমন অবস্থায় রাশিয়ার বন্ধু তালিকায় অন্তর্ভুক্তি রাতারাতি কোন পরিবর্তন আনবে এমন প্রত্যাশা করছেন না বিশ্লেষকরা। বিবিসি
সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৪ সেপ্টম্বর ২০২৩