ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

রাক্ষু‌সে আ‌ফ্রিকান মাগু‌র মাছের উৎপাদন ও বিক্রি চলছে রমরমা ভাবে

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:৫৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ৫৩ বার পঠিত

আফ্রিকান মাগুর মাছ উৎপাদন ও বিক্রির উপর নিষেধাগ্গা থাকলেও সৈয়দপুরে অনেকেই তা মানছেন না। সংঘবদ্ধ একটি দল কোন এক মহলকে ম্যানেজ করে দেদার চালিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসে আফ্রিকান মাগুর মাছের ব্যবসা। শুধু তাই না, এ মাগুর মাছ সৈয়দপুর ঢেলাপীর হাট থেকে বিক্রি করা হচ্ছে নীলফামারী জেলার হাটবাজার সহ বিভিন্ন অঞ্চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে অন্য মাছের তুলনায় দামে কিছুটা কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এ মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা জানেন না মানবদেহের জন্য কতটা ক্ষতিকারক এ মাছ, তাই বাজার থেকে সহজে কিনছেন অনেকেই। এতে ভোক্তারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, তারা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগ্য ব্যাধিতে।

জানা গেছে , আফ্রিকান রাক্ষুসে মাগুর মাছ আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হলেও বাজারে এ মাছ বিক্রি হচ্ছে অবাধে। নিষিদ্ধ এ মাছের বিক্রি বন্ধে কোনো তৎপরতাও লক্ষ করা যাচ্ছেনা। এর ফলে প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুর মাছ বিক্রি হচ্ছে সৈয়দপুরের বিভিন্ন বাজারে।

মাছ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলছেন, এ মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ বা মানবদেহের জন্য যে ক্ষতিকর, তা আমাদের জানা নেই।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো জলাশয়ে এ মাছ থাকলে স্বাদু পানির মাছের অস্তিত্ব এক সময় বিলীন হয়ে যাবে । এতে করে কেবল সৈয়দপুর না, হুমকির মধ্যে পড়ছে সারাদেশ। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ না নিয়ে দেশের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তাই এই মাছ উৎপাদন না করার কথা বলেন তারা।

সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপির হাট সুত্র জানায়, আফ্রিকান মাগুর মাছের পোনা উৎপাদন করা হয় সৈয়দপুর মাসুয়াপাড়া গ্ৰামে। সেখানে বাড়িতে হাউজ বানিয়ে বিভিন্ন পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রাক্ষুসে মাগুর মাছ ও। যা ব্যাগের মধ্যে পানি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। প্রতি কেজি মাগুর মাছ বিক্রি করা হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। আর এক হাজার পোনা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২ শ থেকে ১৪ শ টাকা দরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা রাখাল ও তার ছেলে প্রকাশ বলেন মৎস অফিসের অনেকেই আমাদের কাছে আসেন কিন্তু কেউই নিষেধ করেন নাই। তাদের ব্যাবসার বিরুদ্ধে লেখালেখি হলেও কোন এসে যায় না বলে মন্তব্য করেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার কয়েকটি পুকুরে মিষ্টি মাছের চাষ করলেও আড়ালে চলছে রাক্ষুসে মাগুর মাছের চাষ।
এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। মাছগুলো অল্পদিনেই বড় হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু এই মাছ ক্ষতিকারক হওয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এ ব্যবসা করছেন তারা অবৈধভাবেই করছেন। হাইব্রিড ও আফ্রিকান মাগুরের বিষয়ে তারা বলেন, যে মাগুরগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলোই আফ্রিকান মাগুর। হাইব্রিড মাগুরের কথা বলে ব্যবসা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

সৈয়দপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোছাঃ মোস্তারিনা আফরোজ বলেন, এই মাগুরগুলো ভীষণ নোংরা নর্দমা, জলাধারে যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের সাথে স্বচ্ছন্দ্যে জীবনধারণ করতে পারে। এরা দল বেধে চলাফেরা করে এবং শিকারের ওপর আক্রমণ করে একসাথে।এরা যেখানে থাকে সেখানকার ছোট বড় মাছ, মাছের ডিম, পোনা সেইসাথে অন্যান্য জলজ প্রাণী মুহূর্তের মধ্যে খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। কোনোভাবে যদি পুকুর বা অবরুদ্ধ জলাশয় থেকে এই মাছ নদী বা মুক্ত জলাশয়ে চলে যায় তাহলে মৎস্য সম্পদের জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। একারনে কঠোর তদারকি করছেন তারা। তারা যেখানেই এই মাছ চাষ হতে দেখেছেন সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সৈয়দপুর ঢেলাপির হাটে যে এই মাছ উৎপাদন, বিক্রি ও চাষ হচ্ছে সে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান। একইসাথে খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৯ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

রাক্ষু‌সে আ‌ফ্রিকান মাগু‌র মাছের উৎপাদন ও বিক্রি চলছে রমরমা ভাবে

আপডেট সময় : ০২:৫৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩

আফ্রিকান মাগুর মাছ উৎপাদন ও বিক্রির উপর নিষেধাগ্গা থাকলেও সৈয়দপুরে অনেকেই তা মানছেন না। সংঘবদ্ধ একটি দল কোন এক মহলকে ম্যানেজ করে দেদার চালিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসে আফ্রিকান মাগুর মাছের ব্যবসা। শুধু তাই না, এ মাগুর মাছ সৈয়দপুর ঢেলাপীর হাট থেকে বিক্রি করা হচ্ছে নীলফামারী জেলার হাটবাজার সহ বিভিন্ন অঞ্চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে অন্য মাছের তুলনায় দামে কিছুটা কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এ মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা জানেন না মানবদেহের জন্য কতটা ক্ষতিকারক এ মাছ, তাই বাজার থেকে সহজে কিনছেন অনেকেই। এতে ভোক্তারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, তারা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগ্য ব্যাধিতে।

জানা গেছে , আফ্রিকান রাক্ষুসে মাগুর মাছ আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হলেও বাজারে এ মাছ বিক্রি হচ্ছে অবাধে। নিষিদ্ধ এ মাছের বিক্রি বন্ধে কোনো তৎপরতাও লক্ষ করা যাচ্ছেনা। এর ফলে প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুর মাছ বিক্রি হচ্ছে সৈয়দপুরের বিভিন্ন বাজারে।

মাছ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলছেন, এ মাছ বিক্রি নিষিদ্ধ বা মানবদেহের জন্য যে ক্ষতিকর, তা আমাদের জানা নেই।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো জলাশয়ে এ মাছ থাকলে স্বাদু পানির মাছের অস্তিত্ব এক সময় বিলীন হয়ে যাবে । এতে করে কেবল সৈয়দপুর না, হুমকির মধ্যে পড়ছে সারাদেশ। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ না নিয়ে দেশের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তাই এই মাছ উৎপাদন না করার কথা বলেন তারা।

সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপির হাট সুত্র জানায়, আফ্রিকান মাগুর মাছের পোনা উৎপাদন করা হয় সৈয়দপুর মাসুয়াপাড়া গ্ৰামে। সেখানে বাড়িতে হাউজ বানিয়ে বিভিন্ন পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রাক্ষুসে মাগুর মাছ ও। যা ব্যাগের মধ্যে পানি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। প্রতি কেজি মাগুর মাছ বিক্রি করা হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। আর এক হাজার পোনা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২ শ থেকে ১৪ শ টাকা দরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা রাখাল ও তার ছেলে প্রকাশ বলেন মৎস অফিসের অনেকেই আমাদের কাছে আসেন কিন্তু কেউই নিষেধ করেন নাই। তাদের ব্যাবসার বিরুদ্ধে লেখালেখি হলেও কোন এসে যায় না বলে মন্তব্য করেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার কয়েকটি পুকুরে মিষ্টি মাছের চাষ করলেও আড়ালে চলছে রাক্ষুসে মাগুর মাছের চাষ।
এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। মাছগুলো অল্পদিনেই বড় হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু এই মাছ ক্ষতিকারক হওয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এ ব্যবসা করছেন তারা অবৈধভাবেই করছেন। হাইব্রিড ও আফ্রিকান মাগুরের বিষয়ে তারা বলেন, যে মাগুরগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলোই আফ্রিকান মাগুর। হাইব্রিড মাগুরের কথা বলে ব্যবসা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

সৈয়দপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোছাঃ মোস্তারিনা আফরোজ বলেন, এই মাগুরগুলো ভীষণ নোংরা নর্দমা, জলাধারে যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের সাথে স্বচ্ছন্দ্যে জীবনধারণ করতে পারে। এরা দল বেধে চলাফেরা করে এবং শিকারের ওপর আক্রমণ করে একসাথে।এরা যেখানে থাকে সেখানকার ছোট বড় মাছ, মাছের ডিম, পোনা সেইসাথে অন্যান্য জলজ প্রাণী মুহূর্তের মধ্যে খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। কোনোভাবে যদি পুকুর বা অবরুদ্ধ জলাশয় থেকে এই মাছ নদী বা মুক্ত জলাশয়ে চলে যায় তাহলে মৎস্য সম্পদের জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। একারনে কঠোর তদারকি করছেন তারা। তারা যেখানেই এই মাছ চাষ হতে দেখেছেন সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সৈয়দপুর ঢেলাপির হাটে যে এই মাছ উৎপাদন, বিক্রি ও চাষ হচ্ছে সে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান। একইসাথে খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৯ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box