অসহযোগ আন্দোলন :
রণক্ষেত্র বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে নিহত ৭৯
- আপডেট সময় : ০৯:৫৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪ ১৭ বার পঠিত
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সকাল থেকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্ট কালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সকাল থেকেই ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এখন পর্যন্ত ১৫ জেলায় অন্তত ৮১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফেনীতে ৫ জন, নরসিংদীতে ৫ জন, রংপুরে ৪ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৩ জন, পাবনায় ৩ জন, বগুড়ায় ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ ১জন সাংবাদিকসহ ১৭ জন , কিশোরগঞ্জে ৩ জন, সিলেটে ২ জন, লক্ষ্মীপুরে ২ জন, বরিশালে ১ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, কুমিল্লায় ১ জন ও ঢাকায় ২ জন নিহত হয়েছেন।
ফেনীতে ৫ জন নিহত
ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা অসহযোগের সমর্থনে মহিপাল এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। তবে দুপুর দুইটার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে হতাহতদের ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বলেন, এ মুহূর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঁচজনের লাশ রয়েছে। তারা সবাই মহিপালে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা গেছেন।
নরসিংদীতে ৫ জন নিহত
নরসিংদীতে ছয়জন আওয়ামী লীগের নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাধবধী পৌর ভবনের পাশে বড় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মাধবধী পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রংপুরে ৪ জন নিহত
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা আব্দুল জলিল দুজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও দুজন নিহতের তথ্য জানান। নগরীর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা ও তার গাড়িচালক সংঘর্ষের সময় নিহত হন। তাদের মরদেহ সিটি করপোরেশন গেটের সামনে পড়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জে ৩ জন নিহত
মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গুলিবিদ্ধ একজন ঢাকায় আনার পথে সিরাজখানে মারা যান। নিহতদের বয়স ২২-২৫ বছর। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল।
মাগুরায় ৩ জন নিহত
মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন রাব্বী। এছাড়া চবি শিক্ষার্থী ফরহাদ ও কলেজ শিক্ষার্থী সুমন নামের আরেকজন ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পাবনায় ৩ জন নিহত
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে গুলিবিদ্ধ তিন শিক্ষার্থী পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ অর্ধশতাধিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান। সংঘর্ষে আরো বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আছেন। তাদের মধ্যে কয়েজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বগুড়ায় ৩ জন নিহত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে বগুড়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে তারা। দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)। অন্যদিকে আহত চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে ১৭ জন নিহত
সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রঞ্জু খান (৩৯), যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ (২৫) ও ছাত্রদল কর্মী সুমন শেখ (২৫)। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাদের দলের তিন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।পুলিশ সদর দপ্তর এবং সিরাজগঞ্জের এসপি আরিফুর রহমান মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বর্তমানে সেখানে সেনাবাহিনী কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। একটি সুত্র জানায়, নিহতদের মধ্যে এসআই, ওসিও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকের এখন পর্যন্ত কোনো হদিস মেলেনি।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, সন্ত্রাসী হামলায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হামলায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় সাংবাদিকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম তৌহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজনকে মৃত অবস্থায় এবং একজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসলে এখানে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, নিহতদের মধ্যে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন এবং ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার লিটন রয়েছেন। এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলম ও প্রদীপ কুমার নামে আরও দুজন আছেন। এদের মধ্যে প্রদীপ কুমার দৈনিক খবর পত্র পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক বলে জানা গেছে।
কিশোরগঞ্জে ৩ জন নিহত ।
কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৬ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন এবং শতাধিক আহতের খরব পাওয়া গেছে। জীবন নামে একজন সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জানিয়েছেন, তিনি সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন আহত রোগী নিয়ে যাওয়ার পর একজনকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করতে দেখেছেন। এ ছাড়া তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে শহরের স্টেশন রোড এলাকায় দুজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। কিশোরগঞ্জের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দিদার মোহাম্মদ তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাট্যাস দিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে ৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।
সিলেটে ২ জন নিহত
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এতে পুলিশ ও বিজিবিসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন দুইজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি হলেন-উপজেলার ধারাবোহর গ্রামের ব্যবসায়ী তাজউদ্দিন (৪৩)। অপরজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
লক্ষ্মীপুরে ২ জন নিহত
লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন আফনান, মো. কাউসার। সদর হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
বরিশালে ১ জন নিহত
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বরিশালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও মেডিকেল সূত্র তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টুটুল চৌধুরীর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ঘণ্টাখানেক পর তিনি মারা যান। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
জয়পুরহাটে ১ জন নিহত
বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জয়পুরহাট শহর। এ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন মেহেদী হাসান নামে এক আন্দোলনকারী। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
কুমিল্লায় ১ জন নিহত
কুমিল্লার দেবীদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে উপজেলার নিউমার্কেট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ঢাকায় ২ জন নিহত
রাজধানী ঢাকার জিগাতলায় আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী নামের একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এদিকে ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া গেছে। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক আহমেদুল হক তিতাস বলেন, দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কয়েকজন ওই যুবককে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসে। যুবকের পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তারা ওই যুবকের মরদেহ ফেলে চলে গেছে।