ঢাকা ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রওশনপন্থিদের সম্মেলন: চেয়ারপারসন রওশন, মহাসচিব মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:৫১:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪ ২৯ বার পঠিত

শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির সম্মেলন

আগামী তিন বছরের জন্য রওশন এরশাদকে চেয়ারপারসন নির্বাচিত করলো জাতীয় পার্টি (রওশন)। শনিবার ১০ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ নির্বাচন করা হয়। দলের মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ।

শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান হয়েছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।

অন্য পাঁচ জন কো-চেয়ারমান হলেন- শাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন এবং সুনীল শুভ রায়।

সুনীল শুভ রায় একইসঙ্গে রওশনপন্থিদের মুখপাত্রে দায়িত্বে থাকবেন। এর আগে রওশন এরশাদ সম্মেলনে বলেন, আজকের সম্মেলন না হলে জাতীয় পাটি হারিয়ে যেতো। এই সম্মেলনের মাধ্যমে জনগণের কাছে আবারও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে জাতীয় পার্ট। পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পাটিতে কোনো বিভেদ নাই। যারা গেছে তারা জাতীয় পাটিকে নিয়ে যেতে পারে নাই। তারা এরশাদের ছবিটাও নিয়ে যেতে পারে নাই। এরশাদের আদর্শে জাতীয় পার্টি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।

এর আগে সাদ এরশাদ বলেন, আপনাদের দেখে মনে হলো পল্লীবন্ধু এরশাদকে মুছে ফেলার শক্তি কারো নেই। আমরা সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, আজ আমার অনেক বেশি ভালো লাগছে। আমার আব্বুর রেখে যাওয়া তার প্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শিশু বয়সেই মায়ের হাত ধরে আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল। আজ আবার রাজনীতির জন্য মায়ের হাত ধরে আপনাদের সামনে এসেছি।

এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রথমবারের ভাঙনের মুখে পড়লো। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটি এ নিয়ে অন্তত ছয় বার বিভক্ত হলো। রওশন এরশাদ জিএম কাদের অংশের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্বে ছিলেন।
জাতীয় সংগীত ও জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জিয়াউল হক মৃধা। এতে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন কাজী মামুনুর রশীদ।

সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, শাদ এরশাদ, নুরুল ইসলাম নুরু, রফিকুল হক হাফিজ, এমএ গোফরান, ইয়াহিয়া চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, নুরুল ইসলাম নুরু, নিগার সুলতানা রানী, এমএ কুদ্দুস খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমানত হোসেন, ফখরুল আহসান শাহাজাদাসহ অনেকে অংশে নেন।

তবে জিএম কাদেরপন্থিদের মধ্যে সাহিদুর রহমান টেপা ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি সম্মেলনে। অন্য নেতারা এরইমধ্যে জিএমকাদের বিরোধী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

রওশন এরশাদের উপ‌স্থি‌তি‌তে কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন কা‌জী ফি‌রোজ রশীদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জাপার একাংশের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মতিন, বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, চিনের সহকারী রাষ্ট্রদূত ফেং জিজিয়া।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আজকের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় দল চলে না। জিএম কাদের চেয়ারম্যান হওয়ার সময় চুন্নুরা বিরোধিতা করেছিলো। এখন মানুষের হ্যাঁ, না বলার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। আজকে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, সকল গ্লানি মুছে এখন থেকে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে। এখন থেকে কারও একক নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি চলবে না।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ বাসভবনে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন এবং তার ছেলে সাদসহ কয়েকজন নেতা। ভোটের পর রওশন নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। তবে তাতে পাত্তা দেননি জি এম কাদের।

গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি থেকে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেন দলের রওশন এরশাদ। রওশনের বক্তব্য জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এদিকে আগামী ১২ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জিএম কাদেরপন্থি জাপার দশম জাতীয় সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় পার্টি। ভোটে জেতে ১১টি আসনে। নির্বাচনে এই ভরাডুবির জন্য দলের অনেক নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান এবং জি এম কাদেরকে দায়ী করে বিক্ষোভও করেছেন। পরে কাজী ফিরোজ রশীদসহ বেশি কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করেন জি এম কাদের।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

রওশনপন্থিদের সম্মেলন: চেয়ারপারসন রওশন, মহাসচিব মামুন

আপডেট সময় : ০৪:৫১:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

আগামী তিন বছরের জন্য রওশন এরশাদকে চেয়ারপারসন নির্বাচিত করলো জাতীয় পার্টি (রওশন)। শনিবার ১০ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ নির্বাচন করা হয়। দলের মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ।

শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান হয়েছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।

অন্য পাঁচ জন কো-চেয়ারমান হলেন- শাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন এবং সুনীল শুভ রায়।

সুনীল শুভ রায় একইসঙ্গে রওশনপন্থিদের মুখপাত্রে দায়িত্বে থাকবেন। এর আগে রওশন এরশাদ সম্মেলনে বলেন, আজকের সম্মেলন না হলে জাতীয় পাটি হারিয়ে যেতো। এই সম্মেলনের মাধ্যমে জনগণের কাছে আবারও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে জাতীয় পার্ট। পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পাটিতে কোনো বিভেদ নাই। যারা গেছে তারা জাতীয় পাটিকে নিয়ে যেতে পারে নাই। তারা এরশাদের ছবিটাও নিয়ে যেতে পারে নাই। এরশাদের আদর্শে জাতীয় পার্টি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।

এর আগে সাদ এরশাদ বলেন, আপনাদের দেখে মনে হলো পল্লীবন্ধু এরশাদকে মুছে ফেলার শক্তি কারো নেই। আমরা সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, আজ আমার অনেক বেশি ভালো লাগছে। আমার আব্বুর রেখে যাওয়া তার প্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শিশু বয়সেই মায়ের হাত ধরে আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল। আজ আবার রাজনীতির জন্য মায়ের হাত ধরে আপনাদের সামনে এসেছি।

এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রথমবারের ভাঙনের মুখে পড়লো। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটি এ নিয়ে অন্তত ছয় বার বিভক্ত হলো। রওশন এরশাদ জিএম কাদের অংশের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্বে ছিলেন।
জাতীয় সংগীত ও জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জিয়াউল হক মৃধা। এতে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন কাজী মামুনুর রশীদ।

সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, শাদ এরশাদ, নুরুল ইসলাম নুরু, রফিকুল হক হাফিজ, এমএ গোফরান, ইয়াহিয়া চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, নুরুল ইসলাম নুরু, নিগার সুলতানা রানী, এমএ কুদ্দুস খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমানত হোসেন, ফখরুল আহসান শাহাজাদাসহ অনেকে অংশে নেন।

তবে জিএম কাদেরপন্থিদের মধ্যে সাহিদুর রহমান টেপা ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি সম্মেলনে। অন্য নেতারা এরইমধ্যে জিএমকাদের বিরোধী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

রওশন এরশাদের উপ‌স্থি‌তি‌তে কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন কা‌জী ফি‌রোজ রশীদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জাপার একাংশের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মতিন, বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, চিনের সহকারী রাষ্ট্রদূত ফেং জিজিয়া।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আজকের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় দল চলে না। জিএম কাদের চেয়ারম্যান হওয়ার সময় চুন্নুরা বিরোধিতা করেছিলো। এখন মানুষের হ্যাঁ, না বলার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। আজকে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, সকল গ্লানি মুছে এখন থেকে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে। এখন থেকে কারও একক নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি চলবে না।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ বাসভবনে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন এবং তার ছেলে সাদসহ কয়েকজন নেতা। ভোটের পর রওশন নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। তবে তাতে পাত্তা দেননি জি এম কাদের।

গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি থেকে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেন দলের রওশন এরশাদ। রওশনের বক্তব্য জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এদিকে আগামী ১২ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জিএম কাদেরপন্থি জাপার দশম জাতীয় সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় পার্টি। ভোটে জেতে ১১টি আসনে। নির্বাচনে এই ভরাডুবির জন্য দলের অনেক নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান এবং জি এম কাদেরকে দায়ী করে বিক্ষোভও করেছেন। পরে কাজী ফিরোজ রশীদসহ বেশি কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করেন জি এম কাদের।

Facebook Comments Box