যৌথ অভিযান: বান্দরবানে ১৮ নারীসহ কেএনএফ’র ৫৩ সদস্য আটক
- আপডেট সময় : ০২:১৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০২৪ ২৩ বার পঠিত
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক দুটি অভিযানে কেএনএফ’র ৫৩ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। রুমা উপজেলার সেনাবাহিনীর জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে. এম আরাফাত আমীন জানান, সোমবার (৮ এপ্রিল) রাত ৮টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরাফাত জানান, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন নারী। এছাড়া রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ার-কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই যৌথ অভিযানে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও কেএনএফ ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে রুমা উপজেলার ব্যাথেল পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি পাড়ায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরাফাত আরো জানান, রবিবার (৭ এপ্রিল) রাতে পুলিশ থানচি ও জেলা সদরের রেইচা ক্যাম্প থেকে তিন কেএনএফ সদস্যকে আটক করেছে। এছাড়া, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির চালককেও আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ারের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম লালচিয়াম বম।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী জানান, রুমা থেকে ৪৯ জন, বান্দরবন থেকে তিনজন ও থানচি থেকে একজন কেএনএফ সদস্যকে আটক করে বান্দরবান জেলা সদরে নিয়ে আসা হয়েছে।
পুলিশের অভিযানে আটক ব্যক্তিরা হলেন; ভানন্নূন ময় বম, জেমেনিউ বম ও আমে লানচেও বম। এদের বাড়ি রুমা উপজেলার সিমত্লাংপি পাড়ায়। গ্রেপ্তার গাড়ির চালকের নাম মো. কফিল উদ্দিন সাগর। তার বাড়ি থানচিতে।
এর আগে আইএসপিআর-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বান্দরবানের রুমা থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আরো দুই সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার (৮ এপ্রিল) রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বলা হয়, এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি বন্দুক, ২০ রাউন্ড গুলি, ল্যাপটপ ও ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়।
যৌথ অভিযান
রবিবার (৭ এপ্রিল) রাত থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর কম্বিং অপারেশন শুরু হয়েছে বান্দরবানে। জেলার রুমা রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় এই অভিযান চলছে। অভিযানে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ৪টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি)।
এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। উপজেলাগুলোতে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে সব ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
একই সঙ্গে রুমা উপজেলায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাজারগুলো। সেখানকার লোকজন এখন উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
রোগী এবং আহতদের সেবায় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সেনাপ্রধানের ঘোষণা
বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি ও অপহরণসহ একাধিক অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায়, রবিবার (৭ এপ্রিল) বড় পরিসরে যৌথ অভিযানের ঘোষণা দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বান্দরবান সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল আহমেদ এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এই অপারেশনে সফল হতে প্রকাশ্য ও গোপন উভয় কৌশল প্রয়োগ করছি।”
“শান্তির সম্ভাবনা সত্ত্বেও কেএনএফ অপরাধমূলক আচরণের দিকে ফিরে গেছে;” বলেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, গত জুনে কোণঠাসা হওয়ার পর তারা আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক বলে মনে হয়েছিলো।
“অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখায়, এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শান্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার দৃঢ় ছিলো না; যোগ করেন জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ। এর আগে, সেনাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও জনকল্যাণে এই মিশনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতে বেশ কয়েকজন সশস্ত্র সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর অভিযানের অগ্রগতি হয়। জেনারেল আহমেদের মতে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে এমন দলগুলোর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত হলো এই মিশন।
তিনি বিশেষভাবে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কথা উল্লেখ করেন। জানান, এই দল আগে শান্তি আলোচনায় জড়িত ছিলো।
এর আগে, রবিবার (৭ এপ্রিল) বান্দরবান সদর উপজেলার সুলক এলাকার বাসা থেকে কেএনএফ-এর প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে সংগঠনটি গঠন করেছিলেন রোয়াল লিন বম ও চেওসিম বম।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)
বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার অন্তত ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা।
এ সময় তারা ফেসবুকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে।
এদিকে, কেএনএফ পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো।
সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০২৩ সালে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েক সদস্যকে গ্রেফতার করে।