মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের
- আপডেট সময় : ১২:১২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২৪ বার পঠিত
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রিসিশন এনার্জি লিমিটেডের ৫৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হবে।
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) আওতায়, বিপিডিবি প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ কিনবে দশমিক শূন্য ৫৭ ডলার (৬টাকার সমতুল্য) হারে; আর বেস লোড প্লান্ট থেকে এর প্রায় অর্ধেক দামে বিদ্যুৎকিনবে। উল্লেখ্য, সরকার সামিট-জিই’র বিবিয়ানা ৪৫০ মেগাওয়াট গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২২ বছরের জন্য, প্রতি কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ কিনছে ৩ দশমিক ৩২ টাকা দরে।
সরকার ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি পিপিএ অনুমোদন করে। এর অধীনে; এড্রা পাওয়ার হোল্ডিংস এসডিএন বিএইচডি, মালয়েশিয়া এবং ইউনিভিশন পাওয়ার লিমিটেড, বাংলাদেশ ৬৬০ মেগাওয়াট বেস-লোড কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট স্থাপন করবে এবং বিপিডিবি ২২ বছরের চুক্তিকালে স্থানীয় গ্যাস চালিত প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ কিনবে ২ দশমিক ৯৪ টাকায়।
ভাড়া এবং কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপের বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অবাক হয়েছেন। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এবং বিদ্যুৎ শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা মনে করেন ব্যয়বহুল রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো উপভোগ করা অব্যাহত রাখার এই পদক্ষেপ সরকারের ওপর ভর্তুকির বোঝা বাড়াবে। আর, এমন একটি সময়ে এই সিদ্ধান্ত এলো, যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্বৃত্ত ক্ষমতা প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
গত বছর সরকার ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ -এর নতুন বিধান দিয়ে কমপক্ষে ১০টি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে। আর এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের পরিশোধের জন্য ৬ হাজার ৫৬৪ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখে।
আশুগঞ্জ গ্যাসভিত্তিক প্রিসিশন এনার্জির ৫৫ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের সর্বশেষ সম্প্রসারণ প্রস্তাব অনুমোদনের সময়, এবারও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ২০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা আগামী ৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ মিলিয়ে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো ২৭ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট এবং একদিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ১৪ হাজার ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে এবং অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ১১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে এবং ৮ নভেম্বর দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ১০ হাজার ৯৫৪ মেগাওয়াট রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে, অন-গ্রিড ইনস্টলড ক্ষমতা দেখানো হয়, ২৫ হাজার ৩৩৯ মেগাওয়াট; যার অর্থ উদ্বৃত্ত ক্ষমতা ছিলো চাহিদার দ্বিগুণেরও বেশি; ১৪ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “গত বছর ১০ টি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সময় বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায়, জরুরি প্রয়োজনে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিলো।” তিনি আরো বলেন, “গ্যাসের ঘাটতি থাকায়, চাহিদা মেটাতে আমাদের পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে তরল জ্বালানি ভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে হবে।”
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আরো বলেন, “এই প্ল্যান্টগুলো সরকারকে ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ করতে বাধ্য করে না; অর্থাৎ, এখন অব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য অর্থ প্রদান করতে হয় না; এটি পূর্ববর্তী কিছু চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিলো। নসরুল হামিদ বলেন, “ফলে এসব বর্ধিত রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের দাম মূল খরচের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে।”
সরকারি নথিতে দেখা যায়, গত বছরের মার্চে অনুমোদিত ৫টি প্লান্টের মধ্যে তিনটি সামিট গ্রুপের, একটি ডাচ-বাংলা গ্রুপের এবং একটি ওরিয়ন গ্রুপের।
ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ এবং রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, “বেসরকারি খাতের ক্যাপাসিটি পেমেন্টের চাপ বাড়তে থাকবে এবং প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি বাড়বে। পরিশেষে, এটি দেশকে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার দিকে পরিচালিত করবে।”
তিনি বলেন, “এ অবস্থায় একমাত্র উপায় হচ্ছে, সরকারকে প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে, চাহিদা বিবেচনা না করেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতকে অনুমতি দিয়ে তারা ভুল করেছে এবং তারপর বর্তমান নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।”