মুদ্রার অবমূল্যায়নে শ্রীলংকা পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশ
- আপডেট সময় : ১০:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩ ৪৬ বার পঠিত
বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি মান কমেছে শ্রীলংকার মুদ্রা শ্রীলংকান রুপির। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানি মুদ্রা পাকিস্তানি রূপি। এরপরেই রয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার অবস্থান।
মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে তুলনামূলকভাবে কম কমেছে। ওইসব দেশের মধ্যে জাপানের মুদ্রার মান একটু বেশিএ কমেছে। সৌদি আরব, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমেনি। বরং সামান্য বেড়েছে। তবে ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরোসহ ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান বেশ কমেছে।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের ডাটা বেইজে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মানের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে পণ্যের সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বাড়ে পণ্য পরিবহণভাড়াসহ জাহাজ ভাড়া। এতে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। এর প্রভাবে বেড়ে যায় স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম। ফলে একদিকে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। অন্যদিকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। কিছু দেশ মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও ডলারের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বাংলাদেশসহ স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতিসহ ডলারের দামে উর্ধ্বগতি ও ডলারের তীব্র সংকট অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদশের মুদ্রা টাকার মান গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত স্থিতিশীল ছিল। জুলাইয়ের পর এর দাম বাড়তে থাকে। এর আগে ২০২০ সালে ডলারের বিপরীতে টাকা বরং শক্তিশালী হয়েছিল। ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রতি ডলারের দাম ছিল গড়ে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আলোচ্য সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে রেমিটেন্সের দাম বাড়িয়ে ১১২ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে। ফলে টাকার মান আরও কমেছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমেছে।
অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হওয়ার কারণে শ্রীলংকার মুদ্রা রুপির দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। গত বছরের জুলাইয়ে ডলারের বিপরীতে শ্রীলংকান রূপির দাম ছিল ১৯৯ টাকা ৯০ পয়সা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাড়ায় ৩৬৩ টাকা ৩০ পয়সায়। আলোচ্য সময়ে এর মান কমেছে ৮১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময়ে পাকিস্তানও বেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।
এতে দেশটির মুদ্রা রূপির দামে বড় ধরনের পতন ঘটে। গত বছরের জুলাইয়ে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম ছিল ১৬২ টাকা ৫১ পয়সা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাড়ায় ২৯৪ টাকা ২৯ পয়সায়। আলোচ্য সময়ে দেশটির মুদ্রার মান কমেছে ৮১ দশমিক ০৯ শতাংশ। এরপরেই কমেছে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের দাম। তারা মুদ্রাকে প্রতিযোগিতামূলক রাখতে এর বিনিময় হার নমনীয় রেখেছে। আলোচ্য সময়ে জাপানি মুদ্রার মান কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ।
ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান কমেছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছরের জুলাইয়ে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৭৪ দশমিক ৩৯ রুপি। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ২২ রুপি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ ও ভূটানের মুদ্রার মান তেমন একটা কমেনি। থাইল্যান্ডের মুদ্রা বাথের মান কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। মালয়েশিয়ার মুদ্রার মান তেমন একটা কমেনি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বেশিরভাগেরই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান কমেনি বরং সৌদি আবর ও ওমানের মুদ্রার মান বেড়েছে।
এদিকে গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে এশীয় দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ ওই হারে বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমেছে। এর বিপরীতে বেড়েছে ডলারের দাম। গত বছরের ১ জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত এক বছরে ভিয়েতনামের মুদ্রার ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, ফিলিপাইনে দশমিক ৬২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ১ দশমিক ১৮ শতাংশ, ভারতে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, চীনে ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় শূণ্য দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। তবে পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মুদ্রার মান আরও বেশি কমেছে।
সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২২ অক্টোবর ২০২৩