মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা: পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগে প্রভাব
- আপডেট সময় : ০১:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৫২ বার পঠিত
সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দল ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সামনে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে বিচার বিভাগের সদস্যদেরও৷ কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা: বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাহিনীর কোন সদস্যরা আছেন তা তাদের জানা নেই৷
এর তেমন কোন প্রভাব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর পড়বে না বলে দাবি তাদের৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির উপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেশের জন্য লজ্জাজনক৷ কিন্তু নির্বাচন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য সরকার ও প্রশাসনেরও দায় আছে৷ মার্কিন ভিসা নীতির পরও যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা না হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরও চাপ প্রয়োগের সুযোগ পাবে।
নাম উল্লেখ না করলেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিরা যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সদস্য এটা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর নিশ্চিত করেছে।এর আগে ২০২১ সালে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের অভিযোগে ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-ব়্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়৷ অতিরিক্ত হিসেবে তৎকালীন পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ নতুন করে নিষেধাজ্ঞায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা চলছে ৷
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘‘তাদের দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) তারা কাকে যেতে দেবেন, আর কাকে দেবেন না, সেটা তাদের ব্যাপার৷ এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই, বলারও কিছু নেই৷” কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু ব্যক্তির নাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত কাকে নিষিদ্ধ করেছে, সেগুলো আমরা জানি না৷” পুলিশের কাজের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না,
তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (জনসংযোগ) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘‘মার্কিন ভিসা নীতি পুলিশের কাজের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না৷ পুলিশ মানবাধিকার রক্ষা করেই তাদের দায়িত্ব পালন করে৷ আইনের মধ্যে থেকেই পুলিশ দায়িত্ব পালন করে যাবে৷ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সময় পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যে দায়িত্ব দেবে পুলিশ তা যথাযথভাবে পালন করবে ৷
ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কথা উল্লেখ করা হলেও তারা কারা সেই তথ্য পুলিশের কাছে নেই বলে জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘কোন কোন সদস্যের বিরুদ্ধে এটা প্রয়োগ করা হয়েছে তার তালিকা কিন্তু আমরা পাইনি৷ এখন সেখানে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা থাকতে পারে৷ অন্য কোনো বাহিনীর সদস্য থাকতে পারে৷ অথবা এখন দায়িত্বরত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা অন্য কোনো বাহিনীর সদস্য থাকতে পারে৷” যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস ৷
পুলিশের সাবেক আইজি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নুর মোহাম্মদ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘পুলিশের ওপর রাজনৈতি চাপ থাকে৷ কিন্তু তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হয়৷ কিন্তু কেউ যদি এর বাইরে গিয়ে কাজ করেন তাহলে সেটা তো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ সে দায় তো তার৷” যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে নিষেধাজ্ঞা থাকা ব্যক্তিরা ও তাদের পরিবারের নিকটাত্মীয়রা দেশটিতে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন ৷
ফারুক হোসেন জানান, বাংলাদেশ পুলিশে দুই লাখেরও বেশি সদস্য৷ তার প্রশ্ন, ‘‘তাদের কতজন অ্যামেরিকায় যেতে চান? খুবই নগন্য সংখ্যায় অ্যামেরিকায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে বা তাদের ছেলে-মেয়েদের পাঠানোর চিন্তা করে৷ সেই বিবেচনায় আমরা মনে করি এই ভিসা নীতির কোনো প্রভাব বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ওপর পড়বে না ৷
পুলিশ বাহিনির কাজের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না৷” নিষেধাজ্ঞায় বিচার বিভাগও!:পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ নিয়ে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়েছে৷ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ তা প্রকাশ করতে চান না৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বিবৃতি সামনের দিনে বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যা অনেককেই অবাক করেছে ৷
তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক মনে করেন, পুলিশ যেমন রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা নেয় তেমনি আদালতও একই দোষে দুষ্ট৷ তিনি বলেন,” বিরোধী নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা৷ মৃত ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করা হয়৷ যাদের বাদি করা হয় তারা জানেনই না যে তারা মামলার বাদি৷ তাদের কেউ বিদেশেও আছেন৷ তাহলে পুলিশ যে রাজনৈতিক পারপাজ সার্ভ করে সেটা বুঝতে তো আর অসুবিধা থাকার কথা নয়৷
” তিনি আরো বলেন, ‘‘নতুন প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বাংলাদেশে এমন কোনো বিভাগ নাই যেখানে আস্থার সংকট নাই৷ খালেদা জিয়ার ইরেগুলারিটি-এর জন্য নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের কারাদন্ড হয়েছে৷ দণ্ডের পর এই ধরনের মামলায় উচ্চ আদালত জামিন দেয়৷ তাকে দেয়া হচ্ছে না৷ বিরোধী নেতা-কর্মীরা জামিন পান না ৷
এখানে আদালতকে তাহলে আপনি কী বলবেন?” প্রশ্ন এই আইজীবীর৷ মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার ভূমিকা আছে৷ ‘‘আমরা ছয় তো দেখছি তারা পুরো নির্বাচনটাকে তাদের মতো করে নিয়েছে৷ তাদের একাধিকবার বলতে শোনা গেছে এই সরকারকে আমরা ক্ষমতায় এনেছি। তাদের কথায় বোঝা যায় তারা নির্বাচনকে বাধাগ্ৰস্ত করতে পারে। এই বিষয়টা ঠিক করা প্রয়োজন ‘বলেন তিনি। ডয়চে ভেলে
সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৫ সেপ্টম্বর ২০২৩