ঢাকা ০৫:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নাসির উদ্দীনকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন Logo সোনারগাঁয়ে গাজাঁ ও ফেনসিডিলসহ আটক-৪ Logo স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। Logo সৌদিতে ফ্যাশন শো নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভের যত কারণ Logo প্রতারণার অভিযোগে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে মামলা Logo ট্রাইব্যুনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হলো Logo ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান Logo মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার Logo পাবনার আমিনপুরে ইজিবাইক-মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ Logo সেনাকুঞ্জে যাবেন খালেদা জিয়া

মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ হবে ৫০ বছর!

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ১২:০২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩ ৫২ বার পঠিত

ঢাকা : যেকোনো কেস ডকেট বা সিডি (মামলার নথিপত্র) ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এজন্য পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের (পিআরবি) প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করার কাজও চলছে। পিআরবি অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ বছর পর্যন্ত মামলার ডকেট সংরক্ষণে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার পুলিশ সদর দপ্তরে করা প্রস্তাবে উল্লেখ করেছেন, পিআরবিতে বলা আছে, কেস ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এখন ৩০-৩৫ বছর আগের মামলাও তদন্ত করতে হয়।

পুরোনো মামলার ডকেট সংরক্ষণের জন্য পিআরবি সংশোধন করা প্রয়োজন। ডকেট সংরক্ষণের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পিআরবি সংশোধন করা হোক এবং কেস ডকেট ন্যূনতম ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা উচিত।

পিবিআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ১০-৪০ বছরের পুরোনো মামলা তদন্ত করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজারবাগের বাসা থেকে আট বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহীদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের আগে কমপক্ষে ২৭ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন, মামলার বিচারকাজও শুরু হয়। কিন্তু মূল রহস্য কেউ উন্মোচন করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করে।

এভাবেই ঘটনার ১০ থেকে ৪০ বছর পরও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড বা ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে হয় পুলিশকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে মামলার ডকেট (নথিপত্র) ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, যেকোনো মামলার তদন্তে ডকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের নির্দেশ পুরোনো মামলার তদন্তে নেমে দেখা যায় সঠিকভাবে ডকেট সংরক্ষণ করা থাকে না। ফলে তদন্তকাজ বিঘ্নিত হয়। কারণ বর্তমানে পিআরবি অনুযায়ী যেকোনো মামলার ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা হয়। এরপর ডকেট না থাকলে কাউকে দায়ী করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, মামলার ডকেট সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়াতে হলে পিআরবির সংশ্লিষ্ট ধারা (১১০১) সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত বিশেষ একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি ধারাগুলো সংশোধনের জন্য কাজ করছে।

মামলার ডকেট কার কাছে সংরক্ষণে থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটার কর্তৃপক্ষ কে থাকবেÑ তা নির্ধারণ জরুরি। ডকেট প্রসিকিউশন শাখায় থাকবে, না থানার ওসির কাছে থাকবে, নাকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে থাকবে- এসব বিষয়ে বিশেষ কমিটি কাজ করছে। কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রস্তাব দেবে। এরপর সেটা বাস্তবায়ন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতে কেস ডকেট সংরক্ষণে থাকলে প্রয়োজনের সময় পুলিশ হয়তো সেটা দেখতে পারবে না। দেখতে পারলেও সেটার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তাই থানার ওসির তত্ত্বাবধানে বা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কেস ডকেট সংরক্ষণ করা জরুরি।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৩ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ হবে ৫০ বছর!

আপডেট সময় : ১২:০২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

ঢাকা : যেকোনো কেস ডকেট বা সিডি (মামলার নথিপত্র) ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এজন্য পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের (পিআরবি) প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করার কাজও চলছে। পিআরবি অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ বছর পর্যন্ত মামলার ডকেট সংরক্ষণে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার পুলিশ সদর দপ্তরে করা প্রস্তাবে উল্লেখ করেছেন, পিআরবিতে বলা আছে, কেস ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এখন ৩০-৩৫ বছর আগের মামলাও তদন্ত করতে হয়।

পুরোনো মামলার ডকেট সংরক্ষণের জন্য পিআরবি সংশোধন করা প্রয়োজন। ডকেট সংরক্ষণের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পিআরবি সংশোধন করা হোক এবং কেস ডকেট ন্যূনতম ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা উচিত।

পিবিআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ১০-৪০ বছরের পুরোনো মামলা তদন্ত করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজারবাগের বাসা থেকে আট বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহীদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের আগে কমপক্ষে ২৭ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন, মামলার বিচারকাজও শুরু হয়। কিন্তু মূল রহস্য কেউ উন্মোচন করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করে।

এভাবেই ঘটনার ১০ থেকে ৪০ বছর পরও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড বা ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে হয় পুলিশকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে মামলার ডকেট (নথিপত্র) ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, যেকোনো মামলার তদন্তে ডকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের নির্দেশ পুরোনো মামলার তদন্তে নেমে দেখা যায় সঠিকভাবে ডকেট সংরক্ষণ করা থাকে না। ফলে তদন্তকাজ বিঘ্নিত হয়। কারণ বর্তমানে পিআরবি অনুযায়ী যেকোনো মামলার ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা হয়। এরপর ডকেট না থাকলে কাউকে দায়ী করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, মামলার ডকেট সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়াতে হলে পিআরবির সংশ্লিষ্ট ধারা (১১০১) সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত বিশেষ একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি ধারাগুলো সংশোধনের জন্য কাজ করছে।

মামলার ডকেট কার কাছে সংরক্ষণে থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটার কর্তৃপক্ষ কে থাকবেÑ তা নির্ধারণ জরুরি। ডকেট প্রসিকিউশন শাখায় থাকবে, না থানার ওসির কাছে থাকবে, নাকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে থাকবে- এসব বিষয়ে বিশেষ কমিটি কাজ করছে। কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রস্তাব দেবে। এরপর সেটা বাস্তবায়ন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতে কেস ডকেট সংরক্ষণে থাকলে প্রয়োজনের সময় পুলিশ হয়তো সেটা দেখতে পারবে না। দেখতে পারলেও সেটার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তাই থানার ওসির তত্ত্বাবধানে বা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কেস ডকেট সংরক্ষণ করা জরুরি।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৩ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box