ঢাকা ০৪:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ হবে ৫০ বছর!

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ১২:০২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩ ৪৯ বার পঠিত

ঢাকা : যেকোনো কেস ডকেট বা সিডি (মামলার নথিপত্র) ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এজন্য পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের (পিআরবি) প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করার কাজও চলছে। পিআরবি অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ বছর পর্যন্ত মামলার ডকেট সংরক্ষণে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার পুলিশ সদর দপ্তরে করা প্রস্তাবে উল্লেখ করেছেন, পিআরবিতে বলা আছে, কেস ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এখন ৩০-৩৫ বছর আগের মামলাও তদন্ত করতে হয়।

পুরোনো মামলার ডকেট সংরক্ষণের জন্য পিআরবি সংশোধন করা প্রয়োজন। ডকেট সংরক্ষণের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পিআরবি সংশোধন করা হোক এবং কেস ডকেট ন্যূনতম ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা উচিত।

পিবিআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ১০-৪০ বছরের পুরোনো মামলা তদন্ত করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজারবাগের বাসা থেকে আট বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহীদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের আগে কমপক্ষে ২৭ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন, মামলার বিচারকাজও শুরু হয়। কিন্তু মূল রহস্য কেউ উন্মোচন করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করে।

এভাবেই ঘটনার ১০ থেকে ৪০ বছর পরও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড বা ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে হয় পুলিশকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে মামলার ডকেট (নথিপত্র) ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, যেকোনো মামলার তদন্তে ডকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের নির্দেশ পুরোনো মামলার তদন্তে নেমে দেখা যায় সঠিকভাবে ডকেট সংরক্ষণ করা থাকে না। ফলে তদন্তকাজ বিঘ্নিত হয়। কারণ বর্তমানে পিআরবি অনুযায়ী যেকোনো মামলার ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা হয়। এরপর ডকেট না থাকলে কাউকে দায়ী করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, মামলার ডকেট সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়াতে হলে পিআরবির সংশ্লিষ্ট ধারা (১১০১) সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত বিশেষ একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি ধারাগুলো সংশোধনের জন্য কাজ করছে।

মামলার ডকেট কার কাছে সংরক্ষণে থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটার কর্তৃপক্ষ কে থাকবেÑ তা নির্ধারণ জরুরি। ডকেট প্রসিকিউশন শাখায় থাকবে, না থানার ওসির কাছে থাকবে, নাকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে থাকবে- এসব বিষয়ে বিশেষ কমিটি কাজ করছে। কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রস্তাব দেবে। এরপর সেটা বাস্তবায়ন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতে কেস ডকেট সংরক্ষণে থাকলে প্রয়োজনের সময় পুলিশ হয়তো সেটা দেখতে পারবে না। দেখতে পারলেও সেটার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তাই থানার ওসির তত্ত্বাবধানে বা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কেস ডকেট সংরক্ষণ করা জরুরি।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৩ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ হবে ৫০ বছর!

আপডেট সময় : ১২:০২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

ঢাকা : যেকোনো কেস ডকেট বা সিডি (মামলার নথিপত্র) ন্যূনতম ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এজন্য পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের (পিআরবি) প্রয়োজনীয় ধারাগুলো সংশোধন করার কাজও চলছে। পিআরবি অনুযায়ী বর্তমানে ১৪ বছর পর্যন্ত মামলার ডকেট সংরক্ষণে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার পুলিশ সদর দপ্তরে করা প্রস্তাবে উল্লেখ করেছেন, পিআরবিতে বলা আছে, কেস ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এখন ৩০-৩৫ বছর আগের মামলাও তদন্ত করতে হয়।

পুরোনো মামলার ডকেট সংরক্ষণের জন্য পিআরবি সংশোধন করা প্রয়োজন। ডকেট সংরক্ষণের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। পিআরবি সংশোধন করা হোক এবং কেস ডকেট ন্যূনতম ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা উচিত।

পিবিআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ১০-৪০ বছরের পুরোনো মামলা তদন্ত করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজারবাগের বাসা থেকে আট বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত মোটরসাইকেল আরোহীদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্রী সগিরা মোর্শেদ।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের আগে কমপক্ষে ২৭ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন, মামলার বিচারকাজও শুরু হয়। কিন্তু মূল রহস্য কেউ উন্মোচন করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করে।

এভাবেই ঘটনার ১০ থেকে ৪০ বছর পরও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড বা ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে হয় পুলিশকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে মামলার ডকেট (নথিপত্র) ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, যেকোনো মামলার তদন্তে ডকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের নির্দেশ পুরোনো মামলার তদন্তে নেমে দেখা যায় সঠিকভাবে ডকেট সংরক্ষণ করা থাকে না। ফলে তদন্তকাজ বিঘ্নিত হয়। কারণ বর্তমানে পিআরবি অনুযায়ী যেকোনো মামলার ডকেট ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখা হয়। এরপর ডকেট না থাকলে কাউকে দায়ী করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, মামলার ডকেট সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়াতে হলে পিআরবির সংশ্লিষ্ট ধারা (১১০১) সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত বিশেষ একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি ধারাগুলো সংশোধনের জন্য কাজ করছে।

মামলার ডকেট কার কাছে সংরক্ষণে থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটার কর্তৃপক্ষ কে থাকবেÑ তা নির্ধারণ জরুরি। ডকেট প্রসিকিউশন শাখায় থাকবে, না থানার ওসির কাছে থাকবে, নাকি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে থাকবে- এসব বিষয়ে বিশেষ কমিটি কাজ করছে। কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রস্তাব দেবে। এরপর সেটা বাস্তবায়ন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতে কেস ডকেট সংরক্ষণে থাকলে প্রয়োজনের সময় পুলিশ হয়তো সেটা দেখতে পারবে না। দেখতে পারলেও সেটার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তাই থানার ওসির তত্ত্বাবধানে বা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কেস ডকেট সংরক্ষণ করা জরুরি।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৩ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box