ঢাকা ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সোনারগাঁয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০ Logo সোনারগাঁয়ে ২৫কেজি গাঁজা ও পিকআপ ভ্যানসহ আটক-৩ Logo চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান মহারণের সূচি প্রকাশ Logo শেষ দুই টেস্টও খেলা হচ্ছে না শামির Logo বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন Logo বিয়ের পরিকল্পনা নেই! তবে বাবা হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে! সন্তান প্রসঙ্গে কী মত সলমনের? Logo মস্কোয় অতিষ্ঠ! সিরিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্টের থেকে ‘মুক্তি’ চাইছেন স্ত্রী, ফিরে যেতে চান ব্রিটেনে Logo ‘বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২০০ কোটি রুপি পাওনা রয়েছে ত্রিপুরা’ Logo নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মত Logo শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের তদন্ত নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

ব্যাংক সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা: চ্যালেঞ্জ ও আশঙ্কা

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ১১:৪৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৭২ বার পঠিত
ব্যাংক খাতের অসুখ সারাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করার পরিকল্পনা করছে৷ তবে তার আগে দুর্বল ব্যাংকগুলো দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার সময় পাবে৷

সে কারণে কতটি ব্যাংক তার অস্তিত্ব বিলোপ করে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সবল হবার যাত্রায় অংশ নিতে বাধ্য হবে, তা এখনই নিশ্চিত নয়৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাছের ব্যাংক খাতে সংস্কারের রেডম্যাপ প্রকাশ করেন ৪ ফেব্রুয়ারি৷ সেখানে ১৭টি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়৷ যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো: দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা, খেলাপি ঋণ কমানো, খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতি বন্ধ করা, ব্যাংকে যোগ্য পরিচালক নিয়োগে ব্যবস্থা করা, উপযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ৷

এসবের মূল টার্গেট হলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে যৌক্তিক মাত্রায় নিয়ে আসা এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা৷

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব লক্ষ্য পূরণের সময়সীমা ঠিক করেছে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত৷

বাংলাদেশ ব্যাংক

দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে

ব্যাংক সংস্কারের ঘোষণা দেওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে একটি সার্কুলার দেয়৷ দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সংকট কাটিয়ে সক্ষম করার জন্য ওই ফ্রেমওয়ার্ক করা হয়৷ তাতে বলা হয়, যারা দুর্বলতা কাটাতে পারবে না তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক৷

সার্কুলারে বলা হয়, ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ থেকে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর করা হবে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মার্জ করা হবে ২০২৫ সালের মার্চের পরে, তার আগে নয়৷ তার আগে কোনো দুর্বল ব্যাংক সবল হয়ে গেলে তারা আর মার্জিংয়ের নীতিতে পড়বে না৷ এই সময়ে সবল হতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নীতি সহায়তা দেবে বলেও জানান ঐ কর্মকর্তা৷ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘খুব দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার নীতি আরো স্পষ্ট করবে৷ যারা দুর্বল তাদের পূর্ণাঙ্গ অ্যাসেস করা হবে৷”

‘কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জিং’

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘যদি সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক মার্জ করতে হয় তাহলে দ্রুতই দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে হবে৷ নতুন যে পরিচালনা পর্ষদকে দায়িত্ব দেয়া হবে তাদের কাজ হবে ব্যাংকের দায় দেনা হিসাব এবং ব্যাংক দুর্বল হওয়ার জন্য কারা দায়ী তা চিহ্নিত করা৷ এরপর কাজ হলো সবল ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা করা৷ কারণ সবল ব্যাংককে বললেই তো সে দুর্বল ব্যাংককে নেবে না৷ একটি দুর্বল ব্যাংককে মার্জ করার জন্য সরকার কত টাকা দেবে তা নির্ধারণ করা৷ এই সময়ে ব্যাংকের লোন দেয়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে৷ এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ৷”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘গ্রাহকরা কোনো ক্ষতির মুখে পড়বেন কিনা তা নির্ভর করবে সরকারের বেলআউট পলিসির ওপর৷ সরকার যদি শতভাগ গ্যাপ পূরণ করে দেয় তাহলে গ্রাহকদের ক্ষতি হবে না৷ আর কিছু লোক তো চাকরি হারাবেনই৷ কারণ দুইটি ব্যাংক এক হলে, এক ব্যাংকের তো একই এলাকায় দুইটি শাখা থাকবে না৷ এখন তো দুইটি ব্যাংকেরই শাখা আছে৷ তবে তিন বছর পর্যন্ত ছাঁটাই করা হবে না বলা হচ্ছে৷”

তার কথা, ‘‘মার্জিং ভালো উদ্যোগ৷ এটা করতে পারলে অনেক ভালো হবে৷ কিন্তু এরজন্য সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন৷ শুরুতেই তো তিন বছর সময় নেয়া হচ্ছে৷ শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখা যাক৷”

‘মার্জ হলে কিছু লোক চাকরি হারাবেন’

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘মার্জিং একটা ভালো উদ্যোগ৷ এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং সফল৷ কিন্তু এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি কী হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন৷”

তবে তিনি মনে করেন বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে৷ ‘‘যেমন মার্জ করার জন্য সবল ও দুর্বলকে রাজি করানো, কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি থাকবে কিনা, রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হবে কিনা ইত্যাদি৷ একটি ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটি ব্যাংককে মার্জ করতে বললেই তো হবে না৷ এটা সমঝোতার মাধ্যমে হতে হবে৷ তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে নীতিমালা স্পষ্ট করতে হবে৷ ডায়ালগ করতে হবে,” বলেন আমিন৷

যমুনা ব্যাংকের সাবেক এই এমডি বলেন, ‘‘মার্জ হলে কিছু লোক চাকরি হারাবেন৷ তবে তিন বছরে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে না৷ পলিসি স্পষ্ট হতে হবে৷ যাদের বিদায় করা হবে তাদের কী উপায়ে বিদায় দেয়া হবে তা আলোচনা করে ঠিক করতে হবে৷”

আর গ্রাহকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘তাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷ কারণ প্রথমত বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না৷ নজির নেই৷ আর গ্রাহকদের ব্যাপারটাও মার্জিং পলিসিতে থাকে৷”

গ্রাহকেরা কী বলছেন?

একটি ব্যাংকের গ্রাহক আতিকুর রহমান আকাশ বলেন, ‘‘সঠিক নীতিমালার ভিত্তিতে করলে আমার মনে হয় ভালোই হবে৷ তবে আমার আশঙ্কা, দুর্বল ব্যাংককে কাঁধে নিতে যেয়ে সবল ব্যাংকটি আবার দুর্বল হয়ে না যায়৷”

আরেক গ্রাহক শেখ আব্দুস সাত্তার লিমন বলেন, ‘‘মূল কথা হলো এটা কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে৷ দেখা যাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় সবল ব্যাংককে দুর্বলের তালিকায় ফেলা হবে৷ আবার দুর্বল ব্যাংককে সবলের তালিকায় রাখা হবে৷ তাহলে তো গ্রাহকরা লাভবান হবে না, তারা ভুল তথ্য পাবে৷ তবে দুর্বল ব্যাংক এখন গ্রাহকরা চেনে৷ সেখানে এমনিতেই তারা টাকা রাখা কমিয়ে দিয়েছে৷”

বাংলাদেশে এখন মোট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি৷ মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশই আছে ১০টি ব্যাংকে৷ আর মূলধন ঘাটতিতে আছে ১৪টি ব্যাংক৷ তাদের মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা৷ এর বাইরে পাঁচটি ইসলামি ধরার ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি কাটাতে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷

জানা গেছে, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৪০টি ব্যাংক মোটামুটিভাবে ভালো করছে৷ বাকিগুলোর অবস্থা খারাপ৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯.৯৩ শতাংশ৷ তবে দুর্দশাগ্রস্ত ও পুনঃতফসিল কিংবা অবলোপনের পরও আদায় না হওয়া ঋণের পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকার বেশি, মোট ঋণের যা ২৬ শতাংশ৷ ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

ব্যাংক সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা: চ্যালেঞ্জ ও আশঙ্কা

আপডেট সময় : ১১:৪৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
ব্যাংক খাতের অসুখ সারাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করার পরিকল্পনা করছে৷ তবে তার আগে দুর্বল ব্যাংকগুলো দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার সময় পাবে৷

সে কারণে কতটি ব্যাংক তার অস্তিত্ব বিলোপ করে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সবল হবার যাত্রায় অংশ নিতে বাধ্য হবে, তা এখনই নিশ্চিত নয়৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাছের ব্যাংক খাতে সংস্কারের রেডম্যাপ প্রকাশ করেন ৪ ফেব্রুয়ারি৷ সেখানে ১৭টি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়৷ যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো: দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা, খেলাপি ঋণ কমানো, খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতি বন্ধ করা, ব্যাংকে যোগ্য পরিচালক নিয়োগে ব্যবস্থা করা, উপযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ৷

এসবের মূল টার্গেট হলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে যৌক্তিক মাত্রায় নিয়ে আসা এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা৷

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব লক্ষ্য পূরণের সময়সীমা ঠিক করেছে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত৷

বাংলাদেশ ব্যাংক

দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে

ব্যাংক সংস্কারের ঘোষণা দেওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে একটি সার্কুলার দেয়৷ দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সংকট কাটিয়ে সক্ষম করার জন্য ওই ফ্রেমওয়ার্ক করা হয়৷ তাতে বলা হয়, যারা দুর্বলতা কাটাতে পারবে না তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক৷

সার্কুলারে বলা হয়, ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ থেকে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর করা হবে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মার্জ করা হবে ২০২৫ সালের মার্চের পরে, তার আগে নয়৷ তার আগে কোনো দুর্বল ব্যাংক সবল হয়ে গেলে তারা আর মার্জিংয়ের নীতিতে পড়বে না৷ এই সময়ে সবল হতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নীতি সহায়তা দেবে বলেও জানান ঐ কর্মকর্তা৷ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘খুব দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার নীতি আরো স্পষ্ট করবে৷ যারা দুর্বল তাদের পূর্ণাঙ্গ অ্যাসেস করা হবে৷”

‘কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জিং’

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘যদি সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক মার্জ করতে হয় তাহলে দ্রুতই দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে হবে৷ নতুন যে পরিচালনা পর্ষদকে দায়িত্ব দেয়া হবে তাদের কাজ হবে ব্যাংকের দায় দেনা হিসাব এবং ব্যাংক দুর্বল হওয়ার জন্য কারা দায়ী তা চিহ্নিত করা৷ এরপর কাজ হলো সবল ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা করা৷ কারণ সবল ব্যাংককে বললেই তো সে দুর্বল ব্যাংককে নেবে না৷ একটি দুর্বল ব্যাংককে মার্জ করার জন্য সরকার কত টাকা দেবে তা নির্ধারণ করা৷ এই সময়ে ব্যাংকের লোন দেয়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে৷ এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ৷”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘গ্রাহকরা কোনো ক্ষতির মুখে পড়বেন কিনা তা নির্ভর করবে সরকারের বেলআউট পলিসির ওপর৷ সরকার যদি শতভাগ গ্যাপ পূরণ করে দেয় তাহলে গ্রাহকদের ক্ষতি হবে না৷ আর কিছু লোক তো চাকরি হারাবেনই৷ কারণ দুইটি ব্যাংক এক হলে, এক ব্যাংকের তো একই এলাকায় দুইটি শাখা থাকবে না৷ এখন তো দুইটি ব্যাংকেরই শাখা আছে৷ তবে তিন বছর পর্যন্ত ছাঁটাই করা হবে না বলা হচ্ছে৷”

তার কথা, ‘‘মার্জিং ভালো উদ্যোগ৷ এটা করতে পারলে অনেক ভালো হবে৷ কিন্তু এরজন্য সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন৷ শুরুতেই তো তিন বছর সময় নেয়া হচ্ছে৷ শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখা যাক৷”

‘মার্জ হলে কিছু লোক চাকরি হারাবেন’

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘মার্জিং একটা ভালো উদ্যোগ৷ এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং সফল৷ কিন্তু এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি কী হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন৷”

তবে তিনি মনে করেন বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে৷ ‘‘যেমন মার্জ করার জন্য সবল ও দুর্বলকে রাজি করানো, কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি থাকবে কিনা, রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হবে কিনা ইত্যাদি৷ একটি ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটি ব্যাংককে মার্জ করতে বললেই তো হবে না৷ এটা সমঝোতার মাধ্যমে হতে হবে৷ তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে নীতিমালা স্পষ্ট করতে হবে৷ ডায়ালগ করতে হবে,” বলেন আমিন৷

যমুনা ব্যাংকের সাবেক এই এমডি বলেন, ‘‘মার্জ হলে কিছু লোক চাকরি হারাবেন৷ তবে তিন বছরে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে না৷ পলিসি স্পষ্ট হতে হবে৷ যাদের বিদায় করা হবে তাদের কী উপায়ে বিদায় দেয়া হবে তা আলোচনা করে ঠিক করতে হবে৷”

আর গ্রাহকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘তাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷ কারণ প্রথমত বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না৷ নজির নেই৷ আর গ্রাহকদের ব্যাপারটাও মার্জিং পলিসিতে থাকে৷”

গ্রাহকেরা কী বলছেন?

একটি ব্যাংকের গ্রাহক আতিকুর রহমান আকাশ বলেন, ‘‘সঠিক নীতিমালার ভিত্তিতে করলে আমার মনে হয় ভালোই হবে৷ তবে আমার আশঙ্কা, দুর্বল ব্যাংককে কাঁধে নিতে যেয়ে সবল ব্যাংকটি আবার দুর্বল হয়ে না যায়৷”

আরেক গ্রাহক শেখ আব্দুস সাত্তার লিমন বলেন, ‘‘মূল কথা হলো এটা কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে৷ দেখা যাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় সবল ব্যাংককে দুর্বলের তালিকায় ফেলা হবে৷ আবার দুর্বল ব্যাংককে সবলের তালিকায় রাখা হবে৷ তাহলে তো গ্রাহকরা লাভবান হবে না, তারা ভুল তথ্য পাবে৷ তবে দুর্বল ব্যাংক এখন গ্রাহকরা চেনে৷ সেখানে এমনিতেই তারা টাকা রাখা কমিয়ে দিয়েছে৷”

বাংলাদেশে এখন মোট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি৷ মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ শতাংশই আছে ১০টি ব্যাংকে৷ আর মূলধন ঘাটতিতে আছে ১৪টি ব্যাংক৷ তাদের মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা৷ এর বাইরে পাঁচটি ইসলামি ধরার ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি কাটাতে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷

জানা গেছে, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৪০টি ব্যাংক মোটামুটিভাবে ভালো করছে৷ বাকিগুলোর অবস্থা খারাপ৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯.৯৩ শতাংশ৷ তবে দুর্দশাগ্রস্ত ও পুনঃতফসিল কিংবা অবলোপনের পরও আদায় না হওয়া ঋণের পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকার বেশি, মোট ঋণের যা ২৬ শতাংশ৷ ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box