ব্যবস্থাপনার উন্নতি না করে আবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি?
- আপডেট সময় : ০২:৫৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৯৬ বার পঠিত
এখন পর্যন্ত যা আভাস পাওয়া গেছে তাতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৩০ থেকে ৮০ পয়সা বাড়তে পারে৷
২০২৩ সালের মার্চে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়৷ তখন বাড়ানো হয় শতকরা পাঁচ ভাগ৷
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এবার তিন থেকে চার শতাংশ বাড়বে৷ তবে বিদ্যুতের দামের নানা ধরনের স্লট থাকায় লাইফ লাইন পর্যায়ে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে তিনি দাবি করেছেন৷ তার কথা, ‘‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে৷’’
গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার এবং গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে৷
এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট৷ গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো৷ মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট হলেও এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট হয়েছে গত বছরের ১৯ এপ্রিল৷ এ বছর গরমের সময় সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও কোনোভাবেই লোডশেডিং এড়ানো যাবে না৷
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে গ্যাস লাগে, সেটা আমাদের আছে৷ কিন্তু গ্যাস উত্তোলন না করে একটি মহলকে সু্বিবধা দিতে আমদানি বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ছে৷’’
বিদ্যুতের দাম বাড়লে তার পুরো চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে বলে মন্তব্য করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়বে৷ বিদ্যুৎ খরচ বাড়ার প্রভাব পড়ে সবখানে৷ কৃষি ও ভোগ্যপণ্য, পরিবহণ খরচ সবকিছু বেড়ে যায়৷ কিন্তু সরকার চাইলে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়েও পারে৷ ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের নামে যে অর্থ পরিশোধ করা হয়, সেটা বাদ দিলে উৎপাদন খরচ কমে যায়৷ আর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও এখানে কমছে না৷ এই জ্বালানি তেলের ব্যবসা আবার সরকার এবকভাবে করে৷’’
তবে বিষয়টিকে পুরো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর৷ তিনি বলেন, ‘‘ভ্রান্ত নীতির কারণে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে৷ যেখানে আমাদের জ্বালানি সার্বভৌমত্ব থাকার কথা ছিল, সেখানে আমরা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছি৷ ফলে আমরা এখন অন্যের ওপর নির্ভশীল৷ তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ-এর একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত৷ এর মধ্যে আমাদের গ্যাস থাকলেও তা উত্তোলন না করে আমরা এলএনজি আমদানি করছি৷ ফলে বিদ্যুতে আমরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ছি৷ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে৷ আর সেই খরচ নেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের কাছ থেকে৷ সরকারের ভ্রান্ত নীতির বলি হচ্ছেন গ্রাহকরা৷’’
তার কথা, ‘‘বিদ্যুতের দাম বাড়লে কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের খরচ বেড়ে যায়, বেড়ে যায় পরিবহণ খরচ৷ ফলে সার্বিকভাবে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়৷ বেড়ে যায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি৷ যার চাপ পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর৷’’
তিনি বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আয় না বাড়লে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, সীমিত আয়ের মানুষ, তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়৷ তারা কম কেনেন, কম খান৷ ফলে পুষ্টির অভাব দেখা দেয় আর দারিদ্র্য বেড়ে যায়৷ যেমন ঢাকা শহরে দারিদ্র্য বেড়েছে৷’’