ঢাকা ১১:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ব্যঙ্গচিত্র আঁকাই কি দুই জাবি ছাত্র বহিষ্কারের আসল কারণ?

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ১১:০৬:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১৩২ বার পঠিত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে আঁকা ব্যঙ্গচিত্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জের ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও মামলার ঘটনায় নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সারাদেশে। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১১১ জন নাগরিক।

বহিষ্কৃত দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। একই সাথে তারা ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে সেই স্থানে গ্রাফিতি আঁকার কারণেই তাদের এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মামলাও করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আবু হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল। তাই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।”
গ্রাফিতি এঁকে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের সাথেও কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তারা বলছেন, যে জায়গায় তারা গ্রাফিতি এঁকেছেন, ঠিক একই জায়গায় ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের আঁকা গ্রাফিতি ছিল।
বহিষ্কৃত ছাত্র ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জাহাঙ্গীরনগরে একটা গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গ্রাফিতি এঁকেছিলাম। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের আন্দোলনকে নষ্ট করা ও এটি থেকে দৃষ্টি ফেরাতে অন্যায়ভাবে আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।”
এ নিয়ে সারাদেশের যে ১১১ নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে তারা বলছেন, “কোনও প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ডিসিপ্লিনারি সভা ছাড়া বহিষ্কারের ঘটনা চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক; যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ও ন্যক্কারজনক।”
প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র গ্রাফিতি আঁকার কারণে নিয়ম না মেনেই কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে পারে প্রশাসন? এই ধরণের সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রহীনতার উদাহরণ মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাসউদ ইমরান বলেন, “গ্রাফিতি মোছা কোনও ইস্যু না, এটা আসলে একটা রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের নিজেদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে এমন একটি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে মুজিববর্ষের ছবি

কী ছিল সেই গ্রাফিতিতে?

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের সাত তারিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের পশ্চিম পাশের দেয়ালে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি চিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকেন জাহাঙ্গীরনগর ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী।

সেই দেয়ালচিত্রে তারা ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’ বাক্যটি জুড়ে দেন। ব্যঙ্গচিত্রে একটি নারীর অবয়ব, ছয়টি মাথার খুলিসহ একটি পতাকা আঁকা হয়। পাশেই লেখা ছিল ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’।
ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেন যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি হলো নানা ধরনের প্রতিবাদমূলক গ্রাফিতি অঙ্কন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এই দেয়ালচিত্র করা হয়েছিল।
গ্রাফিতি আঁকা শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনগুলো হয় তার একটা বহি:প্রকাশ হয়ে থাকে গ্রাফিতির মাধ্যমে। এই গ্রাফিতিটিও আঁকা হয়েছিল সেই ধারাবাহিকতায়।
তারা বলেন, এ মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বহিরাগত এক গৃহবধূ ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগের পর বিষয়টি তারা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে সবার সিদ্ধান্তে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতন করতেই এই গ্রাফিতি এঁকেছিলেন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে মুজিববর্ষের ছবি

গ্রাফিতি আঁকা নিয়ে বিতর্ক যে কারণে

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের যে জায়গায় গ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্কের পেছনে কিছু কারণ লক্ষ্য করা গেছে।

যে দেয়ালটিতে এই গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, সেখানে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনও চিত্রকর্ম ছিল না। ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন যা এক পর্যায়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সে সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঠিক এই দেয়ালটিতে তৎকালীন উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করে। পরবর্তীতে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম দায়িত্ব ছাড়লেও তার অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পদে ছিল। তাদের কাছে হয়তো এই ব্যঙ্গচিত্র পছন্দ ছিল না।”
পরে ২০২২ সালে ওই গ্রাফিতি মুছে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি চিত্রকর্ম আঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
গ্রাফিতি এঁকে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওই দেয়ালে শিক্ষক রাজনীতির পাওয়ার নিয়ে আমরাই প্রথম ব্যঙ্গ চিত্র করেছিলাম। মুজিব শতবর্ষের সময় ছাত্রলীগ সেটি মুছে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছবি এঁকেছিল। এখানে সাধারনত বিভিন্ন ইস্যুতে চিত্রকর্ম করে থাকে শিক্ষার্থীরা।”
বহিষ্কৃত অপর শিক্ষার্থী ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সেখানে আগে আমাদেরই গ্রাফিতি ছিল। এখন অন্য কেউ গ্রাফিতি করলো, পরবর্তীতে আমরা আরেকটা করলাম এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। গ্রাফিতি তো কোনও অফিসিয়াল আর্ট ওয়ার্ক না। এটা বঙ্গবন্ধুর কোনও অফিসিয়াল পোর্ট্রেট না। এটা নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু ছিল না।”

প্রতিক্রিয়া শুরু হয় যেভাবে

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে দেয়ালচিত্র আঁকার প্রায় এক সপ্তাহ পর বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের। এর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মিছিল ও প্রতিবাদ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি।

এরপর দুই পক্ষের সাথে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির উপর ছবি এঁকেছে ছাত্র ইউনিয়ন। এটি তাদেরই মুছতে হবে। তবে ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দু’টি সংগঠনের যুক্তিই ঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধুর ছবি মোছা যেমন ওদের কোনও ইনটেশন ছিল না, আবার ছাত্রলীগের দাবিও অযৌক্তিক ছিল না। বিষয়টি এমন একটা সংকট তৈরি করে যেটা আসলে আমাদের হাতেও ছিল না।”
এমন অবস্থায় ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতা এনামুল হক ও রিয়াজুল ইসলাম। পরে দ্রুত ওই ঘটনা তদন্তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহেল কাফি’র নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার দুই ছাত্র অমর্ত্য ও অনিন্দ্য

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও বহিষ্কার

কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে সময় দেয়া হয়েছিল সাত দিন। তবে, কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যেই রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেট বৈঠকে বসে।

তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুলাহেল কাফি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমার ছবি মোছা আর জাতির জনকের ছবি মোছা এক বিষয় না। অর্মত্য রায় ও অনিন্দ্য গাঙ্গুলী কমিটির কাছে তাদের যুক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
পরবর্তীতে কমিটি তাদের এক বছরের বহিষ্কারের সুপারিশ করে সিন্ডিকেটের কাছে রিপোর্ট পেশ করে।”
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০শে ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট ওই দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার এবং একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করারও সিদ্ধান্ত দেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা আমাদের সবার আবেগের জায়গা। তাদের অপরাধ তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ করেছে। সেই বিষয়টিই সামনে এসেছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট আমলে নিয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এটা তাদের বহুদিন ধরে জমে থাকা উষ্মা। এই বহিষ্কারের মাধ্যমে প্রশাসনের জিদ রক্ষা হলো। আন্দোলন যারা করছে তাদের এলোমেলো করে দেওয়া হলো।”
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমরা ভাবছিলাম এটা আমাদের একটা গণতান্ত্রিক চর্চা। আমরা কখনও ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এটাতে আমরা বিষ্মিত হয়েছি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

১১১ নাগরিকের প্রতিবাদ ও বিবৃতি

শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে এক ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে গত শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন ১১১ জন নাগরিক।

যেখানে বলা হয়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একতরফাভাবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় এবং ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় আইনে এই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমরা মনে করি, এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা চাতুর্যপূর্ণ।”
বিবৃতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, নাট্যকার মাসুম রেজা, অধ্যাপক মানস চৌধুরী কবি ও শিল্পী কফিল আহমেদ, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানসহ দেশের বিশিষ্ট ১১১ নাগরিক স্বাক্ষর করেন। বিবিসি
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

ব্যঙ্গচিত্র আঁকাই কি দুই জাবি ছাত্র বহিষ্কারের আসল কারণ?

আপডেট সময় : ১১:০৬:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জের ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও মামলার ঘটনায় নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সারাদেশে। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১১১ জন নাগরিক।

বহিষ্কৃত দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। একই সাথে তারা ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে সেই স্থানে গ্রাফিতি আঁকার কারণেই তাদের এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মামলাও করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আবু হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল। তাই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।”
গ্রাফিতি এঁকে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের সাথেও কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তারা বলছেন, যে জায়গায় তারা গ্রাফিতি এঁকেছেন, ঠিক একই জায়গায় ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের আঁকা গ্রাফিতি ছিল।
বহিষ্কৃত ছাত্র ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জাহাঙ্গীরনগরে একটা গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গ্রাফিতি এঁকেছিলাম। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের আন্দোলনকে নষ্ট করা ও এটি থেকে দৃষ্টি ফেরাতে অন্যায়ভাবে আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।”
এ নিয়ে সারাদেশের যে ১১১ নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে তারা বলছেন, “কোনও প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ডিসিপ্লিনারি সভা ছাড়া বহিষ্কারের ঘটনা চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক; যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ও ন্যক্কারজনক।”
প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র গ্রাফিতি আঁকার কারণে নিয়ম না মেনেই কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে পারে প্রশাসন? এই ধরণের সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রহীনতার উদাহরণ মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাসউদ ইমরান বলেন, “গ্রাফিতি মোছা কোনও ইস্যু না, এটা আসলে একটা রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের নিজেদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে এমন একটি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে মুজিববর্ষের ছবি

কী ছিল সেই গ্রাফিতিতে?

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের সাত তারিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের পশ্চিম পাশের দেয়ালে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি চিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকেন জাহাঙ্গীরনগর ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী।

সেই দেয়ালচিত্রে তারা ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’ বাক্যটি জুড়ে দেন। ব্যঙ্গচিত্রে একটি নারীর অবয়ব, ছয়টি মাথার খুলিসহ একটি পতাকা আঁকা হয়। পাশেই লেখা ছিল ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’।
ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেন যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি হলো নানা ধরনের প্রতিবাদমূলক গ্রাফিতি অঙ্কন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এই দেয়ালচিত্র করা হয়েছিল।
গ্রাফিতি আঁকা শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনগুলো হয় তার একটা বহি:প্রকাশ হয়ে থাকে গ্রাফিতির মাধ্যমে। এই গ্রাফিতিটিও আঁকা হয়েছিল সেই ধারাবাহিকতায়।
তারা বলেন, এ মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বহিরাগত এক গৃহবধূ ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগের পর বিষয়টি তারা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে সবার সিদ্ধান্তে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতন করতেই এই গ্রাফিতি এঁকেছিলেন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে মুজিববর্ষের ছবি

গ্রাফিতি আঁকা নিয়ে বিতর্ক যে কারণে

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের যে জায়গায় গ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্কের পেছনে কিছু কারণ লক্ষ্য করা গেছে।

যে দেয়ালটিতে এই গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে, সেখানে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনও চিত্রকর্ম ছিল না। ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন যা এক পর্যায়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সে সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঠিক এই দেয়ালটিতে তৎকালীন উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করে। পরবর্তীতে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম দায়িত্ব ছাড়লেও তার অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পদে ছিল। তাদের কাছে হয়তো এই ব্যঙ্গচিত্র পছন্দ ছিল না।”
পরে ২০২২ সালে ওই গ্রাফিতি মুছে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি চিত্রকর্ম আঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
গ্রাফিতি এঁকে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওই দেয়ালে শিক্ষক রাজনীতির পাওয়ার নিয়ে আমরাই প্রথম ব্যঙ্গ চিত্র করেছিলাম। মুজিব শতবর্ষের সময় ছাত্রলীগ সেটি মুছে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছবি এঁকেছিল। এখানে সাধারনত বিভিন্ন ইস্যুতে চিত্রকর্ম করে থাকে শিক্ষার্থীরা।”
বহিষ্কৃত অপর শিক্ষার্থী ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সেখানে আগে আমাদেরই গ্রাফিতি ছিল। এখন অন্য কেউ গ্রাফিতি করলো, পরবর্তীতে আমরা আরেকটা করলাম এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। গ্রাফিতি তো কোনও অফিসিয়াল আর্ট ওয়ার্ক না। এটা বঙ্গবন্ধুর কোনও অফিসিয়াল পোর্ট্রেট না। এটা নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কিছু ছিল না।”

প্রতিক্রিয়া শুরু হয় যেভাবে

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মুছে দেয়ালচিত্র আঁকার প্রায় এক সপ্তাহ পর বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের। এর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মিছিল ও প্রতিবাদ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি।

এরপর দুই পক্ষের সাথে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির উপর ছবি এঁকেছে ছাত্র ইউনিয়ন। এটি তাদেরই মুছতে হবে। তবে ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দু’টি সংগঠনের যুক্তিই ঠিক ছিল। বঙ্গবন্ধুর ছবি মোছা যেমন ওদের কোনও ইনটেশন ছিল না, আবার ছাত্রলীগের দাবিও অযৌক্তিক ছিল না। বিষয়টি এমন একটা সংকট তৈরি করে যেটা আসলে আমাদের হাতেও ছিল না।”
এমন অবস্থায় ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতা এনামুল হক ও রিয়াজুল ইসলাম। পরে দ্রুত ওই ঘটনা তদন্তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহেল কাফি’র নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার দুই ছাত্র অমর্ত্য ও অনিন্দ্য

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও বহিষ্কার

কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে সময় দেয়া হয়েছিল সাত দিন। তবে, কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যেই রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেট বৈঠকে বসে।

তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুলাহেল কাফি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমার ছবি মোছা আর জাতির জনকের ছবি মোছা এক বিষয় না। অর্মত্য রায় ও অনিন্দ্য গাঙ্গুলী কমিটির কাছে তাদের যুক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
পরবর্তীতে কমিটি তাদের এক বছরের বহিষ্কারের সুপারিশ করে সিন্ডিকেটের কাছে রিপোর্ট পেশ করে।”
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০শে ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট ওই দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার এবং একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করারও সিদ্ধান্ত দেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা আমাদের সবার আবেগের জায়গা। তাদের অপরাধ তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ করেছে। সেই বিষয়টিই সামনে এসেছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট আমলে নিয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানস চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এটা তাদের বহুদিন ধরে জমে থাকা উষ্মা। এই বহিষ্কারের মাধ্যমে প্রশাসনের জিদ রক্ষা হলো। আন্দোলন যারা করছে তাদের এলোমেলো করে দেওয়া হলো।”
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমরা ভাবছিলাম এটা আমাদের একটা গণতান্ত্রিক চর্চা। আমরা কখনও ভাবিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এটাতে আমরা বিষ্মিত হয়েছি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

১১১ নাগরিকের প্রতিবাদ ও বিবৃতি

শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে এক ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে গত শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন ১১১ জন নাগরিক।

যেখানে বলা হয়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একতরফাভাবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় এবং ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় আইনে এই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমরা মনে করি, এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা চাতুর্যপূর্ণ।”
বিবৃতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, নাট্যকার মাসুম রেজা, অধ্যাপক মানস চৌধুরী কবি ও শিল্পী কফিল আহমেদ, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানসহ দেশের বিশিষ্ট ১১১ নাগরিক স্বাক্ষর করেন। বিবিসি
Facebook Comments Box