বিয়ে-জন্মদিনে গানবাজনা নিষিদ্ধ
- আপডেট সময় : ০৩:০৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩ ৭৫ বার পঠিত
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার একটি গ্রামে বিয়ে, জন্মদিন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ গান-বাজনা করলে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। চারদিন আগে উপজেলা সদরের গছিখাইর গ্রামের মানুষ মিলে এ নিয়ম চালু করে। তবে সংস্কৃতিকর্মীরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
পাশাপাশি এ নিয়ম জারি করা ব্যক্তিদের ‘সামাজিক রীতি বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গছিখাইর গ্রামের বদিউজ্জামান ও জামাল মিয়া সোমবার (২ অক্টোবর) এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্টে বদিউজ্জামান লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, গছিখাইর গ্রামের সম্মানিত মাতব্বররা সম্মিলিতভাবে এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, হিন্দুয়ানি প্রথা কুসংস্কার বাদ্য-বাজনা আর কাহারও বিবাহে আর কোনো দিন আনতে পারবে না।
আনলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা। সৌজন্যে গছিখাইর গ্রামবাসী।’ তার এই পোস্ট নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে তিনি পোস্টটি মুছে ফেলেন। গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী বদিউজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের ছোট গ্রাম। গ্রামের সবাই ধর্মপ্রাণ মানুষ। বিয়ে-জন্মদিন বা সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানে চার-পাঁচটা বড় বড় সাউন্ড বক্স লাগিয়ে বাচ্চা, পুরুষ-মহিলা সবাই নাচে।
শব্দে হার্টের রোগী, বৃদ্ধরা কষ্ট পান। তাই গ্রামের সবাই মিলেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের সবাই যেহেতু মুসলমান, তাই এ নিয়ে সমস্যা হয়নি। কেউ এর বিরোধিতা করেনি। ফেসবুকে কেউ সমালোচনা করেনি। তবে থানাপুলিশ জানতে চেয়েছিল কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি গ্রামের সবার সিদ্ধান্ত বলে তাদের জানিয়েছি। এ সিদ্ধান্ত সবার স্বার্থেই।’ গ্রামের মাতব্বর হামিদ আলী বলেন, ‘বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে সাউন্ড বক্সের শব্দে গ্রামের সবাই অতিষ্ঠ।
তাই সবাই মিলেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে কোনো সমালোচনা করেছে বলে আমার জানা নেই।’ এ বিষয়ে সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি, পরে শুনেছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে সাউন্ড বক্সের শব্দে রোগী বা বৃদ্ধদের অবস্থা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জেনেছি।
তবে গ্রামে জারি-সারি, গান, নাটক, যাত্রাপালা বা সংস্কৃতি চর্চা হয়। সেসব বন্ধ করা ঠিক হবে না।’ জানতে চাইলে সদর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আবু ইসহাক বলেন, তিনি বিষয়ে আমি কিছুই জানেন না।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রবিকুল হাসান বলেন, ‘শুনেছি গ্রামের কিছু ছেলেপেলে রাতে সাউন্ড বক্সে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে নেশা করে। তাই গ্রামবাসী এসব নিষিদ্ধ করেছে। তবে সংগীত, নাটক, যাত্রাপালাসহ সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ করা বেআইনি। এটা তারা করতে পারেন না। বিষয়টি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্হা নেয়া হবে।