মাত্র দুই কিলোমিটারের কিছু বেশি ব্যবধানে থাকা দুটি ভবন। ঢাকার এই ভবন দুটি বাংলাদেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে নতুন এক বহুতল ভবনে গত ১৬ নভেম্বর থেকে প্রতিদিনই চলেছে উৎসব। শোভাযাত্রা আর ব্যান্ডবাদ্য সহকারে দলের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীরা প্রতিদিন এসেছেন মনোনয়ন ফরম কিনতে। কে পাবেন কোন আসন? সেই সিদ্ধান্ত নিতে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন।
এই উৎসব ভিন্ন মাত্রা পায় ২৬ নভেম্বর, যেদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৯৮টি আসনের জন্য দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
একজন বিশ্লেষকের মতে, এই নির্বাচনে না গেলে বিএনপি "ছত্রখান" হয়ে যেতে পারে। আরেকজন বিশ্লেষক বলছেন, সমস্ত প্রতিকূলতা বিএনপিকে বরঞ্চ সাংগঠনিকভাবে আরো "শক্তিশালী" করে তুলছে।
বিশ্লেষকদের চোখে এই নির্বাচনটিও হতে যাচ্ছে "এক তরফা" যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা নিয়েও পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন মত।
[caption id="attachment_8842" align="aligncenter" width="593"] বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী[/caption]
বিএনপি অফিস তালাবন্ধ
আর একই সময়ে নয়াপল্টনে আপাত শুনশান পুরনো এক ভবনে ঝুলছিল তালা। সামনে কড়া পুলিশ প্রহরা। এটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দলের বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতাই আত্মগোপনে। মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় ও শীর্ষস্থানীয় কুড়িজন নেতা কারাবন্দী।
এমন এক সময়ের কথা বলছি, যে সময়টিতে একটি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। যে কোন রাজনৈতিক দলের এই সময়টাতে মহা ব্যস্ততায় থাকার কথা। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব।
কিন্তু ১৫ নভেম্বর তফসিল হয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আরো কিছু বিরোধী দল নির্বাচন নিয়ে একেবারেই তৎপর নয়। বরং, তারা মাঠের আন্দোলনে ব্যস্ত।
সেই ২৮ অক্টোবর থেকে টানা হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচী পালন করে আসছে বিএনপি। তারা সরকারের পতন চায়। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এবং মহাসচিবসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি চায়।
নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়ণপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা যখন শেষ হব হব করছে, তখন পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোন আগ্রহ চোখে পড়েনি।
"গেলে তো আগেই আপনারা জানতে পারতেন", বলছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
"দলের প্রস্তুতি থাকে, নমিনেশন ফর্ম ছাড়া হয়। যখন এটা দলের পক্ষ থেকে করা হয়নি তখন নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করা যায় আমরা এই প্রহসনের নির্বাচন, পাতানো নির্বাচন এবং এই একতরফা নির্বাচন বর্জন করছি এবং সেটা প্রতিহত করার জন্য আমরা রাজপথে আন্দোলনে কর্তব্যরত আছি,’’ ভিওএ’র সাথে আলাপকালে তিনি বলেন।
এর আগে ২০১৪ সালেও নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। সেবারও দলটি রাজপথে থেকে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল। সেই নির্বাচনটি হয়েছিল সহিংসতাসঙ্কুল।
পাঁচই জানুয়ারি ২০১৪ সালে ভোটগ্রহণের দিনেই বাংলাদেশে সহিংসতায় নিহত হয়েছিল অন্তত ১৮ জন মানুষ।
[caption id="attachment_8844" align="aligncenter" width="692"] সক্রিয় ভূমিকাঃ ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সুষ্ঠু ভোটের বার্তা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন[/caption]
বিএনপির উভয় সংকট
বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে অনড় থেকেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট নামের নির্বাচনী জোট সেবার মোটে আটটি আসনে জেতে। বিএনপি ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনে এবং একে 'নিশিরাতের ভোট' বলে বর্ণনা করে।
ওই নির্বাচনে যদিও বিএনপি যোগ দিতে চায়নি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গণফোরামের ড. কামাল হোসেনকে সামনে এনে ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি নির্বাচনী জোট গঠন করে আন্দোলনরত দলটি।
অবশ্য ওই নির্বাচনে যোগ না দিলে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের একটি আশঙ্কা তৈরি হত। কারণ, বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ ধারায় বলা আছে, কোন রাজনৈতিক দল যদি পরপর দুটি সংসদ নির্বাচনে যোগ না দেয় তাহলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হবে।
"বিএনপিতো ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়", বলছেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৮ সালে নির্বাচনে গেল, সংলাপে বসল, আলোচনাও করলো, "তারপরে তাদের হাতে যেভাবে ছয় সাতটা সিট ধরিয়ে দিল, এটাতো খুব ন্যাক্কারজনক কাজ হয়েছে।
‘’বিএনপিতো ছয়টা বা সাতটা সিট পাওয়ার দল না," ভিওএকে তিনি বলেন।
[caption id="attachment_8845" align="aligncenter" width="820"] নির্বাচন কমিশন বলছে পুনঃতফসিল করা যাবে কিন্তু ভোটের তারিখ বদলানো যাবে না[/caption]
নির্বাচন পেছানোর সুযোগ কতটা?
এবার অবশ্য নির্বাচনে যাওয়ার "প্রশ্নই আসে না", বলছেন রুহুল কবির রিজভী।
তবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল ২৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলে তফসিল বদলানো যেতে পারে – তবে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।
এর আগে, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার বরাত দিয়ে গত ২০শে নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলো খবর দিয়েছিল, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে এলে নির্বাচন কমিশন পুনঃতফসিল দেয়ার কথা বিবেচনা করবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের নজির উল্লেখ করে বলছেন, "একটা সুযোগ তো থাকেই"।
"ভোটের তারিখ ঠিক রেখে মনোনয়নপত্র দাখিল বা বাছাইয়ের সময়সীমা দুএকদিন এদিক সেদিক করা যেতেই পারে"।
কিন্তু একে "আবারও জেনেশুনে বিষপান করার মতো অবস্থা" হিসেবে বর্ণনা করেছেন রিজভী।
তিনি বলেন, "শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করলে সেই নির্বাচন কত মর্মান্তিক খারাপ পরিণতি হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে রয়েছে"।
আওয়ামী লীগ বলছে, তারা এখন আর বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য চেষ্টা করবে না।
"চাইলে তারা আসতে পারে, না চাইলে না আসতে পারে,’’ বলছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারাণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।
‘’সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কারো জন্য সেটা বসে থাকবে না", ভিওএকে বলেন মাহবুবুল আলম হানিফ।
নির্বাচন নিয়ে বিবৃতির লড়াই
আসন্ন নির্বাচন ও এই নির্বাচনের তফসিলকে 'একতরফা' হিসেবে উল্লেখ করে শত শত মানুষের সাক্ষর করা দুটি বিবৃতি নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কদিন বেশ আলোচনা চলেছে।
এরমধ্যে একটি বিবৃতি ২৩ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যেখানে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, কৃষিবিদ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার ৫৮৬ জন ব্যক্তি সই করেন।
তারা বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে লেখেন, 'একতরফা নির্বাচন দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে'। তারা আরো লেখেন, 'সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে পথে হাঁটছে তাতে জনমনে এই ধারণা স্পষ্ট ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত প্রহসনের নির্বাচন হবে। এর পরিণতি কখনো দেশের জন্য ভাল হবে না"।
অনেকটা একই রকম উদ্বেগ জানিয়ে ১৪১ জন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আরেকটি বিবৃতি দেন। এটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ২২ নভেম্বর। এই সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকায় বেশ কয়েকজন সচিব, পুলিশ প্রধান, এটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার সাবেক কর্মতকর্তারা রয়েছেন।
[caption id="attachment_8846" align="aligncenter" width="763"] কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন জুলাই মাসের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন[/caption]
আলী রীয়াজের ‘কম্বোডিয়া মডেল’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ আসন্ন এই নির্বাচনকে "সাজানো" বলে বর্ণনা করছেন।
তিনি ভিওএকে বলেন, "বাংলাদেশে এখন যে মডেলে কথিত নির্বাচন করার চেষ্টা করা হচ্ছে এটা হচ্ছে কম্বোডিয়া মডেল। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে সেখানে সাজানো নির্বাচন করা"।
ড. রীয়াজ বলেন, "প্রধান বিরোধীদলকে বাদ দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম নিপীড়ন চালিয়ে, তাদের নেতৃবৃন্দকে আটক করে, ঝড়ের গতিতে সমস্ত রকম বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে, তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার পথ-পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপরে যেই নির্বাচন, সে নির্বাচনকে আমরা কি অর্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলব? কি অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচন বলব?"
আওয়ামী লীগ কী বলছে?
আওয়ামী লীগ বলছে, সব পক্ষ থেকেই বারবার আহ্বান করা হয়েছে বিএনপিকে নির্বাচনে যোগ দেয়ার জন্য, কিন্তু বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি কখনো।
আওয়ামী লীগের মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, তারা এর আগে বারবার বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন আহ্বান করেছে আলোচনার জন্য, কিন্তু বিএনপি আগ্রহ দেখায়নি তাতে।
এমনকি রাষ্ট্রপতিও আলোচনার জন্য ডেকেছেন, আসেনি তারা।
"সময় কারো জন্য বসে থাকে নাকি," বলেন হানিফ।
বিএনপি "আইসিইউতে যাবে"?
"আগামীতে বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আইসিইউতে যাবে"। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য ছাপা হয়েছিল গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দ্য ডেইলি স্টারে। আইসিইউ হচ্ছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র যেখানে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদও মনে করেন, আগামী নির্বাচনে যোগ না দেয়া বিএনপির জন্য খুবই নেতিবাচক হবে।
"তারা গত সতের বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। এই ধরণের একটা দল বেশিদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলে কর্মী ধরে রাখা সম্ভব না", বলছেন মহিউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি
তবে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, "সাংগঠনিকভাবে সমস্ত রকম প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা তো বরং তাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতেই দেখছি।”
"বিএনপির উপরে চাপ প্রয়োগ করে, বিএনপির লোকজনকে নতুন কিংস পার্টিতে যুক্ত করে নির্বাচন করা হবে এরকম পরিকল্পনার কথাই তো শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
‘’ফলে আমি দেখতে পাচ্ছি যে, সমস্তরকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে এবং এটা তাদের সাংগঠনিক শক্তি প্রমাণ করে,’’ বলেন প্রফেসর রীয়াজ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে
বিএনপি ২০১৪ সালের যে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত ছিল, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। বিশ্বজুড়েই এই নির্বাচনকে একতরফা বলে অভিহিত করা হয়েছিল।
পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনও ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল।
কিন্তু দুটি নির্বাচনেই পার করে আওয়ামী লীগ ঠিকঠাক মেয়াদ শেষ করেছিল এবং দৃশ্যত আন্তর্জাতিক চাপ সামালও দিয়েছিল।
মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, এবারও আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিতে পারবে।
"বাইরের দেশগুলো তো বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার কী হল, তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। তারা দেখে তাদের ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক ইন্টারেস্ট। ওইটা সার্ভ হলেই হল। সেটা ভারতই হোক আর আমেরিকাই হোক," তিনি বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ‘দর্শক হবে না’
তবে এই ইস্যুতেও ভিন্নমত প্রফেসর আলী রীয়াজের।
তার মতে, আগের দুটি নির্বাচনের সময়কার বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে এখনকার বৈশ্বিক পরিস্থিতির তফাত আছে।
প্রফেসর রীয়াজ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে "এই সরকারের অবস্থান এবং গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারণে চীনের প্রভাব বাড়ছে। এখন এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন করলে চীনের প্রভাব যে আরও বাড়বে, সেটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সহিংসতার আশঙ্কা কতটা
নির্বাচন যতটা ঘনিয়ে আসছে ততই মানুষের মধ্যে শঙ্কা দানা বাঁধছে, আসলে কী হবে?
বিএনপি তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে করে ক্রমাগত হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচী দিয়ে যাচ্ছে।
তারা শুধু নির্বাচন বর্জনই করছে না, ২০১৪ সালের মত এবারও নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রায় ১০ বছর আগে ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে বাংলাদেশজুড়ে এমন সহিংসতা হয়েছিল যে, শুধুমাত্র ভোটের দিনের সহিংসতায়ই ১৮জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
মিডিয়াতে পুলিশের বিজ্ঞপ্তি
এবার অবশ্য অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা ছাড়া নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা তেমন দেখা যাচ্ছে না। তবে, গত আটাশে অক্টোবর থেকে তেইশে নভেম্বর পর্যন্ত ২৯০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে তথ্য দিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি এই সব "নাশকতার" ঘটনার পেছনেই বিএনপির হাত আছে।
[caption id="attachment_8847" align="aligncenter" width="776"] যুব লীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে বিএনপি[/caption]
‘যুবলীগের কোথাকার নেতা’
তবে বিএনপি নাশকতার অভিযোগ অস্বীকার করছে। তাদের বক্তব্য তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, "রাষ্ট্র যখন অমানবিক রাষ্ট্র হয়, তখন নানা ধরনের এজেন্ট দিয়ে নাশকতা করে তারা সেটার দায় চাপানোর চেষ্টা করে।"
"আমরা ডকুমেন্টসহ এটা মিডিয়ার সামনে জানিয়েছি। এখানে তো আর কিছু বলার নাই। কারণ অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে যারা ধরা পড়ছে, তারা যুবলীগের কোথাকার না কোথাকার নেতা, সবকিছুই আমরা ক্রমাগতভাবে দেখিয়েছি।"
এক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে দলের কর্মসূচী জানিয়ে আসছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
গোপন "নাশকতা"র অভিযোগ ছাড়া এসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার মত দৃশ্যমান কোন তৎপরতা নেই তাদের।
মাঠে আছে আওয়ামী লীগ
বরঞ্চ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি বিরোধীদের প্রতিহত করার জন্য সশরীরে মাঠে আছে আওয়ামী লীগ।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সড়ক অবরোধের মধ্যে একটি দিনে আমি ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পর্যন্ত সোয়াশ কিলোমিটার সড়কপথ ভ্রমণ করি।
এমন আন্দোলন করে বিএনপি কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাবে?
রুহুল কবির রিজভী বলেন, "আমাদেরকে বিজয়ী হতে হলে তো সময় লাগতে পারে। কিন্তু আমরা জিতব।"
নির্বাচন "প্রতিহত" করার এই আন্দোলন থেকে কি শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের মত সহিংসতা আবার দেখা যাবে?
রিজভীর বক্তব্য, "আমাদের কর্মসূচি হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি এবং এই কর্মসূচি নিয়েই আমরা এগোতে থাকব"।
বিএনপির বড় ঝুঁকি
আন্দোলনে বিএনপি জিতবে না হারবে, তা বলার সময় হয়তো এখনো হয় নি। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে নির্বাচন দলীয় সরকার না নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে, তার ফয়সালাও সম্ভবত স্বল্পমেয়াদে হবে না।
অধ্যাপক রীয়াজের মত বিশ্লেষকর মনে করছেন, আন্দোলন বিএনপিকে আরো শক্তিশালী করবে।
সম্পাদক : মাহমুদ আনোয়ার হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক : জুবায়ের রহমান চৌধুরী
বার্তা সম্পাদক : খালেকুজ্জামান পান্নু
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : বাড়ি # ৬৩, সড়ক # ২১,
রূপনগর আ/এ, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
বাণিজ্যিক কার্যালয় : গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, ঢাকা-১২১২।
ফোন : 01731-488397,01552381515, 01751345643
হোয়াটসএ্যাপ : 01826567123
Copyright © 2024 সারাবেলার সংবাদ. All rights reserved.