ঢাকা ০৫:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বায়ার্নকে কাঁদিয়ে ফাইনালে রিয়াল

ক্রীড়াঙ্গন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪ ১৮ বার পঠিত

পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মানুয়েল নয়ারের এক ভুলে ঘুরে গেল ম্যাচের মোড়। বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোলে আরেকটি ফিরে আসার অবিশ্বাস্য গল্প রচনা করে ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা’ রিয়ালকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন হোসেলু।

বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বায়ার্নকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় ফাইনালের জায়গা করে নিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। বায়ার্নের একমাত্র গোলটি করেন আলফোন্সো ডেভিস।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুখোমুখি শেষ ছয় লড়াইয়ে বায়ার্নের বিপক্ষে চতুর্থ জয় পেল রিয়াল, অন্য দুটি হয়েছিল ড্র।
প্রথম লেগে একদম প্রথম মিনিট থেকেই টানা আক্রমণে রিয়ালকে ব্যস্ত রেখেছিল বায়ার্ন। এই লেগে হয় ঠিক উল্টোটা। ঘরের মাঠে উজ্জীবিত স্প্যানিশ ক্লাবটি চেপে ধরে প্রতিপক্ষকে। বলার মত প্রথম আক্রমণে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল দলটি, তবে দুই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের কেউই তা কাজে লাগাতে পারেননি।
দানি কারভাহালের পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর ডান দিক থেকে কোনাকুনি শট নিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস, শেষ মুহূর্তে তা মানুয়েল নয়ারের হাতে লেগে ফিরে আসে পোস্টে লেগে। ফিরতি বল পেয়ে গিয়েছিলেন কাছে থাকা রদ্রিগো, তবে তার নেওয়া সোজাসুজি শটও আটকে দেন বায়ার্ন গোলরক্ষক।
মিনিট দুয়েক বাদে বক্সের ভেতর দেওয়া ভিনিসিয়ুসের শট চলে যায় অনেক বাইরে। প্রথম লেগের প্রথম ২৫ মিনিটে বায়ার্নের ছয়টি গোলের জন্য শটের বিপরীতে রিয়াল একটিও নিতে পারেনি। আর এই দফায় একই সময়ের মধ্যে লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা শট নেয় চারটি, লক্ষ্যে রাখে দুটি। বায়ার্ন পারেনি একটি শটও নিতে।
২৭তম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বায়ার্নের আক্রমণের অন্যতম ভরসা সের্জ গিনাব্রি। তার জায়গায় নামেন ডিফেন্ডার ডেভিস। পরের মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রচেষ্টায় বায়ার্নকে লিড এনে দেওয়ার কাছাকাছি ছিলেন হ্যারি কেইন। প্রতিপক্ষের একজনের গায়ে লেগে বক্সের ঠিক বাইরে বল থেকে তার নেওয়া ভলি শেষ মুহূর্তে ক্লিয়ার করেন আন্দ্রে লুনিন।
প্রথমার্ধে রিয়ালের সেরা খেলোয়াড় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ৪০তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে কোনাকুনি ক্রস বাড়িয়েছিলেন। ছয় গজের ভেতরে থাকলেও বলের নাগাল পাননি রদ্রিগো। তবে কার্ল করে বল যাচ্ছিল পোস্টের ভেতরেই, তার আগে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে বিপদমুক্ত করেন নয়ার।
বিরতির পরও বায়ার্নকে দ্বিতীয় সেরা দল বানিয়ে আক্রমণ অব্যাহত রাখে রিয়াল। ধারার বিপরীতে ৫২তম মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার-এটাক থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর থেকে শট নিয়েছিলেন কেইন, যা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে আটকান লুনিন।
খানিক বাদে দারুণ স্কিলের প্রদর্শনীতে বায়ার্ন ডিফেন্স তছনছ করে ছয় গজের ভেতর থাকা রদ্রিগোর উদ্দেশ্যে বল বাড়ান ভিনিসিয়ুস, তবে তার বাঁ পায়ের শট চলে যায় বাইরে। ৫৯তম মিনিটে রদ্রিগোর বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি-কিক ফেরান ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা নয়ার।
পরের মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ভিনিসিয়ুসের নেওয়া জোড়াল শট কর্নারের বিনিময়ে সেভ করেন নয়ার। ৬৬তম মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে জামাল মুসিয়ালার নেওয়া শট এক হাতে ক্লিয়ার করেন লুনিন।
দুই মিনিট পর রিয়ালকে স্তব্ধ করে দেন ডেভিস। বক্সের বেশ বাইরে বল পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন কানাডার এই প্রতিভাবান ফুটবলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি ডেভিসের প্রথম গোল। ৭১তম মিনিটে রিয়াল আত্নঘাতী গোল পেলেও ফাউলের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
খানিক পর বক্সের বাঁ দিক থেকে ভালো অবস্থান থেকে শট নিয়েছিলেন কেইন, তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। গোল শোধে মরিয়া রিয়াল ৮১তম মিনিটে ফেদে ভালভের্দের বদলি হিসেবে নামায় স্কোয়াডের একমাত্র স্বীকৃত স্ট্রাইকার হোসেলুকে। কে জানত, ক্ষনিকের ম্যাজিকে তিনি পুরো লড়াইয়ের ভাগ্য গড়ে দিতে যাচ্ছেন!
প্রথম মুহূর্তটা আসে ৮৮তম মিনিটে। দূর থেকে ভিনিসিয়ুসের নেওয়া জোড়াল শট নয়ার ঠেকিয়ে দিলেও এরপর হাত ফসকে বল চলে যায় আগুয়ান হোসেলুর সামনে। আলতো টোকায় বল জালে পাঠাতে ভুল হয়নি এই স্প্যানিয়ার্ডের।
লড়াইয়ে সমতা ফিরিয়ে যেন প্রাণ ফিরে পায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। সেটা যেন অনূদিত হয় খেলোয়াড়দের মধ্যেও। ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে বক্সে ক্রস বাড়িয়েছিলেন আন্টোনিও রুডিগার। ফাঁকায় থাকা হোসেলু রিয়ালকে উল্লাসে ভাসিয়ে বল পাঠান জালে। বায়ার্ন খেলোয়াড়রা অফসাইডের দাবি জানালেও ভিএআর দেখে তা নাকচ করেন রেফারি।
৯ মিনিটের ইনজুরি টাইম গড়ায় বাড়তি আরও মিনিট খানেক ধরে। এই সময়ে বায়ার্নের গোলের আপ্রাণ চেষ্টা রুখে দিয়ে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পা রাখে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল।
আগামী ২ জুনের ফাইনালে কার্লো আনচেলত্তির দলের প্রতিপক্ষ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বায়ার্নকে কাঁদিয়ে ফাইনালে রিয়াল

আপডেট সময় : ০৪:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মানুয়েল নয়ারের এক ভুলে ঘুরে গেল ম্যাচের মোড়। বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোলে আরেকটি ফিরে আসার অবিশ্বাস্য গল্প রচনা করে ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা’ রিয়ালকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন হোসেলু।

বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বায়ার্নকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় ফাইনালের জায়গা করে নিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। বায়ার্নের একমাত্র গোলটি করেন আলফোন্সো ডেভিস।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুখোমুখি শেষ ছয় লড়াইয়ে বায়ার্নের বিপক্ষে চতুর্থ জয় পেল রিয়াল, অন্য দুটি হয়েছিল ড্র।
প্রথম লেগে একদম প্রথম মিনিট থেকেই টানা আক্রমণে রিয়ালকে ব্যস্ত রেখেছিল বায়ার্ন। এই লেগে হয় ঠিক উল্টোটা। ঘরের মাঠে উজ্জীবিত স্প্যানিশ ক্লাবটি চেপে ধরে প্রতিপক্ষকে। বলার মত প্রথম আক্রমণে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল দলটি, তবে দুই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের কেউই তা কাজে লাগাতে পারেননি।
দানি কারভাহালের পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর ডান দিক থেকে কোনাকুনি শট নিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস, শেষ মুহূর্তে তা মানুয়েল নয়ারের হাতে লেগে ফিরে আসে পোস্টে লেগে। ফিরতি বল পেয়ে গিয়েছিলেন কাছে থাকা রদ্রিগো, তবে তার নেওয়া সোজাসুজি শটও আটকে দেন বায়ার্ন গোলরক্ষক।
মিনিট দুয়েক বাদে বক্সের ভেতর দেওয়া ভিনিসিয়ুসের শট চলে যায় অনেক বাইরে। প্রথম লেগের প্রথম ২৫ মিনিটে বায়ার্নের ছয়টি গোলের জন্য শটের বিপরীতে রিয়াল একটিও নিতে পারেনি। আর এই দফায় একই সময়ের মধ্যে লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা শট নেয় চারটি, লক্ষ্যে রাখে দুটি। বায়ার্ন পারেনি একটি শটও নিতে।
২৭তম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বায়ার্নের আক্রমণের অন্যতম ভরসা সের্জ গিনাব্রি। তার জায়গায় নামেন ডিফেন্ডার ডেভিস। পরের মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রচেষ্টায় বায়ার্নকে লিড এনে দেওয়ার কাছাকাছি ছিলেন হ্যারি কেইন। প্রতিপক্ষের একজনের গায়ে লেগে বক্সের ঠিক বাইরে বল থেকে তার নেওয়া ভলি শেষ মুহূর্তে ক্লিয়ার করেন আন্দ্রে লুনিন।
প্রথমার্ধে রিয়ালের সেরা খেলোয়াড় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ৪০তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে কোনাকুনি ক্রস বাড়িয়েছিলেন। ছয় গজের ভেতরে থাকলেও বলের নাগাল পাননি রদ্রিগো। তবে কার্ল করে বল যাচ্ছিল পোস্টের ভেতরেই, তার আগে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে বিপদমুক্ত করেন নয়ার।
বিরতির পরও বায়ার্নকে দ্বিতীয় সেরা দল বানিয়ে আক্রমণ অব্যাহত রাখে রিয়াল। ধারার বিপরীতে ৫২তম মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার-এটাক থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর থেকে শট নিয়েছিলেন কেইন, যা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে আটকান লুনিন।
খানিক বাদে দারুণ স্কিলের প্রদর্শনীতে বায়ার্ন ডিফেন্স তছনছ করে ছয় গজের ভেতর থাকা রদ্রিগোর উদ্দেশ্যে বল বাড়ান ভিনিসিয়ুস, তবে তার বাঁ পায়ের শট চলে যায় বাইরে। ৫৯তম মিনিটে রদ্রিগোর বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি-কিক ফেরান ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা নয়ার।
পরের মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ভিনিসিয়ুসের নেওয়া জোড়াল শট কর্নারের বিনিময়ে সেভ করেন নয়ার। ৬৬তম মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে জামাল মুসিয়ালার নেওয়া শট এক হাতে ক্লিয়ার করেন লুনিন।
দুই মিনিট পর রিয়ালকে স্তব্ধ করে দেন ডেভিস। বক্সের বেশ বাইরে বল পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন কানাডার এই প্রতিভাবান ফুটবলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি ডেভিসের প্রথম গোল। ৭১তম মিনিটে রিয়াল আত্নঘাতী গোল পেলেও ফাউলের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
খানিক পর বক্সের বাঁ দিক থেকে ভালো অবস্থান থেকে শট নিয়েছিলেন কেইন, তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। গোল শোধে মরিয়া রিয়াল ৮১তম মিনিটে ফেদে ভালভের্দের বদলি হিসেবে নামায় স্কোয়াডের একমাত্র স্বীকৃত স্ট্রাইকার হোসেলুকে। কে জানত, ক্ষনিকের ম্যাজিকে তিনি পুরো লড়াইয়ের ভাগ্য গড়ে দিতে যাচ্ছেন!
প্রথম মুহূর্তটা আসে ৮৮তম মিনিটে। দূর থেকে ভিনিসিয়ুসের নেওয়া জোড়াল শট নয়ার ঠেকিয়ে দিলেও এরপর হাত ফসকে বল চলে যায় আগুয়ান হোসেলুর সামনে। আলতো টোকায় বল জালে পাঠাতে ভুল হয়নি এই স্প্যানিয়ার্ডের।
লড়াইয়ে সমতা ফিরিয়ে যেন প্রাণ ফিরে পায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। সেটা যেন অনূদিত হয় খেলোয়াড়দের মধ্যেও। ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে বক্সে ক্রস বাড়িয়েছিলেন আন্টোনিও রুডিগার। ফাঁকায় থাকা হোসেলু রিয়ালকে উল্লাসে ভাসিয়ে বল পাঠান জালে। বায়ার্ন খেলোয়াড়রা অফসাইডের দাবি জানালেও ভিএআর দেখে তা নাকচ করেন রেফারি।
৯ মিনিটের ইনজুরি টাইম গড়ায় বাড়তি আরও মিনিট খানেক ধরে। এই সময়ে বায়ার্নের গোলের আপ্রাণ চেষ্টা রুখে দিয়ে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পা রাখে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল।
আগামী ২ জুনের ফাইনালে কার্লো আনচেলত্তির দলের প্রতিপক্ষ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।

Facebook Comments Box