ঢাকা ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বায়ারের শর্তে পোশাক মালিকদের উদ্বেগ

সারাবেলা সংবাদ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১১:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ৭৩ বার পঠিত

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানির ক্ষেত্রে একজন উৎপাদনকারীর ঋণপত্রে সম্প্রতি একজন ‘বায়ারের শর্ত’ দেয়া নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।

সেখানে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, “জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোন দেশ, এলাকা, বা পক্ষের সাথে কোন লেনদেন আমরা করবো না। নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর জন্য কোন বিলম্ব, নন-পারফরমেন্স বা তথ্য প্রকাশের বিষয়ে আমরা দায়ী নই।”

পোশাক-শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, এই শর্ত একজন মাত্র উৎপাদকের এলসিতে দেয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশের পুরো পোশাক শিল্পের উপর দেয়া কোন নিষেধাজ্ঞা নয় এবং নিষেধাজ্ঞার সাথে এর কোন সংশ্লিষ্টতাও নেই।

বিজিএমই এর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, তারা মনে করছেন, এটা আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একই সাথে এটাকে বড় করে দেখার কোন অবকাশ নেই।

তিনি বলেন, “এখন সময়টা খারাপ, এটা নিয়ে যেহেতু বারবার কথা হচ্ছে, জিনিসটা এজন্যই অতি বড় করে, অতি মাত্রায়, অতিরঞ্জিত হয়ে ফলাও হচ্ছে, আর কিছু না।”

তৈরি পোশাক শিল্প বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, বায়ার বা যারাই এই শর্ত জুড়ে দিক না কেন, এটি আসলে বর্তমান প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

বায়ারের শর্ত দেয়ার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বুধবার রাতে একটি বিবৃতি দেয় বিজিএমইএ। এতে বলা হয়, বিজিএমইএ-এর এক সদস্যের কাছে বিদেশি এক বায়ারের দেয়া ঋণপত্রের একটি কপি তাদের নজরে এসেছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বুধবার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।

সিপিডি’র ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান

শর্ত ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’?

গত ২০শে নভেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সতর্ক করে বলেছিলো যে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে যে স্মারক ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশ তার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র তখন বলেছিলো, বিশ্ব জুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদের উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা-সহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।

তবে সরকার অবশ্য সেসময় বলেছিলো যে, এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই কারণ এটি বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি।

এরপরে গত ২১শে নভেম্বর ইউরোপীয় কমিশন তাদের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। এসব বিষয়ে নিয়ে পোশাক-শিল্প সংশ্লিষ্টরা দুশ্চিন্তাতেই ছিলেন। এরপরই আসে বায়ারদের এই শর্ত দেয়ার খবর।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’এর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এলসিতে অনেক ধরণের শর্ত থাকে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কী ধরণের শর্ত দিবে সেটা তাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতির বিষয়। এটার সাথে নিষেধাজ্ঞার কোন সম্পর্ক নাই।”

“আর যদি নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে সেই মুহূর্ত থেকেই সব ধরণের লেন-দেন-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কোন বায়ারের শর্তের আর দরকার হবে না।”

তাই এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি।

“কোন একটা বায়ার যার নামটাও আমরা ভাল মতো জানি না এখনো, যে কোন ছোট একটা অর্ডার কোন একটি বায়ারের কাছ থেকে এটা আসতেই পারে বাইরে থেকে। সেটাকে একটা ক্লজ হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়ে এটাকে বড় করে দেখার আসলে অবকাশই নেই”, বলছিলেন তিনি।

তিনি মনে করেন, এই শর্ত আসলে এক ধরণের প্রোপাগান্ডার অংশ। এর কারণে এখন বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা তৈরি হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকাররা এলসি বা ঋণপত্রে এধরণের শর্ত দেখলে মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে নাও চাইতে পারে।

দ্বিতীয়ত, যে বায়াররা এর আগে এলসির এ ধরণের শর্ত নিয়ে মাথা ঘামাতো না, তারাও এখন এই শর্ত দিবে।

বিজিএমইএর এই পরিচালক মনে করেন, এটা আসলে ওই বায়ারের অতি সাবধানী একটি পদক্ষেপ মাত্র।

“সুতরাং এটা দেয়া মানেই স্যাংকশন হয়ে যাওয়া, এটার সাথে রিলেট করা, কিছুই না, একটা বায়ার আসলে অতি সাবধানতা অবলম্বন করে হয়তো অতি উৎসাহে এটা করেছে। স্যাংকশন হলে এটা দেয়া, না দেয়া কিছুই ম্যাটার করে না।”

তবে এই ধরণের শর্ত মোটেও সাধারণ কোন ঘটনা নয় বলেও জানান তিনি। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের উন্নতি, সুনাম এবং পিছিয়ে রাখার জন্য মাঝে মধ্যেই আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে এ ধরণের কাজ হয়।

“এধরণের ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্সের শিকার এ খাত হয়েই থাকে,” বলেন তিনি।

“এটা নিয়মিত কোন ঘটনা না, কোন এলসির মধ্যে এ ধরণের কোন শর্তও থাকে না। এজন্যই এটাকে কিছুটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অতি উৎসাহী বলে মনে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “শুধু বাংলাদেশের জন্য যদি করে থাকে তাহলে আমাদেরকে ডিরেক্টলি অর ইনডিরেক্টলি চাপে ফেলানোর জন্যই এটি করা হচ্ছে বা হয়েছে বলে মনে করি।”

এ ধরণের বায়ারদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে ফ্যাক্টরি মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কারণ তারা মনে করছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই বায়ার বিক্রেতাদেরকে কোনও না কোনওভাবে হয়রানি করার জন্য কাজটা করছে।

মহিউদ্দিন রুবেল, পরিচালক, বিজিএমইএ

সতর্কবার্তা?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় কোন বায়ারের ক্ষেত্রে, একজন মাত্র বায়ারও যদি এ ধরণের শর্ত দিয়ে থাকে তাহলেও তা নিয়ে উদ্বেগের জায়গা আছে।

কারণ এর মানে হচ্ছে, ওই বায়ার বাংলাদেশের পণ্য কিনতে নিরাপদ বোধ করছে না। আর সেটাও একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ তার দেখাদেখি অন্য বায়াররাও একই ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে আশঙ্কা করছেন তারা। এ ধরনের পদক্ষেপে আতঙ্কিত না হলেও দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
প্লামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমই এর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, গতকাল যে খবরটা তারা জানতে পেরেছেন তা নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত ছিলেন এবং সেখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু উপাদানও ছিল।

“লাস্ট ২৪ বা ৩৬ ঘণ্টা আমি খুব টেনশনেই ছিলাম।”

তিনি জানান, তিনি এ সম্পর্কিত নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংগ্রহ করেছেন এবং তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে, এটি আসলে বাংলাদেশ কেন্দ্রিক কোন বিষয় না।এটি জানার পর তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন বলেও জানান।

“চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে এটাকে যেভাবে ইন্টারলিংকড করা হইছে, এটা হয়তো ওইভাবে সম্পৃক্ত না বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।”এরপরেও এটা নিয়ে যেহেতু আলোচনা আছে তাই এই বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরা উচিত এবং কোন ধরণের যাতে ফাঁক-ফোঁকর না থাকে তা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি’র ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্ত সতর্কবার্তা ও সাবধান-বানী আসছে, তার সাথে এটিকে মিলিয়ে দেখতে গেলে বলতে হবে, কোনও কোনও বায়ার এখন থেকেই একটু সাবধান হতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, কোনও বায়ার যদি কোন একটা অর্ডার দিয়ে থাকে এবং তার পরে যদি কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে যাতে তার কোন অসুবিধা না হয়, সেটিই তারা নিশ্চিত হতে চাইছে। কারণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে কোনও পোশাক বাংলাদেশ থেকে যেতে পারবে না। আর এর ফলে ওই প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে পড়বে।

“এই লস ঠেকাতে সে বা ব্যাংক এই শর্তটা দিয়েছে। এটা অতি সাবধানতার দিক থেকে হয়তো বা তারা এটা করেছে।”

তিনি মনে করেন, এটা আসলে সাধারণ কোন ঘটনা নয়। কারণ ব্যাংক যদি দিয়ে থাকে, তাহলে তারাও হয়তো আইনি পরামর্শের পর সাবধান হওয়ার জন্যই চুক্তির শর্ত হিসেবে দিয়ে থাকতে পারে।

“একটা মাত্র ব্যাংক বা একটা মাত্র বায়ার হয়তো এটা দিয়েছে, কিন্তু এটাকে যদি আমরা বৃহত্তর একটা প্রেক্ষিতে যদি দেখি তাহলে তো অবশ্যই এটা একটা সতর্কবার্তা।”

মোস্তাফিজুর রহমান মনে করছেন এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হবে যে, কোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসার মতো পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

 

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বায়ারের শর্তে পোশাক মালিকদের উদ্বেগ

আপডেট সময় : ১১:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানির ক্ষেত্রে একজন উৎপাদনকারীর ঋণপত্রে সম্প্রতি একজন ‘বায়ারের শর্ত’ দেয়া নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।

সেখানে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, “জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোন দেশ, এলাকা, বা পক্ষের সাথে কোন লেনদেন আমরা করবো না। নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর জন্য কোন বিলম্ব, নন-পারফরমেন্স বা তথ্য প্রকাশের বিষয়ে আমরা দায়ী নই।”

পোশাক-শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, এই শর্ত একজন মাত্র উৎপাদকের এলসিতে দেয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশের পুরো পোশাক শিল্পের উপর দেয়া কোন নিষেধাজ্ঞা নয় এবং নিষেধাজ্ঞার সাথে এর কোন সংশ্লিষ্টতাও নেই।

বিজিএমই এর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, তারা মনে করছেন, এটা আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একই সাথে এটাকে বড় করে দেখার কোন অবকাশ নেই।

তিনি বলেন, “এখন সময়টা খারাপ, এটা নিয়ে যেহেতু বারবার কথা হচ্ছে, জিনিসটা এজন্যই অতি বড় করে, অতি মাত্রায়, অতিরঞ্জিত হয়ে ফলাও হচ্ছে, আর কিছু না।”

তৈরি পোশাক শিল্প বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, বায়ার বা যারাই এই শর্ত জুড়ে দিক না কেন, এটি আসলে বর্তমান প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

বায়ারের শর্ত দেয়ার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বুধবার রাতে একটি বিবৃতি দেয় বিজিএমইএ। এতে বলা হয়, বিজিএমইএ-এর এক সদস্যের কাছে বিদেশি এক বায়ারের দেয়া ঋণপত্রের একটি কপি তাদের নজরে এসেছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বুধবার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।

সিপিডি’র ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান

শর্ত ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’?

গত ২০শে নভেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সতর্ক করে বলেছিলো যে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে যে স্মারক ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশ তার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র তখন বলেছিলো, বিশ্ব জুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদের উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা-সহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।

তবে সরকার অবশ্য সেসময় বলেছিলো যে, এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই কারণ এটি বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি।

এরপরে গত ২১শে নভেম্বর ইউরোপীয় কমিশন তাদের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। এসব বিষয়ে নিয়ে পোশাক-শিল্প সংশ্লিষ্টরা দুশ্চিন্তাতেই ছিলেন। এরপরই আসে বায়ারদের এই শর্ত দেয়ার খবর।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’এর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এলসিতে অনেক ধরণের শর্ত থাকে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কী ধরণের শর্ত দিবে সেটা তাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতির বিষয়। এটার সাথে নিষেধাজ্ঞার কোন সম্পর্ক নাই।”

“আর যদি নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে সেই মুহূর্ত থেকেই সব ধরণের লেন-দেন-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কোন বায়ারের শর্তের আর দরকার হবে না।”

তাই এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি।

“কোন একটা বায়ার যার নামটাও আমরা ভাল মতো জানি না এখনো, যে কোন ছোট একটা অর্ডার কোন একটি বায়ারের কাছ থেকে এটা আসতেই পারে বাইরে থেকে। সেটাকে একটা ক্লজ হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়ে এটাকে বড় করে দেখার আসলে অবকাশই নেই”, বলছিলেন তিনি।

তিনি মনে করেন, এই শর্ত আসলে এক ধরণের প্রোপাগান্ডার অংশ। এর কারণে এখন বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা তৈরি হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকাররা এলসি বা ঋণপত্রে এধরণের শর্ত দেখলে মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে নাও চাইতে পারে।

দ্বিতীয়ত, যে বায়াররা এর আগে এলসির এ ধরণের শর্ত নিয়ে মাথা ঘামাতো না, তারাও এখন এই শর্ত দিবে।

বিজিএমইএর এই পরিচালক মনে করেন, এটা আসলে ওই বায়ারের অতি সাবধানী একটি পদক্ষেপ মাত্র।

“সুতরাং এটা দেয়া মানেই স্যাংকশন হয়ে যাওয়া, এটার সাথে রিলেট করা, কিছুই না, একটা বায়ার আসলে অতি সাবধানতা অবলম্বন করে হয়তো অতি উৎসাহে এটা করেছে। স্যাংকশন হলে এটা দেয়া, না দেয়া কিছুই ম্যাটার করে না।”

তবে এই ধরণের শর্ত মোটেও সাধারণ কোন ঘটনা নয় বলেও জানান তিনি। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের উন্নতি, সুনাম এবং পিছিয়ে রাখার জন্য মাঝে মধ্যেই আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে এ ধরণের কাজ হয়।

“এধরণের ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্সের শিকার এ খাত হয়েই থাকে,” বলেন তিনি।

“এটা নিয়মিত কোন ঘটনা না, কোন এলসির মধ্যে এ ধরণের কোন শর্তও থাকে না। এজন্যই এটাকে কিছুটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অতি উৎসাহী বলে মনে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “শুধু বাংলাদেশের জন্য যদি করে থাকে তাহলে আমাদেরকে ডিরেক্টলি অর ইনডিরেক্টলি চাপে ফেলানোর জন্যই এটি করা হচ্ছে বা হয়েছে বলে মনে করি।”

এ ধরণের বায়ারদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে ফ্যাক্টরি মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কারণ তারা মনে করছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই বায়ার বিক্রেতাদেরকে কোনও না কোনওভাবে হয়রানি করার জন্য কাজটা করছে।

মহিউদ্দিন রুবেল, পরিচালক, বিজিএমইএ

সতর্কবার্তা?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় কোন বায়ারের ক্ষেত্রে, একজন মাত্র বায়ারও যদি এ ধরণের শর্ত দিয়ে থাকে তাহলেও তা নিয়ে উদ্বেগের জায়গা আছে।

কারণ এর মানে হচ্ছে, ওই বায়ার বাংলাদেশের পণ্য কিনতে নিরাপদ বোধ করছে না। আর সেটাও একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ তার দেখাদেখি অন্য বায়াররাও একই ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে আশঙ্কা করছেন তারা। এ ধরনের পদক্ষেপে আতঙ্কিত না হলেও দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
প্লামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমই এর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, গতকাল যে খবরটা তারা জানতে পেরেছেন তা নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত ছিলেন এবং সেখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু উপাদানও ছিল।

“লাস্ট ২৪ বা ৩৬ ঘণ্টা আমি খুব টেনশনেই ছিলাম।”

তিনি জানান, তিনি এ সম্পর্কিত নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংগ্রহ করেছেন এবং তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে, এটি আসলে বাংলাদেশ কেন্দ্রিক কোন বিষয় না।এটি জানার পর তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন বলেও জানান।

“চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে এটাকে যেভাবে ইন্টারলিংকড করা হইছে, এটা হয়তো ওইভাবে সম্পৃক্ত না বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।”এরপরেও এটা নিয়ে যেহেতু আলোচনা আছে তাই এই বিষয়টি যথাযথভাবে তুলে ধরা উচিত এবং কোন ধরণের যাতে ফাঁক-ফোঁকর না থাকে তা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি’র ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্ত সতর্কবার্তা ও সাবধান-বানী আসছে, তার সাথে এটিকে মিলিয়ে দেখতে গেলে বলতে হবে, কোনও কোনও বায়ার এখন থেকেই একটু সাবধান হতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, কোনও বায়ার যদি কোন একটা অর্ডার দিয়ে থাকে এবং তার পরে যদি কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে যাতে তার কোন অসুবিধা না হয়, সেটিই তারা নিশ্চিত হতে চাইছে। কারণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে কোনও পোশাক বাংলাদেশ থেকে যেতে পারবে না। আর এর ফলে ওই প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে পড়বে।

“এই লস ঠেকাতে সে বা ব্যাংক এই শর্তটা দিয়েছে। এটা অতি সাবধানতার দিক থেকে হয়তো বা তারা এটা করেছে।”

তিনি মনে করেন, এটা আসলে সাধারণ কোন ঘটনা নয়। কারণ ব্যাংক যদি দিয়ে থাকে, তাহলে তারাও হয়তো আইনি পরামর্শের পর সাবধান হওয়ার জন্যই চুক্তির শর্ত হিসেবে দিয়ে থাকতে পারে।

“একটা মাত্র ব্যাংক বা একটা মাত্র বায়ার হয়তো এটা দিয়েছে, কিন্তু এটাকে যদি আমরা বৃহত্তর একটা প্রেক্ষিতে যদি দেখি তাহলে তো অবশ্যই এটা একটা সতর্কবার্তা।”

মোস্তাফিজুর রহমান মনে করছেন এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হবে যে, কোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসার মতো পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

 

Facebook Comments Box