মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে বড় সফলতা আর প্রাপ্তি কিছু হতে পারেনা। তবে সেই অর্জনকে এগিয়ে নেয়া, পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে চেতনা ছড়িয়ে দেয়া আরেকটি বড় কাজ। সেই কাজে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার খুবই জরুরি। সেই যাত্রায় বাংলাদেশ এখন কোথায়?
তার কথায়," দেশটা সবার। সবার সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনেতিক উন্নয়ন হয়নি। কিছু মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন।” আর রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশ তিনি। তিনি বলেন," আমি সব সময়ই ভোট দিতে পেরেছি। কিন্তু অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। এমন কেন হলো? তাদের ভোট কারা দিলো! রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম বিভেদ। আমি চাই দল মত নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুক। যার ভোট সে যাতে দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হোক।”
তার কথায়," আয় বৈষম্য বেড়েছে। কিছু মানুষের হাতে সম্পদ চলে গেছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এখানো কোনো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। এর জন্য প্রয়োজন ছিলো শিক্ষা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক পথে সাজাতে পারিনি। এর মূল দায় রাজনীতিবিদদের।”
এই অধ্যাপকের সঙ্গে অনেকটাই একমত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তার মতে," বাংলাদেশের এখন যা পরিস্থিতি তাকে বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় ভূমিকা থাকার দরকার ছিলো। কিন্তু তাদের ভূমিকা আমরা দেখতে পাইনা।”
তিনি বলেন," বঙ্গবন্ধু তো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ক্ষমতার মসনদ ত্যাগ করেছেন এই গণতন্ত্রের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ তো ছিলো একটি ন্যায়ভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্রের জন্য। কিন্তু আমাদের এখানে এখন গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এখন নিম্নগামী। বলতে গেলে উধাও। এর জন্য দায় কার সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো মুক্তিযোদ্ধারা যে ধরনের রাষ্ট্রের জন্য জীবন দিয়েছেন , যুদ্ধ করেছেন তা আমরা পাইনি। এজন্য মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন তাদের হৃদয়েও নিশ্চয়ই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।”
তার কথা," দেশের রাজনীতির এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা বড় দুই দলের মধ্যে কঠিনতম বিভাজন। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে। আমরা আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর সেই আশার জায়গা নেই। যেভাবেই হোক না কেন নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন।”
ব্যারিস্টার ওমর ফারুক যে রাজনৈতিক বিভাজনের কথা বললেন তাকে আরো বিস্তৃত করে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেন মানবাধিকার কশিনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
তার কথায়," স্বাধীনতার এত বছর পরও জাতি এখনো বিভাজিত। এখনো স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়। আমি মনে করি যারা মুক্তি যুদ্ধের চেতনার বিরোধী, যাদের হৃদয়ে পেয়ারে পাকিস্তান তাদের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। এই বিষয়গুলো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও রাজনীতি নিয়ে সংকট থাকবেই।”
তিনি বলেন," গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার এই বিষয়গুলোতে আমাদের অনেক ঘটতি আছে। রাষ্ট্রের যে অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হওয়ার কথা ছিলো তা হয়নি। সংখ্যালঘুদের জন্য আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। এগুলো করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হতে হবে সব কিছুর ভিত্তি। সেখানেই তো আমাদের সমস্যা আছে।”
আর এই প্রজন্মের একজন তরুণ অনুপ দাস পিয়াল। পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কথা," আমাদের এই প্রজন্মের বড় একটি অংশ রাজনীতিকে ঘৃণা করে। এর কারণ তারা রাজনৈতিক বিভাজন, সংঘাত, সংঘর্ষ এই সব দেখে বিরক্ত। তারা রাজনীতির মধ্যে ভালো কিছু দেখেনা। তারা গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার নিয়ে যে সংকট তার উত্তরণ চায়। তার ভোট দিতে চায়। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে তারা বুঝতে পারছেনা। ”
সম্পাদক : মাহমুদ আনোয়ার হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক : জুবায়ের রহমান চৌধুরী
বার্তা সম্পাদক : খালেকুজ্জামান পান্নু
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : বাড়ি # ৬৩, সড়ক # ২১,
রূপনগর আ/এ, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
বাণিজ্যিক কার্যালয় : গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, ঢাকা-১২১২।
ফোন : 01731-488397,01552381515, 01751345643
হোয়াটসএ্যাপ : 01826567123
Copyright © 2024 সারাবেলার সংবাদ. All rights reserved.