ঢাকা ০১:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা? Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু আজ Logo বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার সরকারি ছুটি Logo আগামী বছর থেকে আবারও মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন শুরু

স্বাধীনতার ৫২ বছর : কোন পর্যায়ে বাংলাদেশ

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ৮৫ বার পঠিত

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে বড় সফলতা আর প্রাপ্তি কিছু হতে পারে না

স্বাধীনতার ৫২ বছরে বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে আছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী ভাবছেন। তরুণেরা কী ভাবছেন?

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে বড় সফলতা আর প্রাপ্তি কিছু হতে পারেনা। তবে সেই অর্জনকে এগিয়ে নেয়া, পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে চেতনা ছড়িয়ে দেয়া আরেকটি বড় কাজ। সেই কাজে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার খুবই জরুরি। সেই যাত্রায় বাংলাদেশ এখন কোথায়?

আবু শামা একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লইনে যে বীর পুলিশ সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তিনি তাদের একজন। তখন তিনি ছিলেন একজন তরুণ পুলিশ কনেস্টবল। এখন অবসর জীবনযাপন করছেন।
তার কথায়,” আমরা ব্যক্তিগত কোনো লাভের জন্যজীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমরা চেয়েছিলাম মুক্তি। সার্বিক মুক্তি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমরা আমাদের প্রত্যাশার জায়গায় যেতে পারিনি।এখন দেখছি নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও অনেকে তালিকাভুক্ত হচ্ছেন। যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এটা আমাকে কষ্ট দেয়।”

তার কথায়,” দেশটা সবার। সবার সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনেতিক উন্নয়ন হয়নি। কিছু মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন।” আর রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশ তিনি। তিনি বলেন,” আমি সব সময়ই ভোট দিতে পেরেছি। কিন্তু অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। এমন কেন হলো? তাদের  ভোট কারা দিলো! রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম বিভেদ। আমি চাই দল মত নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুক। যার ভোট সে যাতে দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হোক।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন,” রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য তাদের ভূমিকা পালনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন যে বুদ্ধিজীবীরা সেখানে আমাদের বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ১৯৭১ সালে  বিজয়ের আগে আমাদের বুদ্ধিবীজীদের হত্যা করা হয়। এরপর আর সেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণি গড়ে ওঠেনি।এখন যারা আছেন তারা বিভিন্ন দলের পক্ষে-বিপক্ষে বিবৃতি দেন। তারা সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করেন। কেউ কেউ আছেন অপমানিত হওয়ার ভয়ে চুপচাপ থাকেন। কিন্তু বুদ্ধিজীবী তো তিনি, যিনি  ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে পারেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন। মানুষের পক্ষে অবস্থান নেন। এখন সেটা তো আমরা দেখিনা।”

তার কথায়,” আয় বৈষম্য বেড়েছে। কিছু মানুষের হাতে সম্পদ চলে গেছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এখানো কোনো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। এর জন্য প্রয়োজন ছিলো শিক্ষা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক পথে সাজাতে পারিনি। এর মূল দায় রাজনীতিবিদদের।”

এই অধ্যাপকের সঙ্গে অনেকটাই একমত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তার মতে,” বাংলাদেশের এখন যা পরিস্থিতি তাকে বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় ভূমিকা থাকার দরকার ছিলো। কিন্তু তাদের ভূমিকা আমরা দেখতে পাইনা।”

তিনি বলেন,”  বঙ্গবন্ধু তো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ক্ষমতার মসনদ ত্যাগ করেছেন এই গণতন্ত্রের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ তো ছিলো একটি ন্যায়ভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্রের জন্য। কিন্তু আমাদের এখানে এখন গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এখন নিম্নগামী। বলতে গেলে উধাও। এর জন্য দায় কার সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো মুক্তিযোদ্ধারা যে ধরনের রাষ্ট্রের জন্য জীবন দিয়েছেন , যুদ্ধ করেছেন তা আমরা পাইনি। এজন্য মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন তাদের হৃদয়েও নিশ্চয়ই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।”

তার কথা,” দেশের রাজনীতির এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা বড় দুই দলের মধ্যে কঠিনতম বিভাজন। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা। নব্বইয়ের  গণঅভ্যুত্থানের পর চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে। আমরা আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর সেই আশার জায়গা নেই। যেভাবেই হোক না কেন নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন।”

ব্যারিস্টার ওমর ফারুক যে রাজনৈতিক বিভাজনের কথা বললেন তাকে আরো বিস্তৃত করে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেন মানবাধিকার কশিনের সাবেক চেয়ারম্যান  ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

তার কথায়,” স্বাধীনতার এত বছর পরও জাতি এখনো বিভাজিত। এখনো স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়। আমি মনে করি যারা মুক্তি যুদ্ধের চেতনার বিরোধী, যাদের হৃদয়ে পেয়ারে পাকিস্তান তাদের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। এই বিষয়গুলো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও রাজনীতি নিয়ে সংকট থাকবেই।”

তিনি বলেন,” গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার এই বিষয়গুলোতে আমাদের অনেক ঘটতি আছে। রাষ্ট্রের যে অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হওয়ার কথা ছিলো তা হয়নি। সংখ্যালঘুদের জন্য আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। এগুলো করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হতে হবে সব কিছুর ভিত্তি। সেখানেই তো আমাদের সমস্যা আছে।”

আর এই প্রজন্মের একজন তরুণ অনুপ দাস পিয়াল। পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কথা,” আমাদের এই প্রজন্মের বড় একটি অংশ রাজনীতিকে ঘৃণা করে। এর কারণ তারা রাজনৈতিক বিভাজন, সংঘাত, সংঘর্ষ এই সব দেখে বিরক্ত। তারা রাজনীতির মধ্যে ভালো কিছু দেখেনা। তারা গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার নিয়ে যে সংকট তার উত্তরণ চায়। তার ভোট দিতে চায়। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে তারা বুঝতে পারছেনা। ”

তিনি বলেন,” আমাদের সামনে ভালো কোনো উদাহরণ নাই।  কিছু লোক ধনী হয়ে গেছে। তারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করছে। সাধারণ মানুষের অবস্থা ভালোনা। শিক্ষার সংকট আছে। সব মিলিয়ে আমরা এখন অনেকটাই বিভ্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছিনা।”ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

স্বাধীনতার ৫২ বছর : কোন পর্যায়ে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ১১:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
স্বাধীনতার ৫২ বছরে বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে আছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী ভাবছেন। তরুণেরা কী ভাবছেন?

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে বড় সফলতা আর প্রাপ্তি কিছু হতে পারেনা। তবে সেই অর্জনকে এগিয়ে নেয়া, পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে চেতনা ছড়িয়ে দেয়া আরেকটি বড় কাজ। সেই কাজে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার খুবই জরুরি। সেই যাত্রায় বাংলাদেশ এখন কোথায়?

আবু শামা একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লইনে যে বীর পুলিশ সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তিনি তাদের একজন। তখন তিনি ছিলেন একজন তরুণ পুলিশ কনেস্টবল। এখন অবসর জীবনযাপন করছেন।
তার কথায়,” আমরা ব্যক্তিগত কোনো লাভের জন্যজীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমরা চেয়েছিলাম মুক্তি। সার্বিক মুক্তি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমরা আমাদের প্রত্যাশার জায়গায় যেতে পারিনি।এখন দেখছি নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও অনেকে তালিকাভুক্ত হচ্ছেন। যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এটা আমাকে কষ্ট দেয়।”

তার কথায়,” দেশটা সবার। সবার সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনেতিক উন্নয়ন হয়নি। কিছু মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন।” আর রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশ তিনি। তিনি বলেন,” আমি সব সময়ই ভোট দিতে পেরেছি। কিন্তু অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। এমন কেন হলো? তাদের  ভোট কারা দিলো! রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম বিভেদ। আমি চাই দল মত নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুক। যার ভোট সে যাতে দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হোক।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন,” রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য তাদের ভূমিকা পালনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন যে বুদ্ধিজীবীরা সেখানে আমাদের বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ১৯৭১ সালে  বিজয়ের আগে আমাদের বুদ্ধিবীজীদের হত্যা করা হয়। এরপর আর সেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণি গড়ে ওঠেনি।এখন যারা আছেন তারা বিভিন্ন দলের পক্ষে-বিপক্ষে বিবৃতি দেন। তারা সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করেন। কেউ কেউ আছেন অপমানিত হওয়ার ভয়ে চুপচাপ থাকেন। কিন্তু বুদ্ধিজীবী তো তিনি, যিনি  ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে পারেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন। মানুষের পক্ষে অবস্থান নেন। এখন সেটা তো আমরা দেখিনা।”

তার কথায়,” আয় বৈষম্য বেড়েছে। কিছু মানুষের হাতে সম্পদ চলে গেছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এখানো কোনো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। এর জন্য প্রয়োজন ছিলো শিক্ষা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক পথে সাজাতে পারিনি। এর মূল দায় রাজনীতিবিদদের।”

এই অধ্যাপকের সঙ্গে অনেকটাই একমত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তার মতে,” বাংলাদেশের এখন যা পরিস্থিতি তাকে বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় ভূমিকা থাকার দরকার ছিলো। কিন্তু তাদের ভূমিকা আমরা দেখতে পাইনা।”

তিনি বলেন,”  বঙ্গবন্ধু তো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ক্ষমতার মসনদ ত্যাগ করেছেন এই গণতন্ত্রের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ তো ছিলো একটি ন্যায়ভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্রের জন্য। কিন্তু আমাদের এখানে এখন গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এখন নিম্নগামী। বলতে গেলে উধাও। এর জন্য দায় কার সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো মুক্তিযোদ্ধারা যে ধরনের রাষ্ট্রের জন্য জীবন দিয়েছেন , যুদ্ধ করেছেন তা আমরা পাইনি। এজন্য মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে আছেন তাদের হৃদয়েও নিশ্চয়ই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।”

তার কথা,” দেশের রাজনীতির এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা বড় দুই দলের মধ্যে কঠিনতম বিভাজন। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা। নব্বইয়ের  গণঅভ্যুত্থানের পর চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে। আমরা আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর সেই আশার জায়গা নেই। যেভাবেই হোক না কেন নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন।”

ব্যারিস্টার ওমর ফারুক যে রাজনৈতিক বিভাজনের কথা বললেন তাকে আরো বিস্তৃত করে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেন মানবাধিকার কশিনের সাবেক চেয়ারম্যান  ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

তার কথায়,” স্বাধীনতার এত বছর পরও জাতি এখনো বিভাজিত। এখনো স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়। আমি মনে করি যারা মুক্তি যুদ্ধের চেতনার বিরোধী, যাদের হৃদয়ে পেয়ারে পাকিস্তান তাদের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। এই বিষয়গুলো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও রাজনীতি নিয়ে সংকট থাকবেই।”

তিনি বলেন,” গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার এই বিষয়গুলোতে আমাদের অনেক ঘটতি আছে। রাষ্ট্রের যে অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হওয়ার কথা ছিলো তা হয়নি। সংখ্যালঘুদের জন্য আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। এগুলো করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হতে হবে সব কিছুর ভিত্তি। সেখানেই তো আমাদের সমস্যা আছে।”

আর এই প্রজন্মের একজন তরুণ অনুপ দাস পিয়াল। পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কথা,” আমাদের এই প্রজন্মের বড় একটি অংশ রাজনীতিকে ঘৃণা করে। এর কারণ তারা রাজনৈতিক বিভাজন, সংঘাত, সংঘর্ষ এই সব দেখে বিরক্ত। তারা রাজনীতির মধ্যে ভালো কিছু দেখেনা। তারা গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার নিয়ে যে সংকট তার উত্তরণ চায়। তার ভোট দিতে চায়। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে তারা বুঝতে পারছেনা। ”

তিনি বলেন,” আমাদের সামনে ভালো কোনো উদাহরণ নাই।  কিছু লোক ধনী হয়ে গেছে। তারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করছে। সাধারণ মানুষের অবস্থা ভালোনা। শিক্ষার সংকট আছে। সব মিলিয়ে আমরা এখন অনেকটাই বিভ্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছিনা।”ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box