যে সব শর্তে বিদেশে বিনিয়োগ করা যায়
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বিদেশে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান রফতানির সাথে যুক্ত তারা এই বিনিয়োগ করতে পারেন।
তবে এর জন্য সাতটি শর্ত মেনে চলতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অধিশাখার প্রজ্ঞাপন রয়েছে এ বিষয়ে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে বাইরে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে, কোনও সম্পত্তি কেনার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় না।
বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের অনুমতি নিতে হয়। ব্যবসায়ীদের আবেদন পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা বিডা।
এর জন্য গভর্নরের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করে।
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কোম্পানি এ ধরনের অনুমোদন পেয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বিবিসিকে জানান, বিদেশে প্রেরিত অর্থের ব্যাপারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে হালনাগাদ তথ্য পেয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অনুমতি পাওয়ার পর কোনো কারণে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত না হলে প্রদত্ত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বলা হয়েছে এ সংক্রান্ত নীতিমালায়।
সঠিকভাবে মনিটর না করা গেলে এর মধ্য দিয়েও অর্থ পাচারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে নীতিমালা ঘোষণার পরই জানিয়েছিলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম।
এর আগে কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগ করলেও এ বিষয়ে কোনও নীতিমালা বা বিধিমালা বাংলাদেশে ছিলো না। সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত জানাত।
নীতিমালায় বিনিয়োগ গন্তব্যের ব্যাপারে শর্ত দেওয়া আছে। বলা হয়েছে, বিনিয়োগ করতে হবে এমন দেশে যেখানে বাংলাদেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। একই সাথে, সে সব দেশেই লগ্নি করা যাবে যেখান থেকে ব্যবসায় অর্জিত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনতে কোনও বিধিনিষেধ নেই।
এছাড়া যে সব দেশের সাথে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি আছে এবং যেসব দেশের সাথে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপাক্ষিক পুঁজি-বিনিয়োগ, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ চুক্তি আছে সে সব দেশেও অর্থ লগ্নি করতে পারবেন উদ্যোক্তরা।
এই প্রক্রিয়ায় কোনও বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের আয় ও লভ্যাংশ দেশে আনতে ব্যর্থ হলে সেটি অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিং হিসেবে বিবেচিত হবে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোলের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেই দেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন না বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এমন সব দেশের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে।
বিনিয়োগের যোগ্যতা ও সীমা
প্রজ্ঞাপনে কারা বিদেশে বিনিয়োগে যোগ্য বলে বিবেচিত হবে তা উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো:
১. রফতানিকারকের সংরক্ষিত কোটা হিসেবে পর্যাপ্ত স্থিতি আছে এমন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান।
২.আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী সচ্ছল হতে হবে।
৩. আবেদনকারীর ক্রেডিট রেটিং অন্তত দুই হতে হবে।
৪. যে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হবে সেটি বাংলাদেশে আবেদনকারীর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুরূপ বা সহায়ক বা সম্পূরক হতে হবে।
৫. বিনিয়োগ প্রস্তাবটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে টেঁকসই হতে হবে।
৬. বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় আয় অর্জনের সম্ভাবনাময় উৎস এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বৃদ্ধিসহ অন্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকতে হবে।
৭. আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরিচালনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল থাকতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে বিনিয়োগের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান তার বিগত পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রফতানি আয়ের অনধিক ২০ শতাংশ বা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো নিট সম্পদের ২৫ শতাংশ হবে বিনিয়োগের সীমা।
তবে এ দুটির মধ্যে যেটি কম সেটুকুই বিনিয়োগের আবেদন করা যাবে।
নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো বিদেশে তাদের শাখা অফিস স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারবে।
অর্থবছর শেষের ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে পাঠাতে হবে। বিবিসি