ঢাকা ০২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ বোধ করেন না প্রায় ৬৭ শতাংশ নারী

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪ ৩৩ বার পঠিত

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারী ও কিশোরীদের ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ দুর্যোগ কালে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নন। নিরাপদ বোধ করেন না বলে তারা অনাগ্রহী। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানী ঢাকায়, ইন্টারন্যাশনাল রেস্কিউ কমিটির (আইআরসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায়, উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নীরবে যৌন সমস্যা নিয়েই জীবনযাপন করছে। পরে এসব সমস্যা বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বা যৌন হয়রানির মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এসব ঘটনা নারী ও শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক পীড়া দিচ্ছে।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, মূলত দারিদ্র্য (৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং জীবিকা হারানোর (৬৮ শতাংশ) মতো বিষয়গুলো পারিবারিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সংশ্লিষ্ট ঘটনার মূল কারণ। দুর্যোগের পর, দারিদ্র্যের কারণে জোরপূর্বক গর্ভপাতের শিকার হচ্ছেন নারীরা; প্রতিবেদনে বলা হয়।

আইআরসি জানায়, দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে হাসপাতাল থাকলেও, পর্যাপ্ত সেবার সুযোগ না থাকায় অনেকেই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব অঞ্চলের ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ সঠিক সময়ে চিকিৎসা পান না।

প্রতিবেদন মতে; কারণ হিসেবে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ সময় ধরে, দুর্যোগের কারণে হাসপাতাল বন্ধ থাকে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা গত কয়েক বছরে আরো অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে জলাবদ্ধতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাসহ আরো অনেক ধরনের সমস্যা।

বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলা অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়, শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, বাল্য বিবাহ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, জীবিকার অভাবসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে মায়েদের জন্য আমরা শিশুদের দুধপান করানোর আলাদা ব্যবস্থা করেছি। আমরা দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে সহনশীল অবকাঠামো তৈরি করছি; যাতে সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে্”

আইআরসির কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান বলেন, “আমাদের উদ্যোগগুলো যেন সবার কথা মাথায় রেখে নেয়া হয়, যেন সব ধরনের, সব লিঙ্গের, সব জাতির মানুষ সুযোগ-সুবিধাগুলো পায় এবং তাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়; সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।”

উপকূলীয় অঞ্চলে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এনজিও ‘জাগো নারী’। সংগঠনটির প্রধান হোসনে আরা হাসি বলেন, “বাংলাদেশের একটি বড় অংশ উপকূলের সাথে জড়িত। এই অংশের মানুষ নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে।”

“সাম্প্রতিক সময়ের জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে সরকার ও এনজিওগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অনেক অভাব রয়েছে। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এই মানুষগুলোর জন্য;” বলেন হোসনে আরা হাসি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (সিপিআরডি) এর প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, “দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা কম হলে আমরা সেটাকে সাফল্য হিসেবে ধরে নেই। কিন্তু, যে মানুষগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে, তাদের অধিকার সম্পর্কে আমরা এখনো সচেতন নই। এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”

 

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বাংলাদেশে দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ বোধ করেন না প্রায় ৬৭ শতাংশ নারী

আপডেট সময় : ০২:৩৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নারী ও কিশোরীদের ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ দুর্যোগ কালে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নন। নিরাপদ বোধ করেন না বলে তারা অনাগ্রহী। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানী ঢাকায়, ইন্টারন্যাশনাল রেস্কিউ কমিটির (আইআরসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায়, উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নীরবে যৌন সমস্যা নিয়েই জীবনযাপন করছে। পরে এসব সমস্যা বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বা যৌন হয়রানির মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এসব ঘটনা নারী ও শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক পীড়া দিচ্ছে।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, মূলত দারিদ্র্য (৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং জীবিকা হারানোর (৬৮ শতাংশ) মতো বিষয়গুলো পারিবারিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সংশ্লিষ্ট ঘটনার মূল কারণ। দুর্যোগের পর, দারিদ্র্যের কারণে জোরপূর্বক গর্ভপাতের শিকার হচ্ছেন নারীরা; প্রতিবেদনে বলা হয়।

আইআরসি জানায়, দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে হাসপাতাল থাকলেও, পর্যাপ্ত সেবার সুযোগ না থাকায় অনেকেই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব অঞ্চলের ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ সঠিক সময়ে চিকিৎসা পান না।

প্রতিবেদন মতে; কারণ হিসেবে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ সময় ধরে, দুর্যোগের কারণে হাসপাতাল বন্ধ থাকে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা গত কয়েক বছরে আরো অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে জলাবদ্ধতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাসহ আরো অনেক ধরনের সমস্যা।

বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলা অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়, শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, বাল্য বিবাহ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, জীবিকার অভাবসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে মায়েদের জন্য আমরা শিশুদের দুধপান করানোর আলাদা ব্যবস্থা করেছি। আমরা দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে সহনশীল অবকাঠামো তৈরি করছি; যাতে সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে্”

আইআরসির কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান বলেন, “আমাদের উদ্যোগগুলো যেন সবার কথা মাথায় রেখে নেয়া হয়, যেন সব ধরনের, সব লিঙ্গের, সব জাতির মানুষ সুযোগ-সুবিধাগুলো পায় এবং তাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়; সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।”

উপকূলীয় অঞ্চলে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এনজিও ‘জাগো নারী’। সংগঠনটির প্রধান হোসনে আরা হাসি বলেন, “বাংলাদেশের একটি বড় অংশ উপকূলের সাথে জড়িত। এই অংশের মানুষ নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে।”

“সাম্প্রতিক সময়ের জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে সরকার ও এনজিওগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অনেক অভাব রয়েছে। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এই মানুষগুলোর জন্য;” বলেন হোসনে আরা হাসি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (সিপিআরডি) এর প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, “দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা কম হলে আমরা সেটাকে সাফল্য হিসেবে ধরে নেই। কিন্তু, যে মানুষগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে, তাদের অধিকার সম্পর্কে আমরা এখনো সচেতন নই। এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”

 

Facebook Comments Box