ঢাকা ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বাংলাদেশে এখন উচ্চ আয়-বৈষম্য বিরাজ করছে: সেমিনারে ড. বিনায়ক সেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:৫১:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ৩৯ বার পঠিত

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেছেন, “বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশে আয় বৈষম্য বিস্তৃত হয়েছে। আর এই বৈষম্য মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ এখনো উপযুক্ত নয়।”

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) আইসিডিডিআরবি’র ৬৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস।সেমিনারে, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রবণতা ও নির্ধারক: সাম্প্রতিক প্রমাণ থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. সেন।

ড. সেন আরো বলেন, “বৈষম্য বাড়ছে; সাধারণভাবে বলতে গেলে, ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। তবে, বাংলাদেশে বৈষম্যের প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশে দরিদ্র ও ধনী উভয়ের অবস্থার উন্নতি হলেও, ধনীদের উন্নতির হার বেশি।”

গৃহস্থালি জরিপ- ২০২২ এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভোগ বৈষম্যের পরিমাপের গুণাঙ্ক ছিলো শূন্য দশমিক ৩৩৪; শহরাঞ্চলে এটি ছিলো শূন্য দশমিক ৩৫৬ এবং গ্রামাঞ্চলে শূন্য দশমিক ২৯১।যদি বৈষম্য পরিমাপের গুণাঙ্কের মান শূন্য হয়, তবে এর অর্থ হলো সমাজে চূড়ান্ত সমতা রয়েছে। আর, ১ মানে চূড়ান্ত বৈষম্য আছে; শূন্য দশমিক ৫০ অতিক্রম করা দেশে উচ্চ বৈষম্যকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে এখন উচ্চ বৈষম্য রয়েছে।”

ড. বিনায়ক সেন বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে, গত এক দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।”

ড. সেন দারিদ্র্যের প্রধান কারণগুলো তুলে ধরেন এবং কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশ কয়েকটি নীতিগত প্রস্তাব দেন। স্মার্ট ম্যাক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট, টেকসই প্রবৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি এসব নীতি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন তিনি।

বিআইডিএস মহাপরিচালক তুলে ধরেন যে, সরকারি ব্যয় বাড়লেও, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত কমছে। বিগত ২০০০ থেকে ২০০১ সালে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত ছিলো ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০০১-১১ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিলো ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সেই বছর জিডিপির অনুপাতে সরকারি ব্যয় ছিলো ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিলো ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে, সরকারি ব্যয় ও জিডিপির অনুপাত বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ কারণে, সরকারের ব্যয়ের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

বাংলাদেশে এখন উচ্চ আয়-বৈষম্য বিরাজ করছে: সেমিনারে ড. বিনায়ক সেন

আপডেট সময় : ১২:৫১:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেছেন, “বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশে আয় বৈষম্য বিস্তৃত হয়েছে। আর এই বৈষম্য মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ এখনো উপযুক্ত নয়।”

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) আইসিডিডিআরবি’র ৬৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস।সেমিনারে, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রবণতা ও নির্ধারক: সাম্প্রতিক প্রমাণ থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. সেন।

ড. সেন আরো বলেন, “বৈষম্য বাড়ছে; সাধারণভাবে বলতে গেলে, ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। তবে, বাংলাদেশে বৈষম্যের প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশে দরিদ্র ও ধনী উভয়ের অবস্থার উন্নতি হলেও, ধনীদের উন্নতির হার বেশি।”

গৃহস্থালি জরিপ- ২০২২ এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভোগ বৈষম্যের পরিমাপের গুণাঙ্ক ছিলো শূন্য দশমিক ৩৩৪; শহরাঞ্চলে এটি ছিলো শূন্য দশমিক ৩৫৬ এবং গ্রামাঞ্চলে শূন্য দশমিক ২৯১।যদি বৈষম্য পরিমাপের গুণাঙ্কের মান শূন্য হয়, তবে এর অর্থ হলো সমাজে চূড়ান্ত সমতা রয়েছে। আর, ১ মানে চূড়ান্ত বৈষম্য আছে; শূন্য দশমিক ৫০ অতিক্রম করা দেশে উচ্চ বৈষম্যকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে এখন উচ্চ বৈষম্য রয়েছে।”

ড. বিনায়ক সেন বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে, গত এক দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।”

ড. সেন দারিদ্র্যের প্রধান কারণগুলো তুলে ধরেন এবং কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশ কয়েকটি নীতিগত প্রস্তাব দেন। স্মার্ট ম্যাক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট, টেকসই প্রবৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি এসব নীতি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন তিনি।

বিআইডিএস মহাপরিচালক তুলে ধরেন যে, সরকারি ব্যয় বাড়লেও, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত কমছে। বিগত ২০০০ থেকে ২০০১ সালে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত ছিলো ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০০১-১১ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিলো ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সেই বছর জিডিপির অনুপাতে সরকারি ব্যয় ছিলো ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিলো ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে, সরকারি ব্যয় ও জিডিপির অনুপাত বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ কারণে, সরকারের ব্যয়ের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

Facebook Comments Box