ঢাকা ০৫:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নাসির উদ্দীনকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন Logo সোনারগাঁয়ে গাজাঁ ও ফেনসিডিলসহ আটক-৪ Logo স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। Logo সৌদিতে ফ্যাশন শো নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভের যত কারণ Logo প্রতারণার অভিযোগে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে মামলা Logo ট্রাইব্যুনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হলো Logo ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান Logo মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার Logo পাবনার আমিনপুরে ইজিবাইক-মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ Logo সেনাকুঞ্জে যাবেন খালেদা জিয়া

প্রেমের ফাঁদ : নগ্ন ছবি তুলে হাতিয়ে নিতেন অর্থ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ১১:০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩ ৫৮ বার পঠিত

ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মেহনাজ তাবাসসুম মিশু। ১৫ বছরের এক কিশোরীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মিশু ও তার কথিত স্বামী আতিকুর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ১৯ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরীর মা।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মিশু ও আতিক সাভারের বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাস করেন। মিশুর বাসায় অনেকের যাতায়াত আছে। তিনি অন্যদের সহযোগিতায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে আনেন। পরে তাদের নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন মিশু ও তার সহযোগীরা।

মামলা দায়েরের পর ১৯ আগস্ট দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন নিজবাড়ি থেকে মিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আদালত মিশুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

২০ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জহুরুল ইসলাম মিশুর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম বুধবার (২৩ আগস্ট) আসামির উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করেন। রিমান্ড শুনানিতে তাকে আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। আজ মিশুর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

উল্লেখ্য, মিশুকে আটকের পর শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে যুব মহিলা লীগ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেছেন, মামলা দায়ের হওয়ার পর আমরা মিশুকে গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তার রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বুধবার রিমান্ড শুনানি হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। এসব অপকর্মে কারা কারা জড়িত, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মামলার এজাহারনামীয় অপর আসামি আতিকুর রহমান আতিককে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসা পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া যাই। কিন্তু, তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে, ভুক্তভোগী কিশোরী এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মা বলেছেন, মেয়ের অবস্থা ভালো না। রাতে ঘুমোতে পারে না। ঘুমের ঘোরে চিল্লায়। কান্না করে। বলে, আম্মু আমি আর বাঁচব না। আমার মেয়ের সাথে যারা এমন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।

তিনি বলেন, মেয়েটা ১৪ দিন হাসপাতালে ছিল। ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। ও দাঁড়াতে পারে না। পায়ে ভর দিতে পারে না। লাশের মতো করে মেয়েটাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে এসেছি। ১৫ বছরের মেয়েকে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে কোনো মা কি ঠিক থাকতে পারে? মেয়েটার আশা ছিল— আর্মি, পুলিশে বড় অফিসার পদে চাকরি করবে। এখন ও বাঁচে কি না, আল্লাহ জানেন। আমি আমার মেয়ের নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। সবার সহযোগিতা চাই।

সাত মাস আগে থেকে ওই কিশোরীর সঙ্গে মিশু এমন আচরণ করে আসছিলেন বলে জানা গেছে। নির্যাতনের বিষয়ে আগে জানতেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমরা জানতাম না। জানলে কি আর এমন অবস্থা হতো। এই ঘটনা ঘটার পর মেয়ে আমাদের বলেছে। মিশু আমার মেয়েটাকে বোবা বানিয়ে রেখেছিল। আমাদের সাথে ফোনে কথা বলতে দিতো না। মিশু ওর মা-বাবাকেও মানত না। প্রতিবাদ করলে বাবা-মাকেও মারধর করত। ও আসলে কাউকেই মানত না। ওর বিরুদ্ধে অনেক খারাপ রেকর্ড আছে। আমার মেয়ে বলেছে, ও একের পর এক বিয়ে করে। আতিক ওর চার নম্বর হাজবেন্ড। তাহলে বোঝেন, ও কত বড় খারাপ।

শিশুটির বাবা বলেন, মেয়েটাকে পাঁচ তলা থেকে ফেলে দিয়েছে। আল্লাহ সহায় হওয়ায় জীবনটা ফিরে পেয়েছে। ওর অবস্থা খুব খারাপ। ওর যে কী হবে, আল্লাহ জানেন। আদৌ সুস্থ হবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দিহান আমরা। মেয়েটার সঙ্গে কি জঘন্য কাজ করেছে। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সাথে এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে? আমি আমার মেয়ের হত্যার চেষ্টাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। যেন আর কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।

ওই কিশোরীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতনের মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ১৭ বছর আগে বাদীর প্রথম বিয়ে হয়। তারা সাভার এলাকায় চাকরি করাকালে তাদের ঘরে ওই কিশোরীর জন্ম হয়। ২০১৩ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। ওই কিশোরী তার বাবার বোনের সঙ্গে মিশুদের বাসায় ভাড়া থাকত। পরে তার বাবা প্রবাসে গেলে সে ফুফুর বাসায় থাকে। তিন বছর আগে ফুফু গ্রামের বাড়ি চলে গেলে ফুফাতো বোনের সাথে থাকে ওই কিশোরী। ৭-৮ মাস আগে চাকরির প্রয়োজনে তার ফুফাতো বোনও অন্যত্র চলে যায়। স্কুল কাছাকাছি হওয়ায় ও পূর্বপরিচয়ের সুবাদে মিশুর বাবা ওই কিশোরীকে তার বাসায় নিয়ে যায়।

এদিকে, মিশু ও আতিক ওই বাসায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস করে। মিশুর আরও কথিত ২-৩ জন স্বামী ও বহিরাগত লোক ওই বাসায় যাতায়াত করে। মিশু অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে এনে তাদের নগ্ন ছবি তুলে অর্থ হাতিয়ে নিতো। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে ওই কিশোরীকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে তার নগ্ন ছবি তুলতে চায়।

মেয়েটি রাজি না হলে মিশু অন্য আসামিদের সহযোগিতায় বাসায় উচ্চ স্বরে মিউজিক বাজিয়ে ওই কিশোরীকে মারপিট করে। এমনকি মিশু সিগারেটের আগুন দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেয়। এসব ঘটনা কারো সাথে শেয়ার করলে অথবা বাসা থেকে পালিয়ে গেলে তাকেসহ পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা ও খুন হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণে মেয়েটি এসব ঘটনা কাউকে বলার সাহস পায়নি। মেয়েটির সঙ্গে এমন আচরণের বিষয়ে মিশুর বৃদ্ধ বাবা-মা প্রতিবাদ করলে আসামিরা তাদেরও মারপিট করতে উদ্যত হয়।

গত ২৪ জুলাই রাত ১০টায় মিশু-আতিকসহ অজ্ঞাত ৫-৭ জন ওই কিশোরীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আতিক মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটি চিৎকার করলে আসামিরা রাতভর দফায় দফায় তাকে মারপিট করে। একপর্যায়ে তারা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বাসার পঞ্চম তলার বেলকনি থেকে ওই কিশোরীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। মেয়েটি নিচের টিনসেড বাসার টিনের চালায় পড়ে গুরুতর আহত হয়।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৩ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রেমের ফাঁদ : নগ্ন ছবি তুলে হাতিয়ে নিতেন অর্থ

আপডেট সময় : ১১:০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মেহনাজ তাবাসসুম মিশু। ১৫ বছরের এক কিশোরীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মিশু ও তার কথিত স্বামী আতিকুর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ১৯ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরীর মা।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মিশু ও আতিক সাভারের বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাস করেন। মিশুর বাসায় অনেকের যাতায়াত আছে। তিনি অন্যদের সহযোগিতায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে আনেন। পরে তাদের নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন মিশু ও তার সহযোগীরা।

মামলা দায়েরের পর ১৯ আগস্ট দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন নিজবাড়ি থেকে মিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আদালত মিশুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

২০ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জহুরুল ইসলাম মিশুর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম বুধবার (২৩ আগস্ট) আসামির উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করেন। রিমান্ড শুনানিতে তাকে আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। আজ মিশুর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

উল্লেখ্য, মিশুকে আটকের পর শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে যুব মহিলা লীগ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেছেন, মামলা দায়ের হওয়ার পর আমরা মিশুকে গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তার রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বুধবার রিমান্ড শুনানি হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। এসব অপকর্মে কারা কারা জড়িত, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মামলার এজাহারনামীয় অপর আসামি আতিকুর রহমান আতিককে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসা পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া যাই। কিন্তু, তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে, ভুক্তভোগী কিশোরী এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মা বলেছেন, মেয়ের অবস্থা ভালো না। রাতে ঘুমোতে পারে না। ঘুমের ঘোরে চিল্লায়। কান্না করে। বলে, আম্মু আমি আর বাঁচব না। আমার মেয়ের সাথে যারা এমন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।

তিনি বলেন, মেয়েটা ১৪ দিন হাসপাতালে ছিল। ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। ও দাঁড়াতে পারে না। পায়ে ভর দিতে পারে না। লাশের মতো করে মেয়েটাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে এসেছি। ১৫ বছরের মেয়েকে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে কোনো মা কি ঠিক থাকতে পারে? মেয়েটার আশা ছিল— আর্মি, পুলিশে বড় অফিসার পদে চাকরি করবে। এখন ও বাঁচে কি না, আল্লাহ জানেন। আমি আমার মেয়ের নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। সবার সহযোগিতা চাই।

সাত মাস আগে থেকে ওই কিশোরীর সঙ্গে মিশু এমন আচরণ করে আসছিলেন বলে জানা গেছে। নির্যাতনের বিষয়ে আগে জানতেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমরা জানতাম না। জানলে কি আর এমন অবস্থা হতো। এই ঘটনা ঘটার পর মেয়ে আমাদের বলেছে। মিশু আমার মেয়েটাকে বোবা বানিয়ে রেখেছিল। আমাদের সাথে ফোনে কথা বলতে দিতো না। মিশু ওর মা-বাবাকেও মানত না। প্রতিবাদ করলে বাবা-মাকেও মারধর করত। ও আসলে কাউকেই মানত না। ওর বিরুদ্ধে অনেক খারাপ রেকর্ড আছে। আমার মেয়ে বলেছে, ও একের পর এক বিয়ে করে। আতিক ওর চার নম্বর হাজবেন্ড। তাহলে বোঝেন, ও কত বড় খারাপ।

শিশুটির বাবা বলেন, মেয়েটাকে পাঁচ তলা থেকে ফেলে দিয়েছে। আল্লাহ সহায় হওয়ায় জীবনটা ফিরে পেয়েছে। ওর অবস্থা খুব খারাপ। ওর যে কী হবে, আল্লাহ জানেন। আদৌ সুস্থ হবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দিহান আমরা। মেয়েটার সঙ্গে কি জঘন্য কাজ করেছে। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সাথে এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে? আমি আমার মেয়ের হত্যার চেষ্টাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। যেন আর কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।

ওই কিশোরীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতনের মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ১৭ বছর আগে বাদীর প্রথম বিয়ে হয়। তারা সাভার এলাকায় চাকরি করাকালে তাদের ঘরে ওই কিশোরীর জন্ম হয়। ২০১৩ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। ওই কিশোরী তার বাবার বোনের সঙ্গে মিশুদের বাসায় ভাড়া থাকত। পরে তার বাবা প্রবাসে গেলে সে ফুফুর বাসায় থাকে। তিন বছর আগে ফুফু গ্রামের বাড়ি চলে গেলে ফুফাতো বোনের সাথে থাকে ওই কিশোরী। ৭-৮ মাস আগে চাকরির প্রয়োজনে তার ফুফাতো বোনও অন্যত্র চলে যায়। স্কুল কাছাকাছি হওয়ায় ও পূর্বপরিচয়ের সুবাদে মিশুর বাবা ওই কিশোরীকে তার বাসায় নিয়ে যায়।

এদিকে, মিশু ও আতিক ওই বাসায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস করে। মিশুর আরও কথিত ২-৩ জন স্বামী ও বহিরাগত লোক ওই বাসায় যাতায়াত করে। মিশু অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে এনে তাদের নগ্ন ছবি তুলে অর্থ হাতিয়ে নিতো। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে ওই কিশোরীকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে তার নগ্ন ছবি তুলতে চায়।

মেয়েটি রাজি না হলে মিশু অন্য আসামিদের সহযোগিতায় বাসায় উচ্চ স্বরে মিউজিক বাজিয়ে ওই কিশোরীকে মারপিট করে। এমনকি মিশু সিগারেটের আগুন দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেয়। এসব ঘটনা কারো সাথে শেয়ার করলে অথবা বাসা থেকে পালিয়ে গেলে তাকেসহ পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা ও খুন হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণে মেয়েটি এসব ঘটনা কাউকে বলার সাহস পায়নি। মেয়েটির সঙ্গে এমন আচরণের বিষয়ে মিশুর বৃদ্ধ বাবা-মা প্রতিবাদ করলে আসামিরা তাদেরও মারপিট করতে উদ্যত হয়।

গত ২৪ জুলাই রাত ১০টায় মিশু-আতিকসহ অজ্ঞাত ৫-৭ জন ওই কিশোরীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আতিক মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটি চিৎকার করলে আসামিরা রাতভর দফায় দফায় তাকে মারপিট করে। একপর্যায়ে তারা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বাসার পঞ্চম তলার বেলকনি থেকে ওই কিশোরীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। মেয়েটি নিচের টিনসেড বাসার টিনের চালায় পড়ে গুরুতর আহত হয়।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৩ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box